সাড়ে সাতটার দিকে চেঁচিয়ে উঠলো মুসা, আলো! এই, আলো দেখা যায়
নতুন উদ্যমে সুড়ঙ্গ খোঁড়ায় ঝাঁপিয়ে পড়লো সকলে। আলো বাড়ছে…বাড়ছে, ব্যস, হয়ে গেল কাজ। সরু সুড়ঙ্গ পথে হামাগুড়ি দিয়ে একের পর এক বেরিয়ে এলো ওরা, ঝমঝম বৃষ্টির মধ্যে।
খাইছে! মুসা কললো। আওয়াজ শুনতে পাচ্ছো?
পানির গর্জন কাঁপিয়ে দিচ্ছে যেন পুরো এলাকাটাকে। নেমে এসেছে পাহাড়ী ঢল। হাত তুলে চিৎকার করে বললো পিনটু, দেখো দেখো, অর্ধেকটা বাঁধ শেষ…
টিবিটাও গায়েব। রবিন বললো।
দেখো! অ্যারোইওর দিকে হাত তুললো কিশোর।
ওদের নিচে যে অ্যারোইওটা চলে গিয়েছিলো হাসিয়েনডা পর্যন্ত, ঢিবি ধসে পড়ায় ওটা আর অ্যারোইও নেই, এমনকি নালা বা খালও বলা যাবে না এখন, নদীই হয়ে গেছে প্রায়। প্রচণ্ড বেগে বয়ে চলেছে ঘোলাটে পানির স্রোত। একটা ক্রীক নয়, দুটো ক্রীক দিয়ে এখন সাগরের দিকে চলেছে পানি।
সেদিকে তাকিয়ে চক চক করে উঠলো কিশোরের চোখ। জোরে তুড়ি বাজিয়ে বললো, পেয়েছি! জবাব পেয়েছি!
২০
কী, কিশোর? একসাথে চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো মুসা আর রবিন।
কথা বলতে গিয়ে থেমে গেল গোয়েন্দাপ্রধান। কাউন্টি রোডের দিকের শৈলশিরাটার দিকে হাত তুললো। মানুষ! কাউবয়গুলো না তো?
কপালের ওপর হাত তুলে এনে বৃষ্টি বাঁচিয়ে ভালোমতো তাকালো মুসা। চারজন লোক আসছে।
না না, কাউবয় না! খুশি হয়ে বললো মুসা। আমার আর রবিনের বাবা আসছে! সাথে শেরিফ আর ক্যাপ্টেন ফ্লেচার!
পিচ্ছিল ঢাল বেয়ে যতো দ্রুত সম্বদৌড়ে নামতে আরম্ভ করলো চার কিশোর।
মুসাআ! দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন মিস্টার আমান, তোরা ভালো আছিস?
আছি, হাসিমুখে জবাব দিলো মুসা।
রাগ করে বললেন মিস্টার মিলফোর্ড, এখানে সারা রাত কি করলে তোমরা?
আটকে গিয়েছিলাম, কি করে গুহায় আটকা পড়েছিলো জানালো রবিন। ডন পিউটো আর তিন সৈনিকের কঙ্কাল আবিষ্কার করেছে যে সেকথাও জানালো।
আরেকটা রহস্যের সমাধান তহলে করে ফেললে, হাসতে হাসতে বললেন পুলিশ-চীফ।
মা-বাবাকে যা দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলে না, শেরিফ বললেন। রিগে বললো তলোয়ার খুঁজতে বেরিয়েছো তোমরা। অর্ধেকটা রাত এই পাহাড়ে খোঁজাখুঁজি করছি আমরা। কিশোর, বোরিস আর রোভারকে নিয়ে খুঁজছেন তোমার চাচা। মিস্টার ডয়েলও খুঁজছেন দলবল নিয়ে, নালার ওদিকটায়। গুহায় কি করে ঢুকলে এখন খুলে বলো তো শুনি?
শুরু করতে যাচ্ছিলো মুসা, তাকে থামিয়ে দিয়ে কিশোর বললো, চলুন, হাসিয়েনডার দিকে যেতে বলছি। চাচাকে আর দুশ্চিন্তায় রেখে লাভ নেই। রেডিওতে খবর দেয়া যাবে?
ওয়াকি-টকিতে কথা বললেন শেরিফ। সার্চ পার্টিকে এসে জমায়েত হতে বললেন হাসিয়েনডার কাছে।
হাঁটতে হাঁটতে জানালো ছেলেরা, কিভাবে কাউবয়েরা তাড়া করেছিলো ওদের। কাউন্টি রোডে উঠে ব্রিজ পেরোলো, এসে পৌঁছলো হাসিয়েনডার কাছে।
ইতিমধ্যেই ওখানে বোরিস আর রোভারকে নিয়ে পৌঁছে গেছেন রাশেদ পাশা। তাঁদের পেছনে ডয়েলদের র্যাঞ্চ ওয়াগনটা, ওটার কাছে দাঁড়িয়ে আছেন মিস্টার ডয়েল, টেরিয়ার, ম্যানেজার ডরি, আর দুজন লোক।
শেরিফের গাড়িটাও আছে। তাতে বসে আছেন ডেপুটি শেরিফ।
দৌড়ে এলেন রাশেদ পাশা। উদ্বিগ্ন কণ্ঠে জিজ্ঞেস কলেন, কিশোর, ভালো আছিস তোরা?
আছি, চাচা।
এগিয়ে এলেন মিস্টার ডয়েল, তার সাথে এগোলো টেরি আর ডরি।
দাঁত বের করে হেসে বললো টেরি, ইহুহি, চেহারার কি ছিরি হয়েছে। একেবারে ভূত…
এই, থাম্ তো! ধমক দিলেন তার বাবা। ছেলেদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ভালোয় ভালোয় যে ফিরে এসেছো এটাই বেশি।
কাজের কথা শুরু করলেন শেরিফ, ওই তিনজন লোক কেন তাড়া করেছিলো তোমাদের?
কারণ, ওরা রিগোকে ফাঁসানোর জন্যে ফাঁদ পেতেছিলো, জবাব দিলো মুসা। আর সম্বত হাসিয়েনডাটাও ওরাই পুড়িয়েছে।
গজগজ করতে লাগলো ডরি, আগুন রিগো লাগিয়েছে। ওরকম একটা কাণ্ডজ্ঞান ছাড়া লোক র্যাঞ্চ চালাবে এখানে? অসম্ব!
র্যাঞ্চ থাকলে তো চালাবে, হেসে উঠলো টেরি।
এই, তোকে চুপ থাকতে বলেছি না! কড়া ধমক লাগালেন মিস্টার ডয়েল। ডরি, তুমিও কথা বলবে না। কিশোরের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলেন, রিগো যে লাগায়নি প্রমাণ করতে পারবে?
নিশ্চয় পারবো। আগুন যেদিন লেগেছিলো সেদিন বিকেল তিনটেয় তার মাথায় হ্যাট ছিলো। আমাদের সঙ্গে ছিলো তখন রকি বীচ সেন্ট্রাল ইস্কুলে। শেরিফ বলেছেন, আগুনটা লেগেছে তিনটের আগে। তাহলে ক্যাম্পফায়ারের কাছে তখন রিগোর হ্যাট পড়ে থাকে কি করে?
কিশোর থামতে রবিন যোগ করলো, শুঁট…ইয়ে, টেরিয়ার আর মিস্টার ডরিও ইস্কুলে রিগোর মাথায় হ্যাটটা দেখেছে। কারণ ওরাও তখন ওখানে ছিলো।
আমি মনে করতে পারছি না, গোমড়া মুখে বললো টেরি।
ছিলোই না মাথায়, ডরি বললো, মনে থাকবে কি?
ছিলো, জোর দিয়ে বললো কিশোর। বিকেলে যখন তার সাথে হাসিয়েনায় ফিরলাম, তখনও ছিলো মাথায়। গোলাঘরে ঢুকে একটা হুকে ঝুলিয়ে রেখেছিলো। এই সময় আগুন লাগার কথা শুনে দৌড়ে বেরোয় ঘর থেকে। গোলাঘর পুড়লো, তখন হ্যাটটা ভেতরে থাকলে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার কথা, অথচ পোড়েনি। এর কারণ, দাবানল নেভাতে যখন ব্যস্ত ছিলো সবাই, তখন এসে গোলাঘর থেকে হ্যাটটা তুলে নিয়ে যায় তিন কাউবয়। নিয়ে গিয়ে ক্যাম্পফায়ারের কাছে ফেলে রাখে ওটা, রিগোকে ফাঁসানোর জন্যে।