ছেটে ফেলা যায় না? জানতে চাইল মুসা। একবার একজনকে ক্ষুর দিয়ে গাধার খুর চেঁচে দিতে দেখেছিল সে।
নাহ! ভুরু কুঁচকেই রেখেছেন ডজ। ওর মত একটা বুনো বারো কাছেই ঘেষতে দেবে না আমাকে। ওর পা ছোঁয়ার চেষ্টা করলেই লাথি মেরে ঘিলু বের করে দেবে আমার।
কিশোর ভাবল, শারি হয়তো তাকে পা ছুঁতে দেবে। চুপ করে রইল সে। ওর মনে হলো কিছু একটা বলতে যাচ্ছেন ডজ। শারির খুরের ব্যাপার নয়, অন্য কিছু।
মনে হচ্ছে, ডজ বললেন, শেষ পর্যন্ত ছেড়েই দিতে হবে ওকে। যেখান থেকে এসেছে সেই পর্বতেই ফিরে যাক। কিশোরের দিকে তাকাল সে। কিন্তু, গোলমালটা হলো, ও এখন যেতে চাইবে না। কারণ তুমি রয়েছ এখানে।
কিশোরের মনে হলো, বহুদিন ধরেই তো আছে শারি, তার খুরও বেড়েছে, তাহলে এতদিন ওকে ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবেননি কেন ডজ? তবে জিজ্ঞেস করল না। আপনা-আপনিই সে কথায় যাবেন। আর ওটা একটা জরুরি সূত্র। তিন গোয়েন্দাকে রহস্য সমাধানে এগিয়ে দেবে একধাপ।
কিশোর, ওকে ছেড়ে আসতে হলে তোমাকে সঙ্গে যেতে হবে, চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন ডজ। আসলে, যেতে হবে আমাদের সবাইকেই। ভাবছি, পর্বতের ওদিকটায় ক্যাম্পিং করতে গেলে কেমন হয়? এক এক করে তিন গোয়েন্দার দিকে তাকালেন তিনি। কি বলো?
কিশোরের কাছে ব্যাপারটা একেবারেই হাস্যকর আর ছেলেমানুষী মনে হলো। একটা গাধাকে ছাড়তে সবাই মিলে যাওয়া! রবিনের দিকে তাকিয়ে দেখল সে-ও ওরই দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ টিপল কিশোর।
সাথে সাথে বুঝতে পারল রবিন। তিনজনে মিলে একান্তে আলোচনা না করা পর্যন্ত ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলতে মানা করছে গোয়েন্দাপ্রধান।
ডজের দিকে তাকাল রবিন। ঠিক আছে। আমরা জানাব আপনাকে।
কখন? উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চাইলেন ডজ। কত তাড়াতাড়ি…
যত তাড়াতাড়ি আমরা মনস্থির করতে পারব, জবাব দিল মুসা। উঠে দরজার দিকে রওনা হলো সে। দরজার কাছে গিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, কিশোর, চলো ঘুরে আসি।
ইঙ্গিতটা বুঝতে পারলেন কিনা ডজ, কে জানে। চুপ করে রইলেন।
কিশোর আর রবিনও উঠে মুসার পেছনে চলল। বারান্দা থেকে নেমে মাঠের দিকে এগোল তিনজনে। ঘর থেকে যাতে না শোনা যায় এতটা দূরে এসে থামল।
মনে হয় আসল সময় এসে গেছে, ঘাসের ওপর বসে বলল রবিন। পর্বতে যাওয়ার অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে। কিশোর, তোমার কি মনে হয়?
আছে, মাথা কঁকাল কিশোর। আর সেটার জন্যেই আমাকে প্রয়োজন ডজের। আমার কণ্ঠ তার প্রয়োজন। যাতে শারি পালিয়ে না যায়। কোথাও আমাদেরকে নিয়ে যাবে গাধাটা। পর্বতের কোন জায়গায়, যেখান থেকে এসেছে।
কোনখান থেকে এল? দূরের উঁচু পাহাড় চূড়ার দিকে তাকিয়ে আছে মুসা। কি আছে ওখানে? স্বর্ণ?
কিংবা সিয়েরা মাদ্রের গুপ্তধন, কিছুটা ব্যঙ্গের সুরেই বলল রবিন। একটা ঘাসের ডগা ছিড়ে নিয়ে দাঁতে কাটতে লাগল। তো, কি ভাবছ, কিশোর? যাবে?
আমি তো যাবই, কিশোরের আগেই বলে উঠল মুসা। ক্যাম্পিং ওর ভীষণ ভাল লাগে। রাতে আগুনের ধারে বসে মাংস ঝলসে খাওয়া, খোলা আকাশের নিচে স্লীপিং ব্যাগের ভেতরে ঘুমানো আহ, কি মজা! তোমরা যাবে না? পথ নিশ্চয় খুব খারাপ হবে।
খারাপ মানে? রবিন বলল। খারাপের চেয়ে খারাপ। পাথর আর বালির ছড়াছড়ি। কিশোরের দিকে তাকাল। তুমি কি বলো?
বেড়াতে খারাপ লাগে না কিশোরের। যেতে কষ্ট হবে। কি আর করা। রহস্যের সমাধান করতে গেলে খাটুনি তো একটু লাগবেই। যত কষ্টই হোক, ভাবল সে, এই রহস্যের কিনারা করেই ছাড়বে।
যাব, রবিনের কথার জবাবে বলল কিশোর। চলো, ডজকে গিয়ে জানাই।
ডজের জন্যে এটা সুখবর। মুসা বলতেই চওড়া হাসি হাসলেন। তাহলে কালই রওনা হওয়া যাক, কি বলো? রাজি হলো তিন গোয়েন্দা।
হাসিমুখে বেরিয়ে গেলেন ডজ। গাড়ি নিয়ে চলে গেলেন লারেটোতে, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্যে। তিন গোয়েন্দা চলে গেল একেক জন একেক কাজে। মুসা গেল লেকে মাছ ধরতে। রবিন বারান্দায় বসল ওর মেকসিকোর ইতিহাস নিয়ে। কিশোর চলল পিরেটোর খোঁজে।
রান্নাঘরে পাওয়া গেল ওকে। একটা ওয়াকি-টকি মেরামত করছে। সব যন্ত্রপাতি খুলে ছড়িয়ে ফেলেছে, কিন্তু জোড়া লাগাতে পারছে না আর।
নাহ, আমাকে দিয়ে এসব হবে না! আনমনেই বিড়বিড় করল লোকটা। আমি রেডিওর কি বুঝি? গাধার মত খুলতে গেছি! আমি হলাম গিয়ে ঘোড়ার রাখাল। ইলেক্ট্রনিক্সের কি বুঝি?
দেখি, আমার কাছে দিন, হাত বাড়াল কিশোর। এসব মেরামত করতে পারি। কি হয়েছিল?
বোবা হয়ে গিয়েছিল। একেবারে চুপ।
ঠিক করে কি করবেন?
ওয়াকি-টকি দিয়ে কি করে? কথা বলব।
এখানে এই জিনিস আর কারও কাছে আছে নাকি? কার সঙ্গে কথা বলতে চায় পিরেটো, ভেবে অবাক হলো কিশোর। লেকের অন্য পাড়ের টাওয়ারটা ছাড়া আশপাশে আর কোন বাড়িই চোখে পড়েনি তার। র্যাঞ্চের কয়েক মাইলের মধ্যে নেই।
জানি না, জবাব দিল পিরেটো।
তাহলে ঠিক করতে চাইছেন কেন?
আরে! নষ্ট হলে ঠিক করব না?
তার জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারল না কিশোর। আর প্রশ্ন না করে জিনিসটা নিয়ে বসল। গোলমালটা কোথায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করল। মেরামত করতে সাধারণত যে ধরনের তার ব্যবহার হয়, সেটা পেল না। তাই ইলেকট্রিকের তারের ভেতরের সরু তার বের করে নিয়ে কাজ চালানোর চেষ্টা করতে লাগল।