ট্রাক নিয়ে ফিরে এলো বোরিস। রিগো জানালো, হুগো আর স্টেফানোকে নিয়ে হেরিয়ানোর বাড়ি চলে যাবে।
বাড়ি ফিরে চললো তিন গোয়েন্দা। ট্রাকের পেছনে উঠেছে।
কিশোর, মুসা জিজ্ঞেস করলো, কোনখান থেকে শুরু করবো?
কেন? হেসে বললো গোয়েন্দাপ্রধান, গলার জোর আবার বেড়েছে। তোমার হাতেই তো রয়েছে জবাব।
আমার হাতে? অবাক হয়ে পুরানো তলোয়ারের খোলসটার দিকে তাকালো মুসা। সাথে করে নিয়ে এসেছে ওটা।
এখনও তেমন আশা করতে পারছি না, কিশোর বললো, তবে একটা জিনিস চোখে লেগেছে আমার। খোলসটার ধাতব অংশে খুদে লেখার মতো কিছু দেখেছি। সাংকেতিক চিহ্নও হতে পারে। মিস্টার ক্রিস্টোফারের সাহায্য নিতে পারি আমরা। তিনি আমাদেরকে এমন কারো খোঁজ দিতে পারেন, যে ওগুলোর মানে বুঝিয়ে দিতে পারবে।
চোখ চকচক করে উঠলো তার। মনে হয় পথ আমরা পেয়ে গেছি! করটেজ সোর্ড খুঁজে বের করার সূত্র বুঝি পায়ে হেঁটে এসে ধরা দিলো আমাদের হাতে!
৫
ফ্যানটাসটিক! চিৎকার করে উঠলেন প্রফেসর ওয়ালটার সাইনাস, চকচক করছে চোখ। কোনো সন্দেহ নেই, ইয়াং ম্যান, কোনো সন্দেহ নেই! এগুলো ক্যাসটিলির রয়াল কোট অভ আরমরেই চিহ্ন!
শুক্রবার বিকেল। হলিউডে প্রফেসরের স্টাডিতে বসে আছে তিন গোয়েন্দা। সেদিন সকালে ফোন করে বিখ্যাত চিত্রপরিচালক ডেডিস ক্রিস্টোফারকে সব বলেছিলো, কিশোর, তিনিই তাঁর বন্ধু সাইনাসের সঙ্গে ওদের যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছেন। স্প্যানিস আর মেকসিকান ইতিহাসের বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ওয়ালটার সাইনাস। সেদিন ইস্কুল ছুটি হলে স্যালভিজ ইয়ার্ডের ট্রাকটা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে ওরা। চালক অবশ্যই বোরিস।
তলোয়ারের এই খোলসটা মোল শতকের গোড়ার দিকে তৈরি, বললেন প্রফে। জিনিসটা ছিলো স্পেনের রাজার, আমি শিওর। তোমরা কোথায় পেলে?
মূর্তিটার কথা জানালো কিশোর। জিনিসটা কি করটেজ সোর্ডের? অতো পুরানো? করটেজ সোর্ড? ভুরু উঠে গেল প্রফেসরের। হ্যাঁ, তা হতে পারে। তবে তলোয়ারটা হারিয়ে গেছে। আঠারোশো ছেচল্লিশ সালে পিউটো আলভারেজের সঙ্গে সাগরে পড়ে হারিয়ে গেছে ওটা…কেন, একথা জিজ্ঞেস করছো কেন? ওটাও পেয়েছে নাকি?
না, স্যার, জবাব দিলো রবিন।
এখনও পাইনি, এমনভাবে হাসলো মুসা, যেন অদূর ভবিষ্যতে পাবে।
স্যার, কিশোর জিজ্ঞেস করলো, পিউটো আলভারেজের সত্যি সত্যি কি হয়েছিলো, একথা কোথায় গেলে জানতে পারবো?
রকি বীচ হিসটোরিক্যাল সোসাইটিতে গেলে পেতে পারো, প্রফেসর বললেন। আলভারেজরে তো বটেই, মেকসিকোর যুদ্ধের ইতিহাসও জানতে পারবে।
প্রফেসরকে ধন্যবাদ জানিয়ে উঠতে গেল ছেলেরী। হাত তুললেন তিনি, এক মিনিট। আচ্ছা, তলোয়ারটার কথা জিজ্ঞেস করলে কেন? যোজটোজ পেয়েছে নাকি ওটার?
পাইনি এখনও, কিশোর কললো। পাওয়ার আশা করছি আরকি।
তাই? আবার চকচকে হলো প্রফেসরের চোখ। পেলে জানিও আমাকে।
নিশ্চয়ই জানাবো, স্যার, বলে উঠে পড়লো কিশোর।
বাইরে গুঁড়ি গুড়ি বৃষ্টি আরম্ভ হয়েছে। ওদেরকে নামিয়ে দিয়ে ট্রাক নিয়ে একটা কাজে গেছে বোরিস, এখনও ফেরেনি। একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো ছেলেরা।
তলোয়ারটার কথা শুনে কেমন চমকে গেলেন প্রফেসর, দেখেছো? মুসা বললো।
হা, ভ্রূকুটি করলো কিশোর, অনেকেই ওরকম চমকাবে। করটেজ সোর্ডের নাম পারতপক্ষে আর কারও কাছে বলা উচিত হবে না। লোভে পড়ে কে এসে বাগড়া দিতে শুরু করবে কে জানে! একটা ব্যাপারে শিওর হয়ে গেছি, খোলসটা করটেজ সোর্ডেরই, আর ওটা খুঁজে পাওয়ার চান্স আছে।
হিসটোরিক্যাল সোসাইটিতে যাবে? রবিন জিজ্ঞেস করলো।
যাবো।
কি খুঁজবো ওখানে? মুসার প্রশ্ন।
জানি না এখনও, জবাব দিলো কিশোর। ভাবহি, ইতিহাস থেকে কোনো সূত্র পেয়েও যেতে পারি।
বোরিস আসতে আসতে বৃষ্টি বেড়ে গেল অনেক। ট্রাকের পেছনে ওঠার আর উপায় নেই, কেবিনেই গাদাগাদি করে বসতে হলো সবাইকে। রকি বীচে পৌঁছে ওদেরকে হিসটোরিক্যাল সোসাইটিতে নামিয়ে দিয়ে আরেকটা কাজে চলে গেল বোরিস।
ঘরটা নীরব, নির্জন, শুধু নির্দিষ্ট জায়গায় বসে রয়েছেন অ্যাসিসটেন্ট হিসটোরিয়ান। তিন গোয়েন্দাকে চেনেন। হেসে বললেন, আরে, তিন গোয়েন্দা যে। তা কি মনে করে? নতুন কোনো কেস-টেস?
এই কর…, শুরু করেই আঁউউ করে উঠে থেমে গেল মুসা। তার পা মাড়িয়ে দিয়েছে কিশোর। হিসটোরিয়ানের দিকে চেয়ে হেসে বললো তাড়াতাড়ি, না, স্যার, কোনো কেস-টেস না। ইস্কুলের ম্যাগাজিনের জন্যে একটা গবেষণামূলক লেখা লিখতে চায় রবিন। তাকে সাহায্য করছি। রকি বীচ আলভারেজ ফ্যামিলির ওপর গবেষণা করছে সে।
ও। আলভারেজদের ফাইল তো আছে আমাদের কাছে। জায়গামতোই এসেছে।
ডন পিউটো আলভারেজের কথাও নিশ্চয় লেখা আছে?
মাথা ঝাঁকিয়ে উঠে গেলেন হিসটোরিয়ান। দেয়াল ঘেঁষে সারি সারি তাকে বই ঠাসা। কতগুলো আলমারি আর শেলফও আছে। শেলফ থেকে দুটো ফাইল রে করে আনলেন তিনি। হেসে বাড়িয়ে দিলেন ছেলেদের দিকে।
ফাইলের আকার দেখেই দমে গেল মুসা। তবে কিশোর আর রবিনের মুখ দেখে কিছু বোঝা গেল না।
ফাইল দুটো কোণের একটা টেবিলের কাছে বয়ে নিয়ে এলো কিশোর। এটা তোমরা দেখো। যুদ্ধের ওপর লেখা ফাইলটা রবিন আর মুসার দিকে ঠেলে দিলো সে। নিজে নিলো আলভারেজদের ওপ্র লেখা ফাইল। এটা আমি দেখছি।