- বইয়ের নামঃ ভাঙা ঘোড়া
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ গোয়েন্দা কাহিনী
ভাঙা ঘোড়া
১
এইই, কিশোর, ইস্কুলের গেটে দাঁড়িয়ে ডাক দিলো মুসা আমান, পিনটু আলভারেজ কথা বলতে চায় তোমার সঙ্গে। সবে ছুটি হয়েছে ইস্কুল, বাইরে তারই জন্যে অপেক্ষা করছে রবিন আর কিশোর।
ওই নামের কাউকে চেনো বলে জানতাম না তো, রবিন বললো কিশোরকে।
ঠিক চিনি বলতে পারবো না এখনও, জবাব দিলো গোয়েন্দাপ্রধান। ক্যালিফোর্নিয়া হিস্টরি ক্লাবে মাঝে মাঝে দেখা হয়। তবে কথা বিশেষ বলে না। নিজের কাজে ব্যস্ত থাকে। মুসা, কি চায় ও?
কাছে এসে দাঁড়িয়েহে মুসা। জানি না। আমাকে অনুরোধ করলে তোমাকে বলতে, ইস্কুল ছুটির পর যেন তার সাথে দেখা করো, অবশ্য যদি তোমার সময় হয়। জরুরী কথা বলবে বলেই মনে হলো।
তিন গোয়েন্দার সাহায্য চায় নাকি?
শ্রাগ করলে মুসা। চাইতেও পারে।
চল তো, কি বলে শুনি। কোথায় দেখা করতে বলেছে?
খেলার মাঠে।
আগে আগে চললো কিশোর। ইস্কুল বিল্ডিঙের পাশ দিয়ে এসে পড়লো শান্ত, নীরব একটা রাস্তায়। দুই ধারে গাছের সারি। শেষ মাথায় একটা গেট, ওটা দিয়ে যেতে হয় খেলার মাঠে। গায়ের জ্যাকেট টেনেটুনে নিলো ওরা। নভেম্বরের বিকেল। রোদেলা দিন, কিন্তু তারপরেও ঠাণ্ডা, নকনে বাতাস বইছে।
কই, পিনটু কোথায়? এদিক ওদিক তাকালো রবিন।
সর্বনাশ হয়েছে। নিমের তেতো ঝরলো মুসার কষ্ঠে। দেখো, কে।
গেটের ঠিক বাইরে হোট একটা হুডতোলা পিকআপ দাঁড়িয়ে রয়েছে। এগুলোর ডাকনাম রাঞ্চ ওয়াগন, র্যাধের কাজে ব্যবহার হয়। চওড়া কাধ, গাট্টাগোট্টা একজন মানুষকে দেখা গেল গাড়ির সামনের বাম্পারের ওপর বসে থাকতে। মাথায় কাউবয় হ্যাট, গায়ে ডেনিম জ্যাকেট, পরনে নীল জিনস, পায়ে ওয়েস্টার্ন বুট। ওর পাশে গাড়ির গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিপছিপে, লম্বা এক তরুণ। ঈগলের ঠোঁটের মতো বাঁকানো, লম্বা, পাতলা নাক। পিকআপটার দরজায় সোনালি অক্ষরে বড় বড় করে লেখা রয়েছেঃ ডয়েল র্যাঞ্চ।
শুঁটকি টেরি! নাকমুখ কুঁচকে ফেললো রবিন। ও এখানে…
রবিনের কথা শেষ হওয়ার আগেই ওদেরকে দেখে ফেললো লম্বা ছেলেটা, বলে উঠলো, বাহ, শার্লক হোমস এসে গেছে দেখি। সঙ্গে দুই চেলাও আছে।
খিকখিক করে গা জ্বালানো হাসি হাসলো তিন গোয়েন্দার চিরশত্রু টেরিয়ার ডয়েল। ধনী ব্যবসায়ীর বখে যাওয়া ছেলে সে। সুযোগ পেলেই ওদের পেছনে লাগে, জ্বালিয়ে মারে। নিজেকে খুব চালাক ভাবে, কিন্তু প্রতিবারেই হেরে যায় তিন গোয়েন্দার কাছে।
শুঁটকির টিটকারির জবাব না দিয়ে পারা যায় না, গেটের কাছে থমকে দাঁড়ালো কিশোর। ভোতা গলায় বললো, রবিন, ঘেউ ঘেউ করে উঠলো যেন কেউ?
কই, কোনো মানুষকে তো দেখতে পাচ্ছি না, শুঁটকির দিকে তাকিয়ে জবাব দিলো রবিন।
মানুষ দেখছি না, তবে একটা দুর্গন্ধ পাচ্ছি, নাক কোঁচকালো মুসা। বোধহয় শুঁটকির।
রসিকতাটা বুঝলো কাউবয়, হেসে উঠলো। লাল হয়ে গেল টেরির মুখ। ঘূসি পাকিয়ে হুমকির ভঙ্গিতে এগোলো তিন গোয়েন্দার দিকে। এই সময় ডেকে উঠলো আরেকটা নতুন কন্ঠ, কিশোর পাশা, দেরি করে ফেললাম, সরি। একটা উপকার চাইতে এসেছি তোমার কাছে।
সুন্দর স্বাস্থ্য, কালো চোখ, কালো চুলওয়ালা একটা ছেলে বেরিয়ে এলো গেট দিয়ে। পিঠ এতো খাড়া করে হাঁটে যে যতোটা না লম্বা তার চেয়ে বেশি লম্বা মনে হয়। পরনে আঁটো পুরানো জিনস, পায়ে খাটো রাইডিং বুট, গায়ে ঢাললে সাদা শার্ট, জোড়াগুলো রঙিন সুতো দিয়ে সেলাই করা। কথায় কোনো টান নেই, তবে পোশাকেই বোঝা যায় পুরানো স্প্যানিশ জমিদারের রক্ত রয়েছে শরীরে।
কি উপকার? জানতে চাইলো কিশোর।
হেসে উঠলো টেরি। হা-হা, শার্লক, শেষমেষ চেঁড়োদের সঙ্গে মিশলে? লাল কাপড় দেখিয়ে ষড় খেদানো ছাড়া ওরা আর কি বোঝে? একটা উপকার অবশ্য করতে পারো। ঘাড়টা ধরে মেকসিকোতে ফেরত পাঠাতে পারো। উপকারটা আমাদের সবারই হয় তাহলে।
চরকির মতো পাক খেয়ে ঘুরে দাঁড়ালো পিনটু। এতোই দ্রুত, অবাক করে দিলো টেরিকে, মুখের হাসি মুছে দিলো তার কঠিন কণ্ঠে বললো, কথাটা ফিরিয়ে নাও! আর মাপ চাও আমার কাছে।
শুঁটকির চেয়ে খাটো ছেলেটা, ওজনও কম হবে, কিন্তু পরোয়াই করলো না। মাথা তুলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে টেরির মুখোমুখি, একেবারে স্প্যানিশ জমিদার। কিংবা ডন।
পাগল!কললো বটে, কিন্তু হাসলো না টেরি। আমি মেকসিকানদের কাছে মাপ চাই না।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে ঠাস করে টেরির গালে চড় মারলো ছেলেটা।
শয়তানের বাচ্চা! ভীষণ রাগে গাল দিয়ে উঠে এক ধাক্কায় ছেলেটাকে মাটিতে ফেলে দিলো টেরি। কিন্তু চোখের পলকে লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল পিনটু। আবার তাকে ফেলে দিলো টেরি। আবার উঠলো পিনট, আবার পড়লো। আবার উঠলো। টেরির শার্টের বুক খামচে ধরলো। তাকে ঠেলে রাস্তার দিকে নিয়ে চললো টেরি, এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, যেন আশা করছে কেউ এসে এই অসম লড়াইটা থামায়। চেঁচিয়ে বললো, এই, এই আেঁকটাকে সরাও তো…।
জেঁকটাকে সরানোর জন্যে নয়, অন্য উদ্দেশ্যে শার্টের হাতা গুটিয়ে আগে বাড়লো মুসা। হেসে উঠলো মোটা কাউবয়। লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালো বাম্পার থেকে। পিনটুকে বললো, এই ছেলে, থামো। পারবে না ওর সাথে। অহেতুক মার খাবে আরও।