ডজ জানে পিরেটো ওর পিছু নিয়েছে?
না জানলেও আন্দাজ করতে বাধা কোথায়? হতে পারে, এ কারণেই ঘোড়ার পা খারাপের ছুতো দিয়ে রয়ে গিয়েছিল পেছনে। তারপর ঘুরে চলে গিয়েছিল, পিরেটোর জন্যে ঘাপটি মেরে ছিল কোথাও। আমাকেও দেখে থাকতে পারে। একটা বারো আর একজন মেকসিকান মহিলাকে কেয়ারই করবে না সে। কিন্তু পিরেটোকে করবে। ঠেকানোর জন্যে খুন করবে। আবার দ্বিধা করল ইসাবেল। হয়তো করে ফেলেছেও!
আপনি অযথা ভয় পাচ্ছেন, মহিলাকে অভয় দেয়ার চেষ্টা করল কিশোর। পিরেটোকে আমি চিনেছি। ডজ চালাক, সন্দেহ নেই। পিরেটো তার চেয়েও অনেক চালাক। ও অন্য জিনিস।
হ্যাঁ, নিজেকে সান্ত্বনা দেয়ার ভঙ্গিতেই যেন বলল ইসাবেল। ঠিকই বলেছ।
দ্রুত পা চালিয়েছে ওরা। যেতে যেতে কিশোর জানাল, কি করে ডজ তাকে ব্যবহার করেছে পঞ্চো ভিলার গুহা খুঁজে দেয়ার কাজে।
টনির সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে ইসাবেল, বলল। টেপে রেকর্ড করা কথার চিঠি নিয়মিত পাঠায় টনির নামে পর্বতের ওপাশের গায়ে। টনিও তার জবাব পাঠায় লস অ্যাঞ্জেলেসে। সুতরাং শারির অন্ধ হওয়া থেকে শুরু করে পশু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সব খররই জানে মহিলা। টনি এ-ও জানিয়েছে, সাবধান করে দিয়েছে, ডজ হয়তো শারির সাহায্যে তাকে আর তার বাবাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে পারে পেসোগুলোর জন্যে।
তারপর পিরেটোর কাছ থেকে একটা চিঠি পায় ইসাবেল। তাতে জানিয়েছে, লস অ্যাঞ্জেলেসে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে ডজ। সেখানে কোথায় উঠবে সে, তা-ও জানিয়েছে পিরেটো। ক্রসওয়ার্ড পাজল প্রতিযোগিতার কথাও জানিয়েছে। খামের ভেতরে ভরে পাজলের একটা কপি পাঠিয়েছে। লারেটোতে প্রিন্ট করেছে ওটা। পাজলে কি লিখেছে, জানা নেই পিরেটোর। তবে সন্দেহ ঠিকই করেছে, ডজ কোন একটা শয়তানীর মতলবে আছে।
আমিও প্রথমে কিছু বুঝতে পারিনি, ইসাবেল বলল। তবে ড্যাগউডস ওয়াইফ কি, বুঝেছিলাম। শারির কথা বলতে চেয়েছে ডজ। হোটেলটার ওপর নজর রাখতে লাগলাম, যেখানে ডজের ওঠার কথা। কয়েক দিন পরেই সেখানে গেল ডজ।
তারপর থেকে র্যাঞ্চারের ওপর কড়া নজর রাখতে লাগল মহিলা। একদিন তার পিছু নিয়ে গিয়ে হাজির হলো পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডে। গেটের কাছ থেকেই দেখল, অফিসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে কিশোরের সঙ্গে কথা বলছে লোকটা। গাড়ি একটা ঝোপের আড়ালে রেখে হেঁটে ফিরে এল ইসাবেল। জঞ্জালের আড়ালে আড়ালে নিঃশব্দে চলে গেল কিশোর আর ডজ কি কথা বলছে শোনার জন্যে।
তোমাদেরকে কথা বলতে শুনলাম, ইসাবেল বলল। চমকে গেলাম তোমার গলা শুনে। একেবারে টনির গলা।
দুয়ে দুয়ে চার যোগ করতে আরম্ভ করল তখন মহিলা। অনেক কথাই আন্দাজ করে ফেলল। মেকসিকান রমণীর ছদ্মবেশে তিন গোয়েন্দাকে অনুসরণ করে চলে গেল লারেটোতে।
তোমাদেরকে জিপে তুলে নিতে দেখলাম ডজকে। তখন আমি চলে গেলাম লেকের ওপাশের গায়ে। একটা ঘর ভাড়া নিলাম। যোগাযোগ করলাম পিরেটোর সঙ্গে। বনের ভেতর তোমাদের ওপর চোখ রাখলাম। শারি যখন তোমার কথা শুনে তোমার ভক্ত হয়ে গেল, কি ঘটতে চলেছে বাকিটা অনুমান করতে আর অসুবিধে হল না আমার।
নীরবে পথ চলল কিছুক্ষণ দুজনে। কয়েকটা প্রশ্নের জবাব দেবেন? কিশোর জিজ্ঞেস করল।
করো।
পিরেটোর সঙ্গে আপনার পরিচয় হলো কিভাবে? আপনার আর ডজের মাঝে এমন কি ঘটেছে যে…
একজন আরেকজনকে এতটা ঘৃণা করি, এই তো?
হ্যাঁ।
তাহলে অনেক আগের কথা বলতে হয়। আমি ছোট থাকতেই আমার মা মারা যায়। একটা মেকসিকান কোম্পানিতে মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারের কাজ করত আমার বাবা। মা মারা যাওয়ার পর আমাকে মেকসিকোতে নিয়ে গেল। বাবা থাকত খনির কাজে ব্যস্ত, ওই সময়টাতে আমাকে মাঝে মাঝে দেখতে আসত পিরেটো। এই ব্যাঞ্চের মালিক ছিল তখন সে। ভালই অবস্থা ছিল তার। গরু পালত, ঘোড়া পালত। একদিন এল ডজ…
র্যাঞ্চটা নিয়ে নিল পিরেটোর কাছ থেকে। ডজের অফিসে দেখা দলিলগুলোর কথা মনে পড়ল কিশোরের।
হ্যাঁ। অনেক র্যাঞ্চারের মতই ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিয়ে কাজ চালাত পিরেটো। ঋণ-পত্রগুলো কিনে নিল ডজ। শেষ চেষ্টা করতে চাইল পিরেটো। গরু-ঘোড়া বিক্রি করে ধার শোধ করতে চাইল। সে সুযোগ দেয়া হলো না তাকে। র্যাঞ্চ দখল করে নেয়া হলো। আমি গেলাম তখন আদালতে, পিরেটোকে সাহায্য করতে। লাভ হলো না। ওখানেও ঘুষখোর লোক আছে। তাদেরকে টাকা দিয়ে বশ করল ডজ। শেষ পর্যন্ত র্যাঞ্চটা হারাতেই হলো পিরেটোকে।
নিচের উপত্যকার দিকে তাকাল কিশোর। সেখান থেকে দৃষ্টি ছড়িয়ে দিল ওপারের পর্বতের দিকে। সে আশা করল, ইসাবেলের অনুমান ভুল, খানিক পরেই এসে হাজির হবে পিরেটো।
কিন্তু তার কোন চিহ্নই চোখে পড়ল না। আসছে না।
গরম লাগল। যেন আগুনের আঁচ। হঠাৎ করেই ঘটল ঘটনাটা। বাতাসে কোন রকম জানান দেয়নি। বদলে যেতে শুরু করেছে পরিবেশ।
গরম বাড়ছে। অন্ধকার হয়ে আসছে।
ওপরে তাকাল কিশোর। ছড়িয়ে পড়েছে ধূসর রঙের মেঘ কেঁপে উঠল পায়ের নিচের মাটি। পর্বতের চূড়াটা দেখতে পাচ্ছে। তীব্র গতিতে সেখান থেকে ওপরে উঠে গেল একঝলক ধোঁয়া। এর আগে দুবার দেখেছে ধোঁয়া, তার চেয়ে অনেক ঘন এখনকার ধোঁয়া, এবং কালো।
বুঝে ফেলল ব্যাপারটা। ইস, গাধা হয়ে ছিল নাকি এ কদিন! নিজেকেই লাথি মারতে ইচ্ছে করল তার। আরও আগেই বোঝা উচিত ছিল। মুসা তো প্রশ্নই তুলেছিল, মেঘটা অন্য রকম কেন? তারমানে, ওগুলো ধোঁয়া নয়, মেঘও নয়, বাষ্প।