মোলায়েম শিস দিল মুসা। হুঁ, মিলতে আরম্ভ করেছে। ডজ জেনে গেছে টনি আর তার বাবা পঞ্চো ভিলার গুপ্তধন খুঁজে পেয়েছে…
তখন, মুসার মুখের কথা টেনে নিয়ে কিশোর বলল, ডজ টনিকে গুহাঁটা চিনিয়ে দেয়ার জন্যে চাপাচাপি করেছে। কিন্তু টনি খুব চালাক। পালাল। চলার পথে নিজের চিহ্ন সব মুছে দিয়ে গেল, যাতে ডজ পিছু নিতে না পারে। ডজের কাছে রয়ে গেল শারি। পথ চেনে যে। পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে পারে গুহার কাছে। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও শারিকে বাগ মানাতে পারল না সে, কিছুতেই তাকে নিয়ে গেল না বারোটা। ডজ বুঝতে পারল, যাকে পছন্দ করবে একমাত্র তার কথা ছাড়া আর কারও আদেশ মানবে না শারি। এমন কেউ, যাকে কণ্ঠস্বর শুনেই বন্ধু হিসেবে চিনে নেবে।
তখন ওরকম কাউকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করল ডজ, মুসা বলল, যার কণ্ঠস্বরের সঙ্গে টনির স্বরের মিল আছে। এ জন্যেই রহস্যময় ওই ধাঁধা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল সে।
এবং কিশোরকে খুঁজে বের করল, যোগ করল রবিন। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না, ইসাবেল কেন এসব কথা ওকে বলে গেল?
ঠিক, মুসা বলল। আমাদেরকে র্যাঞ্চেই যেতে দিতে চায়নি যে, সে কেন এখন যেচে পড়ে সব কথা শুনিয়ে যায়?
কথাটা কিশোরের মনেও খচখচ করছে।
আমাকে কোন প্রশ্ন করতে দেয়নি ইসাবেল, কিশোর বলল। কেবল তার কথা যখন বুঝিনি, জিজ্ঞেস করেছি, বুঝিয়ে দিয়েছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। যা বলার সে নিজেই বলেছে, আমাকে কেবল শুনতে হয়েছে। ডজকে একবিন্দু বিশ্বাস করে না। ওর ঘোড়া খোঁড়া হয়ে যাবে, চলতে পারবে না, এটা বিশ্বাস করেনি। ইসাবেলের ধারণা, ঘোড়ার পা ঠিকই ছিল, ইচ্ছে করেই আমাদের পেছনে পড়েছে ডজ। কোন উদ্দেশ্য আছে। মহিলার ভয়, টনি আর তার বাবাকে দেখলেই গুলি করে মারবে ডজ। ইসাবেলকে দেখলে তাকেও মারবে। কাজেই লেকে ফিরে যাচ্ছে সে। আমাদেরকে অনুরোধ করেছে গুহায় গিয়ে টনি আর তার বাবাকে যেন সাবধান করে দিই ডজের ব্যাপারে।
আগুনের দিকে তাকিয়ে বসে রইল তিন গোয়েন্দা। দীর্ঘক্ষণ কারও মুখে কথা নেই।
অবশেষে মুখ খুলল মুসা, কিশোর, ইসাবেলকে বিশ্বাস করো তুমি?
বুঝতে পারছি না করব কিনা। তাকে সন্দেহ এবং অবিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে। টনি আর তার বাবাকে খুঁজে বের করার ব্যাপারে এত আগ্রহ কেন? এমনও তো হতে পারে, সে চাইছে আমরা গিয়ে পেসোগুলো খুঁজে বের করি।
হ্যাঁ, হতেই পারে, রবিন বলল। আমাদের পেছন পেছন যাবে সে। তারপর যেই আমরা ওগুলো বের করব, কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করবে।
১১
পরদিন সূর্য ওঠার আগেই ঘুম থেকে উঠে পড়ল তিন গোয়েন্দা। নাস্তা সারতে সারতে আরও আলোচনা করল ইসাবেলের ব্যাপারে।
আমাকে বোকা বানাতে চেয়েছে সে, কিশোর বলল।
কিভাবে? মূসার প্রশ্ন।
লেকে ফিরে যাচ্ছে বলে! বেশ তাড়াহুড়া, এমন একটা ভাব, যেন তক্ষুণি রওনা হয়ে যাবে লেকের উদ্দেশে।
মাথা দোলাল রবিন। রাতের বেলা এসব পাহাড়ে পথ চলাই মুশকিল। যাওয়ার ইচ্ছে থাকলে সকালেও তো রওনা হতে পারত। পুরো ব্যাপারটাই আসলে ভাঁওতাবাজি।
আর ওই ঘড়িটা, কিশোর বলল, বার বার কজি থেকে নেমে যাচ্ছিল, ঠেলে ঠেলে তুলতে হচ্ছিল ওপরে। মনে হলো… শ্রাগ করল সে, …জানি, না, আলোর কারসাজি হতে পারে। ভুলও দেখে থাকতে পারি।
কি? জিজ্ঞেস করল মুসা।
ওর কব্জিতে একটা দাগ দেখেছি। শিওর না।
মুসা দেখেনি, জানাল সে কথা।
রবিন বলল, মহিলা ভীষণ চালাক। ওর অনেক কিছুই খটকা লাগার মত। আমার অবাক লেগেছে, যখন জানলাম, কন্টাক্ট লেন্স পরে। সাধারণত যা পরে না। মানুষ…
কন্টাক্ট লেন্স? বাধা দিল মুসা।
হ্যাঁ। বাসে মুছতে দেখেছি। মাথা নিচু করে রেখেছিল, প্রথমে বুঝতে পারিনি কি করছে। পরে ভালমত দেখে বুঝলাম। আরেকটা ব্যাপার আরও বেশি অবাক করেছে। চুপ হয়ে গেল রবিন।
সেটা কি? জানতে চাইল কিশোর। বলতে এত দেরি করছে রবিন, এটা সহ্য হচ্ছে না ওর।
আরেকটা ব্যাপার হলো… কিশোরের অবস্থা বুঝে হাসল রবিন। ইচ্ছে করেই দেরি করছে বলতে। তথ্য গোপন করে কিশোরও অনেক সময় ওদেরকে এরকম অস্থিরতার মাঝে রাখে। সুযোগ পেয়ে শোধ তুলছে সে।
কী! বলো না! খেপে গেল কিশোর। ওয়াকি-টকি দিয়ে এই পর্বতের ভেতর কি করে সে? প্লেটের বীন সেদ্ধ শেষ করে কয়েকটা পাইনের পাতা কুড়িয়ে নিয়ে সেগুলো দিয়ে মুছে পরিষ্কার করতে লাগল প্লেটটা রবিন। আবার চুপ।
অস্থির হয়ে উঠেছে কিশোর। এক থেকে দশ পর্যন্ত গুনল। তারপর যখন খেঁকিয়ে উঠতে যাবে তখন রবিন বলল, বারোর পিঠের একটা পোটলা থেকে ওয়াকি-টকির অ্যান্টেনা বেরিয়ে আছে দেখলাম মনে হলো। পঞ্চো ভিলার ব্যাপারে যখন তোমাকে জ্ঞান দিচ্ছে, তখন উঠে গেলাম ভাল করে দেখার জন্যে। ওয়াকিটকি একটা আছে ওর কাছে।
ওয়াকি-টকি দিয়ে এই পর্বতের ভেতর কার সঙ্গে কথা বলে সে? অবাক হলো মুসা। ডজ হতে পারে না। কারণ ওকে দেখতে পারে না মহিলা। তাছাড়া ডজের সমস্ত পোটলা-পাটলি ভাল মত দেখেছি আমি। ওয়াকি-টকি নেই।
পিরেটোর আছে, কিশোর বলল। নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। আমি মেরামত করে দিয়েছি। কিন্তু র্যাঞ্চ এখান থেকে অনেক দূর। ওয়াকি-টকিতে যোগাযোগ অসম্ভব।
উঠল ওরা। সাবধানে আগুন নেভাল, যাতে ছড়িয়ে গিয়ে দাবানল সৃষ্টি করতে পারে। শারির কাঁধে মালপত্র বাঁধল কিশোর।