চোখ বড় বড় হয়ে গেল রবিন আর মুর্সার।
রবিন বললো, তার আগেই আমাদের কিছু করা দরকার!
এখুনি চলো! বলেই দরজার দিকে রওনা হয়ে গেল মুসা।
কিশোর আর রবিনও তার পিছু নিলো। ডিটেকটিভের ফিরে আসার অপেক্ষা করলো না আর ওরা।
.
১৯.
ওশন ফ্রন্টে যখন পৌঁছলো তিন গোয়েন্দা, সাতটা বেজে গেছে। দিনের বেলা যে রকম ভিড় থাকে ভেনিসে, সেটা কমে এসেছে। স্পীডওয়েতে গাড়ি খুব কম। ওশন। ফ্রন্টে ঘোরাঘুরি করছে অল্প কয়েকজন মানুষ।
বইয়ের দোকানের বাইরে গলিতে দাঁড়িয়ে আছে টেলিভিশনের একজন। রিপোর্টার। কিটু আর নিনার সাক্ষাৎকার নিতে এসেছে। কিছু লোক ঘিরে দাঁড়িয়েছে তাদেরকে।
সেদিকে গেল না গোয়েন্দারা। ওদের একমাত্র ভাবনা, কিটুকে বাঁচাতে হবে। বিপদের খাড়া ঝুলছে ছেলেটার মাথার ওপর।
মারমেড ইনের কাছে চলে এলো ওরা। গ্যালারি বন্ধ। তবে কি ক্যাম্পার পালালো? অ্যাপার্টমেন্টের জানালায় পর্দা টানা। ভেতরে লোক আছে কিনা বোঝার উপায় নেই।
হঠাৎ করেই সামনের দিকের একটা পর্দা নড়ে উঠলো। ওশন ফ্রন্টের দিকে উঁকি দিলো বোধহয় কেউ।
আছে! আছে! বলে উঠলো মুসা।
মনে হয় পালানোর তাল করছে, কিশোর বললো। সিঁড়ি দিয়ে পেছনে গ্যারেজের কাছে নেমে যাবে।
তাহলে দাঁড়িয়ে আছি কেন? তাগাদা দিলো রবিন।
চত্বরের উত্তর পাশ ঘুরে পেছনে চলে এলো ওরা। ঠিকই বলেছে কিশোর। বেরিয়ে এসেছে ক্যাম্পার। পেছনের সিঁড়ির মাথায় রয়েছে এখনও। হাতে একটা। স্যুটকেস। ওখানেই দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকালো সে, তারপর আস্তে লাগিয়ে দিলো পাল্লাটা। তিন গোয়েন্দা আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে, ওদেরকে দেখতে পেলো না।
পেছনের গ্যারেজের দিকে এগোলো ক্যাম্পার। হাতে ঝুলছে চাবি। কিন্তু। দরজার তালা খোলার আগেই বড় করে দম নিয়ে এগিয়ে গেল কিশোর। বললো, চলে যাচ্ছেন, মিস্টার ক্যাম্পার? খুব খারাপ কথা। আমরা ভাবছি এই কেসের। একটা কিনারা করে দেবো।
পাই করে ঘুরলো ক্যাম্পার। ফ্যাকাসে হয়ে গেছে তার সুন্দর চেহারা। কেসের কিনারা তো করেই ফেলেছো। ছেলেটা ফিরে এসেছে। খুব চালাক তোমরা। কংগ্রাচুলেশন।
কিছু কথা বলার আছে আপনাকে, শুনবেন? নাকি কি বলবো বুঝে ফেলেছেন? পানিতে যখন মূর্তির টুকরোগুলো ফেলেছিলেন, অবাক লেগেছিলো। তারপর হোটেলের ভেতরে যখন ট্রেজার রুমটা আবিষ্কার করলাম, বুঝে ফেললাম সব।
ঢোক গিললো ক্যাম্পার। জিভ বোলালো শুকনো ঠোঁটের ওপর। ঠোঁটের কোণ কাঁপছে। কোনো কথা না বলে তাড়াতাড়ি তালা খোলার চেষ্টা করলো।
না! বলেই লাফ দিলো মুসা। প্রায় উড়ে গিয়ে পড়লো ক্যাম্পারের গায়ের। ওপর। মাথা দিয়ে তো মেরে ফেলে দিলো লোকটাকে। হাতের চাবি গিয়ে ঝনঝন করে পড়লো স্পীডওয়েতে। চোখের পলকে ক্যাম্পারের পাশে চলে এলো। কিশোর। রবিন চলে গেল রাস্তার ওপর। চাবিটা তুলে নিলো।
স্পীডওয়ে ধরে একটা গাড়ি এগিয়ে আসছে। কাছে এসে জানালার কাঁচ নামিয়ে দিলো চালক। জিজ্ঞেস করলো, এই যে ভাই, কি হয়েছে?
প্রশ্নটা ক্যাম্পারকে করেছে, কিন্তু জবাবটা দিলো কিশোর, জলদি গিয়ে পুলিশে খবর দিন! কুইক!,
এক সেকেণ্ড দ্বিধা করলো লোকটা। তারপর গাড়ির গতি বাড়িয়ে গিয়ে মোড় নিয়ে উঠে গেল আরেকটা রাস্তায়।
বিচ্ছুর দল! উঠে দাঁড়িয়েছে ক্যাম্পার। গলা কাঁপছে তার।
কি হয়েছে কিছুই জানে না লোকটা, গাড়ির চালকের কথা বললো কিশোর। কিন্তু পুলিশকে খবর দিতেও পারে। আসার আগে পুলিশকে ট্রেজার রুমের কথা। জানিয়ে এসেছি আমরা। লোকটার কাছে খবর পেলে চোখের পলকে এসে হাজির। হবে। আপনার হাতে টাকা ভর্তি স্যুটকেস দেখলে কি ভাববে ওরা বলুন তো?
ক্ষণিকের জন্যে ঝুলে পড়লো ক্যাম্পারের মাথা। যেন হাল ছেড়ে দিয়েছে। তারপর আচমকা সোজা হলো আবার। হাতে বেরিয়ে এসেছে একটা পিস্তল। বেশ, তোমরাও আসছো আমার সঙ্গে। পুলিশ এখানে এসে কাউকে পাবে না।
পিস্তল আশা করেনি কিশোর, তৈরি ছিলো না। থমকে গেল তিনজনেই। আদেশ পালন না করে উপায় নেই। মরিয়া হয়ে উঠেছে ক্যাম্পার। পিস্তলটার কুৎসিত নলের দিকে তাকিয়ে একবার দ্বিধা করলো ওরা, তারপর গা ঘেঁষাঘেঁষি করে এলো।
আগে বাড়ো! পিস্তল নাচিয়ে নির্দেশ দিলো ক্যাম্পার।
গুলি আপনি করতে পারছেন না, কিশোর বললো। যে কোনো মুহূর্তে পুলিশ এসে যেতে পারে।
আসুক। এখানে আমি আর থাকতে পারছি না কিছুতেই। কাজেই দেখে ফেললেও কিছু এসে যায় না। তোমাদের জিম্মি করে ওদের নাকের ওপর দিয়েই চলে যাবো। হাঁটো। প্যাসিফিক এভেনুতে যাবো আমরা। আমি থাকবো পেছনে। টু শব্দ করলে খুলি উড়িয়ে দেবে।
আর কিছু বললো না ছেলেরা। ঘুরে দাঁড়িয়ে হাঁটতে শুরু করলো। পরের সরু গলিটা দিয়ে যাবে প্যাসিফিক এভেনিউতে।
এই, নিগ্রো! পেছন থেকে ধমকের সুরে বললো ক্যাম্পার, স্যুটকেসটা নাও। গায়ে তো মেলা জোর, কুলিগিরি একটু করো।
সুটকেসটা হাতে নিলো মুসা। ক্যাম্পারের হাত এখন পকেটে। নিশ্চয় পিস্তলটা ধরে আছে। নলের মুখও যে ওদেরই দিকে, বুঝতে অসুবিধে হলো না তিন গোয়েন্দার।
পালাতে আপনি পারবেন না, কিশোর বললো। ইভলিন স্ট্রীটের বাড়িটার কথাও পুলিশকে বলে দিয়েছি আমরা।
কথাটা মিথ্যে, কিন্তু বিশ্বাস করলো ক্যাম্পার। গাল দিয়ে উঠলো তিন গোয়েন্দাকে। তাড়াতাড়ি পা চালাতে বললো। প্যাসিফিক পেরিয়ে গিয়ে মেইন স্ট্রীটে উঠতে বললো।