জবাব দিলো না ক্যাম্পার। তবে পিস্তলটা নামিয়ে ফেললো। ওটা তার হাত থেকে নিয়ে নিলো চালক, বাধা দিলো না অভিনেতা।
উইলশায়ার বুলভারের উত্তরে একটা গোরস্থানের মধ্যে নামলো বেলুন। গনডোলা মাটি ছুঁতে না ছুঁতেই ঘিরে ফেললে পুলিশ।
হেসে বললো রবিন, টেলিভিশনের লোকে খবর পায়নি। তাহলে শেষবারের মতো একবার টিভির পর্দায় চেহারা দেখানোর সুযোগ পেতেন মিস্টার ক্যাম্পার।
হেসেই জবাব দিলো কিশোর, সেটা পারবেন। সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি। ঠিকই হাজির হয়ে যাবে টিভির রিপোর্টার।
.
২০.
চারদিন পর। বিখ্যাত চিত্র পরিচালক মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফারের অফিসে এলো তিন গোয়েন্দা, তাদের জলকন্যা কেসের রিপোর্ট দিতে।
ফাইলটা আগাগোড়া মন দিয়ে পড়লেন পরিচালক। তারপর মুখ তুলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, খুবই দুঃখজনক! একটা বাচ্চার জন্যে নিজের জীবনের ওপর এতোবড় ঝুঁকি নিলো মানুষটা! ভালোবাসা এমনই জিনিস! আর আরেকজনের হলো লোভ। লোভের জন্যে, কিছু জিনিস বাঁচানোর জন্যে বিপজ্জনক হয়ে উঠলো। বাচ্চাটার কাছে। টেবিলের ওপর দুই হাত বিছিয়ে তালুর দিকে তাকিয়ে রইলেন। কিছুক্ষণ তিনি। আবার মুখ তুললেন। চোরাই জিনিসগুলো কি মালিককে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে?
কিছু কিছু হয়েছে, রবিন বললো। যেগুলোর মালিককে পাওয়া গেছে। অনেক ধন্যবাদ পেয়েছি আমরা, হাসলো সে। মালিকদের কাছ থেকে তো বটেই, পুলিশের কাছ থেকেও।
পাবোই, মুসা বললো। আমাদের দেয়া তথ্য অনেক কাজে লেগেছে। পুলিশের। ইভলিন স্ট্রীটের বাড়িটায় তল্লাশি চালিয়েছে ওরা। একটা পেশাদার চোরকে বমাল গ্রেপ্তার করেছে ওখান থেকে।
সব বলে দিয়েছে সে, মুসার কথার পিঠে বললো রবিন। পুলিশ জেনেছে, হলিউডের বড় বড় পার্টিতে দাওয়াত পড়তো ক্যাম্পারের। অভিনয় ছেড়ে দিলেও চিত্ৰজগৎ ছেড়ে আসেনি সে। যোগাযোগ ছিলো। ওসব দাওয়াতে গিয়েই লোকের বাড়ির জিনিসপত্র দেখে আসতো। খোঁজখবর করে আসতো কোথায় আছে বার্গলার। অ্যালার্ম, চোর ঠেকানোর আর কি কৌশল করা হয়েছে। কারা কখন বাড়ি থাকবে, কারা বেড়াতে যাবে, বাড়িতে কতোজন লোক আছে, কে কখন থাকে, সব জেনে আসতো। পেশাদার চোরদেরকে এসব তথ্য সরবরাহ করতো সে। এমনকি এ-ও বলে দিতো, কোন কোন জিনিস চুরি করতে হবে।
যেসব জিনিস তার প্রয়োজন, সেসব কিনে নিতে চোরদের কাছ থেকে। বেশি। দামী আর কিছুটা দুর্লভ জিনিস ছাড়া নিতো না। চোরকে কাছ থেকে জিনিস কিনতে নগদ টাকার দরকার হয়, চেকফেক নিতে চায় না চোর। কাজেই বাক্স বোঝাই করে নগদ টাকা রেখেছে ক্যাম্পার। ইভলিন স্ট্রীটের বাড়িটা চোরের আড্ডা, চোরাই মালের গুদামও ওটা। ওখানে জিনিস কিনতে যেতো সে। তারপর শহরে গিয়ে চড়া। দামে ওগুলো আবার বিক্রি করতো। বিক্রি করে দেয়ার জন্যে দালালও রেখে ছিলো। কিছু কিছু জিনিস নিজেই বিক্রি করে ফেলতো তার গ্যালারিতে রেখে।
ঝুঁকিটা খুব বেশি নিয়ে ফেলেছিলো না? মিস্টার ক্রিস্টোফার বললেন। চোরেরা জানলেই তো ব্ল্যাকমেল শুরু করে দিতো।
আসলে ওরা জানতোই না ক্যাম্পার তাদের জিনিস কেনে, অনেকক্ষণ পর,— মুখ খুললো কিশোর। ছদ্মবেশ নিয়ে তারপর ওদের কাছে যেতো সে। আর নিজে গিয়ে দেখা করতো ওদের সঙ্গে, কখনোই তার কাছে কাউকে আসতে দিতো না। কোথায় থাকে, ঠিকানাও দিতো না।
হু, চালাক লোক। কিটু গিয়ে ট্রেজার রুমে ঢুকেই দিলো তার সর্বনাশ করে।
হ্যাঁ। কিটু সব বলে দিয়েছে। প্যারেডের দিন প্রিন্সেস স্যুইটে ঢুকেছিলো সে। জিনিসগুলা দেখেছে। বাক্সের ডালা খুলে একটা বাণ্ডিল সবে তুলেছে, এই সময়। ঢুকেছে ক্যাম্পার। ভয় পেয়ে ডবকে নিয়ে দৌড় দেয় কিটু। তার পেছনে ছোটে ক্যাম্পার। গ্যালারিতে এসে জলকন্যার পেছনে লুকায় কিটু। কুকুরটাও লুকাতে এসে দেয় ঘাপলী বাধিয়ে। ধাক্কা দিয়ে মূর্তিটা ফেলে দেয়। তার গায়ের ওপ্র পড়ে ভেঙে যায় জলকন্যা। আঘাত অল্পই লাগে কুকুরটার শরীরে। কিন্তু শক সইতে পারেনি তার দুর্বল হার্ট। মারা পড়ে। নিজেকে ভীষণ অপরাধী ভাবতে আরম্ভ করে কিটু, ক্যাম্পারের ঘর থেকে পালিয়ে গিয়ে লুকায় পিয়ারে। বরগু তাকে দেখে বাড়ি নিয়ে যায়। অভয় দেয়, লুকিয়ে রাখে।
বেচারা! আফসোস করলেন পরিচালক।
ট্রেজার রুমটা যদি কিটু দেখে না ফেলতো, অসুবিধে হতো না ক্যাম্পারের। নিনা হারকারকে বলে শাসন করাতে পারতো ছেলেটা। কিটু হারিয়ে যাওয়ায় ভয়ে ভয়ে ছিলো সে, কখন ফিরে এসে সব কিছু বলে দেয় ছেলেটা।
অপরাধ কোনো সময় চাপা থাকে না। হ্যাঁ, ডিগার আর তার রুমমেটের খবর কি? ওরাও কি কোনোভাবে জড়িত ছিলো ক্যাম্পারের সঙ্গে?
না। ডিগারটা একটা ছিঁচকে চোর। তার রুমমেটটা সাধারণ শ্রমিক, স্লেভ মার্কেটে গিয়ে কাজ জোগাড় করে। বড় জিনিস, কিংবা বেশি মাল সরানোর প্রয়ো জন পড়লে স্লেভ মার্কেটে চলে যেতো ক্যাম্পার, ট্রাকসহ শ্রমিক ভাড়া করতো।
হুম! তো, বরগুর খবর কি? পুলিশ কি এখনও আটকে রেখেছে তাকে?
না। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনেনি নিনা হারকার। বরং পুলিশকে অনুরোধ করে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছে, কিশোর বললো। আবার আগের জায়গায় ফিরে এসেছে বরগু। জজ্ঞাল সাফ করে, কুকুরদুটোকে সঙ্গে নিয়ে। কিটুও। ভালো আছে। আসছে সেপ্টেম্বরেই তাকে ইস্কুলে ভর্তি করে দেয়া হবে।