এটাই আমাদের দেখাবেন বলেছিলেন? কিশোর জিজ্ঞেস করলো। ডিগারের ব্যাণ্ডেজ?
মাথা ঝাঁকালেন মিস এমিনার।
হু, কিশোর বললো। বড় বেশি কাকতালীয়!
কফির কাপে চুমুক দিলেন মহিলা। কাপটা নামিয়ে রেখে ছেলেদের দিকে তাকিয়ে হাসলেন। তা ক্যাম্পারের সঙ্গে কেমন কাটলো?
আরও কিছু বলার আছে তার, বুঝতে পেরে চুপ করে রইলো কিশোর।
নিশ্চয় নিজের সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা দিতে চেয়েছে, মিস এমিনার। বললেন। তা-ই করে সব সময়। কাল টেলিভিশনের লোকের সামনে কি রকম বেহায়ার মতো গিয়ে দাঁড়িয়েছিল, দেখোনি?
দেখেছি। হয়তো সত্যিই সাহায্য করতে চাইছে। এই ঘটনাটা ছেলেবেলার আরেকটা দুর্ঘটনার কথা নাকি মনে পড়িয়ে দিয়েছে তার। আপনি জানেন, ছেলেবেলায় তার এক বন্ধু হারিয়েছিলো? তারপর গর্তের পানিতে ভাসতে দেখা যায় ছেলেটার লাশ?
ওর বন্ধু? ন্যাপকিনে ঠোঁট মুছলেন মিস এমিনার। আমি তো শুনেছি ওর ছোট ভাই। এখন আবার বন্ধু হয়ে গেল কিভাবে? কি জানি, ভুলও শুনে থাকতে পারি। আর কিছু জানার আছে তোমাদের?
মাথা নাড়লো ছেলেরা। নেই। লাঞ্চ খাওয়ানোর জন্যে ধন্যবাদ জানালো। বারান্দা থেকে নেমে নিজের অ্যাপার্টমেন্টের দিকে চলে গেলেন তিনি।
মৃদু শিস দিয়ে উঠলো মুসা। বাপরে বাপ, মহিলা বটে!
চত্বরে ঢুকলো একজন লোক। মলিন চেহারা। পরনের পোশাকটা বেটপ রকমের ঢলঢলে, বেমানান। একটা ঠেলাগাড়ি ঠেলতে ঠেলতে আসছে। পেছনে আসছে একজোড়া মাংরল কুকুর। কাফের বারান্দার কাছে পৌঁছে কুকুর দুটোকে বসতে বললো লোকটা। বাধ্য ছেলের মতো সিঁড়ির গোড়ায় বসে পড়লো জানোয়ার দুটো। ঠেলাটা ওখানে রেখে সিঁড়ি বেয়ে উঠে এলো লোকটা।
কয়েক মিনিট পরে কাফে থেকে বেরোলো সে। হাতে একটা বড় ঠোঙা। তার পেছনে বেরোলো হেনরি লিসটার। ঠেলা নিয়ে লোকটা সরে যাওয়ার পর বললো, জঞ্জালের মধ্যে নিশ্চয় কিছু কুড়িয়ে পেয়েছে বরগু। আট ডলারের পেস্ট্রি কিনে নিয়ে গেল। কল্পনাই করা যায় না!
মিস এমিনারের ঘরের দিকে তাকালো সে। গলা নামিয়ে বললো, ওই মহিলার ব্যাপারে সাবধান। যদি পছন্দ করে তোমাদের, ভালো। না করলে সর্বনাশ করে দেবে। সাংঘাতিক মহিলা!
লিসটার কাফেতে গিয়ে ঢুকলো।
মুসা বললো বিড়বিড় করে, সেটা আমরাও বুঝেছি। ডিগারকে যেভাবে। আক্রমণ করলো! জবাবই দিতে পারলো না বেচারা!
হ্যাঁ, একমত হলো কিশোর। আনমনে চিমটি কাটলো নিচের ঠোঁটে। কুকুরের দেখছি ছড়াছড়ি এখানে। বরগুর সঙ্গে কুকুর। ডিগারের সঙ্গে কুকুর। জন্তু জানোয়ারের সঙ্গে তার এতো ভাব, তা-ও কামড় খেলো কুকুরের? কিটুর ছিলো। কুকুর। সেটা নিয়ে বেরোলো, তারপর গায়েব। কুকুরটাকে পাওয়া গেল। ডাস্টবিনে…।
বাধা দিয়ে বললো মুসা, ডিগারের ওপর চোখ রাখা দরকার, কি বলো?
অন্তত ওর ব্যাপারে আরেকটু খোঁজখবর নেয়া তো অবশ্যই দরকার, মুসার কথার পিঠে বললো রবিন। স্পীডওয়ের ওধারে ভাঙা বাড়িতে থাকে।…এসো, যাই।
.
০৭.
বাড়িটা খুঁজে বের করতে একটুও অসুবিধে হলো না। সামনের সিঁড়ির ওপর বসে। ঝিমোচ্ছে তখন ডিগার। মারমেড ইনের পেছনে এসে দাঁড়ানো ছেলেদের দেখতে পেলো না সে। চট করে একটা গাড়ির আড়ালে লুকিয়ে পড়লো ওরা।
চুপ করে দেখছে তিন গোয়েন্দা। বেশ কিছুক্ষণ কিছুই ঘটলো না। নীরব হয়ে আছে ভাঙা বাড়িটা। তারপর স্পীডওয়ে ধরে এগিয়ে এলো একজন মানুষ। সঙ্গে একটা কুকুর। ওটার গলায় বাঁধা দড়ির এক মাথা ধরে রেখেছে। ডিগারের ঘরের পেছনে বেড়ার কাছ থেকে একসঙ্গে গলা ফাটিয়ে ঘাউ ঘাউ করে উঠলো কয়েকটা
লাফ দিয়ে উঠলো ডিগার। চিৎকার করে বললো, এই চুপ চুপ! থাম! .
এক মুহূর্ত থমকালো আগন্তুক। তারপর কুকুরটাকে নিয়ে উঠে গেল ডিগারের বারান্দায়।
কী? ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো ডিগার।
কুকুর নিয়ে এসেছে যে লোকটা সে মাঝবয়েসী। ভদ্র। মাথা জুড়ে টাক। চোখে। ভারি পাওয়ারের চশমা। ডিগারের কর্কশ কণ্ঠ শুনে পিছিয়ে গেল এক পা। অস্বস্তি। জড়ানো কণ্ঠে বললো, শুনলাম, কুত্তা পছন্দ করো তুমি। তাই নিয়ে এসেছি। বীচফ্রন্ট মার্কেটের সামনে রাবিশ বিনে ঢোকার চেষ্টা করছিলো। ধরে নিয়ে এসেছি। নিশ্চয় খুব খিদে পেয়েছে এটার।
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কুকুরটাকে দেখলো ডিগার। দো-আঁশলা।
কয় আঁশলা জানি না। তবে তুমি…
আমাকে দেখে কি মনে হয়? খেঁকিয়ে উঠলো ডিগার। কুত্তার দালাল? নাকি এতিম জানোয়ারের জন্যে এতিমখানা খুলেছি?
অবাক হয়ে গেল লোকটা। কিন্তু… ওরা যে বললো, কু-কুকুর পছন্দ করো। তুমি…
তাহলে ওদের কাছেই যাও! গজগজ করতে লাগলো ডিগার। কুত্তা আর কুত্তা!, এমন জানলে কে পালতো! যাও, যে চুলো থেকে এনেছো, সেখানেই নিয়ে ফেলে দাও! যাও!
ধমক খেয়ে পিছিয়ে এলো লোকটা। কুকুরটাকে নিয়ে আবার নামলো পথে। টেনে নিয়ে চললো।
হঠাৎ পুরানো বাড়ির বারান্দা থেকে ডাক শোনা গেল, এই রাগবি, কি হয়েছে?
কিছু না।
একটা মেয়ে বেরিয়ে এসেছে। বয়েস বিশ-বাইশ হবে। কালো চুল। পরনে স্কেটারদের পোশাক। স্কেটিং করতে যাচ্ছে বোধহয়। কিছু না মানে কি? শুনলাম তো চেঁচামেচি করছো। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো কি যেন। নাহ, তোমাকে। নিয়ে আর পারা যায় না। কতো আর মিথ্যে বলবে?
এই চুপ, চুপ, আস্তে! দ্রুত চারপাশে চোখ বোলালো ডিগার।