সেটা প্রমাণ করতে পারবে না, কুকুরের মতো গরগর আওয়াজ বেরোলো ডরির গলা দিয়ে। কেন রিগোকে ফাঁসাতে চাইবে ওরা?
কারণ, ওই দাবানলটাও ওরাই লাগিয়েছিলো। গোলাঘর আর হাসিয়েনডা পোড়ানোর জন্যেও ওরাই দায়ী।
প্রমাণ করতে পারবে, কিশোর? ইয়ান ফ্লেচার জিজ্ঞেস করলেন।
আর ওই কাউবয়গুলোকে পাওয়া যাবে কোথায়? জানতে চাইলেন শেরিফ।
আমার বিশ্বস, ডয়েল র্যাঞ্চে পাবেন।
রেগে গেলেন মিস্টার ডয়েল, কি বলছো তুমি, ছেলে! আমি এসব করিয়েছি কলতে চাও?
না, স্যার, আপনি এসব্বে কিছুই জানেন না। তবে যারা জানে, তারা, এখানেই আছে। কাউবয়ের হ্যাটটা আনতে একা যায়নি, তাই না টেরি?
টেরি? ঝট করে ছেলের দিকে তাকালেন মিস্টার ডয়েল।
ও পাগল হয়ে গেছে, বাবা, ওর কথা বিশ্বাস করো না!
পকেট থেকে চাবির রিঙটা বের করলো কিশোর। গোলাঘরে পেয়েছি। এটা খুঁজতেই এসেছিলো কাউবয়েরা, আর এটার জন্যেই আমাদেরকে তাড়া করে বেড়িয়েছে। রিগোর হ্যাটটা নেয়ার সময় চাবিটা পড়ে গিয়েছিলো। র্যাঞ্চ ওয়াগনের চাবি।
আমাদের ওয়াগনের? বিশ্বাস করতে পারছেন না মিস্টার ডয়েল।
আমার তো তাই বিশ্বাস। আপনার ছেলেকে জিজ্ঞেস করুন।
টেরি! কঠিন দৃষ্টিতে ছেলের দিকে তাকালেন মিস্টার ডয়েল।
আ-আমি…আমি…, তোতলাতে শুরু করলো টেরি। তারপর ডরির দিকে তাকিয়ে জ্বলে উঠলো তার চোখ। এই ম্যানেজারের বাচ্চাকে দিয়েছিলাম এটা, বাবা! ও বললো, তার কাছে যেটা ছিলো, আগুন লাগার সময় সেটা হারিয়ে ফেলেছিলো। আমাকে বলেনি…
চুপ করো! গর্জে উঠলো ডরি। তুমি জানো না কিছু, না? হ্যাটটা আনার সময় যে চাবিটা হারিয়েছি একথা ভালো করেই জানো তুমি।
সবার চোখ এখন হোঁৎকা ম্যানেজারের দিকে।
ওই গাধা তিনটে আমার দোস্ত, সব বলে দিতে লাগলো ডরি, রাগটা টেরির ওপর। আমাকে একবার বিপদ থেকে বাঁচিয়েছিলো। এবার ওরা বিপদে পড়ে এলো আমার কাছে। মিস্টার ডয়েলের এলাকায় ওদের লুকিয়ে থাকার ব্যবস্থা করলাম। আগুন জ্বালতে কতোবার মানা করেছি, তা-ও শুনলো না গাধাগুলো, জ্বাললোই। ওদের ক্যাম্পফায়ার থেকেই দাবানল লাগলো। বুঝলাম, এটা জানাজানি হয়ে গেলে আমারও বিপদ হবে, ঘাড় ধরে বের করে দেবেন আমাকে মিস্টার ডয়েল। টেরিয়ারকে বললাম সেকথা। সে-ই আমাকে বুদ্ধি দিলো রিগোকে ফাঁসিয়ে দেয়ার জন্যে। চলে গেলাম আলভারেজদের গোলাঘরে, রিগোর ব্যবহার করা একটা জিনিস খুঁজে আনার জন্যে। দেখলাম, দরজার পাশেই কে ঝোলানো রয়েছে ওর ব্যাটটা নিয়ে এলাম। পরে গিয়ে ফেলে রেখেছিলাম ক্যাম্পফায়ারের কাছে। হয়ে গিয়েছিলো কাজ, সব ভজঘট করে দিলো ওই হতচ্ছাড়া চাবিটা!
গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞেস করলেন শেরিফ, চাবিটা তখন তুলে নিলে না কেন?
তাড়াহুড়ার মধ্যে ছিলাম তখন, ডরি বললো। খোঁজার সময়ই ছিলো না। কে কোত্থেকে দেখে ফেলে এই ভয়ে…
সময় আর থাকবে কি করে? খোঁচা দিয়ে বললো মুসা। গোলাঘর তখন নিশ্চয় পুড়তে শুরু করেছে।
হ্যাঁ, গলা বসে গেল ডরির। কাশি দিয়ে পরিষ্কার করে নিয়ে বললো, আসলে এসব পোড়ানোর কোনো ইচ্ছে আমার ছিলো না। আমি শুধু শয়তান তিনটেকে জায়গা দিয়েছিলাম। ওরা শুনে ফেললো, আলভারেজদের র্যাঞ্চটা আমরা চাই। তাই ইচ্ছে করেই আমাদেরকে সাহায্য করতে এলো, দাবানল লাগালো, হাসিয়েনডা আর গোলাঘর পোড়ালো। আমি যখন জানলাম, তখন দেরি হয়ে গেছে। আগুন লাগিয়ে দিয়েহে গোলাঘরে। ছুটতে ছুটতে গিয়ে ঢুকলাম, হ্যাটটা পেয়ে আর একটা মুহূর্ত দেরি না করে বেরিয়ে চলে এলাম। চাবি খোঁজার সময়ই পেলাম না।
আরেকটা কথা স্বীকার করছেন না কেন? ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো রবিন, তলোয়ার খোঁজায় আমাদের বাধা দিয়েছেন আপনারা। আপনি আর টেরি। পিছে লেগেছেন, জানালায় আড়ি পেতেছেন, আমাদের হুমকি দিয়েছেন।
দায়িত্ব পালন করেছি শুধু, প্রতিবাদ জানালো ডরি।
দায়িত্ব আর পালন করতে হবে না তোমাকে, মিস্টার ডয়েল বললেন। যাও, জিনিসপত্র যা আছে, নিয়ে বিদেয় হও। তারপর জ্বলন্ত চোখে তাকালেন ছেলের দিকে। আর তোমার ব্যবস্থাও আমি করছি, পরে! যাও, গাড়িতে গিয়ে বসো।
আপনি যেতে বললেও আমরা ওদের যেতে দিতে পারি না, শেরিফ বললেন। ডেপুটিকে আদেশ দিলেন, অ্যারেস্ট করো।
উরি আর টেরিকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে তুললেন ডেপুটি।
দীর্ঘ একটা মুহূর্ত সেদিকে তাকিয়ে রইলেন মিস্টার ডয়েল। তারপর নীরবে গিয়ে নিজের গাড়িতে উঠলেন। শেরিফরা রওনা হওয়ার আগেই গাড়ি হাঁকিয়ে চলে গেলেন, বোধহয় উকিলের সঙ্গে দেখা করার জন্যেই।
গাড়ির দিকে যাওয়ার আগে তিন গোয়েন্দার দিকে তাকিয়ে হাসলেন ইয়ান ফ্লেচার, একজন নির্দোষ মানুষকে মুক্ত করলে তোমরা। আমি এখুনি গিয়ে রিগোকে ছাড়ার ব্যবস্থা করছি।
শেরিফ, ক্যাপ্টেন ফ্লেচার, আর ডয়েলরা চলে গেল। ঘড়ি দেখলেন রাশেদ পাশা। ইয়ার্ডের ট্রাকটা আনতে বললেন বোরিস আর রোভারকে। ছেলেদেরকে বললেন, ভূত সেজে আছিস তো একেকজন। চল, আগে গোসল করতে হবে। তারপর খাওয়া।
কিন্তু আরও কিছুক্ষণ থাকতে হবে আমাদেরকে এখানে, কিশোর কললো। অন্তত পনেরো মিনিট। তাতেই হয়ে যাবে।
আরও থাকবি? অবাক হলেন রাশেদ পাশ। কেন?
তাতে কি হয়ে যাবে, কিশোর? রবিন জিজ্ঞেস করলো।