সূর্য অস্ত যাচ্ছে। ডুবন্ত সূর্যের সোনালি আলো এসে পড়েছে মেইন স্ট্রীটের বাড়িগুলোর জানালায়। এমনভাবে চমকাচ্ছে, মনে হচ্ছে যেন আগুন লেগেছে ওগুলোয়। সুপার মার্কেটের পার্কিং লটে বেলুনটাকে বাধছে বেলুন-চালক, আজকের মতো ওড়ানো শেষ।
ছেলেদেরকে সেদিকে এগোতে বললো ক্যাম্পার।
আজ আর উড়ছি না, বুঝলেন, ক্যাম্পারের উদ্দেশ্য বুঝে বললো বেলুন চালক। কাল আসবেন। বেঁধে ফেলেছি, আর খুলতে পারবো না। রাতের বেলা। হবে না।
পিস্তলটা বের করে দেখালো ক্যাম্পার।
ভীত হাসি হাসলো চালক। না না, একেবারেই ওড়াতে পারবো না, তা বলিনি। বেশি জরুরী হলে…
জলদি করো! কড়া গলায় ধমক দিলো ক্যাম্পার। চালাকির চেষ্টা করবে না। দ্বিতীয়বার আর হুঁশিয়ার করবো না আমি! তিন গোয়েন্দার দিকে ফিরে বললো, যাও, ওঠো!
নীরবে একে একে গনডোলায় চড়লো কিশোর, মুসা, রবিন। বেলুনের নিচে ঝুলছে বিশাল ঝুড়ি। ওটাকে গনডোল বলে। সব শেষে উঠলো ক্যাম্পার। বেলুন বাধা দড়িগুলো দেখিয়ে চালককে নির্দেশ দিলো, কাটো ওগুলো! জলদি!
আপনার ইচ্ছেটা বুঝতে পারছি না, আমতা আমতা করে বললো চালক। অন্তত একটা দড়ি তো রাখতেই হবে। নইলে নামবো কি করে? আপনার ইচ্ছে মতো চলবে না এটা।
অধৈর্য ভঙ্গিতে হাত নাড়লো ক্যাম্পার। কড়া গলায় বললো, বেশি কথা বলো তুমি! যা বলছি করো। শেষ দড়িটা কেটে দিয়েই লাফিয়ে উঠে পড়বে। নইলে গুলি খাবে বলে দিলাম।
এসব না করলেও পারতেন, পরামর্শ দিলো মুসা। ট্যাক্সি ধরে এয়ারপোর্ট কিংবা বাস স্টেশনে চলে যেতে পারেন…
চুপ! ধমক দিয়ে তাকে থামিয়ে দিলো ক্যাম্পার।
চুপ হয়ে গেল মুসা। এক এক করে দড়ি কেটে দিতে লাগলো চালক। শেষ। দড়িটা কেটে দিলে ওপরে উঠতে শুরু করলো বেলুন। নাগালের বাইরে চলে। যাওয়ার আগেই লাফ দিয়ে গনডোলায় চড়লো সে।
বেশি দূর কিন্তু যাবে না, উঠেই বললো। ওরকম করে তৈরি হয়নি। যদি সাগরের ওপর চলে যায়…।
যাবে না। বাতাস উল্টোদিকে বইছে, ক্যাম্পার বললো।
এখনো দেখা যাচ্ছে সূর্যটাকে, সাগরের দিগন্ত রেখার আড়ালে নেমে যাচ্ছে। লম্বা লম্বা ছায়া পড়েছে বাড়িঘরের আশপাশে। রাস্তার আলো জ্বলে উঠেছে। হেডলাইট জ্বেলে দিয়েছে রাস্তায় চলমান গাড়িগুলো।
উঠছে…উঠছে…উঠছে বেলুন। গনডোলার কিনারের দড়ি আঁকড়ে ধরে রেখেছে ওরা। তাকিয়ে রয়েছে নিচের দিকে। বেয়াড়া ভাবে দুলছে গনডোলা, মোচড় দিয়ে ওঠে পেটের ভেতর। বেলুনে চড়া যতোটা আরামদায়ক ভাবতো মুসা, ততোটা আর মনে হলো না এখন।
নিচের দিকে তাকালো না ক্যাম্পার। কঠিন দৃষ্টিতে বার বার তাকাচ্ছে তিন গোয়েন্দা আর চালকের দিকে।
কয়েক শো ফুট ওপরে উঠে এসেছে বেলুন। উত্তর-পূবে ওটাকে উড়িয়ে নিয়ে চলেছে বাতাস। নিচে তাকালো কিশোর। ঠিক ওদের নিচেই দেখা যাচ্ছে একটা গাড়ি। সাদা ছাত দেখেই বোঝা গেল পুলিশের গাড়ি।
স্যুটকেসটা নামিয়ে রেখেছে মুসা। পা দিয়ে সেটাকে ঠেলে দেখলো কিশোর। পুরানো ধাচের জিনিস। আলগী তালা লাগিয়ে বন্ধ করার ব্যবস্থা। তালা নেই, তারমানে খোলা। ক্যাম্পারের অলক্ষ্যে জুতোর ডগা দিয়ে আস্তে আস্তে তুলে। ফেললো হুড়কোটা। তারপর হঠাৎ ঝুঁকে একটানে তুলে নিলো স্যুটকেস। ঝটকা লেগে আপনাআপনি খুলে গেল ডালা। ওই অবস্থায়ই ওটাকে গনডোলার বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দিলো সে।
এই, কি করছো ক্যাম্পার বলতে বলতেই কাজটা সেরে ফেললো কিশোর।
বাতাসে উড়তে লাগলো নোটের বাণ্ডিল দশ-বিশ…পঞ্চাশ.. একশো ডলারের নোট। কোনো কোনোটার রবার ব্যাও খুলে ছড়িয়ে পড়লো।
নেমে যাচ্ছে টাকা!
রাস্তায় গিয়ে পড়তে লাগলো।
লাফ দিয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো পুলিশ। রাস্তার অন্যান্য গাড়িগুলোও থেমে গেল। বেরিয়ে আসতে লাগল লোকে।
সাইরেন বেজে উঠল। আরেকটা পুলিশের গাড়ি এসে দাঁড়ালো প্রথমটার কাছে। সবাই এখন তাকিয়ে আছে ওপর দিকে, বেলুনটাকে দেখছে।
মিস করবে না পুলিশ, শান্তকণ্ঠে বললো কিশোর। দেখতে পাবেই আমাদের। বেলুন থেকে টাকা ছিটানোর বিরুদ্ধে অবশ্য কোনো আইন নেই। তবে প্রশ্ন জাগবেই ওদের মনে। নজর রাখবে পুলিশ। বেলুনটা নামলেই এসে হেঁকে ধরবে, যেখানেই নামুক। শেষ বাক্যটা বললো নাটকীয় ভঙ্গিতে, আর নামবেই এটা, মিস্টার ক্যাম্পার। কারণ মানুষের তৈরি কোন কিছুই চিরকাল আকাশে ওড়ে না।
কিছুই বললো না ক্যাম্পার।
অনেক পেছনে পড়েছে এখন পুলিশের গাড়ি দুটো। রাস্তায় আরও পুলিশের গাড়ি দেখা যাচ্ছে। সাইরেন বাজিয়ে, ছাতে বসানো ফ্ল্যাশ লাইট জ্বেলে ছুটে যাচ্ছে ওগুলো প্রথম দুটোর কাছে।
শোনা গেল একটা নতুন শব্দ। ওপর থেকে বেলুনের ওপর এসে পড়লো। উজ্জ্বল সার্চ লাইটের আলো।
পুলিশের হেলিকপ্টার, হাসি হাসি গলায় বললো কিশোর, বেশ উপভোগ করছে ব্যাপারটা।
কথা নেই ক্যাম্পারের মুখে। হাঁপাচ্ছে এমন ভাবে, যেন বহুদূর দৌড়ে এসেছে।
বলতে থাকল কিশোর, পিছু লেগে থাকবে পুলিশ। রেডিওতে যোগাযোগ রাখবে হাইওয়ে পেট্রোলের সঙ্গে। শহর থেকে বেলুনটা বেরিয়ে গেলেও অসুবিধে নেই। শেরিফের কাছে খবর চলে যাবে। মোট কথা, কিছুতেই আর পিছু ছাড়ছে না আইনের লোকেরা।
ঠিকই বলেছে ও, মিস্টার, ক্যাম্পারকে বললো চালক। অহেতুক দেরি করে। লাভ নেই। নামিয়ে ফেলি, সে-ই ভালো।