আলভারেজদের র্যাঞ্চটা বাঁচাতে হবে না? কিশোর বললো, করটেজ সোর্ডটা বের করবো।
হায় হায়, ভুলেই গিয়েছিলাম! প্রায় চিৎকার করে উঠলো পিনটু। তুমি বলছিলে জবাব পেয়ে গেছে!
হ্যাঁ, পেয়েছি তো। এসো আমার সঙ্গে।
কাউন্টি রোডের দিকে এগোলো সে। সাথে চললো রবিন, মুসা, পিনটু। কৌতূহল দমাতে না পেরে রাশেদ পাশাও চললেন পেছন পেছন। বৃষ্টি থেমেছে। মেঘের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসার তাল করছে সূর্য। অ্যারোইওর ওপরের ব্রিজটায় পৌঁছে দাঁড়িয়ে গেল কিশোর। আমেরিকান লেফটেন্যান্টের জার্নালের কথা মনে আছে তোমাদের? লিখেছিলো, শৈলশিরার ওপরে তলোয়ার হাতে দেখেছে ডন পিউটোকে। ঘোড়ায় চড়ে যাচ্ছিলেন ডন।
আছে, মুসা বললো। তবে ভুল লিখেছিলো। হাসিয়েনডার দিক থেকে আসা কোনো নালাও নেই, আর পাশে কোনো শৈলশিরাও নেই, যেটাতে ঘোড়সওয়ার দেখা যাবে।
আছে এখন, খুশি খুশি গলায় বললো কিশোর। আর আঠারোশো ছেচল্লিশ সালেও ছিলো। ওই দেখো।
অ্যারোইওটাই ক্রীক বা নালা হয়ে গেছে এখন। ওটার ওপাশে লৈশিরার মাথায় সগর্বে দাঁড়িয়ে রয়েছে যেন মুণ্ডুহীন ঘোড়ার মূর্তিটা।
আঠারোশো ছেচল্লিশ, এবং তারও আগে, বুঝিয়ে বললো কিশোর, শান্তা ইনেজ ক্রীকের নিশ্চয় দুটো শাখা ছিলো। ম্যাপে দেখেছি, কিন্তু বুঝতে পারিনি আমরা। কারণ ম্যাপে আঁকা অ্যারোইও আর ক্রীক দেখতে একই রকম। আঠারোশো ছেচল্লিশ সালে লেফটেন্যান্ট যখন এখানে এসেছিলো, অ্যারোইওটা তখন ক্রীকই ছলো। তারপর ভূমিকম্পে কিংবা ভূমিধস নেমে এটার মুখ বন্ধ হয়ে যায়, নালা বন্ধ হয়ে গিয়ে সৃষ্টি হয় অ্যারোইও। সম্ভবত ওই একই ভূমিকম্পে বন্ধ হয়ে যায় কনডর ক্যাসলের নিচের গুহামুখটাও। দিন যেতে থাকলো। এই অ্যারোইওটা যে একসময় ক্রীক ছিলো, ধীরে ধীরে লোকে ভুলেই গেল সেকথা।
লেফটেন্যান্ট তাহলে ঠিকই দেখেছিলো, রবিন বললো। উন পিউটোকে দেখেছিলো সান্তা ইনেজ ক্রীকের পাশের শৈলশিরায়।
দেখেছিলো। চলতে দেখেছিলো, তারপর নিশ্চয় হারিয়ে ফেলে। লেফটেন্যান্টের মাথা গরম ছিলো তখন, তাছাড়া সন্ধ্যার অন্ধকার। মূর্তিটার কথা জানতো না। মূর্তিটাকে যখন দেখলো, ওটাকে ডন পিউটো বলেই ভুল করলো।
ব্রিজ থেকে নেমে পাহাড় বেয়ে উঠতে শুরু করলো কিশোর। অন্যেরা সঙ্গী হলো তার। রবিন জিজ্ঞেস করলো, কিন্তু মূর্তিটাকে তো নড়তে দেখার কথা নয়।
নড়েওনি, কিশোর বললো। নড়েছেন পিউটো। ওটার কাছে দাঁড়িয়ে।
তলোয়ারের খোলসটা তখন ওটার ভেতরে লুকাচ্ছিলেন তিনি।
তাহলে কি আরও কোনো সূত্র আছে মূর্তির কাছে? মুসা জিজ্ঞেস করলো। যেটা আমাদের চোখ এড়িয়ে গেছে?
ছাই… ধলো…বৃষ্টি-সাগর, বিড়বিড় করলো গোয়েন্দাপ্রধান। ছেলের জন্যে মেসেজ রেখে গিয়েছিলেন ডন। সাগর থেকে বৃষ্টির উৎপত্তি, আবার সাগরেই ফিরে যায়। ছাই যায় কোথায়? ধূলো যায় কোথায়? স্প্যানিশ ক্যালিফোর্নিয়ানরা খুব ধার্মিক লোক ছিলো। তারা…
দ্বাই থেকে হাই! বলে উঠলো পিনটু।
আর ধুলো থেকে ধুলো! প্রতিধ্বনি করলো যেন রবিন। কবর দেয়ার সময় এই শ্লোক আওড়ায় পাদ্রীরা। এটা বোঝানোর জন্যে, যেখান থেকে আসে সেখানেই আবার ফিরে যায় সব কিছু। যেখান থেকে উৎপত্তি!
ঠিক, মাথা ঝাঁকালো কিশোর। আহত ডনের হাতে সময় ছিলো খুব কম। স্যানটিনো যেন বুঝতে পারে, এরকম একটা ম্যাসেজই তিনি লিখেছিলেন ওই অল্প সময়ে। বোঝাতে চেয়েছিলেন, তলোয়ারটা যেখান থেকে এসেছে, সেখানেই ফিরে গেছে। অর্থাৎ করটেজের কাছ থেকে এসেছে, আবার তার কাছেই গেছে।
পাহাড়ের চূড়ায় উঠে মূর্তিটার দিকে তাকালো সবাই। মুহীন ঘোড়ার পিঠে আসীন দাড়িওয়ালা গর্বিত আরোহী যেন তাকিয়ে রয়েছে আলভারেজদের জমিদারীর দিকে।
তাহলে কি মূর্তির মধ্যেই লুকানো রয়েছে তলোয়ারটা? প্রশ্ন করলেন রাশেদ পাশা।
তা কি করে হয়? মানতে চাইলো না পিনটু। খোঁজা তো আর বাদ রাখিনি আমরা। তলোয়ার লুকানোর জায়গাই নেই ভেতরে।
দোহাই তোমার, কিশোর, দুই হাত ওপরে তুলে ফেললো মুসা, মূর্তির তলায় খুঁড়তে বলো না আর! এমনিতেই যা খুঁড়েছি, আগামী একশো বছর আর ওকাজটি করার ইচ্ছে নেই।
তার কথায় হেসে ফেললো সবাই।
না, সেকেণ্ড, অভয় দিয়ে বললো কিশোর, মাটি খুঁড়তে কলবো না। দরকার নেই। মনে আছে, খোলস থেকে তলোয়ারটা বের করে ফেলায় অবাক হয়েছিলাম আমরা? খোলসটা তৈরিই হয়েছে জিনিসটা নিরাপদে রাখার জন্যে, অথচ বের করে ফেলা হয়েছে। নিশ্চয় জরুরী কারণে। কারণটা এখন আমি জানি।
জানো?
বলো।
কোথায় ওটা, কিশোর?
হাসলো গোয়েন্দাপ্রধান। সবাইকে টেনশনে রেখে আনন্দ পাচ্ছে সে। গুহার ভেতরে জগটার কথা মনে আছে, যেটাতে কালো রঙ ছিলো? মেসেজ লেখা ছাড়াও ওই শুরু দিয়ে আরও একটা কাজ করেছেন ডন। গুলি খাওয়ার আগেই। যেখান থেকে তলোয়ারটা এসেছিলো, সেখানেই ফিরিয়ে দিয়েছেন। মৃর্তির ভেতরে নেই ওটা, আছে মূর্তির গায়ে।
কাঠের মূর্তির পাশে ঝুলছে কাঠের তলোয়ার। আপাত দৃষ্টিতে তাই মনে হয়। তলোয়ারটা ধরে টান দিলো কিশোর। খুলে এলে তার হাতে, একটা নখের সর্বনাশ করলো। হাত থেকে ছেড়ে দিলো ওটা। পাথরে লেগে ঠং করে উঠলো তলোয়ার। নখটা একবার দেখে পকেট থেকে ঝের কালো ছোট ছুরি। উত্তেজনায় ব্যথা ভুলে গেছে। তলোয়ারের কালো শরীর থেকে রঙ চেয়ে তুলতে লাগলো। মেঘের ফাঁক দিয়ে বেরোনো সূর্যের আলোয় ঝিকমিক করে উঠলো তলোয়ারের ধাতব শরীর।