গত বসন্তে হলিউডের সানডাউন থিয়েটারে পুরানো কিছু ব্যারি ব্রীম ছবি দেখিয়েছিলো, কিশোর বললো। ব্রীমের কথা মনে আছে? হেনরী হকিনস সিরিজে গোয়েন্দার অভিনয় করেছিলো।
মুখ বাঁকালো মুসা। কি যে বলো। তখন তো জন্মই হয়নি আমাদের, দেখবো কি করে?
জন্মের আগের ছবি জন্মের পরে দেখতে অসুবিধে হয় না। যাকগে, ব্রীমের কিছু ছবিকে এখন ক্লাসিক হিসেবে ধরা হয়। চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয় ওই ছবি। একটা ছবির কাহিনী ছিলো একটা ছেলেকে নিয়ে, যে দশ লাখ ডলারের মালিক। হয়েছিলো উত্তরাধিকার সূত্রে। তার পর পরই একটা ডোবায় তার লাশ ভাসতে দেখা যায়। এরপর একের পর এক খুন হতে থাকে মানুষ। উত্তরাধিকার সূত্রে ওই টাকা যার হাতেই যায় সে-ই খুন হয়ে যায়।
ডোবায় ভাসছিলো? ভুরু কোঁচকালো মুসা।
ব্রড ক্যাম্পারের ভাইয়ের মতো! বললো রবিন।
কিংবা তার বন্ধুর মতো, কিশোর বললো। কোনটা সত্যি সে-ই জানে। বই ঘাটছি সে জন্যেই। ব্রীমের ছবির কোনো স্টিল মেলে কিনা দেখছি।
শেলফ থেকে পুরানো একটা বই নামিয়ে আনলো কিশোর। ডেস্কের ওপর রেখে পাতা ওল্টাতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর থেমে গিয়ে প্রায় চেঁচিয়ে উঠলো, এই তো, পেয়েছি!
ছবিটার নাম স্ক্রীম ইন দা ডার্ক। একটা রহস্য কাহিনী নিয়ে করা। বইয়ের। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ডোবায় ভাসছে একটা বাচ্চা ছেলের লাশ। পাড়ে দাঁড়িয়ে গলা বাড়িয়ে সেটা দেখছে একজন আর্দালী।
দেখার জন্যে কিশোরের কাঁধের ওপর দিয়ে ঝুঁকে এলো মুসা আর রবিন।
আরেকটা ছবিতে দেখা গেল, ডোবার পাড়ে এসে ভিড় করেছে অনেক লোক। পানির একেবারে ধারে বসে লাশটাকে ধরার জন্যে হাত বাড়িয়েছে আৰ্দালী। ধরতে তাকে বাধা দিচ্ছে ডিটেকটিভ হেনরী হকিনস, অর্থাৎ ব্যারি ব্রীম। তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে দুজন পুলিশ। একজনের বয়েস খুবই কম-কিশোরই বলা চলে। মাথার টুপিটা খুলে হাতে নিয়েছে সে। বেশ সুন্দর চেহারা।
খাইছে! এ তো ব্রড ক্যাম্পার!
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকালো কিশোর। আমার মনে হচ্ছিলো, এই ছবিতেই ক্যাম্পারকে দেখেছি। তাই বই বের করলাম, শিওর হওয়ার জন্যে।
লোকটা মিথ্যুক! বিরক্তিতে কুঁচকে গেল ররিনের নাক। না ছিলো ছোট ভাই। তার, না ছিলো বন্ধু। গল্পটা বলেছে ও, কারণ-কারণ… বলতে না পেরে থেমে গেল সে।
রহস্যটা এখানেই, আনমনে বললো কিশোর। এরকম গল্প কেন বলতে গেল। ক্যাম্পার? তার নিজের জীবনে সত্যি সত্যি ঘটেনি তো ও রকম কিছু?
আল্লাহই জানে, হাত ওল্টালো মুসা। কিন্তু বেশি কাকতালীয় হয়ে যাবে না?
তা হবে। যদি মিথ্যেই বলে, তাহলে পুরানো একটা ছবির গল্প চুরি করে বলতে যাবে কেন?
রহস্যই! মাথা দোলালো রবিন। একটা কারণ হতে পারে। ছবির ওই দৃশ্যটা বোধহয় তার খুব মনে ধরেছিলো। কিটুর ওপর সেটা চালিয়ে দিয়ে এক ধরনের আনন্দ পাচ্ছে। ওরকম স্বভাবের লোক আছে।
কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিশোর, এই সময় টেলিফোন বাজলো। রিসিভার তুলে নিলো কিশোর, বলুন?
কিশোর পাশা?
মিস এমিনার! প্রায় চিৎকার করে বললো কিশোর। অবাক হয়েছে। তাড়াতাড়ি ফোনের লাইনের সঙ্গে লাগানো স্পীকারের সুইচ অন করে দিলো। যাতে রবিন আর মুসাও শুনতে পারে।
নিনার কাছে তোমাদের ফোন নম্বর পেয়েছি। ইন্টারেসটিং নিউজ আছে। পুলিশকে বলতে পারতাম, কিন্তু ওরা গুরুত্ব দেবে বলে মনে হয় না। তাই তোমাদেরকেই ধরলাম।
কি হয়েছে?
ওশন ফ্রন্টে হাঁটতে গিয়েছিলাম। ব্রড ক্যাম্পারকে দেখলাম গ্যালারি থেকে বেরিয়ে আসছে, হাতে একটা কাগজের লম্বা প্যাকেট।
বলুন বলুন!
তার আচরণ ভালো লাগেনি আমার। উসখুস করছিলো, আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলো। দেখেও না দেখার ভান করলাম। মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে রইলাম সাগরের দিকে।
তারপর?
ভেনিস পিয়ারের দিকে চলে গেল সে। পিছু নিলাম।
তারপর?
কিছুদূর এগিয়ে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল সে। এমন ভান করলো, যেন সূর্যাস্ত দেখছে। তারপর আরেকটু এগিয়ে পিয়ারের আড়ালে চলে গেল। আবার যখন বেরিয়ে এলো, দেখি হাতের প্যাকেটটা নেই।
কি ধরনের প্যাকেট? কতো ভারি হবে? কি রকম…
কিটুর লাশ ছিলো ভাবছো তো? না, তা নয়। বেশি বড় না, ভেতরে অন্য কিছু ছিলো।
কি ছিলো?
সেটা জানতে হবে তোমাদের।
নিনাকে কিছু বলেছেন?
মাথা খারাপ! বয়েস হয়েছে বটে, কিন্তু চিন্তা-ভাবনা এখনও ভালোই করতে পারি।
আপনি কিছু আন্দাজ করতে পারেন, কি ছিলো ভেতরে?
নাহ!… ঠিক আছে, রাখলাম।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, মিস এমিনার।
লাইন কেটে গেল।
যাক, খুশি হয়ে বললো মুসা, স্কুবা ডাইভিঙের একটা সুযোগ বোধহয় মিললো। বস্তাটা নিশ্চয় পানিতে ফেলেছে ব্যাটা।
.
১০.
পরদিন সকালে সৈকতে পৌঁছলো তিন গোয়েন্দা। রোলস রয়েসে করে ওদেরকে নিয়ে এসেছে হ্যানসন। ধূসর, কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল। লোকজন বেশি নেই ওশন ফ্রন্টে।
পরে ভিড় হবে, হ্যানসনকে বললো কিশোর। এখন অল্প আছে। সুবিধেই হয়েছে আমাদের।
পিয়ারের পার্কিং লটে গাড়ি ঢোকালো হ্যানসন। পেছনের সীটে হেলান দিয়ে আছে মুসা। গাড়ি থামতেই ডুবুরির পোশাক পরতে আরম্ভ করলো। বেরোলো গাড়ি থেকে। তার পিঠে এয়ার ট্যাংক বাঁধতে সাহায্য করলো রবিন আর কিশোর। পরে মুখে মাউথপীস লাগিয়ে পানিতে নেমে গেল মুসা।
ও কয়েক ফুট যেতে না যেতেই কনুই দিয়ে কিশোরের গায়ে গুতো দিলো রবিন। হাত তুলে দেখালো।