শিস দিতে দিতে খোশমেজাজে এগিয়ে এলো একজন লাইফগার্ড। চিত হয়ে থাকা মুসর ওপর কিশোর আর হ্যানসনকে উপুড় হয়ে থাকতে দেখে থমকে দাঁড়ালো। জিজ্ঞেস করলো, কি ব্যাপার?
উঠে বসলো মুসা। হাঙর!
তাই নাকি? ঠিক আছে, রিপোর্ট করবো। খবরদার, আর নামবে না।
পাগল! আরও নামি!
মুসাকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করলো কিশোর। এখনও জলকন্যার মাথা ধরে রেখেছে গোয়েন্দা সহকারী। সেটা কিশোরের হাতে দিয়ে গাড়ির কাছে এসে দাঁড়ালো পোশাক বদলানোর জন্যে। কাপড় বদলে ফিরে এসে দেখলো পিয়ারের একটা গাছের গুঁড়ির ওপর বসে রয়েছে কিশোর। মূর্তির মাথাটা দেখছে। এটাই তাহলে পানিতে ফেলেছিলো ক্যাম্পার?
তাই তো মনে হয়, মুসা বললে। বাকি টুকরোগুলোও আছে।
কেন করলো একাজ?
আল্লাহই জানে! হাত ওল্টালো মুসা। মিছে কথা বলার ওস্তাদ লোকটা। কিন্তু একটা কথা বুঝতে পারছি না, ফেললোই যখন, পানিতে কেন? রাবিশ বিন কি করেছিলো?
নিশ্চয় তার ভয়, কেউ দেখে ফেলবে।
কি হতে দেখলে? কার এতো ঠেকা পড়েছে একটা ভাঙা মূর্তি নিয়ে মাথা। ঘামানোর?
পাশে দাঁড়িয়ে কথা শুনছিলো হ্যানসন। কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে বললো, মিস্টার ক্যাম্পারকে কয়েকবার এখানে ওখানে নিয়ে গেছি গাড়ি চালিয়ে। হলিউডের অনেক পাটিটাটিতে যায়। অদ্ভুত আচরণ করে তখন। সিনেমার ডায়লগ নকল করে কথা বলে। বিখ্যাত অভিনেতাদের ভাবভঙ্গি নকল করে। আস্ত একটা ভীড়। পানিতে মূর্তি ছুঁড়ে ফেলাটাও তেমন একটা অভিনয়ের নকল কিনা কে জানে।
লোকটার স্বভাব-চরিত্র আসলেই যেন কেমন! মুসা বললো। কেমন মেকি মেকি!
ঠিক বলেছেন!
কিশোর, বলতে গিয়ে থেমে গেল মুসা। ওশন ফ্রন্টের দিকে তাকিয়ে আছে কিশোর। মুসাও তাকালো। দেখলো, ছুটে আসছে রবিন।
কাছে এসে ধপ করে কিশোরের পাশে বসে পড়লো সে। যা জেনে এসেছে, কলার জন্যে আর তর সইছে না। বললো, ডিগার, তার রুমমেট আর ক্যাম্পারের মধ্যে একটা যোগাযোগ রয়েছে।
ইভলিন স্ট্রীটে কি ঘটেছে, খুলে বললো সব রবিন। সব শেষে আবার বললো, আমি শিওর, ও ব্রড ক্যাম্পারই।
খাইছে! মুসা বললো, ছদ্মবেশ নিয়েছে ব্যাটা!
স্তব্ধ হয়ে গেছে কিশোর। আরও কয়েক সেকেণ্ড চুপ করে থেকে বললো, তুমি বলছো নির্জন বাড়িতে ঢুকে ছদ্মবেশ নিয়ে নীল বুইক চালিয়ে চলে গেছে? গোপন কোনো উদ্দেশ্যে? কাল একই রূপ ধরে গিয়েছিলো স্লেভ মার্কেটে?
আমি শিওর।
হুম! ওই বুইকটার মালিককে বের করা দরকার।
নম্বর নিয়েছি আমি, নোটবুক বের করলো রবিন।
সেটা নিতে নিতে কিশোর বললো, নির্জন বাড়ি, না?
হ্যাঁ
ক্যাপ্টেন ফ্লেচারকে বলতে হবে। গাড়িটা কার বের করে দেবেন।
ফোন করবে?
না। নিজে যাবো।
লাঞ্চ সেরে কিশোর আর হ্যানসন রওনা হয়ে গেল। রবিন আবার ফিরে গেল। মারমেড কোটে। গ্যালারিতে ক্যাম্পার ফিরেছে কিনা দেখতে। মুসা গেল ডিগারের ওপর চোখ রাখতে। তার বাড়ির কাছে গিয়ে পথের পাশের একটা ঝোপে লুকিয়ে বসে রইল।
কোস্ট হাইওয়ে ধরে উত্তরে চলেছে রোলস রয়েস। আধ ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে গেল রকি বীচ পুলিশ স্টেশনে। জরুরী কাজে ব্যস্ত ইয়ান ফ্লেচার। কিশোরকে দেখে মুখ তুললেন। আরে কিশোর? কি ব্যাপার?
একটা বুইক সেডানের মালিক কে জানতে চাই। নম্বর নিয়ে এসেছি। ভেনিস বীচের একটা গ্যারেজে রাখা হয় ওটা।
ভেনিস বীচ? চোখ সরু হয়ে এলো ফ্লেচারের। ওই বাচ্চা ছেলেটা…কি যেন নাম…হারিয়ে গেছে। তার কেসে জড়াওনি তো?
হ্যাঁ, স্যার, ওই কেসই। ছেলেটার নাম কিটু। তার মায়ের অনুরোধেই তদন্ত করছি।
কেন, লস অ্যাঞ্জেলেসের পুলিশকে বিশ্বাস করতে পারছে না তার মা?
না স্যরি, তা নয়। নিনা হারকার মনে করছে, আমরা অন্য ভাবে সাহায্য করতে পারবো…
বাধা দিয়ে বললেন চীফ, দেখো, কিশোর, খুব সাবধান। একটা ছেলের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে, ভুল যাতে না হয়। তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
জানি, স্যার। নিজে নিজে কিছুই করতে যাবো না। তেমন বুঝলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে খবর দেবো, কথা দিচ্ছি।
কিশোরের কাছ থেকে গাড়ির নম্বরটা নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে গেলেন চীফ। কয়েক মিনিট পরেই ফিরে এলেন। হাতে এক টুকরো কাগজ। ব্রড ক্যাম্পার নামে এক লোকের নামে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন। ঠিকানা, ফোর এইটি এইট, ওশন ফ্রন্ট, ভেনিস।
হুমম! মাথা দোলালো কিশোর।
এরকমই কিছু আশা করেছিলে, তাই না?
আবার মাথা ঝাঁকালো কিশোর।
বেশ, এবার ক্যাম্পারের সম্পর্কে সব বলো তো।
এখনও সময় হয়নি, স্যার।
দীর্ঘ একটা মুহূর্ত কিশোরের চোখে চোখে তাকিয়ে রইলেন চীফ। হাসলেন। ঠিক আছে, চাপাচাপি করবো না। তবে মনে রেখো, কোনো রকম ঝুঁকি নেবে না। কিছু দেখলেই পুলিশকে খবর দেবে।
দেবো, স্যার।
আবার ভেনিসে ফিরে এলো ওরা। মারমেড কোর্টের পেছনে কিশোরকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল হ্যানসন। বলে গেল ঘণ্টাখানেক পর ফিরবে। কাফের বারান্দায় বসে থাকতে দেখা গেল রবিনকে। হাতে একটা খালি গেলাস। কোকা কোলা খেয়েছে।
আধ ঘন্টা আগে গ্যালারি খুলেছে ক্যাম্পার, জানালো সে।
ইভলিন স্ট্রীটে ওর গাড়িটাই দেখেছিলে, বললো কিশোর।
আমারও তাই মনে হয়েছিলো। নিনা হারকারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, বললো, একটা জাগুয়ার চালায় ক্যাম্পার। তার বাড়ির পেছনের গ্যারেজে রাখে গাড়িটা। আরেকটা গাড়ি আর ছদ্মবেশ নেয়ার তার দরকার হলো কেন?