ঘণ্টাখানেক পরে এসে মুসা আর কিশোরকে লাইব্রেরিতেই পেলো রবিন। ছবি আর প্রতিবেদনটার ফটোকপি করে নিয়েছে কিশোর। প্রতিবেদন পড়ে জানা গেল বিখ্যাত চিত্রকর ডেগার আঁকা পেইন্টিং ওটা। তাঁর বিখ্যাত ছবি নয় এটা, তবু। যথেষ্ট দামী। দিন কয়েক আগে আরও কিছু মূল্যবান জিনিস সহ ছবিটা চুরি গেছে। একজন ধনী লোকের বাড়ি থেকে।
হাতের খাম থেকে ছবিগুলো টেবিলে ঢাললো রবিন। বেছে বেছে বের করলো একটা ছবি, পত্রিকার ছবিটার সঙ্গে অবিকল মিলে যায়।
হুবহু এক, মুসা বললো। কিন্তু ডেগার ছবির নকলও হতে পারে এটা। সব পেইন্টিঙেরই নকল পাওয়া যায়, তাই না?
যায়, বিখ্যাতগুলোর, জবাব দিলো কিশোর। তবে আমি শিওর মারমেড ইনের ছবিটা আসল। ঘরের অন্যান্য জিনিসগুলোও চোরাই মাল। এইবার পুলিশকে। জানানো যায়।
লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে এলো তিন গোয়েন্দা। বাইরে তখন শেষ বিকেলের রোদ। আপনমনে শিস দিতে দিতে চললো কিশোর।
ভেনিস পুলিশ স্টেশনে এসে ঢুকলো ওরা। একজন অফিসারকে দেখে তার। সঙ্গে কথা বলতে গেল কিশোর। অন্য দুজন দাঁড়িয়ে রইলো পেছনে।
ভূমিকা না করে কিশোর বললো, চোরাই একটা ছবির খবর দিতে পারি, ডেগার ছবি। কোথায় আছে ওটা জানি। কে চুরি করেছে, তা-ও আন্দাজ করতে পারি।
ফটোকপি করে আনা পত্রিকার প্রতিবেদনটা দেখালো কিশোর, তারপর দেখালো রবিনের তুলে আনা ছবিটা। আজ বিকেলে তোলা হয়েছে এটা, বললো সে।
দুটো ছবি ভালোমতো মিলিয়ে দেখলো অফিসার। মন্তব্য করলো না। ছেলেদেরকে নিয়ে এলো আরেকটা ছোট ঘরে, ওখানে একটা টেবিল ঘিরে কয়েকটা চেয়ার সাজানো রয়েছে। ওদেরকে ওখানে বসতে বলে চলে গেল।
খানিক পরেই এসে হাজির হলো একজন সাদা পোশাক পরা পুলিশের গোয়েন্দা। হাতে ফটোকপির কাগজ আর রবিনের তুলে আনা ছবিটা। অফিসার নিয়ে গিয়েছিলো ওগুলো।
ইনটারেসটিং, দুটোই দেখিয়ে এমনভাবে বললো ডিটেকটিভ, যেন মোটেও ইনটারেসটিং নয় ব্যাপারটা। দেখতে দুটো ছবি একই রকম। তবে তোমরা যেটা তুলে এনেছো, সেটা আসল না-ও হতে পারে। কোত্থেকে আনলে? বলেই চোখ। পড়লো রবিনের কাঁধে ঝোলানো ক্যামেরার ওপর। তুমি তুলেছে, না?
হ্যাঁ, স্যার। মারমেড ইনের একটা ঘর থেকে।
মারমেড ইন? ওটা তো বহু বছর ধরে তালা দেয়।
কথা বললো কিশোর, সবাই তাই জানে বটে, কারণ মালিকের তা-ই ইচ্ছে। হোটেলের একটা সুইট এখনও নিয়মিত ব্যবহার হয়। নানারকম দামী দামী জিনিসে বোঝাই ওটা, চোরাই মাল। আমার বিশ্বাস, হোটেলটার বর্তমান মালিক ব্রড ক্যাম্পার এর সঙ্গে জড়িত। মনে হয় চোরাই মালের ডিলার সে, কারণ ওই ঘরে এক বাক্স ভর্তি টাকা দেখেছি।
খামটা খুলে আরেকটা টেবিলে ছবিগুলো ঢেলে দিলো রবিন। তার মধ্যে একটা ছবিতে স্পষ্ট উঠেছে টাকার বাণ্ডিলের ছবি।
হুমম! বলে মাথা দুলিয়ে, ছেলেদের আইডেনটিটি কার্ড দেখতে চাইলো। ডিটেকটিভ। স্টুডেন্ট কার্ড বের করে দেখালো ওরা। তারপর কি মনে করে তিন গোয়েন্দার একটা কার্ড বের করে দিলো কিশোর।
গুঙিয়ে উঠলো ডিটেকটিভ। শখের গোয়েন্দা! আগেই আন্দাজ করা উচিত ছিলো আমার। এই বয়েসে অনেক ছেলেই গোয়েন্দা হতে চায়। অন্তত ভাবে, যে তারা গোয়েন্দা।
ভাবাভাবির মধ্যে নেই আমরা, ভারিক্কি চালে বললো কিশোর। আমরা। সত্যিই গোয়েন্দা। অনেক জটিল রহস্যের সমাধান করেছি। অনেক বড় বড় চোর ডাকাতের কোমরে দড়ি পরিয়েছি…
হাত তুলে তাকে থামিয়ে দিলো ডিটেকটিভ। উঠে দাঁড়ালো। বসো এখানে। আসছি।
প্রতিবেদনের ফটোকপি আর ছবিগুলো নিয়ে চলে গেল লোকটা।
কি করতে গেল? মুসার প্রশ্ন।
চোরাই মালের লিস্ট থাকে থানায়। ছবিগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে গেছে। হয়তোঁ। ফোন-টোন করে খোঁজ-খবরও নিতে পারে।
ক্যাম্পারকে না আবার করে বসে! রবিন বললো।
ক্যাম্পারকে? উদ্বিগ্ন হয়ে বললো মুসা। কেন, তাকে করবে কেন?
কারণ তার হোটেলে চুরি করে ঢুকেছি আমরা, সেটা একটা অপরাধ। ইচ্ছে করলেই আটকে দিতে পারে আমাদেরকে পুলিশ। যদি হোটেলের কামরা থেকে জিনিসগুলো সরিয়ে ফেলে থাকে ক্যাম্পার, আর চোরাই মালের লিস্টের সঙ্গে না মেলে, তাহলে মরেছি!
রবিনের কথার মানে বুঝে চুপ হয়ে গেল মুসা।
দীর্ঘ নীরবতার পর মুখ খুললো কিশোর, যেন মনের ভাবনাগুলোই মুখে উচ্চারণ করলো, যদি ক্যাম্পারকে ফোন করেই, তো কি করবে ক্যাম্পার? কিটু যদি ঘরটা দেখে থাকে…
বাধা দিয়ে রবিন বললো, কিটু যে দেখেছেই, তার নিশ্চয়তা কি? নিশ্চয়তা? আছে। এতো দামী দামী খাবার কেনার টাকা কোথায় পেলো গু? পেসট্রি, পিজা, চিকেন। আমার বিশ্বাস বাক্স থেকে কিছু টাকা তুলে নিয়ে এসেছিলো কিটু। কড়কড়ে নোট দেখেছে, ছেলেমানুষ, তুলে নিয়ে পকেটে ভরে ফেলেছে। টাকা দেখলে অনেক ছেলেই ওরকম করে। ওই টাকা দিয়েই তাকে খাবার কিনে এনে দিয়েছে ব্রগু।
এক মুহূর্ত চুপ থেকে আবার ক্যাম্পারের কথায় ফিরে গেল কিশোর, হ্যাঁ, যা। বলছিলাম, ক্যাম্পার কি করবে? আমার ধারণা, ও পালানোর চেষ্টা করবে। কারণ অপরাধীর মন সব সময়ই দুর্বল থাকে। ওর ব্যাপারেই একটা সহজ উদাহরণ ধরো-জলকন্যার মূর্তিটা ভাঙার পর আমরা হলে, কিংবা অপরাধী না হয়ে অন্য কেউ হলে কি করতো? ভাঙা টুকরোগুলো তুলে নিয়ে জাস্ট ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে আসতো। সে করলো কি? অনেক সাবধানে লুকিয়ে লুকিয়ে নিয়ে গিয়ে ফেললো। সাগরের পানিতে, যাতে কারও চোখে না পড়ে। কি দরকারটা ছিলো? সব কিছু গড়বড় হয়ে যাচ্ছে এখন। কিটু যদি মুখ খোলে, এই ভয়ে ওর মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করতে পারে এখন ক্যাম্পার।