একটু পর পরই এসে মোড়ের কাছে গাড়ি থামছে। জটলার মধ্যে থেকে কিছু লোক যাচ্ছে বসা লোকের সঙ্গে কথা বলতে। কোনো কিছু নিয়ে মনে হয় দর কষাকষি করছে। কথায় বলে উঠে বসছে গাড়িতে, না বলে সরে আসছে।
একজন লোক এসে রবিনের পাশে বসলো। ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে আপনমনেই মাথা নাড়লো। তারপর তাকালো রবিনের দিকে, এই ছেলে, কি চাই তোমার এখানে? কাজ?
বুঝতে না পেরে তাকিয়ে রইলো রবিন। আমি এই হাঁটতে হাঁটতে…ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। একটু জিরিয়ে নিচ্ছি। আপনি কি কাজ খুঁজতে এসেছেন?
মাথা ঝাঁকালো লোকটা। আমরা সবাই সে জন্যেই এসেছি। এটা স্লেভ মার্কেট। নাম শোনোনি?
না। সাংঘাতিক কাণ্ড! দাস ব্যবসা কি এখনও হয় নাকি?
হাসলো লোকটা। আরে না না, ওরকম কিছু না। শ্রমিকরা আসে এখানে। কাজের জন্যে। দাঁড়িয়ে থাকে। যাদের কাজ করানো দরকার, তারাও আসে, দামদর করে লোক নিয়ে যায়। হয়তো দেয়াল ধোয়ানোর দরকার পড়লো তোমার, বাগানের ঘাস সাফ করানো দরকার পড়লো, চলে আসবে স্লেভ মার্কেট। লোক পেয়ে যাবে।
ডেনিম শার্ট আর রঙচটা জিনস পরা মোটা একজন লোক জটলা থেকে বেরিয়ে হেঁটে গেল ট্রাকটার কাছে। সামনের দরজা খুলে এক প্যাকেট সিগারেট বের করলো। ভেতর থেকে। তারপর আবার গিয়ে দাঁড়ালো জটলায়। রবিন আন্দাজ করলো, এই লোকটাই ডিগারের রুমমেট।
মোড়ের কাছে এসে থামলো একটা নীল বুইক। বেরিয়ে এলো একজন লোক। বেশ ভালো স্বাস্থ্য, ধূসর পুরু গোঁফ। পরনে হালকা রঙের স্ন্যাকস, গায়ে গাঢ় রঙের শার্ট। মাথায় নাবিকের টুপি। চোখে কালো চশমা।
দেখলে? রবিনকে বললো তার পাশে বসা লোকটা। এখানে প্রায়ই আসে ও। এমন শ্রমিক ভাড়া করে নিয়ে যায়, যার ট্রাক আছে।
ডিগারের রুমমেটের কাছে এগিয়ে গেল টুপিওয়ালা। কথা বলতে লাগলো– দুজনে। অবশেষে মাথা ঝাঁকালো রুমমেট। নিজের ট্রাকে গিয়ে উঠলো। নীল গাড়ির পেছনে পেছনে চালিয়ে চলে গেল।
নিয়ে গেল, বললো রবিনের সঙ্গী।
আনমনে মাথা ঝাঁকালো রবিন। খুব হতাশ হয়েছে। ভেবেছিলো এখানে এসে কোনো জরুরী সূত্র পেয়ে যাবে। ওসব কিছুই পায়নি, শুধু জানলো স্লেভ মার্কেটে শ্রম বেচাকেনা হয়। আর বসে থেকে লাভ নেই। দেয়াল থেকে নেমে রাস্তা ধরে এগোলো। সৈকত থেকে কয়েক মাইল দূরে এই জায়গা, মোড়ের একটা সাইন বোর্ড দেখে বুঝলো। জায়গাটার নাম ল্যাব্রিয়া।
.
০৯.
কোথায় ছিলে এতোক্ষণ? মুসা জিজ্ঞেস করলো।
মারমেড কোর্টে উদ্বিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করছে সে আর কিশোর।
সব খুলে বললো রবিন।
হু, কিশোর বললো, স্লেভ মার্কেটের কথা আমিও শুনেছি। আমাদের কেসের সাথে বোধহয় সম্পর্ক নেই এর। একটা ব্যাপার বোঝা গেল, ডিগারের ঘরে আরও লোক থাকে। কিটুর হারানোর পেছনে ওদের কোনো হাত না থাকলেও হয়তো। ডিগারের আছে।
আচ্ছা, মুসা বললো, ওই পুরানো বাড়িটাতে আটকে রাখেনি তো কিটুকে?
মাথা নাড়লো রবিন। মনে হয় না। পুলিশকে ভীষণ ভয় পায় ডিগারের রুমমেটরা। কিটুকে ওখানে নিয়ে গেলে বহু আগেই পালাতো ওরা। নাহ্, কিটু নেই ওখানে। তবে আমার মনে হচ্ছে কুকুরগুলো সাধারণ কুকুর নয়।
হতেও পারে, কিশোর বললো। সেইন্ট বানার্ডটা চুরি করতে গিয়ে কি রকম হেনস্তা হয়েছে ডিগার, রবিনকে বললো সে। আবার হাসতে আরম্ভ করেছে।
হাসলো মুসাও। বললো, লোকটার অবস্থা যদি তখন দেখতে!
হাসি মুছতে পারছে না কিশোরও। বললো, যথেষ্ট হয়েছে, চলো বাড়ি যাই। হেডকোয়ার্টারে কাজ আছে।
বুকশপের সামনে থেকে পার্ক করা সাইকেলের তালা খুলছে ওরা, এই সময় সৈকতের দিক থেকে এলো ব্রড ক্যাম্পার। তিন গোয়েন্দাকে দেখেই ভারিক্কি করে তুললো চেহারা। জিজ্ঞেস করলো, খবর আছে?
না, এখনও কিছু পাইনি, জবাব দিলো কিশোর।
দরজায় এসে দাঁড়ালো নিনা হারকার।
সহানুভূতি দেখিয়ে তাকে বললো ক্যাম্পার, এতো ভয় পেও না। ছেলেটা দুষ্টুমি বেশি করে তো, হয়তো তোমাকে ভয় দেখানোর জন্যেই এখন কোথাও গিয়ে লুকিয়েছে। নির্জন দ্বীপে বন্দি লং জন সিলভার। বইটা পড়েছে নিশ্চয়?
না, পড়িনি, মাথা নাড়লো নিনা।
তাই? তাহলে হয়তো পু সেজেছে, চলে গেছে উত্তর মেরুতে। কিংবা বাক রোজার সেজে উড়ে গেছে অন্য কোনো গ্রহে। যা উল্টোপাল্টা কল্পনা না তোমার ছেলের। অবশ্য যদি কোথাও চিত হয়ে… চুপ হয়ে গেল ক্যাম্পার।
বুঝে ফেলেছে ছেলেরা। ও বলতে চেয়েছে কোথাও চিত হয়ে যদি পানিতে না ভাসে।
রক্ত সরে গেল নিনার মুখ থেকে। তাকিয়ে রয়েছে ক্যাম্পারের দিকে।
ওহহো, তাড়াতাড়ি বললো ক্যাম্পার, দেখো, কি বলতে কি বলে ফেললাম। কখন যে মুখ ফসকে যায়। আসলে..আসলে..ছোটবেলায় দেখেছি তো ভুলতে পারি না। আমার ছোট ভাইটা খেলতে খেলকে গিয়ে…এরপর থেকে বাচ্চা ছেলে হারালেই আমার ওই এক ভয়। কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোমাকে, কিছু মনে করো না।
চুপ করে রইলো নিনা। দুচোখ থেকে গাল বেয়ে নেমে আসছে পানি।
আর কিছু বললো না ক্যাম্পার। গ্যালারির দিকে রওনা হলো।
.
সেদিন বিকেলে হেডকোয়ার্টারে মিলিত হলো তিন গোয়েন্দা।
রবিন আর মুসা ঢুকে দেখলো, ট্রেলারের বুক শেলফ বই ঘটছে কিশোর ওদেরকে দেখে মুখ ফেরালো।
রেফারেন্স বই খুঁজছি পুরানো সিনেমার ওপর।
কিশোরের সিনেমা-প্রীতির কথা জানা আছে অন্যদের। চুপ করে রইলো।