বাহ সুন্দর তো, মিস্টার ডেজার বললেন। মডার্ন আর্ট বুঝি না আমি, তবে দেখতে ভালোই লাগছে।
শব্দ করলে শোনা যাবে, বুঝে গেছে গোয়েন্দারা, তাই শব্দ করলো না। ঘরে কি আছে দেখতে লাগলো। দামী দামী অনেক জিনিস আছে। কার্পেট, চেয়ার, বাক্স, আর আরও অনেক জিনিস।
ক্যাম্পার আর ডেজার কথা বলছেন। কিন্তু তাদেরকে দেখা যাচ্ছে না।
দেয়ালের ওপাশ থেকে আসছে শব্দ, অনুমান করলো কিশোর। সেটার দিকে এগোতে গিয়ে থমকে দাঁড়ালো সে। পুরানো একটা কাঠের বাক্স দৃষ্টি আকর্ষণ করছে তার। ডালায় আর গায়ে খোদাই করা রয়েছে নানারকম পৌরাণিক দানরে ছবি। পায়ে পায়ে এসে দাঁড়ালো বাক্সটার কাছে। ডালা ধরে টান দিলো।
ঘাড়ের পেছনে দাঁড়িয়ে অস্ফুট একটা শব্দ করে উঠলো মুসা। বিস্ময়ে।
বাক্সটা টাকায় বোঝাই। দশ, বিশ, পঞ্চাশ, একশো ডলার নোটের বাণ্ডিল থরে থরে সাজানো। ব্যাংকে যেমন থাকে।
আপনার সঙ্গে কথা বলে বেশ ভালোই লাগলো মিস্টার ডেজার, ক্যাম্পার বলছে। তার ইচ্ছে, ডেজার এবার চলে যাক। এতো কাছাকাছি থাকি, অথচ কথা বলারই সুযোগ হয় না। এসে খুব ভালো করেছেন।
ঠেলে চেয়ার সরানোর শব্দ হলো। দেয়ালের ওপাশে পায়ের আওয়াজ এগিয়ে গেল গ্যালারির দরজা পর্যন্ত।
আস্তে ডালাটা আবার নামিয়ে দিলো কিশোর।
গ্যালারির দরজার ঘণ্টাটা বাজলো। তারমানে বেরিয়ে গেছেন ডেজার। আগের জায়গায় ফিরে এলো ক্যাম্পার। চেয়ারটা জায়গামতো নিয়ে গিয়ে রাখলো, আওয়াজ শুনেই আন্দাজ করা যাচ্ছে।
দেয়ালের কাছ থেকে সরে এলো কিশোর। মুসাকে ইশারা করলো পাশের ঘরে চলে আসতে। তারপর এগোলো, যেখান দিয়ে ঢুকেছে, সেখান দিয়েই বেরিয়ে যাবে আবার।
কতো টাকা, দেখলে! ফিসফিস করে বললো মুসা।
আনমনে মাথা দোলালো শুধু কিশোর।
কিন্তু এখনো পড়ে আছে কেন? আবার বললো মুসা। নিরমা হল্যাও তো সেই কবেই মরে গেছে।
আমার মনে হয় না টাকাটা তার। ক্যাম্পার কিছু একটা করছে। ও আমাকে বলেছিলো, সরাইটা যখন কেনে তখন একেবারে খালি ছিলো এটা… থমকে গেল। কিশোর। পাশের ঘরে হুড়কো খুলেছে বোধহয় কেউ।
আসছে! বলেই শ্যাফটের দরজা দিয়ে ঢুকে পড়লো মুসা।
তাকে কয়েক ফুট ওঠার সময় দিলো কিশোর, তারপর নিজেও ঢুকে পড়লো। সাবধানে লাগিয়ে দিলো দরজা।
আরেকটা দরজা খোলার আওয়াজ হলো। নিশ্চয় সুইং ডোরটা-ভাবলো। কিশোর। ক্যাম্পার ঢুকেছে। ও কি বুঝতে পারবে ঘরে লোক ঢুকেছিলো? দরজা খুলে শ্যাফটে দেখতে আসবে?
কিচ করে আরেকবার শব্দ হলো। ধড়াস করে উঠলো কিশোরের বুক। তবে না, শ্যাফটের দরজা নয়, সুইং ডোরটাই বন্ধ হলো আবার।
আওয়াজ হয়ে যাওয়ার ভয়ে থেমে গিয়েছিলো মুসা, কিশোরের মতোই সে-ও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। উঠতে আরম্ভ করলো ওপরে।
১৬.
তিনতলায় উঠে মুসা বেরিয়ে গেল, কিশোর শ্যাফটের ভেতরেই রইলো।
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ফিরে এলো মুসা! বললো, হল, গ্যালারি সব দেখে এসেছি। কেউ নেই। এসো।
কি যেন ভাবছে কিশোর। জবাব দিলো না। এই কিশোর, কি ভাবছো?
উ! ভাবছি, টাকার বাক্সটা কোনোভাবে বের করে নিয়ে যাওয়া যায় কিনা?
নিয়ে গিয়ে কি হবে, একথাটা আর জিজ্ঞেস করলো না মুসা।
এক কাজ করো, কিশোর বললো। ওয়াকি-টকিতে রবিনের সঙ্গে কথা বলে। ক্যামেরা নিয়ে আসতে বলো।
কথা বললো মুসা। ক্যামেরা সাথেই আছে রবিনের। কিভাবে কিভাবে আসতে হবে, তা-ও বললো।
কিছুক্ষণ পর এলো রবিন। উত্তেজিত।
সংক্ষেপে সমস্ত কথা বলে তার বিস্ময় কিছুটা ঘোচালো মুসা। আবার ফিরে যেতে হবে অ্যান্টিরুমে, কিশোর বললো।
কেন? রবিনের প্রশ্ন।
ক্যামেরা আনতে বলেছি কিসের জন্যে।
হাসলো রবিন। বুঝে ফেলেছে। ঘরের জিনিসপত্রের ছবি তুলবে।
হ্যাঁ, তুলবো। বিশেষ করে পেইন্টিংগুলোর। ওগুলোর মধ্যে একটার ছবি দেখেছি খবরের কাগজে, পরিষ্কার মনে পড়ছে। কারো কাছ থেকে চুরি করে আনা হয়েছে ওটা।
হাঁ করে কিশোরের দিকে তাকিয়ে রইলো দুই সহকারী। মুসা বললো অব শেষে, ক্যাম্পার চোর?
জানি না। এক বাক্স বোঝাই টাকা, চোর হলে কি ওভাবে ফেলে রাখে ওরকম একটা জায়গায়? তবে, চোরাই মালের ব্যবসা যারা করে, তাদের প্রচুর নগদ টাকার দরকার হয়।
হ্যাঁ, মাথা দোলালো রবিন। জিজ্ঞেস করলো, যাবো ছবি তুলতে?
একলা পারবে?
কেন পারবো না। এই কয়েক মিনিট লাগবে। আসছি।
নেমে গেল রবিন।
দেয়ালে হেলান দিয়ে চুপ করে বসে ভাবতে লাগলো কিশোর। ঘন ঘন চিমটি কাটছে নিচের ঠোঁটে। পায়চারি করছে মুসা। হঠাৎ কিশোর বললো, হু, বুঝেছি!
থেমে গেল মুসা। কি বুঝলে?
ফিরে তাকালো না কিশোর। তাকিয়ে রয়েছে দেয়ালের দিকে। যেন সেখানে প্রোজেক্টরে ছবি চলছে, তাই দেখেই বলতে লাগলো, ধরো আজকে জুলাইয়ের চার তারিখ। তোমার বয়েস পাঁচ। কিটুর মতো। প্যারেড চলছে। সবাই ব্যস্ত, সবাই উত্তেজিত। তুমি এখন কি করবে?
ভ্রুকুটি করলো মুসা। এমন কিছু, যেটা করা উচিত নয়।
ঠিক। মারমেড গ্যালারিতে ঢোকার চেষ্টা করবে না তুমি, ভেতরে কি আছে দেখার জন্যে? কারণ ওটা দেখার প্রচণ্ড কৌতূহল আছে তোমার। নিঃশব্দে সবার চোখ এড়িয়ে চলে আসবে সিঁড়ির কাছে, উঁকি দিয়ে দেখবে ক্যাম্পার আছে কিনা।
দেখলে আন্দাজ করবে, আর সবার মতোই সে-ও বেরিয়ে গেছে প্যারেড দেখতে। এই সুযোগে ঢুকে পড়বে তুমি গ্যালারিতে, যেহেতু তোমার উচ্চতা কম, ঘণ্টার ইলেকট্রিক বীমে বাধা আসবে না। খুব সহজেই ঢুকে পড়তে পারবে তুমি, ডবকে নিয়ে।