পুরানো হাসিয়েনডার দুটো দেয়াল ধসে পড়ার শব্দে থমকে গেল ক্যাপ্টেন। দ্রুত কমে আসছে আগুন, পোড়ানোর মতো কিছু না পেয়ে। স্তব্ধ হয়ে গেছে দুই ভাই, পিনটু আর রিগো। রাশেদ পাশা চুপ, ছেলেরা নীরব। কি বলবে?
নীরবতা ভাঙলো মুসা। চেঁচিয়ে উঠলো, জিনিসগুলো!
ভাড়ারের দিকে ঝট করে ফিরলেন রাশেদ পাশা। কিশোর আর রবিনও তাকালো। তবে এগোনোর চেষ্টা করলো না কেউ। পোড়া ধ্বংসস্তূপ। কয়েকটা দেয়াল এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে বটে, তবে ভেতরের জিনিস কিছুই নেই, পুড়ে ছাই। রাশেদ পাশার কেনার মতো কিছুই নেই ওখানে।
সব গেছে। কান্নার সুর বেরোলো রিগোর কষ্ঠ থেকে। সব! বীমাও করানো ছিলো না! সব গেল আরকি আমাদের!
যাবে কেন? ফুঁসে উঠলো পিনটু, কার বিরুদ্ধে রাগ কে জানে। আবার হাসিয়েনডা বানিয়ে নেবো আমরা।
তাহয় নিলাম। ধারের টাকা শোধ করবো কোত্থেকে, ট্যাক্স দেবো কি দিয়ে? জায়গাই তে রাখতে পারবো না, ঘর বানিয়ে কি হবে?
চাচা,রাশেদ পশির দিকে তাকিয়ে বললো কিশোর, জিনিসগুলো আমরা কিনে নিয়েছিলাম। টাকা দিইনি বটে, কথা তো দিয়েছি। তারমানে আমাদের জিনিস
পুড়লো। টাকাটা আমাদের দিয়ে দেয়া উচিত।
সামান্যতম দ্বিধা না করে হাসলেন রাশেদ পাশা কিশোরের দিকে চেয়ে, তারপর মাথা ঝাঁকালেন, ঠিক বলেছিস, কিশোর। পোড়ার আগে আমরা রাতে পারিনি, সেটা আমাদের দোষ…
জোরে জোরে মাথা নাড়লো রিগো। না, তা হয় না। ভিক্ষে আমরা নিতে পারবো না। বাপ-দাদার অপমান করতে পারবো না এভাবে। তারচে জায়গাই বিক্রি করে দিয়ে শহরে চলে যাবো। কিংবা ফিরে যাবো মেকৰিকোতে।
কিন্তু আপনারা এখন আমেরিকান, বোঝানোর চেষ্টা করলো রবিন। অনেক আমেরিকানের চেয়ে আলভারেজরা আগে এসেছিলো এই অঞ্চলে।
নিশ্চয়ই, রবিনের সঙ্গে সুর মেলালো কিশোর। কি যেন ভাবছে। প্রয়োজনীয় টাকা চেষ্টা করলে অন্যখানেও পেয়ে যেতে পারেন।
বিষণ হাসি হাসলো রিগো। আর কোনো উপায় নেই, কিশোর।
হয়তো আছে, ধীরে ধীরে বললো গোয়েন্দাপ্রধান। অনেক দূরের ব্যাপার যদিও সেটা…যা-ই হোক, আপনাদের টাকাটা কি এখনই শোধ করতে হবে? না কিছু দিন সময় পাবেন? ঘর তো পড়ে গেল, কদিন অন্য কারও বাড়িতে থাকতে পারবেন?
পারবো। সিনর হেরিয়ানোর বাড়িতে। পিনট জানালো।
হ্যাঁ, বললো তার ভাই। টাকাটাও কয়েক দিন পরে দিলে চলবে। কিন্তু কিশোর, পাবো কোথায়?
তলোয়ারটার কথা ভাবছি আমি, জবাব দিলো কিশোর, করটেজ সোর্ড। মেকসিকোর যুদ্ধের সময় ওটা চুরি যায়। একশো বছরেরও বেশি হয়ে গেছে, ইতিমধ্যে কোথাও না কোথাও ওটা বেরোনোর কথা। সৈন্যরা চরি করলে বিক্রি করে দিতো। আর যেহেতু বেরোয়নি, সেহেতু আমার সন্দেহ হচ্ছে, আদৌ চুরি হয়েছিলো কিনা ওটা। হয়তো এখনও কোথাও লুকানোই রয়েছে, ওই খোলসটার মতো!
ঠিক বলেছো! তুড়ি বাজালো পিনটু। ভাইয়া, ও ঠিকই…
আরে দূর! বাতাসে বাবা মারলো যেন রিগো। তা-ও কি হয় নাকি? তলোয়ারটা না বেরোনোর একশো একটা কারণ থাকতে পারে। হয়তো সাগরে পড়ে গিয়েছিলো সত্যিই, কিংবা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো অন্য কোনোভাবে। কিংবা সৈন্যরা নিয়ে গিয়ে এমন কারো কাছে বিক্রি করেছে, যারা আজ পর্যন্ত বের করেনি ওটা, লুকিয়ে রেখেছে। অ্যানটিক জিনিস অনেকে ওভাবে লুকিয়ে রাখে। কিংবা হয়তো বহুদূরে চলে গেছে ওটা, একেবারে চীন দেশে, যেখান থেকে এখানে খোঁজ আসার সম্ভবনা খুবই কম। খোলসটা দেখেই তুমি এতো আশা করছে। হতে পারে এটা অন্য কোনো তলোয়ারের। তুমি অসঙ্ঘকে সম্ভম্ব করার কথা ভাবছে, কিশোর পাশা। স্রেফ ছেলেমানুষী। ফ্যানটাসি দিয়ে আমাদের র্যাঞ্চকে রক্ষা করা যাবে না।
আপনার কথায় যুক্তি আছে, মোটেও দমলো না কিশোর। কিন্তু খোলসটা আপনাআপনি মূর্তির ভেতরে ঢুকে যায়নি, ঢোকানো হয়েছে। ভেবে দেখুন, শহরে তখন ছিলো শত্রুসেনা, ডন পিউটো আলভারেজ যদি তলোয়ারটা লুকিয়ে ফেলে থাকেন, অবাক হওয়ার কিছু আছে কি? ওরকম একটা দামী জিনিস! পান আর না পান, অন্তত খোঁজার চেষ্টা তো করে দেখতে পারেন। আমরা আপনাকে সাহায্য করতে রাজি আছি। আর মোটেই ছেলেমানুষী করছি না আমরা। এ-পর্যন্ত ওরকম অনেক জিনিস খুঁজে বের করেছি, যেগুলো কখনও পাওয়া যাবে না বলে হাল ছেড়ে দেয়া হয়েছিলো।
ও ঠিকই বলছে, ভাইয়া, উত্তেজনায় টগবগ করছে পিনটু। ওরা দুর্দান্ত গোয়েন্দা, আমি জানি! এই কিশোর, কার্ড দেখাও না তোমাদের। আর পুলিশের ক্যাপ্টেন ফ্লেচারের সার্টিফিকেটটা। আছে না সঙ্গে?
মাথা ঝাঁকালো কিশোর।
দেখলো রিগো। বেশ, বুঝলাম তোমরা গোয়েন্দা। অভিজ্ঞতাও আছে। পুলিশের একজন ক্যাপ্টেন ফালতু কথা বলবেন না। কিন্তু একশো বছর আগে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া একটা তলোয়ার কিভাবে খুঁজে ব্বে করবে?
একটা সুযোগ তো অন্তত দিয়ে দেখো? পিনটু বললো।
হ্যাঁ, ছেলেদের পক্ষ নিলেন রাশেদ পাশা, তাতে অসুবিধেটা কি? পেলে তো ভালোই।
পুরানো হাসিয়েনডার ধ্বংসস্তুপের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো রিগো। বেশ, করো চেষ্টা। আমার সাধ্যমতো সাহায্য আমি করবো। কিন্তু তলোয়ার পাবে বলে আমার মনে হয় না। যাকগে, কোত্থেকে কাজ শুরু করতে চাও? কিভাবে? কি সূত্র নিয়ে?
সেটা ভেবে বের করে ফেলবো, কিশোর কললো। তবে গলার জোর কমে গেছে তার।