কিভাবে মরেছে বোঝার জন্যে, কিশোর বললো।
বুঝলে কি হবে?
মৃত্যুটা কি করে হয়েছে জানা থাকলে অনেক সময় হত্যাকারীকে খুঁজে বের করতে সুবিধা হয়। তদন্ত করতে যাচ্ছি আমরা। মারমেড কোর্ট থেকেই শুরু করবো, যেখানে ডবের লাশটা পাওয়া গেছে।
কি লাভ? পুলিশ কোনো জায়গাই বাদ রাখেনি। সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
তবু চেষ্টা করবো। সব কথা আমাদেরও জানতে হবে। এমন কিছু জানাতে পারে আমাদেরকে কেউ, যা পুলিশকে বলতে ভুলে গেছে। হয় ওরকম। কিটুর ব্যাপারেও খোঁজ খবর নেবো যতোটা পারা যায়। কাল তাকে আমরা কোটে দেখেছি। নিশ্চয় কেউ না কেউ বেরোতে দেখেছে। ঠিক না?
তা দেখতে পারে।
তদন্ত করতে বেরোলো তিন গোয়েন্দা। প্রথমে কথা বললো ঘুড়ির দোকানের লম্বা, রোগাটে লোকটার সঙ্গে। তার নাম জনি মিউরো। মারমেড কোর্ট থেকে কিটুকে বেরিয়ে আসতে দেখেছে সে। তারপর কোথায় গেছে বলতে পারলো না।
দোকান থেকে বেরিয়ে কোর্টের সামনে গিয়েছিলাম, মিউরো বললো, প্যারেড দেখতে। মিনিটখানেকের বেশি থাকিনি। কিটুকে দেখলাম বেরিয়ে আসছে। সঙ্গে ডব। কুত্তাটা সব সময় তার সঙ্গে থাকতো।
আপনার দোকানের দরজা খোলা ছিলো? জিজ্ঞেস করলো কিশোর। এমনও তো হতে পারে সামনের দরজা দিয়ে ঢুকে পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেছে ও?
মাথা নাড়লো মিউরো। পেছনের দরজায় ডেড-বোল্ট লক লাগানো, দেখছো।? বেরোতে হলে ওটা খুলতে হতো তাকে। নাগাল পেতে হলে উঠতে হতো। চেয়ারে। খুলে বেরিয়ে গেলে খোলা থাকতো দরজাটা। আমার চোখে অবশ্যই পড়তো। চালাকি করে চেয়ার সরিয়ে দরজাটা ভেজিয়ে হয়তো বেরিয়ে যেতে পারতো, তাহলে সহজে আমার চোখে পড়তো না ব্যাপারটা। কিন্তু কোনো জিনিস একবার সরিয়ে আবার আগের জায়গায় নিয়ে রাখবে কিটু? অসম্ভব! যেখানে যা নিয়ে। যাবে সেখানেই ফেলে রেখে যাবে।
রক স্টোরের মালিক মিস জারগনও একই রকম কথা বললো। প্যারেডের সময় দোকান ছেড়ে বাইরে বেরিয়েছিলো, কিন্তু কিটু বা অন্য কাউকেই দোকানে ঢুকতে দেখেনি। তাছাড়া দরজায় তালা দিয়ে বেরিয়েছিলো। এখানে দরজা খোলা রেখে বেরোবো! মাথা খারাপ! বললো সে। চোরের যা উৎপাত! এক মিনিটে ফাঁকা করে দেবে দোকান।
কিটু কথা আর কি বলবো? কিভাবে পালিয়েছে ও-কি একটা বলার ব্যাপার হলো? ও ওভাবেই পালায়। চোখের পলকে। এই আছে তো এই নেই। নিশ্চয়। ভিড়ের ভেতর থেকে মানুষের পায়ের ফাঁক দিয়েই বেরিয়ে চলে এসেছিলো।
আসলে, কোন দিকে গেছে ও বোঝার চেষ্টা করছি। কেউ না কেউ হয়তো দেখেছে। কুকুরটা সঙ্গে ছিলো তো, চোখে না পড়ার কথা নয়।
কুকুরের কথায় কেঁপে উঠলো মিস জারগন। বোলো না, বোলো না, লোকটা একটা পিশাচ! নইলে ওরকম একটা বুড়ো জানোয়ারকে ওভাবে মারতে পারে!
ডবকে কে মেরেছে এখনো জানি না আমরা। তিন গোয়েন্দার একটা কার্ড রে করে দিলো কিশোর, আমাদের ফোন নম্বর। যদি কিছু মনে পড়ে আপনার, দয়া করে জানাবেন।
রুক স্টোর থেকে বেরিয়ে সুতোর দোকানে চললো ওরা।
মিসেস কেলান শান্ত, ভদ্র। সুন্দর চুল। সুতোর দোকানটার মালিক। কিটুকে তিনি দেখেছেন আগের দিন। তবে তখনো দোকান থেকে বেরোননি। জানালা দিয়েই প্যারেড দেখছিলাম, বললেন তিনি। ছেলেটা যে কোথায় গেল, দেখিনি। নিনা বেচারির জন্যে কষ্ট লাগছে। ছেলে হারালে মায়ের কি কষ্ট হয় বুঝি তো।
এরপর ক্যাফেতে এসে ঢুকলো তিন গোয়েন্দা। কফি আর পেস্ট্রি খাচ্ছে কয়েকজন লোক। খাবার সরবরাহ করছে হেনরি লিটার। ছেলেরা ঢুকে তাকে প্রশ্ন শুরু করতেই ওদেরকে রান্নাঘরে স্ত্রীর কাছে এনে রেখে গেল সে। যা জবাব দেয়ার শেলিই দিক।
কাল এখানে আসেনি কিটু, শেলি জানালো। মাঝে মাঝে আসতো আমাদের এখানে। মায়ের নাম করে ফাঁকি দিয়ে কেকটেক নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতো। কয়েক দিন দিয়েছি। পরে যখন বুঝে গেলাম, আর দিতাম না।
প্যারেড শুরু হওয়ার পর আর ওকে দেখেননি, না? জিজ্ঞেস করলো। কিশোর।
না। ব্যস্ত ছিলাম। আমাদের রেগুলার ওয়েইটার রাগবিটা তখন বেরিয়ে গেছে। না জানিয়ে মাঝে মাঝেই গায়েব হয়ে যায় ও।
শেলি লিসটারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে এলো তিন গোয়েন্দা। চত্বর পেরিয়ে এসে মারমেড গ্যালারির সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করলো। ভেতরেই পাওয়া। গেল মালিককে।
কিটুর কথা জানতে এসেছো কেন? কিশোরের প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন করলো ব্রড ক্যাম্পার। তোমরা তো ইস্কুলের ম্যাগাজিনের তথ্য সংগ্রহ করছিলে। হঠাৎ এই নতুন কৌতূহল কেন?
রবিন জবাব দিলো, আজ আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি না। মিসেস হারকারকে সাহায্য করতে এসেছি।
তোমরা আর কি সাহায্য করবে? যা করার পুলিশই তো করছে। এসব কাজে ওরা তোমাদের চেয়ে অনেক বেশি দক্ষ।
তবু মিসেস হারকার আমাদের সাহায্য চেয়েছেন, কিশোর বললো। একটা কার্ড বের করে দেখালো ক্যাম্পারকে।
বাহ! গোয়েন্দা! কিছুটা টিটকারির সুরেই বললো ক্যাম্পার।
হ্যাঁ, মুসা বললো। অনেক রহস্যের সমাধান আমরা করেছি।
তাই? ভালো। তা কি জানতে চাও?
জানতে চাই, কাল কিটু কি কি করেছে, কিশোর বললো। ও কোনদিকে গেছে জানতে পারলে সুবিধে হতো। প্যারেড শুরু হওয়ার পর কোথায় গেছে, বলতে পারবেন?
না। তবে যেদিকেই যাক, যা-ই ঘটুক তার, এখানে কিছু ঘটেনি। কুত্তাটা গাড়ির নিচে পড়ে মরেছে, শুনেছো তো? মারমেড কোর্টে তো গাড়িই নেই, এখানে মরে কিভাবে?