বাতাস কম, তাই রক্ষা! মুসা বললো।
নালার বাঁ দিকে ছুটে গেল তিন গোয়েন্দা। কুপিয়ে কেটে ফেললো ছোট ছোট গাহ, ঝোপ পরিষ্কার করে মাঝখানে একটা লম্বা গর্ত করে ফেললো, অনেকটা ট্রেঞ্চের মতো। মাটি নরম, কাটতে খুব একটা কে পেতে হলো না। খুঁড়ে তোলা মাটি ছিটিয়ে দিলো আগুনের ওপ্র।
আরি, দেখো! হাত তুলে দেখালো রবিন। শুঁটকি! আর ম্যানেজারটা!
লাফিয়ে লাফিয়ে ছুটে আসছে টেরি আর ডরি। আরও লোক আসছে ওদের পেছনে। ডয়েলদের র্যাঞ্চ ওয়াগন আর আরও দুটো ট্রাকে করে এসেছে ওরা। হাতে কুড়াল, বেলচা। আগুনের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করলো ওরাও। কিশোর দেখলো এমনকি মিস্টার ডয়েলও চলে এসেছেন। হাত নেড়ে নেড়ে চেঁচিয়ে আদেশের পর আদেশ দিয়ে চলেছেন।
দুই র্যাঞ্চের দুটো দল, আগুন আর ধোঁয়ার ভেতর দিয়ে পরস্পরকে দেখতে পাচ্ছে
ভালো করে, লড়ে চললো আগুনের সঙ্গে। মনে হলো কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে গেল। অথচ মেঘ আর ভাঙা ঘোড়া ধোঁয়ার ফাঁক দিয়ে মাঝে মাঝে দেখা যাওয়া সূর্য দেখেই আন্দাজ করতে পারলো গোয়েন্দারা, সময় কেটেছে মাত্র আধ ঘণ্টা। ইতিমধ্যে পুরো কাউন্টিই যেন এসে হাজির হয়েহে আগুন নেভানোর জন্যে।
রাসায়নিক পদার্থ ভরা ট্যাংক আর বুলডোজার নিয়ে এসেছে বনবিভাগ। শেরিফের সহকারীরা হাত লাগিয়েহে আলভারেজ আর ডয়েলদের সঙ্গে। জোরালো এঞ্জিনের গর্জন তুলে আর ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে মাটি কাঁপিয়ে ছুটে এলো দমকলের গাড়ি। লাফিয়ে নামলো কর্মীরা। পাইপ খুলে নিয়ে দৌড় দিলো পুকুরের দিকে। পানি ছিটানো শুরু করলো আগুনের ওপর।
এলাকার আরও লোক ছুটে আসছে সাহায্য করতে। নালার দুই তীরেই অপেক্ষা করছে অনেকে, দুরে। ওদেরকে আনতে ছুটলো সিভিলিয়ানদের ট্রাকগুলো। বোরিস গেল একদিকে। ডয়েলদের ওয়াগন আর ট্রাকগুলো গেল দক্ষিণে কাউন্টি রোডের দিকে।
উড়ে এলো বনবিভাগের হেলিকপ্টার আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত বম্বার প্লেন। খুব নিচু দিয়ে উড়তে উড়তে আগুনের ওপর রাসায়নিক পদার্থ ছিটাতে লাগলো। পানিও ছিটাচ্ছে কোনো কোনোটা। কয়েকটা উড়ে গেল পর্বতের অন্যপাশে, আগুন ছড়িয়ে গেছে ওদিকেও। কয়েকটা উড়তে লাগলো দমকল-কর্মীদের ওপর, পানি ছিটিয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে ভিজিয়ে চুপচুপে করে দিলো ওদের।
পরের একটা ঘন্টা ধরে চললো জোর লড়াই, মনে হচ্ছে সব বৃথা। আগুনকে পরাজিত করা যাবে না। ধোঁয়া আর আগুনের চাপে ক্রমেই পিছিয়ে আসতে বাধ্য হলো দমকল-কমীরা। তবে বাতাস কম থাকায় বেশিক্ষণ আর সুবিধে করতে পারলো না। আগুন। প্রতিপক্ষের চাপের মুখে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হলো একটু একটু করে। দাউ দাউ করে জ্বলতে জ্বলতে প্রথমে দ্বিধা করলো যেন কিছুক্ষণ, তারপর ঘন কালো ধোঁয়ায় আকাশ কালো করে দিয়ে কমতে আরম্ভ করলো। তবে খুব ধীরে।
থেমো না! চালিয়ে যাও! চেঁচিয়ে আদেশ দিলো দমকল বাহিনীর ক্যাপ্টেন। ঢিল পেলেই আবার লাফিয়ে উঠবে।
আরও দশ মিনিট পর বেলচায় ভর দিয়ে দাঁড়ালো কিশোর। হাত দিয়ে মুখের ঘাম মুছলো। গালে এসে লাগলো কিছু। চেঁচিয়ে উঠলো সে, বৃষ্টি। বৃষ্টি! বৃষ্টি আসছে
একটা দুটো করে বড় বড় ফোঁটা পড়তে শুরু করলো। কাজ থামিয়ে আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকালো কয়েকজন দমকলকর্মী। হঠাৎ করেই যেন ফাঁক হয়ে গেল আকাশের ট্যাংক, ঝমঝম করে নেমে এলো বারিধারা। ঘামে ভেজা, ধোঁয়ায় কালো মুখগুলো উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। আনন্দের হুল্লোড় বয়ে গেল নালার একমাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত। সেই চিৎকারকে ছাপিয়ে হিসহিস করে উঠলো আগুনের অন্তিম আর্তনাদ।
মাথার ওপর দুহাত তুলে দিয়েছে রবিন। মুখ আকাশের দিকে। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে, সে
য় নিচ্ছে হাত-মুখের কালি-ময়লা। ঝিলিক দিয়ে গেল বিদ্যুতের তীব্র নীল শিখা। বাজ পড়লো ভীষণ শব্দে। তারপর থেকে একটু পর পরই পড়তে লাগলো পর্বতের মাথায়।
পানিতে ধুয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে ধোঁয়া, তবে এখনও কিছু কিছু ভাসছে এখানে ওখানে। মার খাওয়া কুকুরের মতো নেতিয়ে পড়ছে আগুন, শেষ ছোবল হানার চেষ্টা করছে পাথরের ফাঁকে ফাঁকে যেখানে বৃষ্টি সরাসরি পড়তে পারছে না সেসব জায়গায়। তবে ভঙ্গি দেখেই বোেঝা যায় সুবিধে করতে পারবে না আর।
বিপদ কেটেছে। সাহায্য করতে যারা এসেছিলো আস্তে আস্তে সরে পড়তে লাগলো তারা। বাকি কাজ শেষ করার দায়িত্ব রেখে গেল বনবিভাগ আর দমকল বাহিনীর ওপর।
সারা শরীরে কালি মাথা, ভিজে চুপচুপে হয়ে এসে পুকুরের পাড়ে দাঁড়ালো আলভারেজদের দল। ট্রাকে করে লোক নামিয়ে দিতে গেছে বোরিস, এখনও ফেরেনি।
কমে আসছে বৃষ্টি। শেষে গুঁড়ি গুঁড়িতে এসে স্থির হলো। কিছুটা পরিষ্কার হলো শেষ বিকেলের আকাশ।
চল, যাই, রিগো বললো। এক মাইলও হবে না। এখানে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে হেঁটেই চলে যাই।
ক্লান্ত, ভেজা শরীর নিয়ে অন্যদের পেছন পেছন চলেছে তিন গোয়েন্দা। কিন্তু মনে সুখ, আগুনটা শেষ পর্যন্ত নেভাতে পেরেছে। বৃষ্টিতে ভিজে কাদায় প্যাঁচপ্যাঁচ করছে এখন কাঁচা রাস্তা, তার ওপর দিয়েই চলেছে মানুষ আর গাড়ির মিছিল, দক্ষিণে। সামনে মাথা তুলে রেখেছে উঁচু শৈলশিরা, যেটা শুকনো অ্যারোইও আর সান্তা ইনেজ ক্ৰীককে আলাদা করে রেখেছে।