নিয়ে সোজা আস্তাবলে গেলে ভাল করতে, জিনা বলল। যাকগে, এসেছ এসেছ, এখন চলে যাও। আমি ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি ওদেরকে, তুমি ঘোড়াটা খুঁজে পেয়েছ।
আচ্ছা, মাথা কাত করে সায় জানাল জুলিয়ান। পিন্টোর মুখ ঘুরিয়ে অ্যাপলুসাটাকে টেনে নিয়ে চলে গেল।
সেদিকে চেয়ে অস্বস্তিভরে মাথা নাড়ল ভিকি। ঠিক ওকে চোর ভাববে ওরা! তিন গোয়েন্দার দিকে ফিরল সে। কি যে করব, বুঝি না! একটা সমস্যা! এসেই এসব ঝামেলা দেখে নিশ্চয় বিরক্ত হচ্ছ। এসো, ঘরে এসো।
পাথরের বাড়িটার ছায়ায় এসে অকারণেই গায়ে কাঁটা দিল কিশোরের। অথচ বাতাস গরম এখানেও। অবচেতন মন বলছে, হুঁশিয়ার! বিপদ আসছে!
চার
বিশাল বাড়ির ভেতরটাও চমকে দেয়ার মত। পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকে এগোলে সামনে পড়বে মস্ত এক ঘর, সাজানো-গোছানো সোফা আর চেয়ার, বসে কথা বলার জন্যে। এক কোণে একটা টেলিভিশন সেট। পেছনের দ্বিতীয় দরজা দিয়ে ঢুকলে, অতি-আধুনিক রান্নাঘর। ওরা ঢুকল সেখানেই। বাতাসে খাবারের লোভনীয় গন্ধ।
নাক কুঁচকে গন্ধ শুকল মুসা। খাইছে! কমলা ফুলের গন্ধের চেয়ে ভাল।
ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই হয়ে যাবে, ভিকি বলল। রাধছিলাম, এই সময় এল ডাক্তার।
তুমি লেগে যাও আবার, খালা, জিনা বলল। জিংম্যানের সঙ্গে আমি কথা বলব। ডেনিংদেরও ফোন করব।
আচ্ছা। চুলার দিকে এগোল ভিকি।
তিন গোয়েন্দাকে নিয়ে খোলামেলা একটা ডাইনিং রুমে ঢুকল জিনা। অন্যান্য ঘরের মতই এটাও বিরাট। চার কিংবা ছয় চেয়ারের অনেকগুলো খাবার টেবিল। কিশোর আন্দাজ করল, জায়গা যা আছে, তাতে এর ডবল চেয়ার-টেবিল জায়গা হবে। ছোট ছোট ইনডিয়ান কম্বল আর চাদর দিয়ে দেয়াল সাজানো। বেশ কয়েকটা পেইন্টিং রয়েছে, সবই মরুভূমির দৃশ্য। ইনডিয়ান ঝুড়িতে কায়দা করে সাজানো রয়েছে শুকনো ফুল, পাপড়ি শুকিয়ে গেলেও ঝরে যায়নি। ইচ্ছে করেই পুরানো ওয়েস্টার্ন পরিবেশ গড়ে তোলা হয়েছে।
এসো, তোমাদের ঘর দেখিয়ে দিই, জিনা বলল। তারপর জুলিয়ানের ব্যাপারটা দেখতে হবে। ভাবছি, বিকেলটা তোমাদের সঙ্গে কাটাব…
তোমার কি মনে হয়, জিনা? প্রশ্ন করল কিশোর। জুলিয়ান ঘোড়াটা চুরি করে এনেছে?
সে কথা ভাবতেও খারাপ লাগে, ঘুরিয়ে জবাব দিল জিনা। কি আর বলব?, ভিকিখালার কাছে শুনলাম, ভালই কাটছিল এখানে তাদের। জুলিয়ান ঘোড়ায় চড়া শেখার পর থেকেই নানারকম গোলমাল…
আমার কাছে কিন্তু বেশ চালাক ছেলে মনে হলো, রবিন বলল।
ইংরেজি তো ভাল বলে। এখানে এসে এত তাড়াতাড়িই শিখে ফেলল?
ওর মা ইংরেজি জানে। সেজন্যেই শিখতে পেরেছে। বাবা তো মারা গেছে ওর তিন বছর বয়েসের সময়। বাবার চেহারাই ভালভাবে মনে করতে পারে না।
ডাইনিং রুম থেকে ওদেরকে আরেকটা হলরুমে নিয়ে এল জিনা।
আরে! ওগুলো ক্যাচিনা? অবাক হয়েছে মুসা। সাজানো দেয়ালের দিকে চেয়ে আছে সে।
চাচার প্রাইভেট গ্যালারি এটা, হেসে বলল জিনা। এবং আমাদের ঘরোয়া ভূতের বাসস্থান।
এসব কিচ্ছা নিশ্চয় বিশ্বাস করো না তুমি? বলে উঠল কেউ।
ফিরে তাকাল সবাই। উল্টোদিকের একটা দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকছে। লম্বা, বলিষ্ঠদেহী এক লোক।
ও, ডাক্তার আঙ্কেল, এসে পড়েছেন, বলল জিনা। আপনার কথাই ভাবছিলাম। ফোন করতাম। জুলিয়ানের ঘোড়া নিয়ে আসার সংবাদ সংক্ষেপে জানাল ডাক্তারকে।
ঠিক আছে, ডাক্তার বলল, তোমার আর ফোন করার দরকার নেই। ডেনিংদের আমিই জানিয়ে দেব।
এতক্ষণে যেন তিন গোয়েন্দার ওপর চোখ পড়ল ডাক্তারের।
পরিচয় করিয়ে দিল জিনা।
অ, তোমরাই তাহলে সেই বিখ্যাত তিন গোয়েন্দা। কিশোরের দিকে ফিরল জিংম্যান। ভিকি আর জিনার ধারণা, তুমি এলে ওই ভূত রহস্যের সমাধান হবেই হবে।
হাসল শুধু কিশোর, কিছু বলল না।
তা তো হবেই, জোর গলায় বলল জিনা। কিশোর পাশার কাছাকাছি থাকলে ভূতের আরামের দিন শেষ।
বাড়িয়ে বলছ, বলল কিশোর। পারব কিনা জানি না, তবে ভূত তাড়ানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করব আমরা। বদনাম যে কোন রিসোর্টের জন্যে মারাত্মক।
আমিও, তো সে কথাই বলি, সঙ্গে সঙ্গে কথাটা ধরল ডাক্তার।
ওই ছেলেটাকে নিয়েই যত ভয়। যে হারে গোলমাল পাকাচ্ছে…জিনা, তোমার চাচার স্বার্থেই বলি, ছেলেটা ওরকম করতে থাকলে কিন্তু সাংঘাতিক বদনাম হয়ে যাবে। আর পড়শীদের সঙ্গে তোমার চাচার সম্পর্ক ভাল না থাকলে, এই রিসোর্ট চালাতে পারবে না।
জুলিয়ানের কথা বলছেন তো? কিন্তু ওর বয়েসী একটা ছেলে কি আর এমন গোলমাল পাকাবে, যে সবাই অস্থির হয়ে থাকবে? জল জুলিয়ানের লজ্জিত হাসি, বড়বড় বাদামী চোখ আর ঘোড়ার পিঠে
গুলমাল পাকবে জড়সড় হয়ে বসে থাকার দৃশ্য কল্পনা করল কিশোর। নাহ, ওই ছেলে খারাপ কিছু করবে বলে ভাবা যায় না।
যা করছে তা-ই যথেষ্ট, গম্ভীর হয়ে বলল ডাক্তার। অ্যাপলুসাটার অনেক দাম। শুধু চুরিই নয়, আরও অনেক শয়তানী সে করেছে। এ-যাবৎ তো শুধু গাছ জ্বালিয়েছে, কোনদিন গোলাঘর আর খড়ের গাদায় আগুন লাগায় কে জানে। না, জিনা, হেসে উড়িয়ে দেয়ার কোন মানে হয় না। এসব ব্যাপার সিরিয়াসলি নেয়া উচিত।
ডাক্তারের কণ্ঠস্বরে অবাক হলো জিনা। কিছু বলতে যাচ্ছিল, এই সময় ঘরে ঢুকল টনি। এই যে, ডাক্তার আঙ্কেল, আপনাকেই খুঁজছি।
র্যাঞ্চ সংক্রান্ত কাজের কথায় মশগুল হলো দু-জনে।