কোথায়? সুড়ঙ্গমুখের কাছে আবার উপুড় হয়ে শুয়ে জিজ্ঞেস করল কিশোর।
এই যে, ওখানটায়। বাঁয়ে হাত তুলে দেখাল মুসা।
চারজনেই দেখতে পেল, অনেক নিচে মূর্তিটাকে।
একজন লোক। মাথায় স্টেটসন হ্যাট। হাতে রাইফেল নিয়ে ধীরে ধীরে উঠে আসছে এদিকেই।
ডজ মরিস।
১৩
গুহায় লুকিয়ে থাকার কোন মানে নেই, কিশোর বলল। ডজ আসতে চাইলে ঠিকই চলে আসবে চিহ্ন দেখে দেখে। গুলি করতে করতে ঢুকলে তখন আমাদের কিছুই করার থাকবে না…
তাহলে লুকিয়ে থেকে প্রথম আক্রমণটা আমাদেরকেই করতে হবে, বলল রবিন।
হ্যাঁ, মাথা ঝাকাল কিশোর। একটা বুদ্ধি এসেছে মাথায়। এতে কাজ হতেও পারে।
বলে ফেল।
চলো, ভেতরে গিয়ে বসি। এখানে প্রাইভেসি নেই। হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকতে আরম্ভ করল কিশোর। তাকে অনুসরণ করল অনন্যরা।
মিনিটখানেক পরে কিশোর, টনি আর রবিন বেরিয়ে এল আবার। টনির হাতে তার রাইফেল। বুকের কাছে ধরে রেখেছে। অপেক্ষা করে রইল ডজ পথের বাঁকে অদৃশ্য না হওয়া পর্যন্ত। তারপর দ্রুত নামতে শুরু করল। পাথরে পা পিছলে যাচ্ছে, পরোয়াই করল না। নেমে চলে গেল একটা বড় পাথরের আড়ালে। তাকে অনুসরণ করে গিয়ে রবিনও লুকিয়ে পড়ল।
সুড়ঙ্গমুখের কাছে পড়ে আছে কিশোর। মাথা নিচু করে রেখেছে। যতটা না হলে ডজকে দেখতে পাবে না তার বেশি তুলছে না। রাইফেল বাগিয়ে সাবধানে উঠে আসছে ডজ, শারির পায়ের ছাপ দেখে দেখে। বিশ গজের মধ্যে চলে এল ডজ।
ডজ! চিৎকার করে বলল কিশোর, ডজ! আমি, টনি!
টনি! ঝট করে ট্রিগার গার্ডের ভেতর আঙুল চলে গেল ডজের। কোথায় তুমি?
এই যে এখানে, ওপরে, চেঁচিয়ে জবাব দিল কিশোর। আমার হাতে রাইফেল আছে। আপনার দিকে তোলা।
হেসে উঠল ডজ। তাহলে করো গুলি। ঠিক কোথায় আছ তুমি, জেনে যেতে পারব তাহলে। তারপর খুলি ছাতু করে দেব।
নালার ঠিক মাঝখান দিয়ে এসেছে পায়েচলা পাহাড়ী পথ। সেটা ধরে আবার এগোতে লাগল সে। উঠে আসতে থাকল ওপরে।
কি চাই আপনার? ভয় পেয়েছে যেন, কণ্ঠস্বরকে এমন করে তুলল কিশোর। এখানে এসেছেন কেন?
কথা বলতে। তুমি আর তোমার বাবার সঙ্গে পঞ্চো ভিলার ব্যাপারে কথা বলতে চাই।
রাইফেল ফেলে দিন! কর্কশ কণ্ঠে আদেশ দিয়ে পাথরের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল টনি। ডজের পেছনে। নলের মাথা দিয়ে জোরে গুতো মারল লোকটার পিঠে।
অবাক হয়ে গেল ডজ। বিমূঢ়।
কি হলো? ফেলছেন না কেন? আবার গুতো লাগাল টনি। কিশোরের বুদ্ধি কাজে লেগেছে। তার ফাঁদে পা দিয়ে বোকা বনেছে ডজ। সে ভেবেছিল টনির সঙ্গেই বুঝি কথা বলছে। কি কান্ড! মুহূর্ত আগে ছেলেটার কথা শুনেছে ওপরে, এখন শুনছে পেছনে। রাইফেল ফেলল না সে। তবে দ্বিধায় পড়ে গিয়ে নামাতে বাধ্য হলো।
এদিকে ফিরবেন না। মাথাও ঘোরাবেন না। আবার কঠোর গলায় আদেশ দিল টনি।
কিশোর যা আশা করেছিল তাই ঘটল, অন্তত ঘটার উপক্রম হলো।
লাফ দিয়ে আড়াল থেকে বেরিয়ে এল রবিন।
মাথা না ঘোরাতে বলা হয়েছে, তবু ঘোরাতে গেল ডজ। সবে অর্ধেকটা ঘুরিয়েছে ঘাড়, এই সময় বেরোল রবিন। কাজেই তাকে চোখে পড়ল না ওর।
এক হ্যাচকা টানে ডজের হাতের রাইফেল কেড়ে নিয়ে দশ গজ দূরের একটা ক্যাকটাস ঝোপে ফেলে দিল রবিন।
গর্জে উঠল ডজ।
কারাতে যোদ্ধার পজিশন নিয়ে ফেলেছে রবিন। মুসার মত অতটা ওস্তাদ নয় সে, অত শক্তি কিংবা ক্ষিপ্রতাও নেই, তবে মন্দ বলা যাবে না। তার বিশ্বাস, ডজকে কাবু করে ফেলতে পারবে।
কিন্তু রবিনকে আক্রমণ করল না ডজ। আচমকা চরকির মত পাক খেয়ে ঘুরল। হাত লম্বা করে দিয়েছে। ধাপ করে খোলা আঙুলের থাবা গিয়ে বাড়ি মারল টনির মাথায়। টলে উঠে পিছিয়ে গেল টনি। লাফিয়ে এগিয়ে গেল রবিন। কিন্তু ততক্ষণে টনির রাইফেলের নল চেপে ধরেছে ডজ। জোরে এক মোচড় দিয়ে হ্যাচকা টান দিতেই অস্ত্রটা চলে এল তার হাতে। পিছিয়ে গিয়ে সেটা তুলে ধরল রবিনের দিকে। দাঁত বের করে হিসিয়ে উঠল, বিচ্ছুর দল! হাঁটো। নিচের দিকে। রাইফেলের রেঞ্জের বাইরে যাওয়ার আগে থামবে না।
অস্ত্রহীন হয়ে গেছে। কিছুই করার নেই আর দুজনের। টনি কিছু করার চেষ্টা করলেই তাকে গুলি করবে ডজ। ধীরে ধীরে নামতে শুরু করল দুজনে।
পথ ধরে নেমে গেল প্রায় একশো গজ। তারপর ঘুরল ডজ। উঠতে শুরু করল কিশোরের দিকে।
কয়েক গজ উঠে চিৎকার করে ডাকল, বেরিয়ে এসো! নইলে গুলি শুরু করব!
উঠে দাঁড়াল কিশোর। ট্রিগারে আঙুল চেপে বসল ডজের। আরেকটু বাড়লেই গুলি বেরিয়ে যাবে।
বেশ, নেমে এসো এবার। দ্রুত চলে যাও বন্ধুদের কাছে। তবে আগে কয়েকটা প্রশ্নের জবাব দাও।
লোকটাকে জুডোর প্যাচে ফেলার সুযোগ খুঁজতে লাগল কিশোর। কিন্তু রাইফেলের নল যেভাবে ওর দিকে মুখ করে আছে তাতে কিছু করা সম্ভব নয়।
টনির বাবা কোথায়? জানতে চাইল ডজ।
দ্রুত ভাবনা চলছে কিশোরের মাথায়। ডজকে বিশ্বাস করাতে হবে গুহার ভেতরে কেউ নেই।
মুসাকে নিয়ে পানি আনতে গেছে।
ওদের দেখা পাব কি করে? ঝর্নাটা মাইল দুই দূরে। পাহাড়ের আরেক পাশে। এখন থেকে দেখা যায়।
আলতো করে মাথা ঝাঁকাল একবার ডজ হাসল তালগে পেসোগুলোকে পাহারা দেয়ার এখন কেউ নেই, তুমি ছাড়া। এখন গিয়ে তোমার বন্ধুদের সঙ্গে বসে থাক। লুকিয়ে থাকবে। আমার চোখে যাতে না পড়। পিঠে ওলি খেতে না চাইলে জলদি ভাগ।