প্রথমে পুবে গেল জাগুয়ার। ব্লকখানেক এগিয়ে উত্তরে মোড় নিয়ে চললো সান্তা মনিকার দিকে।
সান্তা মনিকায় গিয়ে সৈকতের দিকে মুখ ঘোরালো জাগুয়ার। থামলো না। থামলো সান্তা মনিকা পিয়ারের সিকি মাইল দূরে। হ্যানসন থামলো না। জাগুয়ারের পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গিয়ে পরের পার্কিং এরিয়ায় ঢুকলো।
গাড়ি থেকে বেরোলো না গোয়েন্দারা। এখান থেকে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে জাগুয়ারটা। ক্যাম্পার বেরোলো।
হেঁটে চললো পিয়ারের দিকে।
হু, আনমনে বললো কিশোর, এখানকার পিয়ারের নিচেই তাহলে লুকিয়েছে ছেলেটা। পুলিশ ভেনিস পিয়ারে খুঁজেছে, সান্তা মনিকায় আসেনি। নিনার কাছে শুনেই ক্যাম্পার অনুমান করে নিয়েছে এখানে থাকতে পারে।
ভেনিস থেকে তো বেশ দূরে জায়গাটা, ক্যাম্পারকে পিয়ারের আড়ালে হারিয়ে যেতে দেখছে রবিন। দু-মাইল তো হবেই।
কিটুর মতো একটা ছেলের জন্যে কি এটা বেশি দূর?
ক্যাম্পার যদি দেখে ফেলে? মুসার গলায় উদ্বেগ। লোকটা সুবিধের না। কি করে বসবে…
থেমে গেল সে। পিয়ারের নিচ থেকে ছুটে বেরিয়ে এসেছে ক্যাম্পার। রোগা, লালমুখো, ছেঁড়া পোশাক পরা এক লোক তাড়া করেছে তাকে। হাতে একটা খালি মদের বোতল। বাড়ি মারার ভঙ্গিতে নাড়ছে ওটা।
অলিম্পিক জেতার বাজি রেখেছে যেন ক্যাম্পার। লোকটার আগেই চলে। এলো গাড়ির কাছে। এক ঝটকায় দরজা খুলে উঠে বসলো ড্রাইভিং সীটে। মুহূর্ত পরেই হাইওয়ের দিকে চলতে আরম্ভ করলো জাগুয়ার।
নীরবে হাসছে হ্যানসন। কিশোর তার দিকে তাকাতেই বললো, প্রায়ই কানে আসে সান্তা মনিকা পিয়ারের নিচে বিশেষ ভদ্রলোকদের আড্ডা। আজ বুঝলাম ঠিকই শুনেছি। ক্যাম্পার সাহেবের বোধহয় খবরটা জানা ছিলো না।
হ্যানসনের কথা শেষ হওয়ার আগেই গাড়ি থেকে নেমে পড়েছে মুসা। এগোলো লোকটার দিকে। মাতালের মতো দুলছে লালমুখে, নিজে নিজেই কথা বলছে।
তার কাছে গিয়ে মুসা খুব বিনয় করে বললো, শুনছেন?
জ্বলন্ত চোখে মুসার দিকে তাকালো লোকটা।
ছোট্ট একটা ছেলেকে খুঁজছি আমরা, আবার বললো মুসা। হাত দিয়ে উচ্চতা দেখিয়ে বললো, এই এত্তোটুকু হবে লম্বা। দুদিন ধরে নিখোঁজ।
না, দেখিনি। বাচ্চাদের ঢুকতে দিই না এখানে। দেখলেই ভাগিয়ে দিই।
আর কিছু বলে লাভ হবে না বুঝে ফিরে এলো মুসা। নাহ, কাজ হলো না।
একেবারেই হয়নি, তা নয়, কিশোর বললো, একটা ব্যাপারে শিওর হয়ে গেছি। ক্যাম্পারও জানে না কিটু কোথায় আছে। এবং সে-ই ছেলেটাকে খুঁজে বের করতে চায় সবার আগে। অবাক লাগছে না? তার এতো মাথাব্যথা কিসের? একটু থেমে বললো, বুঝতে পারছি, কিটুকে খুঁজে বের করতে হলে আগে ব্রড ক্যাম্পার রহস্যের সমাধান করতে হবে।
.
১৪.
পরদিন সকালে আবার ভেনিসে গেল তিন গোয়েন্দা। নিনাকে পাওয়া গেল না। বুকশপের সামনে অস্থির ভাবে পায়চারি করছেন তার বাবা।
বাড়িতে গিয়ে শুয়ে থাকতে বলেছি, বোরম্যান বললেন। না খেয়ে না ঘুমিয়ে একেবারে কাহিল হয়ে গেছে। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি। তিনটে দিন হয়ে গেল, এখনও এলো না! কি যে হলো ছেলেটার!
কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করলো কিশোর। মিস্টার বোরম্যান, কুকুরটার পোস্ট মর্টেম করার কথা ছিলো। কিছু বোঝা গেছে?
নাহ, গাড়ি চাপা পড়েছে বলে মনে হয় না। মাথায় আর ঘাড়ে খুব সামান্য আঘাত। ডাক্তারদের ধারণা, হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে। বুড়ো হয়ে গিয়েছিলো, শক পেয়েছিলো হয়তো, সইতে পারেনি।
দোকানে ঢুকে গেলেন বোরম্যান। ছেলেরা চললো তাদের কাজে।
একটা পরিকল্পনা করে তৈরি হয়ে এসেছে ওরা আজ। সঙ্গে করে ওয়াকি-টকি এনেছে। রবিন আর মুসাকে একটা করে দিয়ে তৃতীয়টা নিজে রাখলো কিশোর। ডিগারের বাড়ির কাছে ঝোঁপের ভেতর গিয়ে নজর রাখার জন্যে লুকিয়ে বসলো রবিন।
কাফের বারান্দায় একটা টেবিলের কাছে বসলো মুসা আর কিশোর। ব্রড ক্যাম্পারের বাড়ির ওপর চোখ রাখবে ওরা। একটু পরেই সরে গেল জানালার পর্দা। উঁকি দিলো ক্যাম্পার। কিশোর আর মুসার ওপর চোখ পড়তে দ্বিধা করলো একবার, তারপর হাত নাড়লো।
হাত নেড়ে জবাব দিলো দুই গোয়েন্দা।
এখানে বসে সুবিধে করতে পারবো না, মুসা বললো। দেখে ফেলেছে।
তবু এখানেই বসতে হবে। আগেও বসেছি, কাজেই সন্দেহ করবে না।
কাফে থেকে বেরিয়ে এলো লিসটার। জিজ্ঞেস করলো, কি লাগবে?
ঠিক এই সময় ওয়াকি-টকিতে ভেসে এলো রবিনের কণ্ঠ, কিশোর, এইমাত্র বেরিয়ে গেল ডিগার। তার রুমমেট গেছে দশ মিনিট আগে। বাড়িতে কেউ নেই এখন।
শুনলো লিসটার। ভুরু কোঁচকালো। কিন্তু কিছু বললো না।
মুসাকে বললো কিশোর, তুমি এখানে থাকো। খিদে পেলে খাও। আমি আসছি। গ
লিসটার কিংবা মুসাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উঠে দাঁড়ালো সে। চলে এলো মারমেড কোর্টের পেছনে, রবিন যেখানে বসে আছে।
হেঁটে গেছে ডিগার, রবিন জানালো। একবার ভাবলাম পিছু নিই, ভাবলাম দেখিই না, এখানেও কিছু ঘটতে পারে।
ভালো করেছে। বসে থাকো, আমি যাচ্ছি।
দরজায় তালা আটকে দিয়েছে ডিগার।
ঢোকার নিশ্চয় আরও পথ আছে।
ঠিকই আন্দাজ করেছে কিশোর। বাড়ির পুবধারে একটা জানালা খোলা পাওয়া গেল। আস্তে করে চৌকাঠে উঠে বসে ভেতরে লাফিয়ে নামলো সে।
ঘরটা বোধহয় একসময় ডাইনিং রুম হিসেবে ব্যবহার হতো। ছাত থেকে ঝুলছে অনেক পুরানো একটা ঝাড়বাতি। একধারের দেয়ালে একটা সাইডর্বোড় তৈরি করা হয়েছে, রুপালি রঙ করা। কাঠের মেঝেতে এক জায়গায় পড়ে রয়েছে। কতগুলো ছেঁড়া ম্যাগাজিন। আর কিছু নেই, একটা চেয়ারও না।