মোমবাসায় জেলে গিয়ে কটা দিন সুখে কাটিয়ে আসার ইচ্ছে যাদের ছিলো, হতাশ হতে হলো তাদেরকে।
গাঁয়ে ফিরে যেতে বলুন ওদের, মুগামবিকে বললো কিশোর। হুঁশিয়ার করে দিন, আবার জানোয়ার মারতে এসে ধরা পড়লে কপালে অনেক দুঃখ আছে।
পোচাররা চলে গেল।
ফাঁদে আটকা পড়া জানোয়ারগুলোর মাঝে যেগুলো তখনও বেঁচে রয়েছে, ছেড়ে দেয়া হলো। বেশি জখমীগুলোকে গাড়িতে তুলে নেয়া হলো চিকিৎসার জন্যে। আর যেগুলো মরে গেছে তো গেছেই। সমস্ত ফাঁস, ফাঁদ তুলে নেয়া হলো।
সব কটা কুঁড়ে আর পাঁচ মাইল লম্বা, ঘাসের বেড়া পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া। হলো।
লজে ফিরে এলো গাড়ির মিছিল। সব কথা টমসনকে জানালো তিন গোয়েন্দা। সিলভারকে পায়নি বলে দুঃখ করলো অনেক।
মন খারাপ করো না, সান্তনা দিলেন ওয়ারডেন। ব্যাটাদের অনেক ক্ষতি করে দিয়ে এসেছে। ভয় পাইয়ে দিয়েছে। কম করোনি। যাবে কোথায় সিলভার? আজ হোক কাল হোক, ধরা তাকে পড়তেই হবে। ও, ভালো কথা, জজ নির্মল পাণ্ডা তোমাদের গুড লাক জানিয়েছেন।
কোথায় উনি? জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
তখন বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। কাল রাতে এসেছিলো, ভোরে চলে গেছে তাড়াহুড়ো করে। জরুরী কাজ নাকি আছে।
আমরা যে আজ পোচার ঠেঙাতে যাবো, সেকথা বলেছিলেন ওকে?
নিশ্চয়। পোচারদের ব্যাপারে সব সময় তার আগ্রহ।
দ্বিধা করে শেষে বলেই ফেললো কিশোর, স্যার, জজ সাহেব আপনার ঘনিষ্ঠ। বন্ধু। কথাটা কিভাবে নেবেন জানি না। একটা প্রশ্ন জাগছে আমার মনে, উনি কি সত্যি আমাদের পক্ষে না বিপক্ষে?
খুব অবাক হলেন ওয়ারডেন। ভুরু কুঁচকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে রইলেন কিশোরের দিকে। দেখোএমন একজন লোককে সন্দেহ করছো, যাকে কোনো মতেই অবিশ্বাস করা উচিত না। এদেশে পোচিঙের বিরুদ্ধে যারা সব চেয়ে বেশি শোরগোল তুলেছেন, জজ সাহেব তাঁদের একজন। জন্তুজানোয়ারের জন্যে নিবেদিত প্রাণ। আমাদের বিপক্ষে যাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। এই সেদিনও তোমাদের সামনেই আমার প্রাণ বাঁচালো।
শুধু মুখে মুখেই জানোয়ারকে ভালোবাসার কথা বলে? না করেও কিছু?
অবশ্যই করে।
ডেস্কের ড্রয়ার খুলে একটা চেক বের করলেন টমসন। টেবিলের ওপর রেখে কিশোরের দিকে ঠেলে দিয়ে বললেন, এই দেখো, কাল রাতে দিয়েছে। ওর সময়। নেই। আমাকে ওয়াইল্ডলাইফ সোসাইটিতে পাঠিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেছে।
দুহাজার পাউণ্ডের চেক।
এবার বুঝলে তো? কিশোরকে নীরব দেখে আবার বললেন ওয়ারডেন। শুধু কথা নয়, কাজেও করে দেখায়। এদেশে একজন জজের বেতন আর কতো বলো? তার থেকে জমিয়ে দুহাজার পাউণ্ড জন্তুজানোয়ারের উপকারের জন্যে দান। করা…না,কিশোর, নির্মল সত্যি মহৎ।
কি জানি, স্যার, সন্দেহ গেল না কিশোরের। হয়তো আমিই লোক চিনতে ভুল করেছি। সাধারণত এমন ভুল হয় না আমার।
ভুল মানুষেরই হয়, কথাটা সামান্য রুক্ষই শোনালো।
ব্যানডায় ফিরে এলো কিশোর। মুসা আর রবিনকে জানালো যা যা কথা হয়েছে।
কি জানি, হয়তো সত্যি ভুল করেছো, মুসা বললো। লোকটাকে দেখে কিন্তু খারাপ মনে হয় না।
না, ভুল আমি করিনি, জোর দিয়ে বললো কিশোর। অসম্ভব ধড়িবাজ লোক ওই জজ।
তাহলে টাকা যে দিলো? রবিন বললো।
সেটা তো খুব সহজ একটা ব্যাপার। ওই ধ্যাটা কি আর জজের বেতন দিয়ে চলে? কোটিপতির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। টাকার অভাব আছে নাকি? ওর কাছে দুহাজার পাউও কিচ্ছু না। কিন্তু দান করে ওয়ারডেনের চোখে ভেলকি লাগিয়ে দিয়েছে। আমি শিওর, সিলভারের সঙ্গে সম্পর্ক আছে ওর।
সেটা নাহয় আমরা বিশ্বাস করলাম, ওয়ারডেনকে কিছুতেই বিশ্বাস করাতে পারবে না। করাতে হলে জোরালো প্রমাণ দরকার।
সেটাই জোগাড় করতে হবে আমাদের, যেভাবে হোক।
কিন্তু কিভাবে? মুসা প্রশ্ন করলো।
জানি না এখনও, নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটলো একবার গোয়েন্দাপ্রধান। আজকে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছে? সিলভারকে পোচারদের কুঁড়েতে পাওয়া যায়নি। কেন? কারণ, আগেই তাকে সাবধান করে দেয়া হয়েছে। আমরা আজ পোচার ধরতে যাবো, একথা কাল রাতে জজকে বলেছেন টমসন। খুব ভোরে উঠে চলে গেল সে। কোথায়? নিশ্চয় পোচারদের ক্যাম্পে, সিলভারকে বলার জন্যে, হাতের উল্টো পিঠ কপালে ঘষলো কিশোর। তবে সবই আমার অনুমান। আদালতে টেকে, এমন প্রমাণ জোগাড় করতে হবে?
তাহলে সেই চেষ্টাই করা যাক, মুসা বললো। এখানে বসে থেকে সেটা হবে। না নিশ্চয়!
.
১৯.
পোচারদের আরেকটা ক্যাম্প আবিষ্কার করেছে তিন গোয়েন্দা।
পাহাড় আর উপত্যকার ওপর দিয়ে চক্কর মারছে মুসা। বিনকিউলার চোখে লাগিয়ে তন্নতন্ন করে নিচের এলাকা খুঁজছে কিশোর, মাঝে মাঝে যন্ত্রটা তুলে দিচ্ছে রবিনের হাতে। আরেকটা ট্র্যাপ-লাইন খুঁজছে ওরা। লাইন থাকলে পোচার থাকরে, পোচার থাকলে সিলভারকে পাওয়ার সম্ভাবনা।
লাইন দেখা গেল না। শুধু কয়েকটা ঘাসের কুঁড়ে। মানুষ চোখে পড়লো না। আশেপাশে মাইলের পর মাইল জুড়ে একই অবস্থা, নির্জন।
ভয় পেয়ে চলে গেছে হয়তো, রবিন বললো।
আমার মনে হয় না, মাথা নাড়লো কিশোর। বনে গিয়ে লুকিয়েছে বড় জোর। মুসা, ওই ডোবাটার কাছে যাও তো।
জানোয়ার গিজগিজ করছে ডোবার পাড়ে; হাতি, গণ্ডার, জেব্রা, হরিণ; দিবাচর আফ্রিকান যতো প্রাণী আছে, প্রায় সব। শুধু পোচার বাদে।