ওর একশো গজের মধ্যে পৌঁছে গেছে অনুসরণকারীরা, এই সময় ঘুরলো বরগু। ঢুকে পড়লো একটা ছোট গলিতে। ওশন ফ্রন্ট আর স্পীডওয়েকে যুক্ত। করেছে এই গলি।
মুসা, জলদি যাও! চেঁচিয়ে বললো কিশোর। চোখের আড়াল না হয়!
যাচ্ছি, বলেই দৌড় দিলো মুসা।
যেখান থেকে অদৃশ্য হয়েছে বরগু, সেখানে পৌঁছে ঘুরে তাকালো স্পীডওয়ের দিকে। কিশোর আর রবিনের উদ্দেশ্যে একবার হাত নেড়ে ঢুকে পড়লো গলিতে।
চলার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে কিশোর।
বরগু! নিনা বললো, তাই, না? বরগুই!
কিশোরের পেছনে প্রায় ছুটতে আরম্ভ করলো সে।
নিনা, হয়েছে কি? জিজ্ঞেস করলেন উত্তেজিত বোরম্যান। কিছু তো বুঝতে পারছি না!
বরগু! ইস, আগেই আন্দাজ করা উচিত ছিলো আমার!
গলির মুখে পৌঁছে গেল ওরা। দুটো বাড়ির মাঝে সরু পথ, কোণের কাছে সাইনবোর্ড ফেয়ার আইলস ওয়ে।
স্পীডওয়ের ধারে অপেক্ষা করছে মুসা। ওদেরকে দেখে হাত নেড়ে আবার। হাঁটতে শুরু করলো, প্যাসিফিক অ্যাভেনিউর দিকে।
দৌড় দিলো নিনা। অ্যাভেনিউর অর্ধেক যেতে না যেতেই মুসাকে ধরে ফেললো।
পুরানো একটা ভাঙা বাড়ির ঘাস-জন্মানো ড্রাইভওয়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। মুসা। ও বাড়িতে ঢুকেছে, হাত তুলে বললো সে। কুত্তার ডাক শুনেছি।
বারান্দায় বেরিয়ে এলো একজন বৃদ্ধ। দুজনকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, কি চাই?
ড্রাইভওয়ের দিকে এগোলো নিনা।
দাঁড়াও! চেঁচিয়ে উঠলো বৃদ্ধ। একটা দাঁতও নেই, ফলে উচ্চারণ অস্পষ্ট, কেমন জড়িয়ে যায় কথা। অন্যায় ভাবে ঢুকেছো! পুলিশ ডাকবো বলে দিলাম!
পরোয়াই করলো না নিনা। কিশোর আর বোরম্যানও তার পিছু নিলেন।
আবার ঘেউ ঘেউ করে উঠলো কুকুর।
এই, শুনছো! চিৎকার করে বললো বৃদ্ধ। এটা আমার জায়গা, জোর করে ঢুকছো তোমরা! বেরোও!
কিটু-উ! চেঁচিয়ে ডাকলো নিনা। কিটু-উ, কোথায় তুই?
পেছনের উঠানে আগাছার ছড়াছড়ি। একপাশে কাত হয়ে গেছে পুরানো। গ্যারেজটী। ওটার দরজার হাতল ধরে টান মারলো নিনা। মাটিতে ঘষা খেতে। খেতে তার দিকে যেন ছুটে এলো পাল্লাটা।
ভেতরে আবছা অন্ধকার। অনেক শরীরের নড়াচড়া। খেক কে করে নিনার দিকে তেড়ে আসতে চাইলো দুটো কুকুর। কিন্তু আটকালো বরও। পেছনের দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে আরেকটা ছোট্ট শরীর। ফ্যাকাসে মুখ, চোখ বড় বড় হয়ে গেছে।
কিটু-উ! বলে চেঁচিয়ে উঠে ছুটে গেল মা।
মুরগীর পা চিবোচ্ছিলো কিটু। ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে লাফিয়ে উঠে ছুটে এলো। মায়ের দিকে। জড়িয়ে ধরলো একে অন্যকে।
ছোট্ট একটা কাশি দিয়ে আরেক দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন বোরম্যান।
কুকুরগুলোকে শান্ত করলো বরগু। নিয়ে গেল গ্যারেজের কোণে। একটা দড়ির খাঁটিয়া রয়েছে ওখানে, তার ওপর বসে পড়লো সে। বিষণ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে মা-ছেলের দিকে। দিন কয়েকের জন্যে একটা বাচ্চাকে আপন করে পেয়েছিলো সে। একা হয়ে গেল আবার। তার মতো একজন মানুষকে বিষণ্ণ করে দেয়ার জন্যে এটা যথেষ্ট।
.
১৮.
খবর ছড়িয়ে পড়তে দেরি হলো না। ভিড় জমে গেল পথে। পুলিশ এলো। গুর হাতে হাতকড়া দিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে গেল তারা।
এবার কি করবো? রবিনের প্রশ্ন। কিটু ট্রেজার রুমটা দেখে থাকলে বলে দেবেই।
তার আগেই হুঁশিয়ার হয়ে যাবে ক্যাম্পার। মালপত্র সব সরিয়ে ফেলবে অন্য কোথাও বন্ধ ঘরে বাক্স ভর্তি টাকা আর দামী দামী জিনিসের কথা কে বিশ্বাস করবে তখন?
করবে না, মাথা নাড়লো মুসা।
কাজেই সেটা প্রমাণ করার দায়িত্ব আমাদের, ঘোষণা করলো কিশোর। সান্তা মনিকায় একটা ছবি তোলার দোকান আছে, এক ঘণ্টার মধ্যেই ফটো ডেভেলপ করে দেবে। রবিন, ক্যামেরাটা নিয়ে চলে যাও, ট্রেজার রুমে তোলা ছবিগুলো করিয়ে আনো। আমি আর মুসা যাচ্ছি ভেনিস লাইব্রেরিতে। ছবিগুলো। নিয়ে ওখানে চলে এসো।
রবিন রওনা হয়ে গেল উত্তরে ফটোর দোকানের দিকে। কিশোর আর মুসা চললো মেইন স্ট্রীটে, যেখানে রয়েছে ছোট লাইব্রেরিটা। যাওয়ার সময় একটা মস্ত বেলুন দেখে দাঁড়ালো দুজনে। নতুন একটা সুপার মার্কেট করা হয়েছে, ওটার পার্কিং লটে বেঁধে রাখা হয়েছে বেলুনটা, আজ মার্কেটের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠান। বিজ্ঞাপন। লেখা রয়েছেঃ
প্রতি একশো জন খরিদ্দারের মধ্যে
লটারি করে যে কোনো একজনকে
বেলুনে করে বিনে পয়সায়
আকাশে ওড়ার সুযোগ দেয়া হবে।
বাহ, দারুণ তো! হেসে মুসা বললো। বেলুনের গনডোলায় গিয়ে উঠছে। কয়েকজন লোক, সেটা দেখছে সে।
চলো, আমাদের কাজে যাই, খানিকটা অসহিষ্ণু হয়েই হাত নাড়লো কিশোর।
লাইব্রেরিতে ঢুকেই পত্রিকা ঘাটতে বসলে সে, মুসা তাকে সাহায্য করলো। গত দুই হপ্তার কাগজ বের করলো ওরা, তখনও যেগুলোর মাইক্রোফিল্ম করা হয়নি।
কি খুঁজছো? জিজ্ঞেস করলো মুসা।
একটা চোরাই ছবির কথা পড়েছিলাম, কোন সংখ্যায় ঠিক মনে নেই। সেটাই খুঁজছি।
লম্বা একটা রীডিং টেবিলে পত্রিকাগুলো এনে ফেললো ওরা। তারপর ছড়িয়ে নিয়ে দেখতে আরম্ভ করলো।
মুসার চোখে পড়লো প্রথমে। বলে উঠলো, এই তো! কাগজটা কিশোরের দিকে ঠেলে দিলো সে।
পেইন্টিংটার একটা পরিষ্কার ফটোগ্রাফে দেখা যাচ্ছে-তৃণভূমিতে খেলছে কয়েকটা বাচ্চা ছেলেমেয়ে। মারমেড ইনে দেয়ালে ঝোলানো একটা ছবিতে এই দৃশ্য দেখেছে ওরা।
ছবিটা দেখেই চেনা চেনা লাগছিলো তখন, সন্তুষ্ট হয়ে বললো কিশোর।