ওয়াকিটকি নামিয়ে রেখে ইসাবেলের বাহুতে হাত রাখল কিশোর। আপনার উইগ পরে নিন।
তাড়াতাড়ি পকেট থেকে পরচুলা বের করে পরে নিল ইসাবেল। দশ গজ দূরে এসে দাঁড়িয়ে গেল ডজ।
ইসাবেল, বেরিয়ে আসুন, ডাক দিল সে।
নড়ল না ইসাবেল।
ভয় পাবেন না, স্প্যানিশ ভাষায় বলছে ডজ। আমি জানি ওই পাথরের আড়ালেই আছেন আপনি। ছেলেরা আপনার কথা সব বলেছে আমাকে। আমাদেরকে অনুসরণ করে আপনি এসেছেন এখানে। আমার রাইফেলটাও পেয়েছেন। যা হবার হয়েছে। আসুন। দেখি, একটা রফায় আসতে পারি কিনা আমরা।
উঠে দাঁড়াল ইসাবেল। দুহাতে চেপে ধরেছে রাইফেল।
কিশোর বসেই রইল। ভাবছে, মুসা আর রবিনকে কোন ভাবে কাবু করে ফেলেছে র্যাঞ্চার। বোধহয় ওই ছুরি দিয়েই বাঁধন কেটে ফেলেছিল। যেটা ঠেকিয়ে রেখেছে টনির পিঠে। তবে যতক্ষণ ডজ না জানছে সে এখানে রয়েছে, ততক্ষণ চমকে দেয়ার একটা আশা রয়েছে। হয়ত সুযোগ বুঝে কাবু করে ফেলতে পারবে লোকটাকে।
রাইফেলের ট্রিগারে ইসাবেলের আঙুল।
আপনাকে আমি চিনি, ইসাবেল বলল, সিনর মরিস। পঞ্চো ভিলার পেসের খোঁজে এসেছেন।
ঠিকই ধরেছেন, স্বীকার করল ডজ। আপনিও এসেছেন সেজন্যেই।
মাথা কঁকাল ইসাবেল। আমি জানি কোথায় লুকানো আছে ওগুলো। আপনি জানেন না।
জেনে যাব। টনিকে ঠেলা দিল ডজ চলার জন্যে, নিজেও এগোল। এই ছেলেটা আমাকে নিয়ে যাবে সেখানে ও আর ওর বাবা মিলে জায়গাটা বের করে ফেলেছে।
ভুল বলেছে আগে জানত, এখন আর জানে না। কাল আমি গুহাঁটা পেয়ে গিয়ে পেসোগুলো সরিয়ে ফেলেছি। ছুরিটা সরান। তারপর, আসুন কথা বলি, দেখি কি করা যায়।
বেশ। ছুরিটা বেল্টে গুজল আবার ডজ। দুজনেই আমরা সমান সমান অবস্থায় আছি। দুজনের কাছেই রাইফেল। তবে পেসেগুলো এই এলাকা থেকে সরাতে হলে আপনাকে আমার সাহায্য নিতেই হবে। পর্বতের চূড়ার দিকে তাকল সে। ওটাও আর সময় পেল না আগুন ছিটানোর!
এখনও এগোচ্ছে ডজ, ধীরে ধীরে, টনিকে বর্ম বানিয়ে।
থামুন! কড়া গলায় বলল ইসাবেল। কিন্তু বিপদটা আঁচ করতে দেরি করে ফেলেছে।
ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে ডজ। দাঁতে দাঁত চেপে বলল, তুমি! ইংরেজিতে বলছে সে এখন, মেকসিকান উইগ দিয়ে বোকা প্রায় বানিয়ে ফেলেছিলে! কিন্তু ওই নীল চোখ লুকাবে কোথায়, নেলি?
কন্টাক্ট লেন্স লাগাতে ভুলে গিয়েছিল ইসাবেল।
তারপর পলকে ঘটে গেল অনেকগুলো ঘটনা।
রাইফেল তুলতে শুরু করল ইসাবেল। লাফিয়ে একপাশে সরে গেল ডজ। নিশানা করল ইসাবেলের দিকে।
গুলির শব্দ শুনল কিশোর।
ডজের হাত থেকে যেন উড়ে চলে গেল রাইফেলটা। পাঁচ গজ দূরে পাথরের ওপর গিয়ে পড়ল।
লাফ দিয়ে বেরিয়ে এসে একটানে লোকটার কোমরে গোঁজা ছুরি কেড়ে নিল কিশোর।
খটাখট খটাখট শোনা গেল খুরের শব্দ।
ঘোড়া ছুটিয়ে এল পিরেটো। হাতে একটা .৪৫ ক্যালিবারের কোন্ট পিস্তল। সেটা তাক করল ডজের দিকে। হুঁশিয়ার করল, পরের বার আর বাঁটে সই করব না, মাথায় করব। ইসাবেলের দিকে তাকাল। মহিলাও তার রাইফেল তাক করে রেখেছে ডজের দিকে। এইবার সেফটি ক্যাচ অফ করা আছে।
গুলি করো না, ইসাবেলকে বলল পিরেটো। ছেড়ে দাও। গুলি করে মারলে লাশ কবর দেয়ার সময়ও পাব না। আর কবর না দিতে পারলে, খোলা জায়গায় শকুনের খাবার বানিয়ে রেখে গেলে অভিশাপ লাগবে আমাদের ওপর।
ডজের দিকে তাকাল সে। চিৎকার করে বলল, যাও, ভাগ! গিয়ে খুঁজে বের করো তোমার পেসো!
কালো হয়ে গেছে ডজের মুখ, রাগে। চোখে তীব্র ঘৃণা।
যাও! যাচ্ছ না কেন? স্প্যানিশ ভাষায় আবার ধমকে উঠল পিরেটো। পঞ্চো ভিলার গুহায় যাও। টনিকে সঙ্গে নেয়ার আর দরকার নেই। ওটাতে যাওয়ার জন্যে যথেষ্ট চিহ্ন দেখতে পাবে। পায়ের ছাপের ছড়াছড়ি এখন ওপথে।
এক সেকেও পিরেটোর দিকে তাকিয়ে রইল ডজ। ওর চোখে খুনীর দৃষ্টি দেখতে পেল কিশোর। কিন্তু কিছু করার নেই। পুরোপুরি অসহায় এখন। গুলি করে ওর রাইফেলের বাট ভেঙে দিয়েছে পিরেটো। ছুরি কেড়ে নিয়েছে কিশোর। ঘুরে দাঁড়িয়ে হাঁটতে শুরু করল ভিলার গুহাঁটা যেদিকে রয়েছে সেদিকে।
পরস্পরকে জড়িয়ে ধরল মা-ছেলে। ঘোড়া থেকে নামল পিরেটো। হতচ্ছাড়া এই ওয়াকিটকি! কাল রাতে হাত থেকে পড়ে গিয়ে আবার নষ্ট হয়ে গেছে। শব্দই বেরোচ্ছে না।
চূড়ার দিকে তাকাল কিশোর। আরেক ভলক কালো ধোঁয়া বেরোল।
রবিন আর মুসাকে বের করে আনা দরকার, বলল সে। গুহায় আটকা থাকলে মরবে।
মুখের ভেতর দুই আঙুল পুরে জোরে শিস দিল পিরেটো। ঢালের ওপাশ থেকে ছুটতে ছুটতে এল আরেকটা ঘোড়া। চিনতে পারল কিশোর ডজ ওটাতে করেই এসেছিল।
ওটাকে বাঁধা দেখলাম, পিরেটো জানাল। খুলে নিয়ে এসেছি। চলো, জলদি চলো, পালাই এখান থেকে।
কিশোর চড়ল শরির পিঠে। ইসাবেল তার নিজের বারোতে, আর টনি চড়ল ডজের ঘোড়ায়। আগে আগে রওনা হলো কিশোর, টনির গুহার দিকে।
গুহা থেকে শখানেক গজ দূরে থাকতে কি যেন এসে বিধল কিশোরের গালে। তারপর হাতে। কপালে হাত রেখে ওপরে তাকাল সে।
পাথর-বৃষ্টি হচ্ছে!
খুদে পাথর ঝরে পড়ছে আকাশ থেকে। একটা পড়ল কাঁধে। ফেলার চেষ্টা করল ওটাকে সে। ছ্যাকা লাগল হাতে। কিছুতেই শার্ট থেকে খুলতে না পেরে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল। পাথর নয়। ছোট একটা কাচের পুঁতি, আগুনের মত গরম।
পাহাড়ের চূড়ায় ঘটছেটা কি? দেখা যাচ্ছে না এখান থেকে। তবে সাংঘাতিক বিপদ যে আসছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।