আর দেরি করল না শারি। মহা আনন্দে ছুটল স্বজাতির সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্যে।
ইসাবেলের বারোর পেছনে চড়ে বসল কিশোর।
আবার রওনা হলো দলটা। তাড়াতাড়ি করলে অন্ধকারের আগেই পৌঁছে যেতে পারবে গায়ে। ওখান থেকে চিহুয়াহুয়ায় বাবাকে ফোন করবে টনি। জানাবে সে আর তার মা নিরাপদেই পিরেটোর সঙ্গে গাঁয়ে চলে এসেছে।
পরদিন সকালে বাস ধরে আমেরিকায় রওনা হবে তিন গোয়েন্দা।
লস অ্যাঞ্জেলেসে দেখা করব আমি তোমার সাথে, একসময় রবিনকে বলল টনি। রক কনসার্ট আমার খুব ভাল লাগে। তোমার সঙ্গে ঘুরে ঘুরে দেখব। কয়েকটা।
চলে এসো, যে-কোন সময়, খুশি হয়েই দেখাব।
পাশাপাশি চলছে মুসা আর কিশোর। পিরেটো আর ইসাবেলের সঙ্গে। মুসা বলল, একটা কথা আমার মাথায় ঢুকছে না, ডজ কি করে জানল কাস অ্যাঞ্জেলেসেই পাওয়া যাবে টনির মত কণ্ঠস্বরের লোক? যেন একেবারে জেনেশুনেই গেছে, ওখানে রয়েছে কিশোর পাশা। আমেরিকার অন্য কোন জায়গায় গেল না কেন?
জেনেশুনেই তো গেছে, জবাব দিল পিরেটো।
জেনেশুনে গেছে?
তাই তো। হাসল মেকসিকান। তোমরা যে কতখানি বিখ্যাত, তা তোমরা নিজেরাও জানো না। অনেকেই চেনে তোমাদেরকে। বিশেষ করে তোমাদের ওই টিভি অনুষ্ঠান পাগল সঙ্ঘ দেখার পর।
অনুষ্ঠানটা ডজও দেখেছিল নাকি? রবিনের প্রশ্ন।
দেখেছিল। আমিও দেখেছি। টনি যখন র্যাঞ্চে গেল, ওর গলা শুনে তো আমি চমকেই উঠেছিলাম। আরি, টেলিভিশনের মোটুরাম এল কোথেকে! বলেই চোখ পড়ল কিশোরের ওপর। মুখ কালো করে ফেলেছে গোয়েন্দাপ্রধান। সেটা লক্ষ্য করে তাড়াতাড়ি বলল পিরেটো, সরি, কিশোর, তোমাকে রাগানোর জন্যে বলিনি। টেলিভিশনের সৌজন্যে সে-ও জানে, ওই ডাকনাম একদম পছন্দ নয় কিশোরের।
হাসল মুসা। তাহলে এই ব্যাপার। মোটুরামই ডজকে টেনে নিয়ে গেছে রকি বীচে। আসলে আমাদের জন্যে ফাঁদ পাততেই গিয়েছিল লোকটা।
এবং সেই ফাঁদে দিব্যি পা দিয়ে বসেছে রহস্য পাগল কিশোর পাশা, মুচকি হাসল টনি।
নীরবে পথ চলতে লাগল আবার দলটা।
কিশোর ভাবছে, বীন আর চাল সেদ্ধর কথা। যতদিন বেঁচে থাকবে, আর একটা বীন কিংবা চাল দেখতে চায় না সে। যদিও জানে, চাল ছাড়া থাকতে পারবে না। লস অ্যাঞ্জেলেসে থাকলেও সে ভাতেরই পাগল। সে এবং তার চাচা রাশেদ পাশা। ভাত ছাড়া চলে না। আমেরিকাতে থেকেও পুরোদস্তুর বাঙালী।
চলতে চলতে হঠাৎ মুসার চোখ পড়ল রবিনের টি-শার্টের ওপর। লেখা রয়েছেঃ সারভাইভার।
তাই তো! এর চেয়ে সত্যি কথা আর হতে পারে না ওদের জন্যে। সারভাইভার! অনেক কষ্টেই তো বেঁচে ফিরল।
পেছনে ফিরে তাকাল মুসা। তাকিয়ে রইল পর্বতমালার দিকে। এত বিপদ থেকে বেঁচে ফিরে এসেছে, তবু আবার যদি তাকে ওখানে যেতে বলা হয়, নির্দ্বিধায় রাজি হয়ে যাবে, এর এমনই এক আকর্ষণ। এই আকর্ষণই যুগ যুগ ধরে টেনেছে মানুষকে। সাড়া না দিয়ে পারেনি মানুষ। সমস্ত বিপদ, বাধা, ভয় উপেক্ষা করে ছুটে গেছে ওর কাছে। মুসাও তো মানুষ, প্রচন্ড এই আকর্ষণ এড়ানোর ক্ষমতা তার কোথায়?
***