স্বাস্থ্য বিভাগ ওর খবর জানে কিনা ভাবি মাঝে মাঝে! নাক কুঁচকালেন মিস এমিনার। সে-ও ওদের একজন!
কাদের একজন? জানতে চাইলো রবিন।
অসভ্যদের! রবিনের দিকে ঝুঁকে খাটো গলায় বললেন মিস এমিনার। স্পীডওয়ের ওধারে ভাঙাচোরা বাড়ি আছে কয়েকটা, একটাতে থাকে ও। চোর ডাকাত, ফকির-টকিরের আজ্ঞা ওখানে। ওদেরকে দিয়ে সবই সম্ভব। অল্পবয়েসী একটা মেয়ে থাকে…
থেমে গেলেন মিস এমিনার। শক্ত হয়ে গেছে ঠোঁট। ঝাঝালো কণ্ঠে বললেন, অসভ্যের একশেষ একেকটা! বাপ-মা যে কোথায় ওদের, খোদাই জানে! কোথায় জন্ম, কোথায় বড় হয়, কে জানে! তারপর আর কোনো জায়গা না পেয়ে এসে ঢোকে এই ভেনিসে!
কাফে থেকে বেরিয়ে এলো হেনরি লিসটার। হাতে ট্রে। তাতে স্যাণ্ডউইচ, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, আর কোকা কোলা। টেবিলে সাজিয়ে দিয়ে চলে গেল। তার পেছনে গেল রাগবি ডিগার।
ডিগারকে, নিচু গলায় বললেন মিস এমিনার, দেখতে পারতো না কিটু।
কিশোর বললো, অনেকেই তো কিটুকে দেখতে পারে না, তার দুষ্টুমির জন্যে।
না না, আমি কাউকে দোষ দিচ্ছি না, তাড়াতাড়ি বললেন মিস এমিনার। চত্বরে যে কটা দোকান মালিক আছে, কিটুর নিখোঁজ হওয়ার পেছনে তাদের কারোই হাত নেই। প্যারেড শুরু হওয়ার সময় আমার ঘরের জানালায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। মিস্টার মিউরোকে দেখেছি। রক মিউজিক পছন্দ করে যে মহিলা, মিস জারগন, তাকে দেখেছি। প্যারেড দেখতে চত্বরের দিকে এগোচ্ছিল ওরা। ব্রড ক্যাম্পারকেও দেখেছি। তার অ্যাপার্টমেন্ট আর গ্যালারির মাঝখানে পায়চারি করেছে কয়েকবার। তারপর কিটু আর ডবকে দৌড়ে ঢুকতে দেখলাম।
ও! হঠাৎ সতর্ক হয়ে উঠলো গোয়েন্দাপ্রধান। ওশন ফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে। যাওয়ার পর তাহলে দেখেছেন! গুড! কি কি দেখেছেন?
বেশি কিছু না। ঠিক ওই সময় আমার চুলার টাইমারটা অফ হয়ে গেল। চুলায় কেক ছিলো। তাড়াতাড়ি নামাতে গেলাম। আবার জানালার কাছে ফিরে এসে কিটু বা ডব কাউকেই দেখলাম না। অন্তত চত্বরে ছিলো না তখন, এটা ঠিক। তবে রাগবি ডিগার ছিলো।
আবার বারান্দায় বেরিয়ে এসেছে ডিগার। মিস এমিনারের শেষ কথাটা কানে গেল। তাঁর দিকে তাকিয়ে কুঁচকে গেল ভুরু। কোমরে দুহাত রেখে দাঁড়ালো। আমি কি করেছি? তার এক হাতে ব্যাণ্ডেজ, কব্জির ঠিক ওপরে।
সামান্যতম চমকালেন না মিস এমিনার, নরম হলেন না। জবাব দিলেন, গতকাল প্যারেডের সময় দেখলাম মিস্টার মিউরোর দোকান থেকে বেরোচ্ছো। আমার কাছে সেটা অদ্ভুত লেগেছে। খেলনা কিংবা ঘুড়ির ব্যাপারে কোনোদিন। কোনো আগ্রহ দেখিনি তোমার। অবাক লেগেছে সে কারণেই। এরা কিটুকে খুঁজতে সাহায্য করছে, তিন গোয়েন্দাকে দেখিয়ে বললেন তিনি। ভাবলাম…
কি ভাবলেন! কি ভাবলেন? চেঁচিয়ে উঠলো ডিগার। আমি কিছু করিনি! আপনার কি মনে হয়, খেলনার লোভ দেখিয়ে ওকে ধরে নিয়ে গেছি? পাগল হয়ে গেছেন আপনি!
বারান্দায় বেরিয়ে এলো লিসটার। শুনে ফেলেছে কথা। কাল তুমি ঘুড়ির দোকানে ঢুকেছিলে?
ঢুকেছিলাম। একটা চীনা ঘুড়ির দাম, দেখতে। জানালার কাছে যেটা রেখেছিলো।
শুধু এ জন্যেই?
তাহলে আর কি জন্যে? আবার রেগে উঠলো ডিগার।
কড়া চোখে তার হাতের ব্যাণ্ডেজের দিকে তাকিয়ে মিস এমিনার বললেন, হাতে কি হলো? কুকুরে কামড়ে দিয়েছে, তাই না? আজ সকালে শেলির সঙ্গে বলছিলে, আমি শুনেছি। তোমার নিজের কুকুরে কামড়েছে?
আপনি….আপনি… রাগে কথা আটকে গেল ডিগারের।
আমি কি? নাক গলাচ্ছি? বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছি? হা, দেখাচ্ছি। দেখাবো, সন্তুষ্ট মনে হচ্ছে মিস এমিনারকে।
দেখুন, বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না। ভালো হবে না…
এই, চুপ করো! ধমকে উঠলো লিসটার। আর একটা কথাও বলবে না!
আহ্, কি আরম্ভ করলে তোমরা! শেলিও ধমক লাগালো। লোকে শুনলে কি বলবে! একটানে গা থেকে অ্যাপ্রনটা খুলে টেবিলে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গটমট করে চত্বরে নেমে পড়লো সে। চলে যাবে।
অ্যাপ্রনটা তুলে নিয়ে লিসটার বললো, মিস এমিনার, মাঝে মাঝে আপনি একটু বাড়াবাড়িই করে ফেলেন। আমিও করি। খেলনার দোকানে না হয় কাল ঢুকেইছে রাগবি, তাতে কি হয়েছে? অন্যায় তো কিছু করেনি।
দুজনেই বাড়াবাড়ি করি, তাই না? মুখ কালো করে বললেন মিস এমিনার। কোর্টের আশেপাশে যারা থাকে, সবারই জিনিসপত্র চুরি যাচ্ছে, তোমারও ক্যাশবাক্স থেকে টাকা চুরি হচ্ছে। এর পরও ডিগারকে ভালো বলবে?
ইয়ে…আমার আমতা আমতা করতে লাগলো লিসটার। মাথা ঝাঁকালো। তারপর কোনো জবাব খুঁজে না পেয়ে গিয়ে আবার ঢুকলো কাফের ভেতরে।
বিজেতার হাসি হাসলেন মিস এমিনার। স্বভাব কি আর সহজে বদলায় মানুষের। ডিগারই বা কি করে বদলাবে। যাকগে, কুকুরের কামড়ের কথায় আসা যাক। রাস্তার কয়েকটা নেড়ি কুত্তা গিয়ে বাস করে ওর সঙ্গে।
নেড়ি কুত্তা! মহিলার কথা শেষ হওয়ার আগেই বলে উঠলো মুসা। তাহলে কামড়ে দিতেও পারে।
তা পারে। তবে সে সত্যি কথা বলছে কিনা কে জানে?
চুপ করে মিস এমিনারের দিকে তাকিয়ে রয়েছে তিন গোয়েন্দা।
ধরা যাক, নেড়ি কুত্তায় কামড়ায়নি, বলতে লাগলেন তিনি। হয়তো অন্য কোনো কুকুর, যেটার খুদে মনিবের ক্ষতি করতে যাচ্ছিলো ডিগার। ব্যস, মনিবকে বাঁচাতে কুকুরটা দিয়েছে ওকে কামড়ে। একটা কথা অবশ্য স্বীকার করতেই হবে, জন্তু-জানোয়ারের সঙ্গে ডিগারের খুব ভাব। কি করে যেন চোখের পলকে খাতির করে ফেলে। কুকুর-বেড়াল সব কিছু। আগে কখনও তাকে কোনো কিছুতে কামড়েছে বলে শুনিনি।