গ্যালারিতে ঢুকে দারুণ সব জিনিস দেখবে তুমি। একটা দরজা চোখে পড়বে, ভাঁড়ারে ঢোকার। কাউন্টারের ওপারে দরজাটা। ওর ওপাশে কি আছে জানো না তুমি, দেখার কৌতূহল হবেই। ঢুকে পড়বে।
এক এক করে দেখতে দেখতে এভাবেই চলে যাবে প্রিন্সেস স্যুইটের কাছে। থেমে দম নিলো কিশোর। তারপর বললো, আমার বিশ্বাস, সেদিন সকালে নিরমা। হল্যাণ্ডের ঘরে ছিলো ক্যাম্পার।
কিন্তু দরজা তো বন্ধ, ঢুকলো কিভাবে? প্রশ্ন তুললো মুসা। নিশ্চয় শ্যাফট দিয়ে নয়?
না। অবশ্যই আরেকটা গোপন দরজা আছে, যেখান দিয়ে ক্যাম্পার ঢোকে। সেটা দেখে ফেলেছিলো কিটু। সবাই তখন প্যারেড দেখায় ব্যস্ত, তাই হয়তো ভেতরে ঢুকে দরজাটা আর লাগিয়ে দেয়ার কথা মনে হয়নি ক্যাম্পারের। ভেবেছে, কে আর আসবে দেখতে?
তারপর কোনো কারণে চোখ তুলে কিটুকে দেখে ফেলেছে। কিংবা এমনও হতে পারে, দরজাটা খোলা ফেলে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে গিয়েছিলো ক্যাম্পার, ফিরে এসে দেখে ট্রেজার রুমে ঢুকে বসে আছে কিটু। কি করবে তখন সে? ভয়। পাবে? রেগে যাবে?
ধরার চেষ্টা করবে কিটুকে, মুসা বললো।
হ্যাঁ। আর কিটু পালানোর চেষ্টা করবে। বেরিয়ে চলে এসেছিলো হয়তো গ্যালারিতে। লুকানোর চেষ্টা করেছিলো জলকন্যার বেদির আড়ালে। তাতে নাড়া লেগে পড়ে গিয়ে ভেঙে যায় জলকন্যা। ডব ছিলো কিটুর সাথে। মূর্তিটা সরাসরি মাটিতে পড়েনি, পড়েছিলো কুকুরটার ওপর। ব্যথা যা পেয়েছে, তার চেয়ে বেশি পেয়েছিলো শক। সহ্য করতে পারেনি জানোয়ারটার বুড়ো, নষ্ট হয়ে যাওয়া। হৃৎপিণ্ড। মারা যায় ওটা।
ততোক্ষণে পেছনের দরজার কাছে চলে যায় কিটু। দরজার ছিটকানি খুলে রাখে ক্যাম্পার, যখন সে ওঘরে থাকে, ফলে কিটুর বেরিয়ে যেতে অসুবিধে হওয়ার। কথা নয়। কিন্তু, বেরোনোর আগেই মুর্তিটা পড়ে যদি ভেঙে গিয়ে থাকে, তাহলে শব্দ হয়েছে। নিশ্চয় ফিরে তাকিয়েছে কিটু। কি দেখবে, এবং তখন কি করবে?
ফিরে আসবে কুকুরটাকে তোলার জন্যে।
কিংবা মূর্তি ভেঙেছে দেখে এতো ভয় পেয়ে যাবে, ডবের কথা আর ভাববে না। সোজা বেরিয়ে যাবে। ভাববে, তার দোষেই এতো কিছু ঘটেছে। মায়ের শাস্তির ভয়ে লুকিয়ে পড়বে কোথাও গিয়ে।
হ্যাঁ, ঠিকই, একমত হলো মুসা। ওর বয়েসে আমি হলেও ওরকমই ভয়। পেতাম। কিন্তু কোথায় লুকাতাম? এমন কোনো জায়গা আছে যেখানে পুলিশও খুঁজে বের করতে পারছে না? নাকি অন্য ব্যাপার হয়েছে। ক্যাম্পার ধরে ফেলেছে কিটুকে…
না। ও কোথায় আছে ক্যাম্পার জানেই না। সান্তা মনিকা পিয়ারে খুঁজতে গিয়েছিলো, মনে নেই?
তাই তো! কিন্তু কেন খুঁজতে গেল। ছেলেটাকে খুঁজে বের করে মানে, মুখ বন্ধ করে দেয়ার জন্যে, যাতে সে ট্রেজার রুমের কথা বলতে না পারে?
জবাব দিলো না কিশোর। দীর্ঘ একটা নীরব মুহূর্ত পরস্পরের দিকে তাকিয়ে রইলো ওরা। তারপর রবিনের নড়াচড়ার শব্দ শুনে শ্যাফটের কাছে এগিয়ে গেল। তাকে উঠতে সাহায্য করার জন্যে।
অদ্ভুত! বেরিয়েই বলে উঠলো রবিন। মনে হলো আরব্য রজনীর কোনো গল্পের মধ্যে গিয়ে ঢুকেছিলাম..।
বাধা দিয়ে জিজ্ঞেস করলো কিশোর, ছবি তুলেছো?
নিশ্চয়ই। পেইন্টিং, টাকা, সব কিছুর। এখন কি করব? পুলিশের কাছে যাবো?
হয়তো। তবে তার আগে জরুরী আরও কাজ আছে। আর একটা, সূত্র পেলেই কিছু নিখোঁজ রহস্যের সমাধান করে ফেলতে পারবো।
.
১৭.
বুকশপেই পাওয়া গেল নিনা হারকারকে। ছেলেদের দেখে বলে উঠলো, কিছুতেই বাড়ি বসে থাকতে পারলাম না। ভাবলাম, দোকানেই চলে আসি…।
ছেলে নিখোঁজ হয়েছে তিনদিন, একেবারে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে মহিলাকে হলদে হয়ে এসেছে চামড়া, ভারি ভাঁজ পড়েছে কপালের চামড়ায়।
যতোটা সম্ভঘ কম শব্দ করে একটা ঝাড়ন দিয়ে ধুলো ঝাড়ছেন বোরম্যান। বইয়ের তাকের ফাঁক দিয়ে এমনভাবে ঝাড়নটা ঢুকিয়ে দিচ্ছেন, যেন ঘোরের মধ্যে রয়েছেন?
কিশোর জিজ্ঞের করলো, মিসেস হারকার, এখানে কিটুর এমন কোনো বন্ধু আছে, যাকে সে খুব বিশ্বাস করে?
হাসলো নিনা। কান্নার মতো দেখালো হাসিটা। বললো, ছিলো, শুধু ডব। তাকেই বিশ্বাস করতো কিটু।
মিসেস হারকার, আমি শিওর, কিটুকে সাহায্য করছে কেউ। পালিয়েই গেছে সে। কেউ একজন তাকে লুকিয়ে রেখেছে, খাওয়াচ্ছে, থাকার জায়গা দিয়েছে। নিশ্চয় আরেকটা বাচ্চা। তেমন কাউকে চেনে হয়তো কিটু, আপনারা জানেন না।
তেমন কে আছে, মনে করার চেষ্টা করতে লাগলো নিনা।
জানালা দিয়ে সৈকতের দিকে তাকালো কিশোর। বরগু চলেছে। সাদা একটা পেটফোলা ব্যাগ তার হাতে। ব্যাগের গায়ে, মুরগীর মাংসে তৈরি খাবারের বিজ্ঞাপন। হু! আনমনে বললো কিশোর।
জানালার পাশ দিয়ে ওশন ফ্রন্টের দিকে চলে গেল বরগু। হাসলো কিশোর। মিসেস হারকার, আসুন আমার সঙ্গে।
কিশোরের কণ্ঠস্বরের হঠাৎ পরিবর্তনে ঝট করে মুখ তুলে তাকালো নিনা। কী? কি ব্যাপার?।
একটা ব্যাপার পুরোপুরি চোখ এড়িয়ে গিয়েছিলো আমাদের, হাত তুলে ওশন ফ্রন্টের দিকে দেখালো কিশোর।
তিন গোয়েন্দা আর নিনা বেরিয়ে গেল।
নিনা? পেছন থেকে ডাকলেন বোরম্যান।
জবাব দিলো না নিনা। ওশন ফ্রন্টের দিকে তাকিয়ে আছে। বরগুকে দেখছে।
দোকান থেকে বেরিয়ে এসে দরজাটা বন্ধ করে দিলেন বোরম্যান। ছেলেদের সঙ্গে চললেন তিনি আর নিনা। সামনে বেশ কিছুটা দূরে রয়েছে বরগু। আজ তার সাথে কুকুর দুটো নেই। ঠেলাটাও নেই। শুধু খাবারের ব্যাগটা হাতে।