বাহ, দারুণ বর্ম তো!
মালমশলা তো হাতের কাছেই আছে, হেসে বললেন ওয়ারডেন। বানিয়ে ঝুলিয়ে ফেলো না একটা। তীর লাগবে না আর শরীরে।
ওদের মতো বলদ নাকি আমি? মুখ বাঁকালো মুসা।
তার কথার ধরনে হা-হা করে হেসে ফেললেন টমসন।
কতগুলো গণ্ডারের শিং দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো মুসা, রবিন, এগুলো দিয়ে কি হয়? পুড়িয়ে গুঁড়ো করে ফেলে গণ্ডারের মতো শিং গজায় নাকি ব্যাটাদের মাথায়? শত্রুকে গুঁতোতে পারে?
ওর কথায় ওয়ারডেন তো হাসছেনই, কিশোর আর রবিনও হাসতে শুরু করলো। হাসতে হাসতেই রবিন বললো, এগুলোর বেশি ভক্ত চীনারা। গুড়ো করে। চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে খায়।
কেন, পাগলামি সারানোর জন্যে?
না, শক্তিশালী হওয়ার জন্যে। গায়ে নাকি গণ্ডারের জোর আসে, বুকে সিংহের সাহস।
হয়?
মনের জোর বাড়ে হয়তো। মানসিক ব্যাপার। কিন্তু ওদের ওই বিশ্বাসের কারণে সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে গণ্ডারের। ইনডিয়ান গণ্ডার তো শেষই করে দিয়েছে। চীনারা, এ-হারে মারা পড়তে থাকলে আফ্রিকান গণ্ডারও শীঘ্রি খতম হয়ে যাবে। শেষে চিড়িয়াখানা ছাড়া আর কোথাও দেখা যাবে না ওদের।
পুড়ে ছাই হলো বেড়া আর ঘাসের কুঁড়েগুলো।
ট্রাকে তোলা হলো সস্ত হাতির দাঁত, লেজ, চোখের পাপড়ি, পায়ের পাতা, জলহস্তীর দাঁত আর চর্বি, জিরাফের লেজ, পেছনের পায়ের শিরা, সিংহের মাথা আর চর্বি, চিতাবাঘের মাথা, চিতার চামড়া, অ্যানটিলোপ আর গ্যাজেল হরিণের শিং, কুমির আর অজগরের চামড়া, ইগ্রেট, ফ্ল্যামিংগো, উটপাখি আর লম্বা-গলা। ধবল-বকের পালক; আরও নানা রকম জানোয়ারের শরীরের বিভিন্ন অংশ। তারের ফাঁস আর নষ্ট ফাঁদগুলোও তুলে নেয়া হলো। নইলে অন্য পোচাররা এসে ওগুলো আবার কাজে লাগাবে।
কি হবে ওসব দিয়ে? কিশোর জিজ্ঞেস করলো। বিক্রি করবেন?
না, বললেন ওয়ারডেন। নিরীহ পশুর রক্তে ভেজা ওই টাকা আমাদের চাই না। তার চেয়ে নিয়ে গিয়ে কোনো মিউজিয়মে রাখার ব্যবস্থা করবো। লোকে দেখবে। পোচারদের ওপর রাগ হবে তাদের, পোচিঙের বিরুদ্ধে তৈরি হবে শক্তিশালী জনমত। প্রতিবাদের ঝড় উঠবে।
লজে ফিরে এলো গাড়ির মিছিল। ওয়ারডেনের ব্যাণ্ডায় ঢুকলেন টমসন, সাথে তিন গোয়েন্দা। হাসিমুখে তাদের স্বাগত জানালেন জজ নির্মল পাণ্ডা। মুখে। মোলায়েম হাসি।
তুমি! চেঁচিয়ে উঠলেন টমসন। দেখা হয়ে ভালোই হলো। নাইরোবিতে ঠিকঠাক মতো গিয়েছিলে তো?
হ্যাঁ। মোমবাসায় ফিরে যাচ্ছি। ভাবলাম, দেখেই যাই পোচারদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে কতোটা লাভ হলো।
লাভ মানে! বললে বিশ্বাস করবে না, সাতচল্লিশ জনকে ধরে পাঠিয়েছি মোমবাসা জেলে। কাল সকালে হাজির করবে তোমার কোর্টে।
তাই নাকি, তাই নাকি? ভারি আনন্দের কথা, জজের কণ্ঠ শুনে রবিনের মনে হলো, আনন্দে ঘড়ঘড় করছে যেন বেড়াল। হাতে পেয়ে নিই আগে, উচিত শিক্ষা। দেবব ব্যাটাদের। পোচিঙের নাম ভুলিয়ে ছাড়বো। সর্দারটাকে ধরেছো?
সিলভার? নাহ। পালিয়ে গেল।
হায় হায়, করলে কি? আসল বদমাশটাকেই ধরতে পারলে না। গিয়ে তো। আরেক জায়গায় দল বানাবে, আর জানোয়ার মারা শুরু করবে। পালালো। কিভাবে?
ভীষণ চালাক, ব্যাটা। দলের লোকদের আগে বাড়তে বলে নিজে রইলো। পেছনে। দলের লোক যখন হেরে গেল, আমরা ওদেরকে ধরায় ব্যস্ত, সেই সুযোগে পালালো। কুকুর নিয়ে অনেক খুঁজলাম। পেলাম না। নদীতে নেমে গায়েব হয়ে গেছে।
কুকুরটার দিকে তাকালেন জজ। বাহু, ভারি সুন্দর কুকুর। একেবারে বাঘের বাচ্চা। এটাকে ফাঁকি দিয়েছে সিলভার? হাত বাড়িয়ে মাথায় চাপড় দিতে গেলেন তিনি।
অপরিচিত লোককে পছন্দ করতে পারলো না সিমবা। মৃদু ঘড়ঘড় করে। পিছিয়ে গেল। দাঁড়িয়ে গেল ঘাড়ের রোম। চোখ দেখে মনে হলো এখুনি ঝাঁপিয়ে পড়বে। তাড়াতাড়ি ওর কলার চেপে ধরলো মুসা। কি জানি কেন, শুরু থেকেই তাকে পছন্দ করে ফেলেছে সিমবা। কালিমবোর মতোই মুসার কথাও শোনে।
আরও দুচারটে কথা বলে বিদায় নিয়ে বেরোলেন জজ। তাকে এগিয়ে দিতে চললেন ওয়ারডেন, পিছু নিলো তিন গোয়েন্দা।
তীক্ষ্ণ চোখে জজ সাহেবের গাড়িটা দেখছে কিশোর। নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে। আকাশ থেকেই দেখেছে নাইরোবি যাওয়ার কাঁচা সড়কটা লাল মাটিতে ঢাকা। গাড়ি চললেই লাল ধুলো ওড়ে। জমার কথা লাল ধুলো, অথচ তার গাড়িটাতে পড়ে আছে সাদা ধুলোর হালকা আস্তরণ। বলেই ফেললো,গাড়িটা পরিষ্কার পরিষ্কার লাগছে? লাল ধুলোয় ঢেকে থাকার কথা।
অবাক হলেন জজ। সামান্য ওপরে উঠে গেল একটা ভুরু। তারপর হেসে ফেললেন। ও, হ্যাঁ হ্যাঁ, ভুলেই গিয়েছিলাম তোমরা গোয়েন্দা। তা বলেছো ঠিকই, ওই রাস্তায় একবার গেলেই লালে লাল। ফেরার সময় এতো ময়লা হয়ে গেল, শেষে পরিষ্কার না করিয়ে আর পারলাম না। পার্কে ঢোকার মুখেই পেট্রোল স্টেশনটা, ওখানে ওয়াশ করিয়েছি, আবার হাসলেন। আর কোনো প্রশ্ন?
না, লজ্জিত মনে হলো গোয়েন্দাপ্রধানকে। অভিনয় কিনা বোঝা গেল না।
জজ সাহেবও মাইও করেননি তার কথায়, অন্তত তার চেহারা দেখে তা-ই মনে হলো। ওয়ারডেনকে বললেন, চলি, ডেভিড। সাবধানে থাকবে, ওই পোচার হারামজাদাগুলোর কথা কিছুই বলা যায় না। কখন আবার লুকিয়ে-চুরিয়ে তীর মেরে বসে, তিন কিশোরকে বললেন। গোয়েন্দারা, আশা করি সিলভারকে ধরে ফেলতে পারবে। চলি, গুড বাই।
১১.
কি ভাবছো, কিশোর? পরদিন সকালে নাস্তার টেবিলে বসে জিজ্ঞেস করলেন ওয়ারডেন।