বেরিয়ে পড়লো লম্বা একসারি দামী পাথর-লাল, নীল, সবুজ রঙের, হীরাও আছে কয়েকটা।
তলোয়ারটা সূর্যের দিকে তুলে ধরলো কিশোর। ঝিক করে উঠলো কয়েকটা পাথর। গতর গলায় ঘোষণা করলো সে, এটাই করটেজ সোর্ড!
২১
ছাই থেকে ছাই, ধুলো থেকে ধুলো! একঘেয়ে কণ্ঠে বললেন বিখ্যাত চিত্রপরিচালক ডেভিস ক্রিস্টোফার, অনেকটা মন্ত্রপাঠের মতো করে। চমৎকার একটা মেসেজ রেখে গিয়েছিলেন ডন পিউটো আলভারেজ। অসাধারণ বুদ্ধিমান লোক। আমাদের কিশোর পাশার মতোই।
তলোয়ারটা খুঁজে পাওয়ার দিন কয়েক পরে পরিচালকের অফিসে রিপোর্ট করতে এসেছে তিন গোয়েন্দা। একজন প্রহরীকে নিয়ে এসেছে সাথে করে, কারণ, কটেজ সোর্ডটা মিস্টার ক্রিস্টোফারকে দেখাতে এনেছে ওরা। বিশাল টেবিলে পড়ে আছে এখন ওটা। ঘরের আলোয় দ্যুতি ছড়াবে পাথরগুলো, ঝিকমিক করছে সোনা আর রূপার অলংকরণ। একটা পান্না দেখালো কিশোর, ওটা এখন তলোয়ারের গায়ে জায়গামতো বসানো, ঝুপড়ির গর্তে খুঁজে পেয়েছিলো যেটা।
চমৎকার জিনিস। তলোয়ারটার দিকে তাকিয়ে মন্তব্য করলেন পরিচালক। তাহলে র্যাঞ্চটা বাচলো আলভারেজদের। কিশোরের দিকে মুখ তুললেন তিনি। কাউবয়গুলোকে ধরেছে পুলিশ?
ধরেছে, কিশোর জানালো। টেকসাসে ডাকাতির দায়ে ওদের খুঁজছিলো পুলিশ এমনিতেই। আগুন লাগিয়ে আরেকটা অপরাধ করেছে। ওদেরকে সাহায্য করার জন্যে ডরিকেও জেলে ভরে দিয়েছে পুলিশ।
আর টেরিয়ারকে?
টেরিয়ার ওদেরকে প্রাসরিভাবে সাহায্য করেনি, মুসা জানালো। তাই কিছুটা নমনীয় হয়েছেন বিচারক। কিশোর অপ্রাধীদের সংশোধন করার ইস্কুলে পাঠিয়ে দিয়েছেন। হাসলো মুসা। বেরিয়ে এসে আর শয়তানী করতে হবে না আমাদের সঙ্গে। বোরোতেই দেবে না।
বেশি লাই দিয়ে আসলে মাথায় তুলে ফেলা হয়েছিলো তাকে। সন্তান খারাপ হওয়ার জন্যে বাবা-মায়েরাই বেশি দায়ী। যাকগে, সংশোধন ইস্কুলে যখন দেয়া হয়েছে, স্বভাব-চরিত্র ভালো না করে আর ছাড়বে না। তো, করটেজ সোর্ভটার কি হবে?
দেখেই কেনার অফার দিয়ে ফেলেছেন মিস্টার ডয়েল, কিশোর বললো।
তবে দাম আসলে যা হওয়া উচিত, তার চেয়ে কম, রবিন বললো। ঠকানোর লোভ এখানেও হাড়তে পারেননি।
টাকা ধার দিতে রাজি হয়ে গেল একটা লোক্যাল ব্যাংক, কিশোর জানালো, মিস্টার ডায়েলের কাছ থেকে হেরিয়ানো পয়লা পেমেন্ট নেয়ার আগেই। মর্টগেজটা ডন হেরিয়ানোর কাছ থেকে আপাতত ব্যাংকই নিয়ে নিয়েছে।
আহারে, কি দরুদ! তিক্ত কণ্ঠে বললেন পরিচালক। আগে কোথায় ছিলো ওরা? যেই দেখালো, অত্যন্ত দামী একটা জিনিস পেয়ে গেহে আলভারেজরা, ওটা হাতিয়ে নেয়ার জন্যে উঠে-পড়ে লাগলো। তলোয়ারটা কিনে নিয়ে গিয়ে আরেকটা ব্যবসা করার জন্যে। দামী অ্যানটিক দেখলে ওরকম অনেক ব্যাংকই এগিয়ে আসে। তবে মিস্টার ডয়েলের চেয়ে নিশ্চয় বেশি দেবে?
অনেক বেশি, মুসা জানালো। কিন্তু রিগো আর পিনটু ব্যাংককে সেটা দিতে রাজি নয়। ধার যা দিয়েছে ব্যাংক সেটা ওরা সুদসহ আদায় করে দেবে। তলোয়ারটা বিক্রি করতে চায় মেকসিকান গভার্নমেন্টের কাছে, ওখানকার ন্যাশনাল মিউজিয়ম অভ হিসটোরিকে। ব্যাংক যা দিতো দাম অবশ্য তার চেয়ে কমই পাবে। তবু ওখানেই বেচবে ওরা। রিগো কাছে, মেকসিকোর ইতিহাসের সঙ্গে তলোয়ারটা জড়িত, কাজেই যেখানকার জিনিস সেখানেই যাক।
আবার হাই থেকে দুইয়ে, মৃদু হাসলেন পরিচালক। ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
টাকা যা পাবে, কিশোর বললো, তাতে ব্যাংকে ঋণ শোধ করেও অনেক বাচবে। আবার নতুন করে সিয়েনড়া বানাতে পারবে আলভারেজরা, কৃষিযন্ত্রপাতি কিনতে পারবে। হাসি ছড়িয়ে পড়লো তার মুখে। তারপরেও আরও টাকা থাকবে। এবং সেটা দিয়ে কিনে নেবে মিস্টার ডয়েলের সমস্ত র্যাঞ্চ।
ভুরু সামান্য কুঁচকে গেল পরিচালকের, অবাক হয়েছেন, মিস্টার ডয়েল বিক্রি করে দেবেন?
দেবেন, হেসে উঠলো মুসা, র্যাঞ্চ করার শখ তার মিটিয়ে দিয়েছে টেরি আর ভরি মিলে। তিনি র্যাঞ্চার নন। বেতন দিয়ে লোক রেখে যে ওই কাজটি করানো যায় না বুঝেছেন এতোদিনে। আরও একটা কারণ আছে। ইচ্ছে করলেই তাঁর বিরুদ্ধে এখন মামলা ঠুকে দিতে পারে আলভারেজরা, কারণ তাঁর লোকই ওদের ক্ষতি করেছে। ঝিগোকে অনুরোধ করেছেন তিনি, মামলা যাতে না করে, তাহলে খুব কম দামে তাদের কাছে র্যাঞ্চ বিক্রি করে দেবেন তিনি।
নিশ্চয় রাজি হয়েছে রিগো?
হয়েছে।
এটা সবচেয়ে ভালো খবর, খুব খুশি হয়েছেন পরিচালক, তাঁর হাসির পরিমাণ দেখে সেটা অনুমান করা গেল। এক কাজ করো। সময় করে একদিন পিনটুকে নিয়ে এসে আমার এখনে। এই বিজয় সেলিব্রেট করবো আমরা। মূসা, মেন্যুটা তুমিই তৈরি করো।
ঝকঝকে সাদা দাঁত সব বেরিয়ে পড়লো মুসার। নিশ্চয় করবো, স্যার।
কিশোর হাসলো না। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে পরিচালকের দিকে, আলভারেজরা র্যাঞ্চ ফিরে পেয়েছে, নিশ্চয় সে-খুশিতে নয়, তাই না, স্যার?
নো, মাই বয়, হাসি মুহূলো না পরিচালকের মুখ থেকে। ঠিকই, ধরেছে। আমিও ব্যবসায়ী। সেলিব্রেটটা করবো গল্পের জন্যে, নতুন একটা ভালো গল্প উপহার দিয়েছে। ছবি করবো। ভাবহি, শুটিংও করবো আলভারেজদের জায়গায়ই। অবশ্যই ভাড়া দেবো। কেমন হবে, বলো তো?