অধৈর্য করে দেয়ার আরও অনেক কিছু আছে, মুসা আমান, হেসে বলল জিনা। ভিকিখালা তো তোমাকে চেনে, তোমরা আসার সংবাদ শুনেই খাবার বানাতে লেগে গেছে। আধমণী একখান ভুড়ি তৈরি করে। দিয়ে তারপর তোমাকে রকি বীচে ফেরত পাঠাবে এবার।
পথের একটা বাঁক ঘুরল স্টেশন ওয়াগন। গাড়িটাকে টনি দেখল আগে, তারপর রবিন; চেঁচিয়ে উঠল, আরে আরে, কানা নাকি!
উল্টো দিক থেকে নাক সোজা করে গুঁতো লাগাতে ছুটে আসছে। একটা কার।
তিন
সাঁই করে স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে পাকা রাস্তার পাশের মাটিতে গাড়ি নামিয়ে আনল টনি। অসমতল জায়গায় পড়ে নাচতে শুরু করল স্টেশন ওয়াগন, প্রচণ্ড ঝাঁকুনি। নানারকম সুরে চেঁচামেচি জুড়ল আরোহীরা। আতঙ্কিত চোখে তাকাল ঢালের দিকে। কঠিন পাথুরে মাটির ঢাল নেমে গেছে প্রায় দশ-বারো ফুট, তারপর শুরু হয়েছে মাঠ, তাতে বড় বড় কাটাঝোঁপ।
রুখতে পারল না টনি, ঢালে নেমে গেল গাড়ির সামনের চাকা। এরপর আর আটকানোর উপায় নেই, ব্রেক করলে উল্টে যাবে।
লাফাতে লাফাতে মাঠে নামল গাড়ি, ঝোঁপঝাড় ভেঙে এসে থামল। ইঞ্জিন গেল বন্ধ হয়ে। হুইল শক্ত করে চেপে ধরে আছে এখনও টনি, আটকে রাখা নিঃশ্বাস ছাড়ল শব্দ করে। ব্যাটা মনে হয় গলা পর্যন্ত টেনেছে। এভাবে গাড়ি চালায় কেউ?
মুসার বাহু খামচে ধরে রেখেছিল জিনা, আস্তে করে ছেড়ে দিল।
বাপরে বাপ, বাঘের নখ; না না, বাঘিনীর! রক্ত বের করে ফেলেছে, বাহু ডলছে মুসা। তা, টনি, এখানে লোকে এভাবেই গাড়ি চালায় নাকি, হে?
ইচ্ছে করে করেছে শয়তানিটা, গম্ভীর হয়ে আছে কিশোর। ঠেলে ফেলে দিতে চেয়েছিল আমাদের। অ্যাক্সিডেন্ট করাতে চেয়েছিল। রহস্যময় চিঠিটা ফালতু শাসানী বলে আর মনে হচ্ছে না এখন।
আমারও তাই মনে হলো, একমত হলো রবিন। কিন্তু কেন?
ক্যাচিনা রহস্যের সঙ্গে কোন যোগাযোগ আছে হয়তো, চিন্তিত দেখাচ্ছে কিশোরকে।
ফিরে চাইল টনি। লাইসেন্স নাম্বার দেখেছ?
এত তাড়াতাড়ি ঘটেছে ঘটনা, দেখার সময়ই পায়নি কেউ।
হুঁ, স্টার্টারের চাবিতে হাত দিল টনি। এখন এটার ইঞ্জিন চালু হলেই বাঁচি। কয়েকবারের চেষ্টায় চালু হলো ইঞ্জিন। ঝোঁপঝাড়ের কিনার দিয়ে গাড়ি চালাল সে। কিছুদূর এগোনোর পর মাঠের সঙ্গে এক সমতলে এসে গেল পথ। রাস্তায় উঠল গাড়ি।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল আরোহীরা।
মেসা ছাড়িয়ে এল ওরা। পাতলা হয়ে এসেছে, পথের দু-ধারের ঝোঁপ। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বাড়িঘর। নির্মেঘ নীল আকাশে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে উঁচু উঁচু স্যাগুয়ারো ক্যাকটাস। বিচিত্র ডালপাতা। বসন্ত, তাই ফুল ফুটেছে। ডালের মাথায় মাখনরঙা ফুলের মুকুট।
অ্যাপাচি জাংশন পেরোল। সরু হয়ে এল পথ।
হাত তুলে দূরে বাড়িটা দেখাল জিনা।
একেবারে তো দুর্গ, মুসা বলল।
হাসল জিনা। প্রথমবার দেখে আমিও তাই বলেছিলাম।
দুর্গের বাড়া, বলল টনি। কয়েক ফুট পুরু দেয়াল। এভাবে বানানোর কারণ আছে। ইনডিয়ানদের রাজত্ব ছিল তখন এখানে। নিরাপত্তা চেয়েছিলেন মিস্টার লেমিল।
দূর থেকে দেখলে মনে হয় পাহাড়েরই অংশ, রবিনের মন্তব্য।
সুপারস্টিশন থেকে এসেছে বেশির ভাগ পাথর। বাইরেটা যেমন আছে তেমনি রেখে দিয়েছেন মিস্টার উইলসন, কিছুই বদলাননি। পুরানো গন্ধটা রাখতে চেয়েছেন আরকি। টুরিস্ট অ্যাট্রাকশন বাড়বে।
ফ্যানটাসটিক! মুগ্ধ হয়ে দেখছে মুসা। এরকম বিল্ডিঙ আছে, ভাবিনি।
অন্য বাড়িগুলো কোনটা কি? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
ডানের ছোটটা আস্তাবল, বলল জিনা, ওই যে পাশেই কোরাল। উল্টোদিকের ছোট ছোট বাড়িগুলো বাড়তি বাংলো। লোক বেশি হয়ে গেলে ওখানে জায়গা হবে। মেইন হাউসের পেছনে বিশাল স্নানের ঘর আছে, সুইমিং পুল আছে। কাছাকাছি টেনিস কোর্ট, র্যাকেটবল কোর্ট তৈরি হচ্ছে। দম নিয়ে বলল, অনেক কিছুই তৈরি বাকি এখনও।
হুঁ, খুব বড় কাজ হাতে নিয়েছেন, মাথা ঝাঁকাল কিশোর।
তোমার চাচাকে সাহায্য করার কে কে আছে?
ভিকিখালা আর তার স্বামী, মিস্টার ডিউক। উনি আছে, প্রায় সব কাজই দেখাশোনা করে। আর আছে ডক্টর জিংম্যান, হাসল জিনা। ডক্টর জিংম্যান আমাদের সবচেয়ে নিকট প্রতিবেশী। বাড়ি ওই-ই দিকে, পর্বতের দিকে হাত তুলে দেখাল সে। খুব সাহায্য করে চাচাকে।
দশ-পনেরোজন মেহমানকে এখনই জায়গা দিতে পারি আমরা, জানাল টনি। বাংলোগুলো হয়ে গেলে আরও বিশ-বাইশজনকে দিতে পারব।
আসলে হচ্ছেটা কি এখানে? জিজ্ঞেস করল রবিন। সরু পথের দুই ধারে ফ্যাকাসে সবুজ গাছগুলো ছোট ছোট হলুদ ফুলে বোঝাই, সেদিকে চেয়ে আছে সে। লোক দেখানো…মানে ডিউড র্যাঞ্চ, নাকি সত্যি সত্যি র্যাঞ্চ এটা?
তারমানে র্যাঞ্চ সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা আছে তোমাদের, ভাল, মাথা কাত করল টনি। এটাকে র্যাঞ্চ না বলে হেলথ রিসোর্ট বলা উচিত। মিস্টার উইলসন চান, বদ্ধ জায়গায় থাকতে থাকতে যারা বিরক্ত হয়ে গেছেন, তারা এখানে এসে খোলা হাওয়ায় একটু দম নেবেন, সেই সঙ্গে কিছুটা ব্যায়াম, কিছুটা বিশ্রাম আর খাওয়া-দাওয়াটা ঠিকমত করবেন। তাজা হয়ে ফিরে যাবেন আবার শহরে।
ঠিকমত খাওয়া? শঙ্কিত হলো মুসা। ডায়েট কন্ট্রোলের ব্যাপার। স্যাপার না তো?
আরে না, হাসল জিনা, তার হাসিতে যোগ দিল সবাই। ওজন কমানোর কোন ব্যাপার নেই। ভিকিখালার পাল্লায় পড়ে বরং তালপাতার সেপাইরা নাদুস নুদুস হয়ে ফিরে যাবে। তবে কেউ যদি ভুড়িটুরি কমাতে চায়, তাহলেও অসুবিধে নেই। ওই কাজেও ভিকিখালা ওস্তাদ। নাচ, ঘোড়ায় চড়া, সাঁতার,