ফিরে আসে কেন?
হয়তো বাপ-দাদার ভিটে ছেড়ে যেতে মন চায় না, রসিকতা করলো রবিন।
আসলেও কিন্তু তাই, ওয়ারডেন বললেন। আদিম কোনো প্রবৃত্তি কাজ করছে পাখিগুলোর রক্তে তাই লেক মনিয়ারায় ফিরে ফিরে আসে।
ওদের বাঁচানোর কোনো উপায় নেই? জানতে চাইলো কিশোর।
বাঁচাতে হলে হ্রদের পানির লবণ কমাতে হবে, সেটা সম্ভব নয়। ওই যে, ছেলেগুলোকে দেখছো, ওরা বাঁচানোর চেষ্টা করছে। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পা থেকে লবণ ভেঙে দিচ্ছে, যাতে উড়ে যেতে পারে।
যাক, আফ্রিকান ছেলেরা তাহলে সচেতন হয়েছে, খুশি হলো মুসা। বুড়োগুলোর মাথা থেকে শয়তান নামলেই এখন বেঁচে যেতো অনেক জানোয়ার।
মাউন্ট কিলিমানজারোর ওপর দিয়ে আসার সময় এক ঝলক বরফ-শীতল বাতাস এসে লাগলো গায়ে। সরে আসতেই আবার গরম বাতাস। চোখে পড়লো টিসাভো ন্যাশনাল পার্ক।
অফিসেই আছেন ওয়ারডেন টমসন। হিসটোকে দেখে লাফিয়ে উঠলেন। আন্তরিক শুভেচ্ছা জানালেন একে অন্যকে।
নিরাপদে ওকাপি আর বানরটাকে রেখে এসেছে, টমসনকে শুধু একথা জানিয়ে ব্যান্ডায় রওনা হলো তিন গোয়েন্দা। গোসল সেরে এসে পরে সব কথা। খুলে বলবে।
দরজার নিচে ফেলে রাখা কাগজটা আগে রবিনের চোখে পড়লো। নিচু হয়ে। তুলে নিলো। ভঁজ খুলে পড়লো। গম্ভীর হয়ে গেল চেহারা। কিশোরের হাতে তুলে দিতে দিতে বললো, হুমকি দিয়েছে।
জোরে জোরে পড়লো কিশোরঃ : বাড়ি যাও, বিচ্ছুরা। দ্বিতীয়বার আর সাবধান করবো না। নইলে মরবে, জানোয়ারগুলোর মতো। মনে রেখো, দুনিয়ায় এখনো এমন কিছু জায়গা রয়েছে, যেখানে মানুষের ট্রফি সাজিয়ে রাখা হয়।
–এল জে এস।
এল জে এস মানে কি? মুসা বললো। লঙ জন সিলভার?
তাছাড়া আর কে? চিন্তিত দেখাচ্ছে গোয়েন্দাপ্রধানকে।
ফালতু হুমকি না তো?
মনে হয় না। সে সিরিয়াস লোক। যা বলেছে করবে। আর শুধু সে কেন? কোটি কোটি ডলার কামানোর জন্যে দুনিয়ার অনেক লোকই মানুষ খুন করতে দ্বিধা করবে না।
তাহলে? বাড়ি ফিরে যাচ্ছি?
মাথা খারাপ। একটা শয়তানের শাসানিতে ভয়ে পালাবো? অসম্ভব। সিলভারকে ব্রোঞ্জ বানিয়ে ছাড়বো আমি, দাঁতে দাঁত চাপলো কিশোর।
আমিও, দৃঢ় কণ্ঠে বললো মুসা। টিসাভো থেকে পোচার উচ্ছেদ না করে যাচ্ছি না আমি।
কিন্তু ব্যাটাকে ধরি কিভাবে? প্রশ্ন রাখলো রবিন।
দেখা যাক, কিশোর বললো। বুদ্ধি একটা বের করতে হবে। পাঁচ মাইল লম্বা যে ট্র্যাপ-লাইনটা দেখেছিলাম, কাল সকালে যাবো ওখানে। এবার আর পোচার নয়, সিলভারকে ধরার দিকে নজর দেবো।
.
১৮.
সেরাতে গাড়ির শব্দে ঘুম ভেঙে গেল কিশোরের। বিশেষ গুরুত্ব দিলো না। ভোর রাতে আবার ঘুম ভাঙলো, শুনলো, চলে যাচ্ছে গাড়িটা।
সকালে নাস্তার পর ট্র্যাপ-লাইনে যাবার জন্যে তৈরি হলো গোয়েন্দারা। সঙ্গে যাবে ওয়ারডেনের কয়েকজন রেঞ্জার আর তিরিশজন মাসাই। হিসটোর সঙ্গে জরুরী কাজ আছে টমসনের, তিনি যেতে পারছেন না। তবে অসুবিধে নেই, রেঞ্জারদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে দিলেন তিনি, কিশোরের কথা যেন মেনে চলে।
ট্র্যাপ-লাইনের মাইল খানেকের মধ্যে থামলো গাড়ির মিছিল।
সাপ্লাই ভ্যানে টিয়ার গ্যাসের ক্যানূ আছে, মাসাইদের বললো কিশোর। সবাই একটা করে নিয়ে এসো, কিভাবে কি করতে হবে বুঝিয়ে দিলো সে।
আবার এগোলো গাড়ির মিছিল।ট্রাপ-লাইনের কয়েক শো গজ দূরে এসে থামলো, আগের বার এক মাইল লম্বা লাইনটার সামনে যেভাবে দাঁড়িয়েছিলো, সেভাবে। পোচারদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে জোরে জোরে হর্ন বাজাতে লাগলো। লাইনের ফাঁকে উঁকিঝুঁকি মারতে শুরু করলো কালো কালো মুখ। বারোজন মাসাইকে নিয়ে, ঘুরে, পোচারদের ক্যাম্পের পেছনের বনে গিয়ে ঢুকলো কিশোর। রবিন আর মুসাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে এসেছে।
আগের বারের কৌশল এবারেও করতে পারে সিলভার। দলের পেছনে নিরাপদ জায়গায় থাকতে পারে। যদি দেখে পোচাররা হেরে যাচ্ছে, চুরি করে পালানোর চেষ্টা করবে আগের বারের মতোই। বনের ভেতর দিয়ে ছাড়া অলক্ষ্যে। যাওয়ার জায়গা নেই, তাই এখানে চলে এসেছে কিশোর।
মাসাইদের নিরস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সাহস পেয়ে গেল পোচাররা। তীর ছুঁড়তে ছুঁড়তে এগিয়ে গেল। বাধা আসছে না দেখে সাহস আরও বাড়লো। মাসাইদের টিটকারি মারতে মারতে এগুলো বল্লম হাতে।
ইঙ্গিতের জন্যে বার বার মুসার দিকে তাকাচ্ছে মাসাইরা।
পোচাররা পঞ্চাশ ফুটের মধ্যে চলে এলে প্রথম ক্যানূটা ছুঁড়ে মারলো মুসা। মারো! বলে রবিনও তার হাতেরটা ছুঁড়লো।
উড়ে গেল এক ঝক ক্যান। জন্তু-খুনীদের সামনের শক্ত মাটিতে পড়ে ফাটলো একের পর এক। চোখের পলকে ওদেরকে ছেয়ে ফেললো হলদে-সাদা ধোয়া। কাশতে শুরু করলো পোচাররা। দম বন্ধ হয়ে আসছে, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আতঙ্কে গলা ফাটিয়ে চেঁচাতে শুরু করলো কেউ কেউ, লুটিয়ে পড়লো মাটিতে। লম্বা ঘাসে নাক গুঁজে ধোয়া থেকে বাঁচতে চাইলো। কয়েকজন টলতে টলতে ছুট দিলো কুঁড়ের দিকে।
ঠিক এই সময় বন থেকে বেরিয়ে উল্টো দিক থেকে ছুটে এলো কিশোর। সিলভারকে খুঁজতে লাগলো। কোথাও দেখা গেল না তাকে। মাটিতে বুটের ছাপও নেই। আধ ঘন্টা ধরে খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো চিহ্ন পাওয়া গেল না।
ইতিমধ্যে উঠে দাঁড়িয়েছে কিছু পোচার, কিন্তু চোখে ভীষণ জ্বালা। পানি গড়াচ্ছে। দেখতে পারছে না ঠিকমতো। লড়াইয়ের উদ্যম একেবারেই তিরোহিত হয়েছে। ঘিরে ফেলা হলো ওদের।