আপনি ঠিকই আন্দাজ করেছেন, একমত হলো কিশোর। কিটুকে কেউ কিছু করতে এলে ডবের তাকে ছেড়ে দেয়ার কথা নয়। আর সেটা করতে গিয়েই নিশ্চয়। খুন হয়েছে বেচারা।
পুলিশের ধারণা, রবিন বললো, গাড়ি চাপা পড়েছে কুকুরটা। সাধারণ অ্যাক্সিডেন্ট। মরে যাওয়ার পর তোক জানাজানি করে আর ঝামেলা করেনি ড্রাইভার। চুপচাপ রাবিশ বিনে লাশটা ফেলে দিয়ে পালিয়েছে।
তাহলে কিটু বাড়ি ফিরলো না কেন? প্রশ্ন তুললো কিশোর।
এই সময় বইয়ের দোকান থেকে বেরিয়ে এলেন বোরম্যান। পিছে পিছে এলো। নিনা। শুকনো, ফ্যাকাসে চেহারা। দুজনেরই চোখ ওশন ফ্রন্টের দিকে। সৈকতে এখন লোকের ভিড় নেই। পাশের একটা রাস্তা থেকে এসে চত্বরে ঢুকলো একটা গাড়ি। মারমেড কোর্টের ঠিক সামনে এসে থামলো। দুজন লোক নামলো, একজনের হাতে ভিডিও ক্যামেরা।
টেলিভিশনের লোক, ডেজার বললেন। নিনার সাক্ষাৎকার নেবে মনে হচ্ছে? হ্যাঁ, তাই তো।
নিনার মুখের কাছে মাইক্রোফোন ধরে আছে একটা লোক।
এই সময় বেরোলো ব্রড ক্যাম্পার। গ্যালারি থেকে নেমে গিয়ে দাঁড়ালো নিনার পাশে। তাকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্যে কাঁধে হাত রাখলো।
হায়রে কপাল! কপাল চাপড়ালেন মিস এমিনার। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর লোভটাও ছাড়তে পারলো না। বেহায়ার হাড্ডি।
ওকে আপনি দেখতে পারেন না, কিশোর বললো।
না, পারি না। ওরকম একটা ছোটলোককে কেউ দেখতে পারে নাকি?
আমার কিন্তু অতোটা খারাপ মনে হয় না, ডেজার বললেন।
আপনি লোক চেনেন না, মিস্টার ডেজার, তাই একথা বলছেন। ওটা একটা পাজীর পা ঝাড়া!
যাকে নিয়ে এতো সমালোচনা সে ওদিকে বেশ জমিয়ে ফেলেছে রিপোর্টারদের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটা এখন মূলতঃ সে-ই দিয়ে চলেছে।
বেশরম কোথাকার! ঝাঝালো কণ্ঠে বললেন মিস এমিনার।
টেলিভিশনের লোকেরা চলে গেলে তিন গোয়েন্দাও উঠলো। বাড়ি যাবে। বইয়ের দোকানটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নিনা। কাঁদছে। কি মনে হলো তিন কিশোরের, কাছে এগিয়ে গেল। পকেট থেকে তিন গোয়েন্দার কার্ড বের করে দিয়ে বললো, এটা রাখুন। আমাদের ঠিকানা। সাহায্যের প্রয়োজন হলে ডাকবেন।
কার্ডটা পড়লো নিনা। তোমরা গোয়েন্দা?
হ্যাঁ, মুসা বললো। অনেক জটিল রহস্যের সমাধান আমরা করেছি। বিশ্বাস হলে রকি বীচের পুলিশকে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
না না, বিশ্বাস করছি। পুলিশ খুঁজছে তো এখন, খুঁজুক। আশা করি বের করে ফেলবে। বললো বটে, কিন্তু নিনার কণ্ঠ শুনে মনে হলো না খুব একটা ভরসা। রাখতে পারছে পুলিশের ওপর।
গোধূলির ম্লান আলোয় সাইকেল চালিয়ে রকি বীচে ফিরে চললো তিন গোয়েন্দা। মনে ভাবনা। হারানো ছেলেটার কথাই ভাবছে।
আস্ত শয়তান! সাইকেল চালাতে চালাতে বললো মুসা। নইলে ওরকম একটা কুকুরকে মারে!
আমার মনে হয় অ্যাক্সিডেন্টই, রবিন বললো। কিশোর, তোমার কি মনে। হয়?
বুঝতে পারছি না, জবাব দিয়ে আবার চিন্তায় ডুবে গেল গোয়েন্দাপ্রধান।
রাত দশটায় টিভির খবরে নিখোঁজ সংবাদটা দেখলো সে। ড্রইং রুমে বসে আছে। রাশেদ পাশা আর মেরিচাচীও আছেন ওখানে।
নিনাকে একলা দেখা গেল কিছুক্ষণের জন্যে। তার পরেই এসে উদয় হলো ব্রড ক্যাম্পার। বললো, আমরা সবাই দোয়া করি, ভালো ভাবে ফিরে আসুক ছেলেটা। খুব লক্ষ্মী ছেলে। মারমেড কোর্টের সবাই তাকে ভালোবাসে।
আশ্চির্য! টেলিভিশনের পর্দায় স্থির হয়ে আছে মেরিচাচীর দৃষ্টি। বয়েস এতো কম লাগছে কেন ক্যাম্পারের? শরীর-স্বাস্থ্যের দিকে কড়া নজর রেখেছে দেখছি!
কিছু মানুষের শরীরই থাকে ওরকম, রাশেদ চাচা মন্তব্য করলেন। সহজে ভাঙে না।
পর্দা থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল ক্যাম্পার। ঘোষককে দেখা গেল। বললো সে, এখনও কিটু আরকারের খোঁজ মেলেনি। তার সম্পর্কে কেউ কিছু জানতে পারলে স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে জানাতে অনুরোধ করা হচ্ছে। কিটুর বয়েস পাঁচ, তিন ফুট ছয় ইঞ্চি লম্বা, কালো চুল, পরনে জিনসের প্যান্ট, গায়ে লাল-নীল ডোরাকাটা টি শার্ট।
কিটুর একটা ফটোগ্রাফ দেখানো হলো। ছবিটা তেমন স্পষ্ট নয়। ভালো ওঠেনি, কিংবা নষ্ট হয়ে গেছে। এরপর অন্য কথায় চলে গেল ঘোষক।
আহারে, বেচারি, নিনার জন্যে আফসোস করলেন মেরিচাচী। কতো না। জানি কান্নাকাটি করছে এখন!
রাত হয়েছে। উঠে ঘুমাতে চলে গেলেন চাচা-চাচী। কিশোর একা বসে বসে ভাবতে লাগলো। এভাবে গায়েব হয়ে গেল কি করে ছেলেটা? লোকজন তো কম ছিলো না তখন। নিশ্চয় কারো না কারো নজরে পড়েছে।
পরদিন সকালেও নিখোঁজ রইলো কিটু। নাস্তার পর রান্নাঘরের কাজে চাচীকে সাহায্য করলো কিশোর। তারপর বেরিয়ে এলো বাইরে। ঢুকলে এসে হেডকোয়ার্টারে। ঢুকতেই টেলিফোন বাজলো। রিসিভার তুলে কানে ঠেকালো। ভেসে এলো নিনা হারকারের কণ্ঠ, হালো, কিশোর পাশা?
বলুন?
কিশোর, কান্না জড়ানো গলায় বললো নিনা, সারা রাত বাবা খোঁজাখুঁজি করেছে। পুলিশও অনেক খুঁজেছে। পায়নি… ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো সে।
কাঁদবেন না। পাওয়া যাবেই। আমরাও খুঁজবো।
সে জন্যেই ফোন করেছি। প্লীজ, যদি আসো!…তোমাদের অনেক প্রশংসা করেছেন ক্যাপ্টেন ইয়ান ফ্লেচার।
কিশোর বুঝতে পারলো, রকি বীচ পুলিশ স্টেশনে খবর নিয়েছে নিনা। বললো, আপনি ভাববেন না। রবিন আর মুসাকে নিয়ে এখনই আসছি।
.
০৫.
বইয়ের দোকানে একা বসে আছে নিনা হারকার। চোখের কোণে কালি পড়েছে। হাত কাঁপছে অল্প অল্প। তিন গোয়েন্দাকে দেখেই বলে উঠলো, নাহ, কোনো খোঁজ নেই! কিচ্ছু না! পুলিশ এখনও খুঁজছে। ডবের পোস্ট মর্টেম করেছে। খোদাই জানে, কেন!