ছেলেটার খোঁজ নিতে পুলিশ এসেছিলো। তোমার কুত্তাগুলোর কথা জিজ্ঞেস করলো। মিথ্যে বললাম। এখন দুর্ব্যবহার করে লোকটাকে তাড়ালে। সে কি ভাববে? রেখে দিলে কি এমন হতো?
কি হতো না হতো সেটা আমার ব্যাপার। তোমাকে মাতব্বরি করতে বলেছে।
দেখো, ধমক দিয়ে কথা বলবে না আমার সঙ্গে! মেয়েটাও রেগে গেল। আর আমি থাকছি না এখানে। মিথ্যে কথা বলার দায়ে শেষে আমাকেও নিয়ে গিয়ে গারদে ভরবে পুলিশ।
দুপদাপ করে গিয়ে ঘরে ঢুকলো মেয়েটা। জানালা দিয়ে শব্দ আসছে। তিন গোয়েন্দার কানে এলো, কাঠের সিঁড়িতে পা ফেলার মচমচ আওয়াজ। দুড়ুম-দাডুম আওয়াজ হলো এরপর। নিশ্চয় ড্রয়ার টানাটানি করছে। খানিক পরেই আবার বেরিয়ে এলো মেয়েটা। আঁটো পোশাকের ওপর ঢেলা, লম্বা হাতাওয়ালা গাউনের মতো পোশাক চাপিয়েছে।
এই, নরিনা… বলতে গিয়ে বাধা পেলো ডিগার।
আমি আর এসবের মধ্যে নেই, হাতে একটা বেতের ঝুড়ি নরিনার। সেটাতে জিনিসপত্র উপচে পড়ছে। তার মানে যথাসর্বস্ব যা ছিলো, সব নিয়ে চলে যাচ্ছে সে। সিঁড়ি বেয়ে গিয়ে রাস্তায় নামলো।
মেয়েটাকে চলে যেতে দেখলো ডিগার। পার্কিং লটের দিকে ফিরতে চোখ। পড়লো ছেলেদের ওপর। এই, এই কি চাও তোমরা?
আর লুকিয়ে থেকে লাভ নেই। বেরিয়ে এলো কিশোর। স্পীডওয়ে পেরিয়ে এগোলো বাড়িটার দিকে। তাকে অনুসরণ করলো রবিন আর মুসা। ভাবছি, আমা দেরকে সাহায্য করতে পারবেন, কিশোর বললো। আপনি হয়তো জানেন..
ছুঁচোগিরি করতে এসেছো! জলদি ভাগো! নইলে কুত্তা লেলিয়ে দেবো। যত্তোসব! রাগে গরগর করতে করতে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলো ডিগার। কিশোরের পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেল মেয়েটা যেদিকে গেছে সেদিকে।
পিছু নেবো নাকি? নিজেকেই যেন প্রশ্নটা করলো কিশোর।
নেয়া উচিত, মুসা বললো। মেয়েটার কথা শুনলে তো? পুলিশের ভয়েই পালাচ্ছে। তারমানে কিছু একটা অন্যায় করেছে।
শোনো, শোনো, ওদেরকে থামালো রবিন। বাড়িটায় আরও কেউ আছে।
কান পাতলো তিনজনেই। একটা লোকের গলা শোনা গেল। কথা বললো, থামলো, তারপর আবার বলতে লাগলো।
নিশ্চয় টেলিফোন, রবিন বললে আবার। এক কাজ করো। তোমরা। ডিগারের পিছু নাও। আমি থাকি। দেখি, কে বেরোয়?
কথাটা পছন্দ হলো কিশোরের। মুসাকে নিয়ে তাড়াতাড়ি রওনা হলো। প্যাসিফিক অ্যাভেনিউর দিকে। দক্ষিণে অনেকখানি এগিয়ে গেছে ততোক্ষণে ডিগার। নতুন কিছু অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং আর একটা বোট ম্যারিনা আছে ওদিকে। দূর থেকে তাকে অনুসরণ করলো কিশোর আর মুসা।
মারমেড কোর্ট থেকে আধমাইল দূরে ছোট একটা মার্কেটে ঢুকলো ডিগার।
দুর, লাভ হলো না, মুসা বললো। খাবার-টাবার কিনবে বোধহয়।
হয়তো। দেখা যাক।
মার্কেটের পার্কিং লটে দাঁড়িয়ে রইলো ওরা। কাঁচের পাল্লার ভেতর দিয়ে দেখতে পাচ্ছে ডিগারকে। গোশতের বাক্স থেকে কিছু নিয়ে সোজা স্ট্যাণ্ডের কাছে। চলে গেল সে।
চট করে একটা গাড়ির আড়ালে বসে পড়লো দুজনে। বেরিয়ে এলো ডিগার। আবার দক্ষিণে এগোলো, ম্যারিনার দিকে। কিছু দূর এগিয়ে মোড় নিয়ে একটা গলিতে ঢুকলো। এগোলো একটা রেস্টুরেন্টের দিকে।
রেস্টুরেন্টটার নাম মুনশাইন। বেশ উঁচু দরেরই মনে হচ্ছে। পার্কিং লটে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল মার্সিডিজ, ক্যাডিলাক আর জাগুয়ার গাড়ি। ওগুলোর। মাঝখান দিয়ে এগোলে ডিগার। মাঝে মাঝে থেমে লাথি মারে গাড়ির টায়ারে।
ব্যাটা টায়ার চোর! মন্তব্য করলো মুসা। ভালো চাকা খুঁজছে।
আমার মনে হয় না। দেখো।
একটা হুডখোলা কনভারটিবলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো ডিগার। সীটের ওপর একটা সেইন্ট বার্নার্ড কুকুর বসে আছে। গলার শেকলটা স্টিয়ারিং হুইলের সঙ্গে বাধা। কুকুরটার চোখে চোখে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ ডিগার। তারপর কথা বলতে আরম্ভ করলো।
উঠে দাঁড়িয়ে লেজ নাড়তে লাগলো কুকুরটা।
হাতের ব্যাগ থেকে গোশত বের করে ওটার দিকে বাড়িয়ে ধরলো ডিগার। গোশত শুঁকল সেইন্ট বার্নার্ড। চাটলো। তারপর খেতে শুরু করলো।
কুত্তা চোর! ফিসফিসিয়ে বললো মুসা।
চুপ করে রইলো কিশোর। দেখছে।
দেখতে দেখতে কুকুরটার সঙ্গে খাতির করে ফেললো ডিগার। গাড়ির দরজা খুলে শেকল খুলতে শুরু করলো।
আর চুপ করে থাকতে পারলো না মুসা। লাফিয়ে উঠে দৌড় দিলো। সিঁড়ি বেয়ে উঠে ঢুকে পড়লো রেস্টুরেন্টের ভেতর। প্রথমে আবছা অন্ধকার একটা হলওয়ে। তারপরে উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত ডাইনিং রুম। দরজার ভেতরে। দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বললো সে, এই যে শুনছেন? বার্নার্ড কুকুরটা কার? চুরি করে। নিয়ে যাচ্ছে তত!
ঘরের একধারে চেয়ারে বসা একজন লালমুখো মানুষ লাফ দিয়ে উঠে এলো। মুসার পাশ কাটিয়ে দমকা হাওয়ার মতো বেরিয়ে চলে গেল।
রাস্তায় নেমে পড়েছে তখন ডিগার। ব্যাগের গোশতের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে খুশিমনে তার পাশে পাশে চলেছে কুকুরটা।
পিছু নেয়ার চেষ্টাও করলো না কুকুরের মালিক। দুই আঙুল মুখে পুরে সিটি বাজালো।
থমকে দাঁড়িয়ে ফিরে তাকালো বিশাল কুকুরটা।
আবার সিটি বাজালো লোকটা।
হঠাৎই ডিগারের ব্যাপারে সমস্ত আকর্ষণ হারিয়ে ফেললো যেন সেইন্ট বার্নার্ড। দৌড় দিলো মনিবের দিকে।
হাত থেকে শেকলটা খুলে ফেলার চেষ্টা করলো ডিগার। পারলো না। শক্ত করে পেঁচিয়ে নিয়েছিলো শেকলের এক মাথা, টান লেগে আরও শক্ত হয়ে এঁটে গেল। হ্যাঁচকা টানে পেছনে বাঁকা হয়ে গেল তার শরীর। চিৎকার করে সামলানোর চেষ্টা করলো কুকুরটাকে। পারলো না। রাস্তায় চিত হয়ে পড়ে গেল সে। তাকে হিঁচড়ে টেনে নিয়ে চললো সেইন্ট বার্নার্ড।