পরের দুটো ঘন্টা পাতার পর পাতা উল্টে গেল ওরা। ডন পিউটো আলভারেজ আর করটেজ সোর্ডটার কথা কিছু লেখা আছে কিনা খুঁজছে। হিসটোরিয়ান কাজে ব্যস্ত, ছেলেদেরকে বিরক্ত করলেন না। ইতিমধ্যে অন্য কেউ ঢুকলো না ওঘরে।
দুই ঘণ্টা পর দুটো ফাইলই ওল্টানো শেষ হলো। তার ফাইলে একটা জিনিসই শুধু দৃষ্টি আকর্ষণ করলো কিশোরের, একটা চিঠি পুরানো হতে হতে হলদে হয়ে এসেছে কাগজ। দুই সহকারীকে জানালো সে, ছেলের কাছে এই চিঠি লিখেছিলেন ডন পিউটো আলভারেজ। রকি বীচে একটা ঘরে তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে তখন। ওই সময় তাঁর ছেলে ছিলো মেকসিকো সিটিতে, মেকসিকান আর্মির একজন অফিসার।
কি লিখেছেন? জানতে চাইলো মুসা।
ভাষাটা স্প্যানিশ, তা-ও আবার পুরানো ঢঙে, নাক কুঁচকালো কিশোর, খুব কঠিন। ভালো বুঝলাম না। তবে এটুকু বুঝেছি, সাগরের কাছে একটা বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছিলো ডন পিউটো আলভারেজকে। লোকজন বোধহয় দেখা করতে আসতো তার কাছে, ওরকম কিছু লিখেছে। বিজয়ের পরে ছেলের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি, এরকম কথাও আছে। বোধহয় পালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত এটা, তবে আমি শিওর না। চিঠিটার তারিখ তেরো সেপ্টেম্বর, উনিশশো ছেচল্লিশ। তলোয়ারটার কথা কিছু লেখা নেই।
বন্দি অবস্থায় লিখেছে, না? চিন্তিত ভঙ্গিতে গাল চুলকালো মুসা। আচ্ছা, কিশোর, সাংকেতিক কিছু লেখা নেই তো?
তা থাকতে পারে, মাথা ঝাঁকালো কিশোর। রিগোকে দিয়ে পড়াতে হবে। মানে ঠিকমতো না বুঝলে কিছু বলা যাচ্ছে না…
পড়িয়ে লাভ হবে বলে মনে হয় না, রবিন বললো। এই যে আরেকটা চিঠি, আমেরিকান আর্মি লিখেছিলো ডন পিউটোর ছেলে স্যানটিনোকে। যুদ্ধের পর সে তখন বাড়ি ফিরেছে। চিঠিতে দুঃখপ্রকাশ করেছে আমেরিকান প্রকার, ডন পিউটোর মৃত্যুর জন্যে। আঠারোশো ছেচল্লিশের পনেরোই সেপ্টেম্বর পালাতে গিয়ে মারা পড়েন ডন। তাকে গুলি করা ছাড়া নাকি আর কোনো উপায় ছিলো না সৈন্যদের, কারণ তিনি সশস্ত্র ছিলেন, এবং আগে হামলা করেছিলেন। গুলি খেয়ে সাগরে পড়ে যান তিনি…
ওসব তো পুরানো খবর, বাধা দিয়ে বললো মুসা, জানি আমরা। নতুন কি লিখেছে?
ডনের এভাবে সাগরে পড়ে যাওয়ার কথা রিপোর্ট করেছে জনৈক সার্জেন্ট রবার্ট ডগলাস। তার পক্ষে সাক্ষি দিয়েছে দুজন করপোরাল, তিনজনেই তখন ওই বাড়িতে পাহারায় ছিলো। ডগলাসের লেখা রিপোর্টটাও আছে এই ফাইলে, বলে ফাইলে টোকা দিলো রবিন। একথাও বলা হয়েছে, ডনের হাতে তখন একটা তলোয়ার ছিলো।
ভুরু কুঁচকে গেল কিশোরের। মুসার চোখে নিরাশা।
সার্জেন্টের ধারণা, বলে চললো রবিন, তলোয়ারটা লুকিয়ে ডনের কাছে নিয়ে এসেছিলো তার কোনো সহচর, তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসতো যারা, তাদেরই কেউ। মুখ তুললো রবিন। তারমানে, তলোয়ার হাতে নিয়েই সাগরে পড়েছিলেন ডন পিউটো।
বাইরে জোর বৃষ্টি হচ্ছে। জানালা দিয়ে সেদিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো কিশোর। কিছুক্ষণ পর জিজ্ঞেস করলো, মুসা, তুমি কিছু পেয়েছো?
তেমন কিছু না, জবাব দিলো মুসা হতাশ কণ্ঠে। আমিও একটা চিঠি পেয়েছি। ২৩ সেপ্টেম্বর লস অ্যাঞ্জেলেস গ্যারিসনের ওপর মেকসিকান হামলার বিব্রণ চেয়ে কমাণ্ডিং অফিসারের কাছে চিঠিটা লিখেছেন একজন ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা। কয়েকজন সৈন্যের নাম উল্লেখ করেছেন, যারা দুটি না নিয়েই নিরুদ্দেশ হয়েছে। ষোল সেপ্টেম্বরের পর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানানো হয়েছে। সামরিক নিয়মে পলাতক ঘোষণা করা হয়েছে ওদেরকে। ডন পিউটো কিংবা তলোয়ারটার কথা কিছু লেখা নেই…
মুসার কথা শেষ হওয়ার আগেই কিশোর জানতে চাইলো, পলাতকদের নাম কি?
সার্জেন্ট রবার্ট ডগলাস, করপোরাল হ্যানসন, এবং করপোরাল…
ডি. ফাইবার! মুসার কথা শেষ হওয়ার আগেই চেঁচিয়ে উঠলো রবিন। এদের কথাই লেখা আছে আমার চিঠিটাতেও! ডন পিউটোকে পাহারা দিয়ে রেখেছিলো!
চিৎকার শুনে অবাক হয়ে যে ওদের দিকে তাকিয়ে আছেন হিসটোরিয়ান খেয়ালই করলো না ওরা।
ডগলাস, হ্যানসন এবং ফাইবার, খুশি খুশি মনে হলো কিশোরকে। আঠারোশো ছেচল্লিশের মোল সেপ্টেম্বর থেকে নিখোঁজ!
হ্যাঁ, কিন্তু… হঠাৎ চোখ বড় বড় হয়ে গেল মুসার। খাইছে! ওরাই ডনকে গুলি করেনি তো?
ওরা রিপোর্ট করেছে যে গুলি খেয়েছেন ডন, কিশোর বললো। কে করেছে, তা বলেনি।
ওরাই গুলি করেছে, তাই না কিশোর? জিজ্ঞাসু চোখে গোয়েন্দাপ্রধানের দিকে তাকালো রবিন।
তাই তো মনে হয়, গম্ভীর হয়ে গেল কিশোর। ব্যাপারটা খুবই রহস্যজনক। যারা ডনকে আগের দিন গুলি করে মারলো, প্রদিন থেকেই নিখোঁজ হয়ে গেল তারা, পলাতক ঘোষিত হয়ে গেল। তারপর আর কোনো খবরই নেই তাদের।
তলোয়ারটা চুরি করে পালায়নি তো? মুসা জিজ্ঞেস করলো।
পালাতেও পারে। কিন্তু তাহলে ওই খোলসটা মূর্তির ভেতরে লুকালো কে, এবং কেন? অবাক লাগছে আমার। নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটলো কিশোর। রিগোর সঙ্গে কথা বলতে হবে। এহহে, অনেক দেরি হয়ে গেছে, ঘড়ির দিকে চোখ পড়তে বলে উঠলো মুসা। তাই তো বলি, পেটের মধ্যে এমন মোচড় দেয় কেন? খুব খিদে পেয়েছে, বুঝলে, আমি বাড়ি যাবো।
আমিও, রবিন কালো।
কিশোর বললো, তাহলে কাল সকালেই রিগার সঙ্গে দেখা করতে যাবো।
সোসাইটির ডুপ্লিকেটিং মেশিনে চিঠি আর দলিলের কপি করে নিলো ওরা। তারপর হিসটোরিয়ানকে তাঁর সাহায্যের জন্যে ধন্যবাদ দিয়ে বেরিয়ে এলো। তখনও বৃষ্টি পড়ছে। বোরিস আসেনি। দাঁড়িয়ে থাকতে চাইলো না আর মুসা। তাছাড়া বাড়ি যাচ্ছে, ভিজে গেলেই বা কি। বাড়ি গিয়ে কাপড় পাল্টে নেবে।