রবিন তার চাকরিতে বাড়তি কাজ করল। দিনে বারো ঘণ্টা করে খাটতে হলো তাকে।
মুসা বাড়ির কাজ করল কিছু কিছু। তবে বেশির ভাগ সময়ই সাঁতার কাটল আর ফারিহার সঙ্গে আড্ডা মেরে বেড়াল। সেই সাথে চলল কারাতের প্র্যাকটিস।
আর কিশোর রইল স্যালভিজ ইয়ার্ডের কাজে ব্যস্ত। দিনে দশ-বারো ঘণ্টা খাটুনি।
একদিন বিকেলে ওয়ার্কশপে একটা নতুন ধরনের সিকিউরিটি ডিভাইস নিয়ে কাজ করছে সে, একটা তালা, ভয়েস অপারেটেড, সাঙ্কেতিক কথা বললে খুলবে। মুসাও আছে ইয়ার্ডে। ওয়ার্কশপের বাইরে ওর গাড়ি মেরামত করছে।
হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল কিশোর, কুকুর হইতে সাবধান!
চমকে গেল মুসা। কি বললে?
কিছু না। বললাম, কুকুর হইতে সাবধান।
তালা খোলার কোডওয়ার্ড এটা। কিন্তু মুসা বুঝতে পারল না। কি যে বলো বলো! এখানে কুকুর দেখলে কোথায়?
জবাব দিতে যাচ্ছিল কিশোর, এই সময় টেলিফোন বাজল। ফিরেও তাকাল না। জানে, রবিন রয়েছে হেডকোয়ার্টারের ভেতরে। আরেকটা এক্সটেনশন সেট রয়েছে এখানে। রক কনসার্টের জন্যে লিফলেট তৈরি করছে রবিন। হতে পারে তার কোন বান্ধবী ফোন করেছে, কিংবা পরিচিত অন্য কেউ।
কয়েকবার বেজেই থেমে গেল রিঙ। মুসা আবার কাজে মন দিল।
খানিক পরেই বেরিয়ে এল রবিন। কিশোর, মেরিচাচী ফোন করেছেন।
আমার সঙ্গে কথা বলতে চায়? কিছুটা অবাকই হলো কিশোর। আবার কাজ নয় তো? ইদানীং মেরিচাচীও কিশোরের বিশেষ ব্যবস্থায় যোগ দিতে আরম্ভ করেছেন। বুঝে গেছেন, অহেতুক অফিস থেকে বেরিয়ে কষ্ট করে হেঁটে না এসে ফোন করলেই হয়ে যায়। হেঁটে আসার আরেকটা কারণ অবশ্য ছিল, পয়সা বাঁচানো। বকেটকে ঠিক করেছে কিশোর। আবার কোন কাজ দেবে নাকি?
কে জানি এসেছে, তোমার সঙ্গে কথা বলতে চায়।
কে?
মিস্টার ডজ, হাসল রবিন। ওই ধাঁধা প্রতিযোগিতা যেটায় দিয়েছিলে তার ব্যাপারে কিছু বলবে।
তাই? কৌতূহলী হলো গোয়েন্দাপ্রধান। প্রতিযোগিতার কথা ভোলেনি। তবে কাজ নিয়ে এতই ব্যস্ত ছিল, ও ব্যাপারে খোঁজ নিতে পারেনি আর। এখন সুযোগ এসেছে। হয়তো জানতে পারবে এত টাকা খরচ করে মেকসিকোতে পাঠাতে কার এমন দায় পড়েছে।
ওরা ঠিক করল, তিনজনেই যাবে মিস্টার ডজের সঙ্গে দেখা করতে। বাড়ির দিকে রওনা হয়েছে, এই সময় বারান্দায় বেরিয়ে এলেন একজন মানুষ। লম্বা, ছিপছিপে। পরনে জিনস, মাথায় একটা দামি স্টেটসন হ্যাট সামান্য কাত করে বসানো।
তিন গোয়েন্দাকে এগোতে দেখে হাত তুলে নাড়লেন। হাই, আমি ডজ মরিস। ওরা কাছে গেলে একে একে তাকালেন সবার মুখের দিকে। তারপর বললেন, কার কি নাম? না না, রাখ, দেখি আমিই আন্দাজ করতে পারি কিনা? মুসার দিকে তাকিয়ে হাসলেন। দেখি, কণ্ঠস্বর শোনাও তো তোমার?
আমি মেকসিকো যাব! বলল মুসা। কি জানি কেন ডজকে পছন্দ করতে পারছে না। পিজা খাব!
রবিনের দিকে তাকালেন ডজ। তোমার?
আমার যেতে বড়ই অসুবিধে। অফিসে অনেক কাজ।
মাথা ঝাঁকালেন ডজ। জোর করেই যেন হাসলেন। তারপর তাকালেন কিশোরের দিকে।
কিশোরও তাকিয়ে রয়েছে তার দিকে। লোকটার ব্যাপারে তার প্রথম ধারণাঃ একটু যেন অস্বাভাবিক। হাসি, ভাবভঙ্গি সবই কেমন যেন মেকি মেকি।
এবার তোমার গলা শোনাও? কিশোরকে বললেন ডজ।
মেকসিকো যেতে চাই, কিশোর বলল।
চকচক করে উঠল ডজের চোখ। উত্তেজনা ফুটল চেহারায়। এগিয়ে এসে হাত মেলালেন কিশোরের সঙ্গে।
ডজ বললেন, ধাঁধা প্রতিযোগিতায় তুমিই জিতেছ। আমার র্যাঞ্চেও যেতে পারবে তুমি।
কিশোর ভাবছে মেকসিকান র্যাঞ্চে যাওয়ার জন্যে অস্থির হয়ে আছে একথাটা সহজে বুঝতে দেয়া চলবে না লোকটাকে। তার আগে কিছু প্রশ্নের জবাব জানা সরকার। বলল সেকথা।
কি জানতে চাও? বলে ফেল।
আর কজন জিতেছে এই পুরস্কার?
শুধু তুমি। একলা।
তারমানে শুধু আমিই ঠিক জবাব দিয়েছি?
দ্বিধা করলেন ডজ। হ্যাঁ।
চিন্তিত ভঙ্গিতে লোকটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর। বুঝতে পারছে। মিথ্যে কথা বলছেন ডজ। ওর মত একই জবাব পাঠিয়েছে মুসা আর রবিন। তাহলে শুধু তাকেই বিজয়ী ঘোষণা করছেন কেন তিনি?
টাকা আসছে কোত্থেকে? জানতে চাইল সে। এসবের খরচ দেবে কে?
আমি!
কেন?
বিজ্ঞাপনের জন্যে। আমার র্যাঞ্চের বিজ্ঞাপন। হ্যাটটা খুলে নিয়ে আবার মাথায় পরলেন ডজ। আত্মবিশ্বাসে ভরা কণ্ঠ। আমার জায়গাটাকে আমি একটা সামার ক্যাম্প বানাতে চাই, যাতে তোমাদের মত সৌখিন টুরিস্টরা গিয়ে বাস করতে পারে। আর এই প্রতিযোগিতাটা সম্পর্কে সানডে পেপারে ভাল একটা আর্টিকেল ছাপতে চাই।
এতক্ষণে বিশ্বাস করার মত একটা যুক্তি শুনল কিশোর। তবে পুরোপুরি নয়।
আরেকটা প্রশ্ন করতে যাবে, এই সময় নীল রঙের একটা শেভ্রলে গাড়ি দেখল ইয়ার্ডের গেটে। কিশোর মনে করল ঢুকবে, কিন্তু ঢুকল না ওটা। মুহূর্তের জন্যে গতি কমিয়েই আবার বাড়িয়ে চলে গেল। উইন্ডশিল্ডে রোদ পড়েছিল বলে ড্রাইভারকে ভালমত দেখতে পায়নি সে। মনে হলো, একজন মহিলা। সোনালি চুল, চোখে কালো কাচের চশমা। গত দশ-পনেরো দিনে ওই গাড়িটাকে আরও কয়েকবার দেখেছে সে।
আবার ডজের দিকে ফিরল সে। ঠিক আছে, আপনার পুরস্কার আমি গ্রহণ করলাম। কিন্তু একটা কথা। আমার এই দুই বন্ধুকে সাথে নিতে পারব?
ভ্রূকুটি করলেন ডজ। তার মানে ওদের খরচও আমাকে দিতে বলছ?