ওই এমনি বলেছে, বিশেষ পাত্তা দিলো না রিগো, কথার কথা। পিনটুর কণ্ঠে অস্বস্তি ফুটলো, কিন্তু ভাইয়া, মিস্টার ডয়েল…
থাক থাক বাধা দিয়ে বললো রিগো, আমাদের ব্যক্তিগত সমস্যা ওটা। অন্যকে বিরক্ত করার দরকার নেই।
কোনো গোলমাল হয়েছে? জিজ্ঞেস করলো কিশোর। কিছু করেছে ডরি আর টেরিয়ার?
না, না, তেমন কিছু না।
ভাইয়া, প্রতিবাদ জানালো পিনটু, আমাদের র্যাঞ্চ চুরি করে নিয়ে যেতে চাইছে, আর একে তুমি কিছু না বলহো!
হাঁ হয়ে গেল রবিন আর মুসা। রবিন বললো, তোমাদের র্যাঞ্চ? মুসা বললো, করে কিভাবে?
কথা শুদ্ধ করে বলবে, পিনটু, বললো তার ভাই। চুরি শব্দটা ঠিক হয়নি।
কোন শব্দটা হলে ঠিক হতো? ফস করে জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
দ্বিধায় পড়ে গেল যেন রিগো। মুখ ফসকে বলে ফেলেছে, এখন বাকিটা বলবে কিনা ভাবছে যেন। শেষে বলেই ফেললো, কয়েক মাস আগে আমাদের পাশের র্যাঞ্চটা কিনেছেন মিস্টার ডয়েল। তারপর আশেপাশে যত বড় বড় র্যাঞ্চ আছে সব কিনে ফেলবেন ঠিক করেছেন। আমার বিশ্বাস জমির ওপর টাকা খাটাচ্ছেন। আমাদের র্যাঞ্চটাও চাইছেন। অনেক টাকা দাম দিতে চেয়েছেন। কিন্তু আমরা বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় ভীষণ রেগে গেছেন তিনি।
তোমার শব্দ-চয়নও ঠিক হয়নি, হেসে বললো পিনটু। বরং বলো পাগলা ঘোড়া হয়ে গেছেন।
ভাইয়ের কথায় কান না দিয়ে বলতে থাকলো রিগো, বুঝেছে, আসলে আমাদের জমির দরকার খুব একটা নেই তার কাছে। তিনি চাইছেন অন্য জিনিস। পুরানো একটা ড্যাম আর রিজারভোয়ার রয়েছে আমাদের এলাকায়, নাম সান্তা ইনেজ ক্রীক। মিস্টার ডয়েরে বিশাল র্যাঞ্চের জন্যে পানি দরকার, তাই বাধ আর ওই দীঘিটা চায়। প্রথমে এসে কেনার প্রস্তাব দিলো আমাদের কাছে, রাজি হলাম না। আরও বেশি দাম দিতে চাইলো। তারপরও যখন রাজি হলাম না, আমাদের পুরানো দলিল ঠিক না বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করলো। পারলো না। আমাদের জমি আমাদেরই রইলো।
তখন অন্য পথ ধরলো ডয়েল, মিস্টার ডয়েলকে সৌজন্য দেখানোর ধার দিয়েও গেল না পিনটু। ডরিকে দিয়ে শেরিফকে বলে পাঠালো, প্রায়ই আমাদের র্যাঞ্চে আগুন লাগে। সেই আগুন নাকি তার র্যাঞ্চেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। বলে আমাদের লোক কম। আরও লোক রাখা দরকার যাতে ওরকম দুর্ঘটনা আর না ঘটতে পারে। রাগ চাপা দিতে পারলো না সে।
এই ডরিটাকে? রবিন জানতে চাইলো।
মিস্টার ডয়েলের র্যাঞ্চ ম্যানেজার, জানালো রিগো। মিস্টার ডয়েল হলেন গিয়ে ব্যবসায়ী মানুষ। র্যাঞ্চ সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই। তাই লোক রেখে চালাতে চাইছেন আমার মনে হয়।
ডরির কথা নিশ্চয় বিশ্বাস করেননি শেরিফ, মুসা আশা করলো। নইলে এতোদিনে হাতছাড়া হয়ে যেতো আপনাদের র্যাঞ্চ, তাই না?
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো রিগো। কাগজ-পত্র সব ঠিক আছে বলেই কিছু করতে পারছে না। কিন্তু আমাদের টাকা নেই, কতোদিন ঠেকাবো? ট্যাক্স জমে গেছে অনেক। সেটা জেনে ফেলেছেন মিস্টার ডয়েল। কাউন্টিকে ফুসলাচ্ছেন যাতে নীলামে তোলে আমাদের জমি, তাহলে তিনি কিনে নিতে পারবেন। এখন যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ট্যাক্স ক্লিয়ার করতে হবে আমাদের…
ব্যাংকের কাছে বাধা দিয়ে টাকা ধার নিতে পারেন, কিশোর বললো।
হ্যাঁ, কিশোরের কথা সমর্থন করতে পারলো না মুসা, তারপর ব্যাংক এসে জমিটা নিয়ে নিক। ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত চুলায় ঝাপ দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছো।
না, তা কেন হবে? কিশোরের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে তার পক্ষ নিলো রবিন। নিশ্চয় অনেক টাকা ট্যাক্স জমেছে। সেটা ব্যাংক দিয়ে দেবে। সেই টাকার ওপর কিছু সুদ ধরে কিস্তিতে শোধ দিতে কলবে জমির মালিককে। একবারে দেয়ার চেয়ে অল্প অল্প করে দেয়া অনেক সহজ, আর দেয়ার সময়ও পাওয়া যাবে।
তা ঠিক, রাগ ফুটলো রিগোর কণ্ঠে। কিন্তু কথা হলো আমাদের মতো বাইরের লোকদের ধার দিতে চায় না ক্যালিফোর্নিয়ার ব্যাংক। খাঁটি আমেরিকান না হলে বিশ্বাস করে না। জমি বন্ধক রেখে ট্যাক্সের জন্যে ধার আমরা নিয়েছি, আমাদেরই এক পুরানো বন্ধু, প্রতিবেশী, আমাদের মতোই মেকসিকান-আমেরিকান রডরিক হেরিয়ানোর কাছ থেকে। কয়েক দিনের জন্যে। টাকাটা শীঘ্রি শোধ করতে হবে। সে-কারণেই তোমার কাছে এসেছি, কিশোর পাশা।
আমার কাছে?
যেহেতু র্যাঞ্চ ছাড়ছি না আমরা, জায়গা আর বিক্রি করতে পারছি না। বিক্রি করার মতো জমিই নেই। যা আছে সেগুলো দিয়ে আমাদেরকে চলতে হবে। অনেক পুরুষ ধরে অনেক জিনিসপত্র কিনেছে আলভারেজরা, অনেক কিছু জমিয়েছে। এই যেমন আসবাবপত্র, ছবি, ভাস্কর্য, বই, পোশাক, যন্ত্রপাতি, আরও নানারকম জিনিস। আলভারেজদের ইতিহাসই বলা চলে ওগুলোকে। কিন্তু জমির চেয়ে তো বড় না, তাই ওগুলো বিক্রি করে ধারশোধ করবো ঠিক করেছি। পিনটুর কাছে শুনেছি, তোমার চাচা নাকি সব ধরনের পুরানো জিনিস কেনেন।
নিশ্চয়ই কেনেন, কিশোরের আগেই চেঁচিয়ে উঠলো মুসা। আর যতো বেশি পুরানো জিনিস হয় ততো বেশি খুশি হন।
হ্যাঁ, কিশোর কললো, পুরানো হলে খুশি হয়েই কিনবেন। আসুন।
সত্যিই খুশি হলেন রাশেদ পাশা। মুসা আর কিশোরের মুখে শুনে প্রায় লাফিয়ে উঠলেন। মুখ থেকে পাইপ সরিয়ে বললেন, তাহলে আর বসে আছি কেন? উত্তেজনায় চকচক করছে চোখ।