দেয়ালের ছবিগুলোর দিকে ঘুরল জিনা। তিন গোয়েন্দাকে নিয়ে এগোল। খুব সুন্দর, না? কেউ কেউ পরামর্শ দিয়েছে ওগুলো ফেলে দিতে। তাহলে নাকি ভূত চলে যাবে।
মাথা খারাপ, বলল রবিন। রিআল আর্ট ওগুলো।
কি, ক্যাচিনা? জিজ্ঞেস করল কিশোর। দেখে তো কিছু বোঝা যায় না।
লাল, সাদা আর হলুদে আঁকা একটা ছবি দেখিয়ে জিনা বলল, ওটা মেঘ-ক্যাচিনা। ওই যে, পালকের পাখার মত মনে হচ্ছে, ওটা ঈগল-ক্যাচিনা। এই যে, সাদা রোমশ, এটা ভালুক-কাচিনা। নীল মুখোশ আর সাদা কিম্ভুত শরীর দেখিয়ে বলল, প্রিকলি-পার ক্যাকটাস ক্যাচিনা। কয়েকটা অদ্ভুত ছবি দেখাল, ওগুলো কি, কেউ বুঝতে পারেনি। চেনা যায় না।
হুঁ, অচেনা ছবিগুলো দেখতে দেখতে বলল রবিন, টুরিস্টরা পছন্দ করবে।
আমারও তাই মনে হয়। হাসল জিনা। আচ্ছা, বলো এখন, কে কোথায় থাকবে? এ ঘরের পাশেই দুটো ঘর আছে। ওখানে থাকলে যখন খুশি এসে ছবিগুলো দেখতে পারবে। ঘর আছে দুটো, কোনটাতেই দু-জনের বেশি জায়গা হবে না। একলা কে শুতে চাও?
আমিই থাকি, কি বলো? মুসা আর রবিনের দিকে তাকাল কিশোর।
থাকো। হাত নাড়ল মুসা। আমি বাপু ভূতের ঘরের কাছে একলা থাকতে পারব না।
দুটো ঘর থেকেই দরজা দিয়ে হলঘরে ঢোকা যায়।
বাড়ির সামনের অংশ ছেড়ে দিতে হয়েছে লবি আর অফিসের জন্যে, জিনা জানাল। তাই সমস্ত বেডরুমের দরজা হলের দিকে করা। হয়েছে। আমার আর টনির ঘর তোমাদের ঘরের কাছেই। চাচার ঘরও। সব কিছু ঠিকঠাক হলে এ ঘর মেহমানদের ছেড়ে দিয়ে চাচা চলে যাবে ওপরে।
ভিকিখালারা কোথায় থাকছে?
আপাতত দোতলায়, আঙুল তুলে মাথার ওপরের ছাত দেখাল জিনা।
ভূতটাকে কোন্ জায়গায় দেখেছেন তোমার চাচা?
এ ঘরেই। প্রথমে ভাবল চোরটোর কিছু, ধরার জন্যে দৌড় দিতে গিয়ে কার্পেটে পা বেধে খেল আছাড়।…ভূতটাকে মিলিয়ে যেতে দেখল ওই ছবিটার ভেতর… নাম-না-জানা একটা ক্যাচিনা দেখাল জিনা।
স্থির চোখে ছবিটার দিকে চেয়ে রইল কিশোর। যেন ছবির মুখোশে ঢাকা মূর্তিটা মূল্যবান তথ্য জানাবে তাকে।
কিন্তু আগের মতই রইল ছবিটা, দুর্বোধ্য। হঠাৎ ঘুরে দাঁড়াল কিশোর। চলল, ঘর দেখাও। হাতমুখ ধুয়ে রেডি হইগে। ভিকিখালা ডাকলে…
না, অত তাড়াহুড়ো নেই। রান্না শেষ হতে সময় লাগবে। ইচ্ছে করলে ছোট্ট একটা নিদ্রাও দিয়ে নিতে পারো।
আরে না, এখন কি ঘুমায়, তাড়াতাড়ি বলল মুসা। পেট ঠাণ্ডা না করলে ঘুম আসবে না।
ছেলেদের সুটকেস আর অন্যান্য মালপত্র সব একই ঘরে রেখেছে টনি। সুটকেসের হাতলে এয়ারলাইনসের নাম ছাপা ট্যাগ লাগানো, ট্যাগের উল্টোপিঠে যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর।
নিজের সুটকেসটা তুলে নিয়ে এল কিশোর। ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করল। সুটকেসের খোপ থেকে চাবি বের করে তালায় ঢুকিয়ে মোচড় দিল। খোেলা!
তালা লাগাতে ভুলে গিয়েছিল?–নিজেকেই প্রশ্ন করল সে। রওনা হওয়ার আগে তাড়াহুড়ো করেছে, ঠিক, তবু তালা না লাগিয়ে..সুটকেস খুলে কাপড় বের করতে শুরু করল। কোটা কোথায় রেখেছিল, মনে। করার চেষ্টা করছে। ঠিকমত আছে তো সব? নাকি ঘাটাঘাটি হয়েছে?
মনে হলো ঠিকই আছে।
কিন্তু নতুন কেনা শার্টটা টান দিতেই ভেতরে কি যেন নড়ে উঠল। হাত সরিয়ে নিল ঝট করে। ভাঁজ করা শার্টের এক কোনা দুই আঙুলে আলতো করে ধরে তুলে একটা হ্যাঁঙার দিয়ে খোঁচা দিল ফুলে থাকা জায়গায়। আরও জোরে নড়ে উঠল জায়গাটা। ভেতর থেকে টুপ করে মাটিতে খসে পড়ল কি যেন।
হাঁ হয়ে গেল কিশোর। বড় বড় হয়ে গেল চোখ। বড় বাঁচা বেঁচে গেছে!
প্রায় আড়াই ইঞ্চি লম্বা এক কাঁকড়াবিছে! ভীষণ ভঙ্গিতে নাড়ছে। বাঁকানো লেজটা-ডগায় বেরিয়ে আছে মারাত্মক বিষাক্ত হুল।
পাঁচ
বোবা হয়ে কুৎসিত জীবটার দিকে তাকিয়ে আছে কিশোর। কিলবিল করে এগিয়ে আসছে ওটা। হঠাৎ যেন সংবিৎ ফিরে পেল সে। পায়ে শক্ত সোলের জুতো, লাফ দিয়ে গিয়ে মাড়িয়ে ভর্তা করে ফেলল বিছেটাকে।
সুটকেসে এল কিভাবে? বিড়বিড় করল আপনমনে। রকি বীচ থেকে সঙ্গে আসেনি, শিওর।
লেজ ধরে থেঁতলানো দেহটা তুলে নিয়ে ফেলে দিল ওয়েস্টপেপার বাস্কেটে।
ভাবছে, এয়ারপোর্টে কোনভাবে ঢুকল, নাকি এখানে আসার পর রহস্যময় চিঠিটার সঙ্গে কোন সম্পর্ক আছে?
তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে ইচ্ছে করেই সুটকেসে ঢুকিয়ে দিয়েছে কেউ। কে ঢোকাল? সেই ড্রাইভারটা, যে অ্যাক্সিডেন্ট করতে চেয়েছিল? চিঠিটাও কি ওই ড্রাইভারই পাঠিয়েছে?
একটা ব্যাপার পরিষ্কার, কেউ একজন চাইছে না, ভূত-রহস্যের তদন্ত হোক। শুরু থেকেই সে জানে-ভিকিখালা চিঠি দেয়ার সময় থেকেই, তিন গোয়েন্দাকে দাওয়াত করে আনা হচ্ছে তদন্ত করার জন্যে। রহস্যের কিনারা হলে নিশ্চয় তার কোন অসুবিধে আছে। তাই ঠেকিয়ে রাখতে চাইছে?
কিন্তু অসুবিধেটা কি? যা-ই হোক, হুঁশিয়ার থাকতে হবে, নিজেকে বলল কিশোর। কাপড় পাল্টাতে শুরু করল।
ডিনার শেষে রান্নাঘরের লাগোয়া বৈঠকখানায় বসল ছেলেরা। জিনা আর টনিও রয়েছে সঙ্গে।
কাঁকড়াবিছের কথা শুনে দু-জনের কেউই অবাক হলো না।
এখন তো নেইই, বলল টনি। বাড়িটাতে যখন প্রথম ঢুকলাম তখন এলে বুঝতে। যেখানেই হাত দিতাম, বিছে বেরোত। মেরে সাফ করেছি। তবু, সকালবেলা না দেখে জুতোয় পা ঢুকিও না।
বাপরে, মুসা বলল। রাতে কম্বলের মধ্যে ঢুকবে না তো?