আমাজানের জঙ্গলের কথা মনে পড়ে গেল রবিনের। কিছু কিছু মানুষ আছে, যাদের গায়ের গন্ধ আকৃষ্ট করে পোকামাকড়কে, এসে চড়াও হয়। ওখানেও মুসার ওপর চড়াও হয়েছিলো পিঁপড়েরা, এমনকি রক্তচোষা বাদুড় এসেও আগে ধরেছিলো মুসাকেই।
কিভাবে বন্ধুকে সাহায্য করবে, সিদ্ধান্ত নেয়ার আগেই মুসার সাহায্যে এগিয়ে। এলো একটা বিচিত্র প্রাণী। পরোক্ষে মুসাকে সাহায্য করলেও, প্রত্যক্ষভাবে আসলে নিজেকেই সাহায্য করতে এসেছে। অনেক নাম ওটারঃ কেউ বলে অ্যান্ট-ঈটার, কেউ অ্যান্ট-বীয়ার, কেউ বা ডাকে আর ডু ভার ক, অর্থাৎ গর্তের শুয়োর বলে। তবে অ্যান্ট-ঈটার বা পিঁপড়েখেকো নামটাই বেশি মানানসই, কারণ, পিঁপড়ে খাওয়ার সুযোগ মিললে আর ছেড়ে কথা কয় না। সারা দিন গর্তে পড়ে ঘুমায়, রাতে বেরোয় খাবারের সন্ধানে। মুসার ভাগ্য ভালো, কাছাকাছিই ছিলো ওটা।
এগিয়ে এলো চার ফুট লম্বা জীবটা। ওজন একশো চল্লিশ পাউণ্ড মতো হবে। ভালুকের মতো থাবা, তাতে বড় বড় বাকা নখ–উইয়ের ঢিবি চেরার জন্যে, ক্যাঙারুর মতো লেজ, গাধার কান আর শুয়োরের মুখ নিয়ে ওকাপির চেয়ে কম। বিচিত্র নয় জনাব আবু ডু ভার।
কাছে এসেই কাজে লেগে গেল পিঁপড়েখেকো। আঠারো ইঞ্চি লম্বা জিভ বের। করে প্রায় ছেকে নিতে শুরু করলো, যেন পিঁপড়ের দলকে। আমাজানের জঙ্গলে এরকম জীবকে রীতিমতো লড়াই করে পরাজিত করেছে মুসা, এদের সম্পর্কে ভয় নেই তার। সোজা গিয়ে দাঁড়ালো ওটার জিভের কাছে। মাটি থেকে তোলার চেয়ে চামড়া থেকে নেয়া সহজ, কাজেই, সহজ কাজটাই আগে করলো ওটা। জামাকাপড় সব খুলে একেবারে দিগম্বর হয়ে গেছে সহকারী গোয়েন্দা, রবিনকে আরেক দিকে তাকিয়ে থাকার অনুরোধ করছে বার বার।
কিন্তু চাঁদের আলো নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে আছে মুসার কালো নগ্ন দেহের দিকে, মুহূর্তের জন্যে মুখ ফেরানোর নাম নেই। নিজের দিকে চেয়ে নিজেরই হাসি পেলো মুসার। পিঁপড়ে নেই আর শরীরে। হেসে উঠলো জোরে। প্লেনে বসা রবিনও হেসে ফেললো। এতোক্ষণ উত্তেজনায় খেয়ালই করেনি পিঁপড়েখেকো, মানুষের শরীর চাটছে। হাসির শব্দে যেন হুশ হলো। বড় বড় কয়েক লাফ দিয়ে। সরে গেল দূরে, সন্দিগ্ধ চোখে মুসার দিকে আরেকবার তাকিয়ে আবার পিঁপড়ে খাওয়ায় মন দিলো।
কাপড়চোপড় পরে ফেলল এবার, আরেক দিকে চেয়েই বললো রবিন। পরে জলদি উঠে এসো। যতদূর জানি, অ্যান্ট-বীয়ার সিংহের খুব প্রিয় খাবার।
মুহূর্ত দেরি করলো না মুসা। প্যান্টটা পায়ে গলিয়ে কোমরে বোতাম আঁটলো। বাকি কাপড়গুলো হাতে নিয়ে উঠে এলো ওপরে। আহত পা নিয়ে কষ্ট হলো, তাকে সাহায্য করলো রবিন।
ঠিকই, পিঁপড়েখেকোর গন্ধ পেয়ে কোথা থেকে এসে হাজির হয়েছে একটা সিংহ। চাঁদের আলোয় বিশাল ছায়া পড়েছে ওটার। লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো। তারপর ছায়ার মতোই নীরবে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে আসতে লাগলো, থেমে গেল। প্লেনের ডানার নিচে, ছায়ায়। ধক ধক করে জ্বলছে চোখ, দৃষ্টি পিঁপড়েখেকোটার ওপর নিবদ্ধ।
সিংহ তার খাবার ধরবে, এটাই স্বাভাবিক। অন্য সময় হলে হয়তো কিছু বলতো না মুসা, কিন্তু এখন পিঁপড়েখেকোটা ঋণী করে ফেলেছে তাকে। ঋণ শোধ করার জন্যে নিজের বিপদ উপেক্ষা করলো সে, হাত তালি দিয়ে জোরে চেঁচিয়ে সাবধান করে দিলো জীবটাকে।
রাগে গর্জে উঠলো সিংহটা। ছুটে গেল শিকারের দিকে।
ততোক্ষণে হুশিয়ার হয়ে গেছে পিঁপড়েখেকো। অবিশ্বাস্য একটা কাণ্ড করলো। ছুটে পালানোর চেষ্টাও করলো না, করলেও সিংহের সঙ্গে দৌড়ে পারতো না। দুই থাবা দিয়ে নরম মাটি খুঁড়তে শুরু করলো। এতো দ্রুত, যেন আশ্চর্য ক্ষমতাশালী একটা খোঁড়ার-যন্ত্র। সিংহটা ওটার কাছে গিয়ে পৌঁছার আগেই খোঁড়া হয়ে গেল গর্ত, ভেতরে ঢুকে পড়লো জানোয়ারটা। মুসা আর রবিন দেখতে পাচ্ছে না এখন, অনুমান করলো নিশ্চয় খোঁড়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ওটা। লম্বা সুড়ঙ্গ বানিয়ে চলে যাবে সিংহের নাগালের বাইরে।
ওদের অনুমান ঠিক। গর্তের মুখে নাক নামিয়ে শুকলো সিংহ। আরেকবার গর্জন করলো। নিরাশ হয়ে সরে এলো গর্তের কাছ থেকে। মুখ তুলে তাকালো। প্লেনের দিকে।
দুরুদুরু করে উঠলো দুই গোয়েন্দার বুক। এবার? কি ভাবছে ব্যাটা?
.
ভালো ঘুম কি আর হয়? দুবার হায়েনার ডাকে চমকে জেগে উঠলো দুজনে।, প্লেনের নিচে এসে, হুটোপুটি লাগিয়েছে ওগুলো। টায়ার কামড়াতে শুরু করেছে। চেঁচিয়ে, বিমানের গায়ে বাড়ি দিয়ে ওগুলোকে তাড়ালো ওরা। আবার তন্দ্রায় ঢলে পড়লো।
ঘুমের ঘোরে দুঃস্বপ্ন দেখলো মুসা। ভয়ানক এক গণ্ডার আক্রমণ করেছে তাকে। মাটিতে পেড়ে ফেলে শিং দিয়ে তোচ্ছে বুকে। চিৎকার করে জেগে উঠলো সে। দেখলো, সকাল হয়ে গেছে। বুকে হাত রেখে ঠেলছে কিশোর। ষোল ঘন্টার আগেই ফিরে এসেছে।
আরে, এই মিয়া, ওঠো, হেসে বললো কিশোর। কতো ঘুমাবে? এই নাও তোমার স্যাণ্ডউইচ।
রবিন আগেই জেগেছে।
মুসা দেখলো, প্লেনের পেছনে গাড়ির মিছিল। ওয়ারডন টমসন এসেছেন, সঙ্গে এসেছে তার তিনজন রেঞ্জার আর তিরিশজন মাসাই।
খেয়ে নাও জলদি, দুই বন্ধুকে তাড়া দিলো কিশোর। পোচার ব্যাটাদের ধরতে যেতে হবে।
প্লেনটা? স্যাণ্ডউইচ চিবাতে চিবাতে জিজ্ঞেস করলো মুসা। কিভাবে নেয়া হবে?