তা ছিল, সায় দিয়ে বলল কিশোর। তবে শুধু শারিই নয়। আরও কিছু জবাব ছিল ওটাতে। আরও সূত্র।
আর কি সূত্র? ব্যাগ খুলতে খুলতে জিজ্ঞেস করল রবিন। কাপড় বের করে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে লাগল ওয়ারড্রোবের ড্রয়ারে। ওই গাধাটা কেন তোমার প্রেমে পড়ল, সেই সূত্র?
রসিকতাটা এড়িয়ে গিয়ে কিশোর বলল, গাধাটাকে বলার জন্যে আমাদেরকে যেসব শব্দ বলেছে, ক্রসওয়ার্ড পাজলের উত্তরগুলোই হলো সেসব শব্দ।
তাই? মুসার প্রশ্ন। আর কোনটা?
দেয়ালে হেলান দিয়ে চোখ মুদল কিশোর। ধীরে ধীরে বলতে লাগল, কাম। হিয়ার। গিডি আপ। উওউ। দুর্ভাগ্য কিংবা দুঃখ বোঝাতে ব্যবহার হয় এই উওউ শব্দটা। আর, হুয়া শারি, মানে হলো, থাম। শারি! এবং প্রতিটি কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে গাধাটা।
নিজের বাংকে গিয়ে বসে পড়ল রবিন। চিন্তিত ভঙ্গিতে ভ্রূকুটি করল একবার। বলল, কিশোর, তুমি কিছু একটা ভাবছ।
নীরবে রবিনের দিকে তাকিয়ে রইল কিশোর। জবাব দিল না।
আবার বলল রবিন, মুসাও তো ওই শব্দগুলোই ব্যবহার করেছিল। শারি তো ওর কথা শোনেনি?
জানি, রবিনের মতই অবাক হয়েছে কিশোরও। বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে না। তবু বলতে হচ্ছে, ওই গাধাটার সঙ্গে কোথাও দেখা হয়েছে আমার। সে জন্যেই আমাকে চিনতে পারছে। অন্তত আমার গলা যে চিনেছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
৫
সে রাতে পিরেটোর তৈরি প্রচুর পরিমাণে শিক কাবাব আর বনরুটি দিয়ে ডিনার সেরে সকাল সকাল শুতে গেল তিন গোয়েন্দা।
কয়েক ঘণ্টা পরেই ঘুম ভেঙে গেল কিশোরের। তার বাংকের পাশে জানালার বাইরে দেয়ালে গা ঘষার শব্দ। মাথা উচু করে জানালা দিয়ে দেখল, শারি। কাচের ভেতর দিয়ে নাক ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।
নিচু গলায় ধমক দিল কিশোর। হাত মুঠো করে দেখাল। চলে যেতে বলল গাধাটাকে। কিন্তু গেল না ওটা। এখন মুসা কিংবা রবিন জেগে উঠে যদি ব্যাপারটা দেখে ফেলে, তাহলে টিটকারি দিয়ে দিয়ে তার জান জ্বালিয়ে দেবে। বিড়বিড় করে আপনমনেই গাল দিল গাধাটাকে। তারপর বিছানা থেকে নেমে পেছনের দরজার দিকে রওনা হলো। পাল্লা খোলার সঙ্গে সঙ্গে ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে দিল শারি। তার বুকে নাক ঠেকিয়ে ঠেলতে আরম্ভ করল। সরল না কিশোর। গাধার বুকে ঠেলা দিয়ে ওটাকে বাইরে রাখার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু জানোয়ারটা ছোট হলেও গায়ে ভীষণ জোর, বালির বস্তার মত গাট হয়ে রইল যেন। কিছুতেই নড়ানো গেল না। শেষে বাধ্য হয়ে নিজেই বাইরে বেরিয়ে এল। মোলায়েম গলায় ওটার নাম ধরে কথা বলতে বলতে।
চোখের পলকে ঘুরে গেল গাধাটা। চাঁদের আলোয় কিশোর দেখল, ওটার পায়ের দড়ি নেই। মুক্ত। আবার সে ঘরে ঢোকার চেষ্টা করলেই ওটাও সঙ্গে ঢুকবে। আহ, মহা জ্বালাতন! এর হাত থেকে বাঁচা যায় কিভাবে? জবাব একটাই ওটাকে মাঠে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া।
কয়েক পা এগিয়ে থমকে দাঁড়াল সে। বাড়ির একমাথার বারান্দা থেকে কথা শোনা গেছে। একজন পুরুষ, একজন মহিলা। ডজের সঙ্গে কথা না বললেও তি গোয়েন্দার সঙ্গে বেশ ভাল ব্যবহার করেছে পিরেটো, কথা বলেছে। স্প্যানিশ ভাষায় কিশোরের কাছে আমেরিকার কথা জিজ্ঞেস করেছে। লেকটার কথা বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে, ওটাতে যাতে সাঁতার কাটতে না যায়। পর্বত থেকে নেমে আসা পানি নাকি বরফের মত শীতল, কোন মানুষই কয়েক মিনিটের বেশি টিকতে পারবে না। শুনেই এখন পিরেটোর ভারি কণ্ঠ চিনতে পারল কিশোর। তবে বেশ দূরে। অস্পষ্ট। কি বলছে বোঝা যায় না।
মহিলা কে? জানার কৌতূহল হলো কিশোরের। পা টিপে টিপে এগোল দরজার দিকে। পাশে থেকে চলল শারি। ওটার গলায় হাত বুলিয়ে আদর করতে করতে চলল কিশোর, যাতে শব্দ না করে গাধাটা।
মহিলার কথা এখন বোঝা যাচ্ছে। আমাকে সাহায্য করতেই হবে, পিরেটো। স্প্যানিশ ভাষা। পেয়ে যাওয়ার পর কি করবে আন্দাজ করতে পারছ? ওদেরকে খুনও করে বসতে পারে ডজ!
মুখ খারাপ করে মেকসিকান ভাষায় ডজকে কয়েকটা গাল দিল পিরেটো। বেশ, বলল সে। যতটা পারি, তোমাকে সাহায্য আমি করব। এখন থেকে আমি তোমার দলে।
পিরেটোকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিল মহিলা।
দ্রুত সেখান থেকে সরে এসে বাড়ির ছায়ায় অন্ধকারে লুকিয়ে পড়ল কিশোর। হালকা পায়ের শব্দ এগিয়ে যাচ্ছে চত্বরের দিকে। মহিলা চলে যাওয়ার আগে পলকের জন্যে ওকে দেখতে পেল সে। তবে এদিকে পেছন ফিরে থাকায় মুখ দেখা গেল না। চাঁদের আলো পড়েছে সোনালি চুলে।
কিশোরের গায়ে কাঁধ ঘষছে গাধাটা। এখান থেকেই দেখা যাচ্ছে মাঠে ঢোকার গেটটা খোলা। শারিকে সেখানে নিয়ে গেল কিশোর। তারপর চট করে গেটের এপাশে চলে এসে পাল্লা লাগিয়ে হুড়কো আটকে দিল। বেড়া ডিঙিয়ে চলে এল আবার এপাশে। ওপর দিয়ে মাথাটা এপাশে ঠেলে দিয়ে কর্কশ গলায় ডাকতে শুরু করল গাধাটা। লাফিয়ে পেরোতে পারবে না ওটা, বুঝে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল কিশোর।
ফিরে এল বিছানায়।
পরদিন সকালে ঘর থেকে বেরোনোর আগে সংক্ষেপে সব জানাল দুই সহকারীকে। বলল, জরুরি একটা টেলিফোন করতে হবে। ডজকে ঘণ্টা দুয়েকের জন্যে বের করে নিয়ে যেতে হবে বাড়ি থেকে এবং এই কাজটা করতে হবে রবিন আর মুসাকেই।
কাঁচা মরিচ মিশিয়ে মেকসিকান কায়দায় ডিম ভেজে দিল পিরেটো। কিশোরের খুব পছন্দ এই খাবারটা, কিন্তু পেট ব্যথা করছে, এই ছুঁতো দিয়ে খেল না।