ওই যে, চেঁচিয়ে উঠলো মুসা। বলেছিলাম না। নিশ্চয় সিলভার।
আস্ত হারামী, রবিন বললো। নিজে পেছনে থেকে দলের লোক পাঠিয়েছে। মরলে ওরা মরবে, তার কি?
আবার আদেশ দিলো লোকটা। যাদের হাতে ধনুক ছিলো, তাড়াতাড়ি কাঁধে ঝুলিয়ে খুলে নিলো পিঠে বাঁধা বল্লম।
বল্লম নিচ্ছে কেন? রবিনের প্রশ্ন।
তীর দিয়ে লঙ রেঞ্জে লড়াই করে, ওয়ারডেন জবাব দিলেন। কাছে থেকে বলুম বেশি মারাত্মক। ওরা মনে করেছে আমরা নিরস্ত্র, তাই কাছে এসে খুঁচিয়ে মারতে চাইছে। জানোয়ার মেরে সাহস এত বেড়েছে, মানুষ মারতেও আর দ্বিধা নেই এখন। হুঁশিয়ার থাকবে। বল্লমের মাথায়ও বিষ লাগায়।
টমসনের দিকে তাকিয়ে আছে মাসাইরা। কখন তিনি আদেশ দেন। কিন্তু চুপ করে রইলেন তিনি। বিশ ফুটের মধ্যে চলে এলো পোচাররা।
রেডি! চেঁচিয়ে বললেন ওয়ারডেন।
ডার্ট তুললো সবাই। নিজেদের কাছেই হাস্যকর লাগছে তাদের এই অস্ত্র, পোচাররা তো হাসবেই। আট ফুট লম্বা বিষাক্ত বল্লমের বিরুদ্ধে কয়েক ইঞ্চি লম্বা কতগুলো খাটো লাঠি! তবে, উগাণ্ডা কিংবা কঙ্গোর লোক হলে হাসতো না ওরা, ঠিকই বুঝতে বল্লমের চেয়ে কতো বেশি মারাত্মক লাঠিগুলো। কেনিয়ায় এই অস্ত্র এখনও সাধারণ মানুষের কাছে অপরিচিত।
ভাবতে অবাক লাগছে কিশোরের, ডার্টগান কি সিলভারও চেনে না? নাকি দূর থেকে বুঝতে পারছে না?
দূর থেকে প্রথমে চিনতে পারেনি, বোঝা গেল। হঠাৎ চেঁচিয়ে কি বলতে শুরু করলো সে। সোয়াহিলি ভাষা। মুগামবি অনুবাদ করে বললো, চিনে ফেলেছে। ওদের ফিরে যেতে বলছে সে।
চিনতে অনেক দেরি করে ফেলেছে সিলভার। লড়াইয়ের উন্মাদনা রক্তে নাচন তুলেছে তখন পোচারদের, নেতার কথা শুনলো না। বিজয় তো অনিবার্য, কেন ফিরে যাবে? ফিরেও তাকালো না ওরা। বল্লম বাগিয়ে হুল্লোড় করে ছুটে এলো।
ফায়ার! আদেশ দিলেন ওয়ারডেন।
চোখের পলকে ছুটে গেল একঝাঁক খুদে-বর্শা। কালো দেহগুলোতে বিধে গেল ইঞ্জেকশনের সুচ, চোখের পলকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওষুধ ঢুকিয়ে দিলো শরীরে।
চমকে গেল পোচাররা। ওরা ভাবলো, অ্যাকো। টান দিয়ে দিয়ে শরীর থেকে খুলে ফেলতে লাগলো ডার্টগুলো। সুচের মাথা থেকে টপটপ করে ঝরছে সাদা তরল। অ্যাকোর রঙ কালচে বাদামী, এটার রঙ সাদা, তারমানে অ্যাকো নয়। আতঙ্ক দূর তো হলোই না, আরও বাড়লো ওদের। ভাবলো, অ্যাকোর চেয়েও খারাপ কোনো বিষ। ভয়েই পড়ে গেল কয়েকজন, মাটিতে পড়ে হাত-পা ছুঁড়তে শুরু করলো।
অ্যাকোর চেয়ে অনেক দ্রুত কাজ করলো সেরনিল। অবশ করে দিলো। মাংসপেশী। ক্ষণিক আগের শক্তিশালী পাগুলো গেল দুর্বল হয়ে, শরীরের ভার রাখতে পারছে না আর। ভয়ে যারা পড়েছিলো, তারা বেহুশ হলো। যারা দাঁড়িয়ে ছিলো, টলে উঠে ধড়াস ধড়াস করে পড়তে লাগলো কাটা কলা গাছের মতো। আর যারা ডার্ট খেয়ে দৌড় দিয়েছিলো, তারাও বাঁচতে পাড়লো না, হুমড়ি খেয়ে পড়লো এক এক করে। কয়েকজন পড়লো সত্যিকার বিপদে। এলোপাতাড়ি দিশেহারা হয়ে ছোটার সময় মনেই রইলো না, ফাঁদ পাতা আছে। ধরা পড়লো ওই ফাঁদে। ভীষণ দুঃসাহসী কয়েকজন ভাবলো এমনিতেওঁ মরেছি, ওমনিতেও, এগিয়ে এসে বল্লম দিয়ে খোঁচা মেরে তিনজন মাসাইকে আহত করে দিলো বেহুশ হওয়ার আগে।
যেমন শুরু হয়েছিলো তেমনি প্রায় হঠাৎ করেই শেষ হয়ে গেল লড়াই। ঘাসের ওপর লুটিয়ে আছে অসংখ্য কালো দেহ। ফাঁদে আটকা পড়েছে যারা, তারাও গোঙাচ্ছে না ব্যথায়, গভীর ঘুমে অচেতন।
তোলো সব কটাকে, ওয়ারডেন আদেশ দিলেন। খাঁচায় ভরো।
পার্কের এক জায়গা থেকে অনেক সময় আরেক জায়গায় জানোয়ার স্থানান্তরের প্রয়োজন পড়ে, তখন ওসব খাঁচা ব্যবহার হয়। এতো বড় খাঁচা আছে, জিরাফকেও ভরে রাখা যায়। পাওয়ারওয়াগনে করে বয়ে নেয়া হয় সেসব খাঁচা। কিশোরের বুদ্ধিতেই কয়েকটা ওয়াগন নিয়ে আসা হয়েছে সঙ্গে করে, একটাতে হাতির খাঁচা। খুশি হয়েই অচেতন দেহগুলোকে বয়ে এনে খাঁচায় ভরতে লাগলো। মাসাইরা।
ছোট জানোয়ারের ফাঁদে যারা ধরা পড়েছে তাদেরকে ছাড়ানো কঠিন হলো না, মুশকিল হলো হাতি আর সিংহের ফাঁদে যারা আটকেছে। পায়ে কেটে বসেছে। ইস্পাতের দাঁত।
ওরকম একটা ফাঁদের কাছে গিয়ে হাত নেড়ে ডাকলেন ওয়ারডেন তিন গোয়েন্দাকে।
কাছে গিয়ে দাঁড়ালো ওরা।
আমাদের দুজন রেঞ্জার এরকম ফাঁদেই আটকে মরেছে? ওয়ারডেন। বললেন। বোঝো এখন কারণটা। নিশ্চয় ভেবে অবাক হয়েছে, কেন ওরা নিজেদের ছাড়াতে পারেনি। মানুষের শরীরে দুটো চমৎকার টুলস আছে, হাত।
জানোয়ারের নেই। দেখি তো, ফাঁদ থেকে খোলো তো লোকটাকে।
কিশোর চেষ্টা করে বিফল হলো। রবিন গেলই না। শার্টের হাতা গুটিয়ে ব্যায়াম পুষ্ট পেশল বাহু বের করে বীর-বীক্রমে এগোলো মুসা আমান, ভাবখানা– এটা একটা কাজ হলো নাকি? ফাঁদের দুটো চোয়াল দুই হাতে ধরে টান দিলো। নড়লোও না ওগুলো। জোর বাড়ালো সে, কপালে ঘাম জমলো, চামড়া ফেটে বেরিয়ে আসবে যেন হাতের পেশী। শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে ফোঁস করে মুখ দিয়ে বাতাস ছাড়লো। খাইছে! সাঙ্ঘাতিক শক্ত!
হ্যাঁ, মাথা দোলালেন টমসন। হাতিও পা ছাড়াতে পারে না। খালি হাতে খোলা যাবে না, যন্ত্র লাগবে।
কিশোর তাকিয়ে আছে ফাঁদ বাঁধার শেকলটার দিকে। দশ ফুট লম্বা লোহার শেকল, এক মাথা ফাঁদের সঙ্গে আটকানো, আরেক মাথা লোহার গজালের সঙ্গে। গজালটা মাটিতে পুঁতে দেয়া হয়েছে।