ভিজে চপচপে হয়ে স্যালভিজ ইয়ার্ডে পৌঁছলো তিনজনে। রবিন আর মুসা সাইকেল ফেলে গিয়েছিলো এখানে, নিয়ে রওনা হলো বাড়ির দিকে। গেট দিয়ে বেরোতেই দেখা শুঁটকি টেরির সঙ্গে। টিটকারি দিয়ে বললো, আহারে, ইস্, একেবারে গোসল করে ফেলেছে! এসো, গাড়িতে ওঠো, পৌঁছে দি।
শুঁটকির গন্ধে বমি করার চেয়ে ভিজে যাওয়া অনেক ভালো, জবাব দিলো মুসা।
চকিতের জন্যে রাগ ঝিলিক দিয়ে উঠলো টেরিয়ারের চোখে। চিবিয়ে চিবিয়ে, বললো, দেখো, আলভারেজ র্যাঞ্চের ধারেকাছে যাবেনা আর। সাবধান!
টেরিয়ারের গাড়ি দেখে এগিয়ে এসেছে কিশোর। তার কথা কানে গেছে। জিজ্ঞেস করলো, ধমক দিচ্ছো?
ওদের র্যাঞ্চটার লোভ, না? কড়া গলায় বললো মুসা। ছুঁতেও দেয়া হবে না তোমার বাপকে, মনে রেখো!
দাঁত বের করে হাসলো টেরি। কি করে ঠেকাবে?
আমরা তলো…, প্রায় বলে দিয়েছিলো মুসা। তাড়াতাড়ি বাধা দিয়ে বলে উঠলো কিশোর, দেখতেই পাবে, কি করে ঠেকাই।
যা করার তাড়াতাড়ি করো, খিকখিক করে হাসলো টেরি, সময় বেশি পাবে না। হপ্তাখানেকের মধ্যেই দখল করে নেবো ওটা। আলভারেজদের কপালে শনি আছে। ওদের সঙ্গে খাতির লাগিয়ে কিছু করতে গেলে তোমাদেরও ভালো হবে না।
তিন গোয়েন্দাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়ি হাঁকিয়ে চলে গেল টেরি। অঝোর বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে তিন গোয়েন্দা। ভাবছে, বড় বেশি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথাগুলো বলে গেল শুঁটকি!
৬
শনিবার সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলো কিশোর। বৃষ্টি থামেনি, পড়েই চলেছে। তবে বৃষ্টি তাকে আলভারেজ র্যাঞ্চে যাওয়া ঠেকাতে পারতো না, যেতে পারলো না অন্য কারণে। ফোন করে রবিন আর মুসা জানালো, বাড়িতে জরুরী কাজ আছে, দুপুরের আগে আসতে পারবে না।
গেল মনটা খারাপ হয়ে। শেষে আর ঘরে বসে থাকতে না পেরে ভিজে ভিজেই গিয়ে ইয়ার্ডের কাজে সাহায্য করলো বোরিস আর রোভারকে।
দুপুরে খাবার পরে এলো রবিন আর মুসা। বৃষ্টি থামেনি, তবে হালকা হয়ে এসেছে। রেনকোট পরে এসেহে দুজনেই। কিশোরও পরে নিলো। সাইকেল নিয়ে আলভারেজ র্যাঞ্চে রওনা হলো তিনজনে। কাউন্টি রোড ধরে চললো। সাথে ম্যাপ নিয়ে নিয়েছে কিশোর, যাতে পাহাড়ের গলিঘুপচি দিয়ে যাওয়ার সময় পথ ভুল না হয়। আলভারেজ হাসিয়েনডার পোড়া ধ্বংসপ পেরিয়ে এসে সহজেই খুঁজে বার করলো প্রতিবেশী রডরিক হেরিয়ানোর বাড়িটা। অ্যাভোকাডোর ফার্ম করা হয়েছে ওখানে।
পুরানো ধাঁচের পুরানো বাড়ি। মস্ত গোলাঘর, তার পেছনে ছোট ছোট দুটো কটেজ। বৃষ্টির মধ্যেই কাঠ ফাড়ছে পিনটু, সেখানে হাজির হলো তিন গোয়েন্দা।
তোমার ভাই আছে ঘরে? কিশোর জিজ্ঞেস করলো।
আছে, এসো, কুড়ালটা হাত থেকে ফেলে দিলো পিনটু।
একটা কটেজে ঢুকলো ওরা। মাত্র দুটো ঘর, আর ছোট্ট রান্নাঘর। ফায়ারপ্লেসে তখন আগুন জ্বালছে রিগো। তিন গোয়েন্দাকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে হাসলো। এসো এসো।
প্রফেসর সাইনাসের কথা বললো পিনটু আর রিগোকে কিশোর। বললো, তিনি বলেছেন করটেজ সোর্ডেরই খোলস ওটা।
পালাতে গিয়েও মারা পড়েননি পিউটো আলভারেজ, যোগ করলো মুসা।
পড়েননি এটা জোর দিয়ে বলা যায় না, শুধরে দিয়ে বললো রবিন, তবে কথাটা ঠিক না-ও হতে পারে এই আরকি।
কপি করে আনা দলিলগুলো দুই ভাইকে দেখালো কিশোর।
এতে আর নতুন কি বোঝা গেল? হাত ওল্টালো রিগো।
কেন, কিছুই সন্দেহ হচ্ছে না আপনার? ডন পিউটো পালাতে গিয়ে মারা পড়েছে বলে যারা রিপোর্ট করেছে, তাদেরকেই পরদিন থেকে পলাতক ঘোষণা করেছে আর্মি,
এটা সন্দেহজনক নয়? তিন তিনজন লোক একই সাথে পালালো!
হুঁ, মাথা দোলালো রিগো, আমার সন্দেহই তাহলে ঠিক। এখন তোমাদের বলি, তলোয়ারটা সাগরে পড়ে হারিয়ে গেছে, কথাটা বিশ্বাস হয়নি আমার। বুঝতে পারছি, ওরা তলোয়ারটা কেড়ে নিয়ে ডনকে খুন করে সাগরে ফেলে দিয়েছে। রিপোর্ট করেছে, পালাতে গিয়ে মারা পড়েছেন ডন। তারপর তলোয়ার নিয়ে পালিয়েছে তিনজনে।
হয়তো, কিশোর বললো। কিন্তু খোলসটার ব্যাপারে কি বলবেন? মূর্তির ভেতরে কে লুকিয়েছে ওটা? একমাত্র ডনের কথাই মনে আসে আমার। আমেরিকানদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যে একাজ করেছেন হয়তো তিনি। কোনো কারণে খোলসটা ওখানে লুকিয়ে তলোয়ার আর খাপটা আলাদা জায়গায় নিয়ে গেছেন।
তলোয়ারটা ডনের কাছে নিয়ে গেছে যে, সে-ও তো লুকাতে পারে, যুক্তি দেখালো রিগো।
এই আরেকটা রহস্য! দামী একটা তলোয়ার জেনেশুনে ওভাবে শক্রর গুহায় নিয়ে যাওয়া হলো কেন? ধরে নিলাম অস্ত্র দরকার ছিলো ডনের, একটা বন্দুক নিয়ে গিয়ে দিলেই তো আরও ভালো হতো। বন্দুকের বিরুদ্ধে তো বন্দুকই দরকার, তলোয়ার কেন? তা-ও আবার পাথর বসানো?
শ্রাগ করলো রিগো। পাথর ছিলোই তা কিন্তু শিওর না।
আমি কি ভাবছি, শুনুন। ডন পিউটোকে অ্যারেস্টই করেছিলো আমেরিকানরা কর্টেজ সোর্ডের জন্যে। হ্যাঁ, রবিন, প্রফেসর সাইনাস কি বলেছেন আমি জানি, রবিন মুখ খুলতে যাচ্ছিলো দেখে তাকে থামিয়ে দিলো কিশোর। ডন সেটা বুঝতে পেরে মূর্তির ভেতরে লুকিয়ে ফেলেন তলোয়ারটা, ধরা পড়ার আগেই। বন্দিশালা থেকে যখন পালালেন তিনি, তার পিছু নিলো সার্জেন্ট ডগলাস আর তার দুই করপোরাল। রিপোর্ট করে দিলো যে পালাতে গিয়ে গুলি খেয়ে তলোয়ারসহ সাগরে পড়ে গেছেন ডন। ডন বুঝতে পারলেন ওদের উদ্দেশ্য, পিছু যে নিয়েছে হয়তো টের পেয়ে গিয়েছিলেন। তলোয়ারটাকে নতুন আরেক জায়গায় লুকালেন তিনি। খোলসটা মূর্তির মধ্যেই রেখে দিলেন ওদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্যে।