হ্যাঁ। রাইফেল নামাল না টনি। কি সাহায্য করতে এসেছ?
তোমাকে সাবধান করে দিতে যে, ডজ মরিস…
ও কোথায়? সহসা শঙ্কা ফুটল টনির চোখে। তোমার বন্ধুদের সঙ্গে আছে?
না। আমাদেরকে নিয়ে একসাথেই বেরিয়েছিল। তারপর তার ঘোড়ার পায়ে অসুখ দেখা দিল। ও তাই বলেছে। কয়েক মাইল পেছনে ফেলে এসেছি ওকে আমরা। কাল নাগাদ হাজির হয়ে যেতে পারে।
থ্যাংকস। আমাকে জানানোর জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ তোমাকে। সেফটি ক্যাচ অন করে রাইফেলটা কাঁধে ঝোলাল টনি। তোমরা এলে কি করে এখানে?
বললাম না শারি নিয়ে এসেছে। যেখান থেকে গিয়েছিল ও সেখানেই ফিরে এসেছে।
এত তাড়াতাড়ি ওকে পোষ মানাল কি করে ডজ?
ও পারেনি। এখনও বুনোই রয়ে গেছে বারোটা। কেবল আমাকেই কাছে ঘেঁষতে দেয়। ওর হয়তো ধারণা, আমিই ওর প্রাণ বাঁচিয়েছি। আমাকে তুমি ভেবেছে।
আমি? কেন?
কারণ, আমাদের দুজনের কণ্ঠস্বরই এক রকম মনে হচ্ছে তুমি এটা খেয়াল করনি। শারির কাছে তাই আমরা দুজনেই এক। আমার গলা প্রথমে শুনে ভেবেছে আমিই তুমি। ওর কাছে এটা সেই কণ্ঠ, যে তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেছে লেকের কাছে, যখন সে অন্ধ ছিল। ওকে ভাল করার জন্যে কৃতজ্ঞতা বোধ থেকেই আমাকে পছন্দ করেছে সে। আমার কথা শোনে। তোমার কথা শুনে অবাক হয়েছে। কারণ, একই রকম কণ্ঠস্বর।
বারোটার দিকে তাকিয়ে হাসল টনি। আয়, শারি। লক্ষ্মী শারি।
এখনও কাঁপছে বারোর কান। ঘোরের মধ্যে যেন কথা শুনল টনির, এগিয়ে গেল। তারপর যখন ওকে আদর করল টনি, আস্তে আস্তে ঘোর ভাঙল যেন। টনির বুকে নাক ঘষল।
রবিন আর মুসা উঠে এল সেখানে।
পরিচয় করিয়ে দিল কিশোর, আমার বন্ধু মুসা আমান। আর ও রবিন মিলফোর্ড।…রবিন, ও টনি… পুরো নাম শোনার জন্যে তাকাল ওর মুখের দিকে।
টনি ইয়ালার। হাত বাড়াল সে, হাই, তোমাদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে খুশি হলাম।
রবিন আর মুসা হাসল। এখন বুঝতে পারছে, কিশোরের উল্টো পাল্টা কথার মানে। আসলে কিশোর বলেনি ওসব কথা, বলেছে টনি। তার কণ্ঠকেই কিশোরের কণ্ঠ বলে ভুল করেছে ওরা।
মনে হয় পিপাসা পেয়েছে তোমাদের, টনি বলল। যে রকম পথে হেঁটে এসেছ, পাওয়ারই কথা। এসো। দিচ্ছি। আমার ঘরটাও দেখবে।
শারির দড়ি ধরে নিয়ে চলল টনি। একটা শৈলশিরার পাশের ঘোরানো পথ ধরে ওপরে উঠে পর্বতের গায়ে দেখতে পেল প্রায় লুকানো একটা ফোকর। সুড়ঙ্গ মুখ।
মাথা নুইয়ে রাখ, সরু, নিচু সুড়ঙ্গে ঢোকার আগে সাবধান করে দিল টনি। কিছুদূর এগোনোর পর বলল, ঠিক আছে, এবার সোজা হও।
ভেতরে আবছা আলো। সেই আলোয় তিন গোয়েন্দা দেখল, বিশাল এক গুহায় এসে দাঁড়িয়েছে ওরা। ছাত অনেক উঁচুতে।
দেশলাই দিয়ে মোম ধরল টনি। কিশোর আন্দাজ করল, বেশ কিছুদিন ধরে এখানে বাস করছে সে। মেঝেতে গোটানো রয়েছে একটা স্লীপিং ব্যাগ। বাসন, হাঁড়ি-পাতিল, একটা কেরোসিনের চুলা, আধবোঝাই কয়েকটা বস্তা, গাঁইতি, শাবল রাখা হয়েছে দেয়াল ঘেঁষে। ছাত দেখেই অনুমান করা যায় এখানে কখনও বারুদ বিস্ফোরিত হয়নি। পঞ্চো ভিলার গুহা নয় এটা।
একটা বস্তা তুলে নিয়ে মেঝেতে জই ঢালল টনি। আব্বা এনেছিল, ঘোড়ার জন্যে। ভালই হয়েছে, কিছুটা রয়ে গেছে। এখানে ঘাসপাতার যা আকাল। এই জই না থাকলে না খেয়ে থাকতে হত শারিকে।
একমাত্র স্লীপিং ব্যাগটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে রবিন। তোমার আব্বা কোথায়?
কেন? তার কি দরকার? আবার সন্দেহ জাগল টনির চোখে।
কারণ তাকেও ডজের ব্যাপারে সাবধান করে দিতে চাই।
মাটির জগ তুলে নিয়ে একটা মাটির ছোট গামলায় শারির জন্যে পানি ঢালল টনি।
আব্বা নেই। ঘোড়া নিয়ে গেছে, খাবারদাবার আনার জন্যে। জগটা বাড়িয়ে দিল তিন গোয়েন্দার দিকে। নাও, পানি।
কোনদিকে গেছেন তিনি? জানতে চাইল কিশোর। লেকের দিকে? তাহলে ডজের সামনে পড়ে যেতে পারেন।
না, ওদিকে যায়নি। পর্বতের অন্যপাশে একটা গ্রাম আছে। গোটা দুই দোকান আছে ওখানে। সব জিনিস পাওয়া যায় না। তবে বাস থামে। আর বাস দিয়ে…
থেমে গেল টনি। সন্দেহ যাচ্ছে না। দ্বিধা করছে। মনস্থির করার চেষ্টা করছে, ওদেরকে বিশ্বাস করবে কিনা।
এখানে কেন এসেছ, বলো তো? জিজ্ঞেস করল সে।
ডজের ধারণা…
বলতে গিয়ে চুপ হয়ে গেল কিশোরও। সব কথা টনিকে বলার সময় এসেছে। জোরে একবার দম নিল সে। তারপর শুরু করল। ক্রসওয়ার্ড পাজল প্রতিযোগিতা থেকে। একে একে বলল, কি করে ওরা জানতে পেরেছে পঞ্চো ভিলার পেসোর কথা।
নীরবে শুনছে টনি। মেঝেতে তিন গোয়েন্দার পাশাপাশি বসেছে। পেসোর কথা শুনে হঠাৎ উঠে দাঁড়াল সে। ওগুলোর কথা জজ বলেছে? আর কি বলেছে? পেলে লুটের মাল ভাগাভাগি করে নেবে?
না, মুসা সন্দেহমুক্ত করার চেষ্টা করল তাকে। ভুলেও একবার পেসোর কথা উচ্চারণ করেনি ডজ। ও আমাদেরকে বলেছে, পর্বতে যেতে হবে বারোটাকে ছেড়ে দিয়ে আসার জন্যে। ওটার জন্মভূমিতে। শারির খুর নাকি বড় হয়ে যাচ্ছে, পর্বতের পাথুরে অঞ্চলে ঘষা না খেলে সমান হবে না।
কী!
মুসা আরও বলল, ইসাবেল আমাদেরকে বলেছে রূপার পেসোর কথা।
ইসাবেল? চিনতে না পেরে ভ্রূকুটি করল টনি। এই ইসাবেলটা আবার কে?
চেহারার বর্ণনা দিল রবিন। কালো বেনির কথা বলল। কালো চোখ আর লাল শলের কথা বলল।
মেকসিকান? এখনও ভুরু কুঁচকেই রেখেছে টনি।