ওশন ফ্রন্টে এসে হাজির হয়েছে ডিগারের রুমমেট। সৈকতের পিজা স্ট্যাণ্ডের। কাউন্টারে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েছে। পিজা আর সফট ড্রিংক দিয়ে নাস্তা করছে।
আশ্চর্য! অবাক হয়ে বললো হ্যানসন। এই সময়ে পিজা!
আরেক দিক থেকে ঠেলা ঠেলতে ঠেলতে এসে উদয় হলো বরগু। পেছনে আসছে নিতান্ত বাধ্য ছেলের মতো কুকুর দুটো। পিজা স্ট্যাণ্ডের কাছে এসে? কাউন্টারের ওপাশে দাঁড়ানো সেলসম্যানকে ইশারা করলো সে।
পিজা শেষ করে কাউন্টারের কাছ থেকে সরে এলো রুমমেট। স্পীডওয়ের দিকে চললো।
এই, মূসার ওপর চোখ রাখার দরকার নেই, রবিন বললো। আমি যাচ্ছি ওর পিছে। দেখি কোথায় যায়?
সাগরের দিকে তাকালো আবার কিশোর। ডুব দিচ্ছে মুসা। মুহূর্তে তলিয়ে গেল মাথাটা।
ঠিক আছে, রবিনকে বললো গোয়েন্দাপ্রধান, যাও। হুশিয়ার থাকবে। ওরা কতোটা খারাপ লোক জানি না এখনও। সাবধান!
থাকবো। এগিয়ে গেল রবিন। পিজা স্ট্যাণ্ডের পাশ কাটাচ্ছে সে, এই সময় বেরিয়ে এলো বরগু। হাতে একটা কাগজের ঠোঙা। ঠেলা গাড়িতে ঠোঙাটা রেখে। গাড়ি ঠেলে নিয়ে এগোলো আবার যেদিক থেকে এসেছিলো সেদিকে।
রবিনের সাহায্য লাগবে? কিশোরকে জিজ্ঞেস করলো হ্যানসন। যাবো নাকি ওর পেছনে?
হাসলো কিশোর। গোয়েন্দাগিরি করে হ্যানসনও আনন্দ পায়, সেজন্যেই যেতে চাইছে। বললো, লাগবে না।
হতাশ মনে হলো শোফারকে। মারমেড কোর্টের ওধারে হারিয়ে গেল রবিন। মুসার দিকে নজর ফেরালে কিশোর আর হ্যানসন। পানির ওপরে দেখা যাচ্ছে একসারি বুদবুদ, মুসা কোন দিকে চলছে বুঝিয়ে দিচ্ছে।
.
ধীরে ধীরে সাঁতরে চলছে মুসা, তলদেশের সামান্য ওপর দিয়ে। পানি তেমন পরিষ্কার না। ঘোলা। ক্যাম্পারের ছুঁড়ে দেয়া প্যাকেটটা এই পানিতে খুঁজে বের করতে পারবে কিনা সন্দেহ হলো তার। তাছাড়া পরিত্যক্ত জিনিসের অভাব নেই। এখানে। বোতল, ক্যানেস্তারা, আরও হাজারো রকম জিনিসে বোঝাই হয়ে আছে সাগরের তলদেশ। একটা চটের পোটলা দেখে সেটা ধরে টান দিলো সে। বেরিয়ে। পড়লো বাতিল একটা ডুবুরির পোশাক। সেটা ছেড়ে আবার আগে বাড়লো সে।
পিয়ার বায়ে রেখে এগোচ্ছে মুসা।
হঠাৎ একটা নড়াচড়া টের পেয়ে মাথা ঘোরালো। ডানে নড়ছে কিছু। তলদেশ ধরে যেন ঠেলে এগিয়ে এলো কিছুদূর ওটা, তারপর ওপরে উঠলো। —
হাঙর।
বিশাল হাঙরের হাঁ করা মুখে তীক্ষ্ণ দাঁতের সারি দেখতে পেলো মুসা। অলস ভঙ্গিতে সঁতরাচ্ছে, কোনো তাড়া নেই। থেমে গেছে মুসা। নিঃশ্বাস বন্ধ করে। ফেলেছে। একেবারে স্থির হয়ে ভাসছে। হাঙর সম্পর্কে নানারকম তথ্য ভিড় করে। আসছে মনে।–
কোনো কোনো হাঙর মানুষ দেখলেই আক্রমণ করে। তবে বেশির ভাগই করে। এটা কি করবে? অনেক সময় জোর শব্দ কিংবা চিৎকার শুনলে ঘাবড়ে গিয়ে। সরে যায় হাঙর।
জোর শব্দ? এমন শব্দ বলতে একমাত্র মুসার হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকানি। দশ ফুট পানির তলায় কি করে জোরালো আওয়াজ করবে? চিৎকার করতে পারবে না। পানির ওপরে যেমন হাত নেড়ে দাপাদাপি করে শব্দ করা যায়, নিচে সেটাও পারা যায় না।
একটা পাথরের দিকে আস্তে হাত বাড়ালো মুসা। তুলে নিলো। আরেকটা লাগবে। দুটো ঠোকাঠুকি করলে শব্দ হবে, কিন্তু তাতে কি পালাবে হাঙর?
আওয়াজ না করলে কিছু বোঝা যাবে না। কে জানে, ওই আওয়াজে না পালিয়ে রং রেগে গিয়ে এসে আক্রমণ করে বসবে!
কিন্তু চেষ্টা তো করে দেখতে হবে। আবার হাত বাড়ালো মুসা। হাতে। লাগলো গোল, শক্ত একটা জিনিস।
দুঃস্বপ্ন দেখছে যেন মুসা।
হঠাৎ আতঙ্কের ঠাণ্ডা শিহরণ বয়ে গেল তার শিরদাঁড়া বেয়ে।
এগিয়ে আসছে হাঙরটা!
১১.
ডিগারের রুমমেটকে অনুসরণ করে চলছে রবিন।
পুরানো বাড়ির সিঁড়িতে লোকটা পা রাখতেই পেছনের বেড়ার ভেতর থেকে কুকুরের চিত্তার শোনা গেল। পার্কিং লটে একটা গাড়ির গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে কি ঘটে দেখতে লাগলো রবিন।
পেছনে দরজা খোলার শব্দ হলো। ফিরে তাকালো সে।
গ্যালারির পেছনের দরজা খুলে বেরিয়ে এসেছে ব্রড ক্যাম্পার। পরনে একটা হালকা নীল রঙের স্ন্যাকস। গায়ে একই রঙের শার্ট। নেমে আসছে সিঁড়ি বেয়ে।
লোকটার অলক্ষ্যে থেকে তার ওপর নজর রাখলো রবিন।
স্পীডওয়ে পেরিয়ে ওশন ফ্রন্টের দিকে চললো ক্যাম্পার।
ডিগারের বাড়িতে কিছু ঘটছে না। বোধহয় ঘটবেও না, ভেবে, ক্যাম্পারের পিছু নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলো রবিন। লোকটা বেশ কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর আড়াল থেকে বেরোলো সে। পিছু নিলো।
বেশ কিছুটা আগে রয়েছে ক্যাম্পার। উত্তরে চলেছে দ্রুত পায়ে। মারমেড কোর্টের পরে আরও পাঁচ ব্লক এগোলো, তারপর ঢুকে পড়লো একটা গলিতে।
পিছে লেগে রইলো রবিন। গলিটার নাম ইভলিন স্ট্রীট। পথের পাশে পুরানো বাড়িঘর। কোথাও কোথাও গাড়ি আছে। পুরানো মডেলের পুরানো গাড়ি। বারান্দায় খেলছে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা। পথে আর বাড়িঘরের ফাঁকে যত্রতত্র। ঘুরে বেড়াচ্ছে কুকুর।
পুরানো একটা অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকলো ক্যাম্পার।
রবিন ভাবছে, এখানে কেন এসেছে লোকটা? এরকম জায়গায় তার বন্ধু-বান্ধব আছে?
বাড়িটার সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেল। নিচু হয়ে জুতোর ফিতে বাধার ভান করলো। চোখের কোণ দিয়ে দেখছে বাড়ির ভেতরে কি আছে। খোলা দরজা দিয়ে একটা ছোট চত্বর চোখে পড়লো। কোনো মানুষ দেখা গেল না।