রান্নাঘরে ঢুকলো কিশোর। একটা টেবিলে পড়ে আছে এঁটো প্লেট। সিংকে। রয়েছে আরও কয়েকটা। টেবিলের এক কোণে জড়ো করে রাখা হয়েছে কুকুরের খাবার। বাজে গন্ধ বেরোচ্ছে সব কিছু থেকেই। পেছনে যাবার দরজাটা ভাঙা, বেঁকে রয়েছে।
সামনের ঘরে একটা চামড়ার সোফা, বয়েস কতো অনুমান করাই মুশকিল। কাঁচের টপওয়ালা গোল একটা টেবিল, তাতে কয়েকটা কুকুরের কলার, আর সান্তা মনিকা পত্রিকার একটা কপি পড়ে আছে। কুকুর হারানো বিজ্ঞাপনে দাগ দিয়ে চিহ্নিত করা। বাদামী রঙের ম্যানিলা খাম আছে কয়েকটা। সরকারী খাম। ডাকবাক্স থেকে এসব চুরি করে আনে নাকি?–ভাবলো কিশোর।
সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে এলো সে। শোবার ঘর আর গোসলখানা দেখতে বেশি সময় লাগলো না। চোখে পড়ার মতো কিছু নেই, বাথরুমে কিছু অধধায়া পুরানো কাপড় ছাড়া।
তিনতলা নেই বাড়িটায়, বেসমেন্টও নেই, নেই কিটুর কোনো চিহ্ন।
হতাশ হয়ে বেরিয়ে আসতে যাবে কিশোর, এই সময় ওয়াকি-টকিতে শোনা গেল রবিনের গলা। কিশোর ডিগার আসছে!
এক দৌড়ে ডাইনিং রুমে চলে এলো কিশোর। জানালা দিয়ে দেখলো, প্যাসিফিক অ্যাভেনর দিক থেকে আসছে ডিগার।
রান্নাঘরে ঢুকলো কিশোর। সামনের বারান্দায় পদশব্দ শোনা গেল। ভাঙা দরজাটা খুলে পিছনের বারান্দায় চলে এলো সে। একসঙ্গে ফেটে পড়লো যেন কুকুরগুলো। প্রচণ্ড ঘেউ ঘেউ শুরু করে দিলো।
এই, অমন করছিস কেন? সামনের বারান্দা থেকে চেঁচিয়ে উঠলো ডিগার।
চট করে পেছনের আঙিনাটায় চোখ বুলিয়ে নিলো কিশোর। তক্তার উঁচু বেড়ায় ঘেরা জায়গাটা। ওটা ডিঙিয়ে যাওয়া যাবে না। একমাত্র যে গেটটা আছে, ওটা দিয়ে বেরোতে গেলে ডিগারের চোখে পড়ে যাবে।
একটা কাজই করতে পারে, এবং সেটাই করলো কিশোর। দৌড় দিলো। কুকুরের খোয়াড়ের দিকে।
এই, এই! দেখে ফেলেছে ডিগার। বাড়ির ধার ঘুরে দেখতে আসছিলো চেঁচামেচি করছে কেন কুকুরগুলো।
ফিরেও তাকালো না কিশোর। সব চেয়ে কাছে যে খোয়াড়টা পেলো, খুলে দিলো ওটার দরজার হুড়কো। খোলা পেয়ে চোখের পলকে বেরিয়ে পড়লো জার্মান শেফার্ড।
এই, এই কুত্তা, ঢোক, ভেতরে ঢোক! চেঁচিয়ে আদেশ দিলো ডিগার।
কি হলো দেখার জন্যে দাঁড়ালো না কিশোর। খুলে দিলো আরেকটা খোয়াড়ের হুড়কো। ঘাউ করে উঠে বেরিয়ে এলো আরেকটা কুকুর। শেফার্ডের ওপর চোখ পড়তেই গেল রেগে। লাফ দিয়ে গিয়ে পড়লো ওটার ঘাড়ে। বেধে গেল মারামারি। থামানোর জন্যে পাগলের মতো চেঁচাতে লাগলো ডিগার। বৃথা চেষ্টা।
আরেকটা খোয়াড়ের হুড়কো খুলে দিলো কিশোর, তারপর আরও একটা।
কুকুরগুলোকে ছাড়াতে গিয়ে ইতিমধ্যেই দু-জায়গায় কামড় খেলো ডিগার।
বেড়ার ফাঁক দিয়ে এসব দেখলো রবিন। তাড়াতাড়ি খুলে দিলো চত্বর আর ড্রাইভওয়ের মাঝের গেট। খোলা দেখে চোখের পলকে ঝগড়া থামিয়ে দিলো কুকুরগুলো। দৌড় দিলো বেরিয়ে যাওয়ার জন্যে।
ডিগারের অবস্থা দেখার মতো। চেঁচাতে চেঁচাতে গলার রগ ফুলে গেছে, চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসবে যেন, দুহাত তুলে উন্মাদ নৃত্য শুরু করেছে। কে শোনে কার। কথা। প্রথমেই খোলা গেট দিয়ে বেরিয়ে গেল শেফার্ডটা।
একে একে চারটে কুকুর স্পীডওয়েতে বেরিয়ে চার দিকে ছড়িয়ে পড়লো। ওদের পেছনে ছুটলো ডিগার। শিস দিয়ে এবং আরও যতো রকমে কুকুরকে ডাকা। স, ডেকে ডেকে ফেরানোর চেষ্টা করলো।
রাস্তার মোড়ে বসে পড়েছে রবিন। বেদম হাসছে।
এই সময় স্পীডওয়ে ধরে আসতে দেখা গেল রুমমেটের ট্রাক।
ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষে দাঁড়ালো ট্রাকটা। লাফিয়ে নামলো রুমমেট। একটা কুকুরকে ধরার জন্যে ছুটলো। কয়েক পা গিয়েই থেমে গেল যেন দেয়ালে হোঁচট খেয়ে। রাস্তার মাথায় দেখা দিয়েছে দুটো পুলিশের গাড়ি।
দেখেই আরেক দিকে দৌড় দিলো ডিগার। বেড়ার পাশের কয়েকটা ঝোঁপের দিকে। রুমমেট ছুটলো তার উল্টোদিকে।
চেঁচামেচি শুনে অন্যান্য বাড়ির কয়েকজন লোক বেরিয়ে এসেছে।
গাড়ি থামিয়ে নামলো পুলিশ।
সবার চোখ এড়িয়ে সরে পড়লো দুই গোয়েন্দা। সন্তুষ্ট হয়েছে কিশোর। একটা কাজ অন্তত সমাধা করতে পেরেছে। বন্ধ করে দিয়েছে ডিগারের কুকুর চুরির ব্যবসা।
.
১৫.
মারমেড কোর্টের উত্তর ধারে রবিনকে রেখে, ক্যাম্পারের গ্যালারির দিকে এগোলো কিশোর। ঘুরে এসে দেখলো, কাফের বারান্দায় বসে রয়েছে মুসা।
সুতোর দোকানের ওপরে একটা দরজা খুলে গেল। ব্যালকনিতে বেরিয়ে এলেন মিস এমিনার। ডেকে বললেন, এই, তোমাদের সঙ্গে কথা আছে।
চট করে পরস্পরের মুখের দিকে তাকালো মুসা আর কিশোর।
সিঁড়ি বেয়ে উঠে এলো দুজনে। দরজায় অপেক্ষা করছেন মিস এমিনার। ডেকে নিয়ে এলেন ভেতরে।
বসার ঘরে বসে আছেন মিস্টার ডেজার। ব্রড ক্যাম্পারের জানালার দিকে চোখ।
ডিগারকে তো ফাঁসিয়ে দিয়েছো দেখলাম, মিস এমিনার বললেন হাসিমুখে। ক্যাম্পারকেই বা ছাড়বে কেন?
আবার চোখে চোখে তাকালো দুই গোয়েন্দা। ক্যাম্পারকে একেবারেই দেখতে পারেন না মহিলা।
ওকে আপনি দেখতে পারেন না, বলেই ফেললো মুসা।
ভালো লোক হলে তো পারবো? ডেজার বললেন।
জানালার বাইরে তাকালো কিশোর। গ্যালারিতেই রয়েছে ক্যাম্পার। কফির কাপ হাতে নিয়ে বেরিয়েছে রান্নাঘর থেকে।
পুরানো সরাইখানাটার পেছনের অংশে চোখ পড়লো কিশোরের। ডেজারকে জিজ্ঞেস করলো, ওটা সম্পর্কে তার কি ধারণা।