কিশোর জানাল, টনির বাবা গেছে ডিনামাইট কিনতে, যাতে গুহার মুখে পড়ে থাকা পাথরের স্থূপ উড়িয়ে দিতে পারে। পঞ্চো ভিলার গুহায় ঢুকতে চায় দুজনে। কয়েকদিনের মধ্যেই ফিরে আসবেন টনির বাবা।
ডজের রাইফেল পেলেন কি করে? জানতে চাইল কিশোর।
রাতে আমি ঘুমিয়ে থাকার সময় বারোটা ছুটে গেল। আজ সকালে খুঁজতে বেরোলাম। ওটাকে তো পাইনি, পেলাম এই রাইফেলটা, একটা ক্যাকটাসের গোঁড়ায়। এতে ডজের নাম খোদাই করা রয়েছে। ডজকে দেখলাম না কোথাও। মনে হল, এটা একটা ফাঁদ হতে পারে। হয়ত আরেকটা রাইফেল নিয়ে কোথাও ঘাপটি মেরে আছে সে। কিংবা বুটের মধ্যে যে ছুরিটা লুকিয়ে রাখে, সেটা হাতে নিয়ে। তাড়াতাড়ি চলে এলাম তখন এখানে। কারণ এদিক থেকে তাকে বেরোতে দেখেছিলাম।
হাসল কিশোর। ইসাবেল যখন রাইফেল তুলে নেয়, তখন ডজের কি অবস্থা সেটা ভেবে। ওই লোকটা লুকিয়ে ছিল না, ছিল হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মেঝেতে পড়ে। আর কয়েক মিনিট আগে গেলেই সব দেখতে পেত ইসাবেল। রবিন যেখানে রাইফেল ছুঁড়ে ফেলেছিল, সেখান থেকে টনির গুহাঁটা দেখা যায় না। সেজন্যেই ওটাও দেখতে পায়নি ওর মা।
আবার হাসি ফুটেছে ইসাবেলের মুখে। কি করে বুঝলে আমিই টনির মা? স্প্যানিশ ছাড়া আর কিছু বলিনি আমি। আর এই পোশাকে একটুও আমেরিকান মনে হয় না আমাকে।
শালটা হাতে নিয়ে এক বেনি ধরে টান দিল সে। খুলে চলে এল কালো পরচুলা। পকেটে ভরে রেখে আঙুল চালাল সোনালি চুলে।
মনে হচ্ছিল। স্রেফ সন্দেহ। একটা মুহূর্ত চুপ করে রইল কিশোর। দুটো ব্যাপার পরিষ্কার হওয়া দরকার। সেদিন রাতে আগুনের ধারে বসে যখন কথা বলছিলেন, বার বার হাতের ঘড়িটাকে নিচ থেকে ওপরে ঠেলে তুলছিলেন। চামড়ায় হালকা রঙের একটা দাগ দেখেছিলাম…
নিজের হাত দেখাল কিশোর। এই অভিযানে এসে দীর্ঘ সময় রোদে কাটিয়ে চামড়ার রঙ অন্যরকম হয়ে গেছে। হাত ঘড়ি খুলে নিল সে। সর্বক্ষণ ঘড়ি বাঁধা থাকায় কব্জির কাছে একটা রিঙ তৈরি হয়েছে। ওখানটাতে রোদ লাগতে পারেনি, ফলে চামড়ার আসল রঙ রয়ে গেছে। যেখানে যেখানে রোদ পড়েছে ওখানকার চামড়ার রঙ গাঢ়।
মেকসিকানদের চামড়ার রঙ সাধারণত বাদামী হয়, বলল সে। সারাক্ষণ হাতে ঘড়ি বাঁধা থাকলে ওখানকার চামড়ার রঙ বড় জোর বাদামী হবে, সাদা হতে পারে না কিছুতেই। কিন্তু অ্যাংলোদের চামড়া হয়ে যায় ফ্যাকাসে সাদা।
মাথা ঝাকাল ইসাবেল। খুব চালাক ছেলে তুমি, আমার টনির মত।
আমার বন্ধু রবিনের চোখে পড়েছে আরেকটা জিনিস। আপনার কন্টাক্ট লেন্স। অভিনয় করার সময় অনেক সময় ওসব পরে নেয় অভিনেতারা, ছবিতে তাদের চোখের রঙ বদলে দেয়ার জন্যে। সেটা যখন বলল আমাকে রবিন, সন্দেহটা আপনার ওপর বাড়ল আমার। সূত্রও বলতে পারেন এগুলোকে। মনে হতে লাগল, বাদামীটা আপনার শরীরের স্বাভাবিক রঙ নয়, আর চোখের রঙও মেকসিকানদের মত গাঢ় বাদামী নয়।
না, তা নয়। মাথা নিচু করে লেন্স দুটো বের করে আনল ইসাবেল। বেরিয়ে পড়ল চোখের আসল রঙ। একেবারে টনির মত, নীল। লেন্সগুলো একটা প্লাস্টিকের কেসে ভরে রেখে দিল স্কার্টের পকেটে।
তাছাড়া, কিশোর বলল, আপনাকে ইংরেজি বলতেও শুনেছি আমি। তবে, স্প্যানিশে যখন কথা বলছিলেন, তখন সত্যিই আপনার গলা চিনতে পারিনি। আপনিই আমাকে র্যাঞ্চে ফোন করে বলেছিলেন লেকের ওপাড়ের গায়ে যেতে।
কিশোরের হাত ধরল ইসাবেল। আমি সত্যি দুঃখিত। পিরেটো আমাকে ওই বুদ্ধি বলেছিল। আমি কল্পনাই করতে পারিনি, দাঁড়টা এতটা পচা। আমি তোমাকে খুন করতে চাইনি। কেবল ভয় দেখানোর চেষ্টা করছিলাম…
যাতে শারিকে নিয়ে এখানে আসতে না পারি?
মাথা ঝাকাল ইসাবেল। আমি আতঙ্কের মধ্যে ছিলাম। ডজ এসে টনি আর ওর বাবাকে খুঁজে পেলে খুন করতে পারে, এই ভয়ে। পেসোগুলো পাওয়ার জন্যে সব করতে পারে সে। থামল মহিলা। এতই ভয় পেয়েছিলাম আমি, আরও বোকামি করেছি। বাসে তোমাদেরকে ঠেকাতে চেয়েছি, যাতে র্যাঞ্চে ঢুকতে না পার। তারপর সেদিন রাতে শারিকে চুরির চেষ্টা করেছি। আমার বোঝা উচিত ছিল, ও আমাকে কাছেই ঘেঁষতে দেবে না।
একটা পাথরের আড়াল থেকে ওয়াকিটকি বের করল ইসাবেল। ফিতে আছে ওটার। কাঁধের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাইফেলটা হাতে তুলে নিল আবার। চলো। টনির গুহায়। ওকে দেখার জন্যে অস্থির হয়ে গেছি আমি।
পিরেটোর সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে? জিজ্ঞেস করল কিশোর। ও, তাহলে এটাও জানো! সবই জানো দেখা যায়!
দুটো বারোকে নিয়ে চলেছে কিশোর। হাসল। অনেক কিছুই অজানা আছে এখনও। এই ধরুন; আপনার আসল নাম। ইসাবেল আপনার নাম নয়, তাই না?
না, নেলি। তবে তুমি ইসাবেল বলেই ডাকতে পারো।
আসলে, আমি এমন এক দেশের মানুষ, যেখানে বয়স্কদের নাম ধরে ডাকার নিয়ম নেই। সেটা অভদ্রতা। আমেরিকায় থাকলে কি হবে, রক্তের টান আর সামাজিকতা তো ভুলতে পারি না। আপনাকে আমি আন্টি বলেই ডাকব। নেলিআন্টি।
হাসল ইসাবেল। আচ্ছা, ডেকো।
কিশোর আগের কথার খেই ধরল, আমি জানি পিরেটোর একটা ওয়াকিটকি আছে। নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, আমিই মেরামত করে দিয়েছি। আর সেদিন রাতে যখন আমাদের সঙ্গে কথা বলতে এলেন আপনি তখন রবিন আপনারটা দেখে ফেলেছিল।
উদ্বিগ্ন ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল ইসাবেল। আজ সকালে পিরেটোর সঙ্গে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেছি। জবাব নেই। শেষবার যখন কথা বলেছি, বেশি দূরে ছিল না সে। বড় জোর একদিনের পথ। এতক্ষণে চলে আসার কথা…কিছু হয়েই গেল কিনা… দ্বিধা করল মহিলা। ডজ ওকে দেখে ফেলেছে কিনা কে জানে! তাহলে মেরে ফেলবে!