জলদি করো!
বিড়বিড় করে নিজেকেই একটা গাল দিল মুসা, অসতর্ক হয়েছিল বলে। হাঁটু গেড়ে বসে পিঠের ওপর হাত নিয়ে এল।
ঢিল করে বাঁধল প্রথমে টনি। কিন্তু ফাঁকিটা ধরে ফেলল ডজ। শক্ত করে বাঁধার জন্যে ধমক লাগাল ওকে।
রবিনকেও বাঁধা হলো।
ডজ বলল, এবার কিছু প্রশ্নের জবাব জানা দরকার আমার। বাধাই তো আছি, রবিন বলল। আর জবাব দিয়ে কি হবে?
হেসে উঠল টনি আর মুসা।
চুপ! চেঁচিয়ে উঠল ডজ। রাইফেলের নল দিয়ে খোঁচা মারল রবিনের বুকে। রাগে জ্বলে উঠল রবিনের চোখ। কিছু বলল না। দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করল।
কিশোর গেছে কোথায়? জানতে চাইল ডজ।
আমরাও তো সে কথাই জানতে চাইছি, মুসা বলল। বোধহয় পিজা-টিজা কিনতে গেছে।
বাজে কথা রাখ!
ডজের চেহারা দেখতে পাচ্ছে টনি। জবাব না পেলে অনর্থ ঘটাবে ওই লোক, বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না তার। সে তখন বলল, ইসাবেলের খোঁজে।
ইসাবেল কে?
আমরা জানি না। শুধু জানি, মহিলা মেকসিকান। তিন গোয়েন্দার কাছে যা যা শুনেছে, সেভাবে চেহারার বর্ণনা দিল। কয়েক দিন ধরে নাকি ওদেরকে অনুসরণ করে এসেছে। আজ সকালে তার বারোটাকে দেখেছি গুহার বাইরে। কাজেই শারির সাহায্যে ওটাকে নিয়ে গেছে কিশোর ইসাবেলকে খুঁজে বের করার জন্যে।
বন্দুক-টন্দুক আছে মহিলার কাছে?
দ্রুত ভাবছে টনি। আছে, সেটা বলা কি ঠিক হবে? ওরা তো নিশ্চিত নয়। বলল, আমরা জানি না।
বেশ। সতর্ক থাকতে হবে আরকি আমাকে। কালো চুলের বেনি। রাইফেলটা রবিনের দিক থেকে টনির দিকে ফেরাল ডজ। আমাকে ভিলার গুহায় নিয়ে চল। কোন চালাকির চেষ্টা করবে না। আমি তোমার পেছনেই থাকব।
গুহা থেকে বেরিয়ে গেল দুজনে। সুড়ঙ্গে ওদের জুতোর শব্দ শোনা গেল।
পদশব্দ মিলিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঁধন খোলার চেষ্টা চালাল দুই গোয়েন্দা।
হাত খুলতে পারবে? জিজ্ঞেস করল মুসা।
হুডিনির মত জাদু জানলে পারতাম। তুমি?
একই অবস্থা। কিশোরটা যে কোথায় গেল!
চলে আসবে ঠিকমতই, দেখো। ওকে বোকা বানানো কঠিন। সব সময়ই একটা না একটা বুদ্ধি বের করে ফেলে। ডজকে দেখে ফেললেই আন্দাজ করে ফেলবে কি ঘটেছে। তাছাড়া তার সঙ্গে রয়েছে শারি। আগে থেকেই হুঁশিয়ার করে দিতে পারবে কিশোরকে।
তা বটে।…আচ্ছা, একটা গন্ধ পাচ্ছ?
নাক কুঁচকে শ্বাস টানল রবিন। মনে হয় পচা ডিমের।
বাইরে অদ্ভুত কিছু ঘটছে, মুসা বলল। আমি যে তখন বাইরে গিয়েছিলাম, দেখি, কালো হয়ে গেছে সব কিছু। যেন রাত নামছে পর্বতে। ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে সমস্ত আকাশে। …হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ, পচা ডিমের মতই গন্ধ।
আগেও কয়েকবার ধোঁয়া দেখেছি, মনে আছে? আচমকা চিৎকার করে বলল রবিন, পচা ডিম নয়, গন্ধক! আগ্নেয়গিরিতে থাকে! খোদা, একটা জ্যান্ত আগ্নেয়গিরির ওপরে বসে আছি আমরা!
কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে যেন মুসার চোখ। খাইছে! এই গুহায় থাকলে আমাদের তো কিছু হবে না! কিন্তু কিশোরের? সে তো রয়ে গেল বাইরে।
১৬
শুয়ে পড়ুন! বলে উঠল কিশোর। জলদি! শুয়ে পড়ুন!
আগ্নেয়গিরির মুখ থেকে ভলকে ভলকে উঠছে কালো ধোঁয়া। সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে ইসাবেল। কালো কুয়াশার মত ঢেকে ফেলেছে পর্বতের চূড়া। মহিলার হাত ধরে টেনে তাকে একটা বড় পাথরের আড়ালে নিয়ে গেল সে।
কি হয়েছে?
আস্তে বলুন! ফিসফিসিয়ে বলল কিশোর। ডজ!
কিছু ছাই ঝরে পড়ল আকাশ থেকে। জোরাল বাতাস বইছে। ধোঁয়া সরিয়ে নিচ্ছে। বাতাসে রাসায়নিক পদার্থের গন্ধ। সাবধানে মাথা বের করে উঁকি দিল কিশোর। আধ মাইল মত দূরে রয়েছে র্যাঞ্চার। এদিকেই আসছে। সে একা নয়।
ওর আগে আগে হাঁটছে টনি। ঘাড়ের পেছনে দুই হাত তোলা। পিঠের দিকে রাইফেল তাক করে রেখেছে ডজ।
টনি! ইসাবেলও দেখেছে ছেলেকে।
হাত চেপে ধরে তাকে আটকে রাখতে হলো কিশোরকে। নইলে ছুটে বেরিয়ে যাচ্ছিল মহিলা।
ওভাবে হবে না, নিচু স্বরে বলল কিশোর। টনিকে বাঁচাতে পারবেন না। গুলি খাবেন ডজের।
যে-কোন মুহূর্তে, ভাবছে সে, বারো দুটোকে দেখে ফেলতে পারে ডজ। টনির ওপর কড়া নজর না থাকলে এতক্ষণে দেখে ফেলত।
রাইফেল তুলল ইসাবেল। ওর হাতে গুলি করার চেষ্টা করি। বাঁট ঠেকাল কাঁধে। নল রাখল পাথরের ওপর।
সাবধানে নিশানা ঠিক করল সে। ট্রিগারে চেপে বসতে শুরু করল আঙুল। টিপে দিল পুরোপুরি।
গুলির শব্দের অপেক্ষা করছে কিশোর। কিছুই ঘটল না। বেরোল না গুলি।
আবার ট্রিগার টিপল ইসাবেল। হলো না কিছু এবারেও। আবার টিপল। আবার।
সেফটি ক্যাচ! কিশোর বলল। অন করা আছে।
দ্রুত হাতে ক্যাচ অফ করে দিল ইসাবেল। আবার নিশানা করল। কিন্তু দেরি হয়ে গেছে। বারো দুটোকে দেখে ফেলেছে ডজ। লাফিয়ে এসে টনির কাঁধ চেপে ধরল। ওর শরীর দিয়ে আড়াল করল নিজেকে।
রাইফেল নামাল ইসাবেল। মৃদু কণ্ঠে স্প্যানিশ ভাষায় কি বলল, বোঝা গেল। গালই দিল বোধহয়।
বেল্ট থেকে ছুরি খুলে নিল ডজ। টনির পিঠে ঠেকাল। ওকে হাঁটতে বলে নিজেও পা বাড়াল পেছনে।
ইসাবেলের কাঁধের ওয়াকিটকিটা নিজেই খুলে নিল কিশোর। সুইচ অন করল মেসেজ পাঠানোর জন্যে। ঠোঁটের কাছে ধরে বলল, পিরেটো! পিরেটো! শুনতে পাচ্ছেন? স্প্যানিশ ভাষায় বলল সে। পিরেটো! কাম ইন! ওভার।
রিসিভ করার জন্যে সুইচ টিপল। নীরবতা।
পরের একটা মিনিট চেষ্টা চালিয়ে গেল কিশোর। একশ গজ দূরে আছে আর ডজ এগিয়ে আসছে। টনির পিঠে ছুরি ঠেকানো।