রিসোর্ট এলাকায় বাইরের লোককে খুঁড়তে দেখেছে। কই, কখনও বলেনি তো জুলিয়ান? জিনা অবাক।
ও ভেবেছিল ওরা প্রসপেক্টর, জবাব দিল মুসা। পাহাড়ে অনেকেই সোনা আর মূল্যবান পাথরের জন্যে ওরকম খোঁড়াখুঁড়ি করে, বিশেষ করে এই অঞ্চলে। অনেককে দেখেছে জুলিয়ান। তাছাড়া, ও জানতই না যে এটা রিসোর্টের জায়গা। সাধারণ প্রসপেক্টর মনে করেছিল রিকি আর পেককেও। তবে বদমেজাজী প্রসপেক্টর, যারা মানুষ দেখলেই গুলি করে। সেজন্যে ওদের কাজ লুকিয়ে লুকিয়ে দেখত।
হুঁ। অপরাধ করে কেউ পার পায় না, বিড়বিড় করল শেরিফ।
এখানে আর দাঁড়িয়ে থেকে কি লাভ? চলো, সবাই। মিস্টার ডিউক, চলুন?
হ্যাঁ, চলুন। ভিকি ওদিকে অস্থির হয়ে থাকবে। দেরি দেখলে নিজেই না বেরিয়ে পড়ে…
কিশোরের পাশাপাশি চলতে চলতে বলল রবিন, আরেকটা রহস্য কিন্তু বাকি রয়ে গেল। ক্যাচিনা ভূতের রহস্য।
অ্যাঁ! ফিরে তাকাল কিশোর। ও, ওটারও সমাধান করে ফেলেছি।
এই, রবিন বলল, আমার কথা শুনছ তো?
হ্যাঁ, তোমার কথার জবাবই তো দিলাম। র্যাঞ্চে চলো, দেখাব। আসামী নিয়ে চলে যেতে চাইল শেরিফ, কিশোর বাধা দিল, আর একটু, শেরিফ। বেশিক্ষণ আটকাব না। আরেকটা মজার জিনিস দেখে যান।
সবাইকে নিয়ে হলরুমে এল সে, ক্যাচিনা পেইন্টিংগুলো যে ঘরে রয়েছে। চমৎকার একটা শো দেখাবে যেন, এমন ভঙ্গিতে ছোটখাটো একটা বক্তৃতা দিল। ভাল অভিনেতা সে, জমিয়ে ফেলল মুহূর্তে। আরাম করে চেয়ারে বসল সবাই। শো দেখবে।
ট্রাংকে যে দুটো কমাণ্ডার পাওয়া গেছে, তার একটা শেরিফের কাছ থেকে চেয়ে নিল কিশোর। যেটা মুসা চিনতে পারেনি।
এই যে, এবার ভূত দেখতে পাবেন, বলেই টিপে দিল কমাণ্ডারের একটা সুইচ, মেঘ-ক্যাচিনাটাকে লক্ষ্য করে।
কয়েক মুহূর্ত কিছুই ঘটল না। তারপর শুরু হলো মৃদু গুঞ্জন। বাড়ল আওয়াজ। দুর্বোধ্য ইনডিয়ান গান আরম্ভ হলো। সড়সড় করে এক পাশে কয়েক ইঞ্চি সরে গেল ফ্রেমে বাঁধানো মেঘ-ক্যাচিনার ছবিটা। কালো একটা ফোকর বেরিয়ে পড়ল।
আলো নিভিয়ে দাও, চেঁচিয়ে বলল কিশোর। জলদি!
উঠে গেল মুসা আর রবিন। পটাপট নিভে গেল সমস্ত আলো। ঘর অন্ধকার।
দেখা দিল বেগুনী আলো। মেঘের মত ভেসে ভেসে এগিয়ে এল ঘরের মাঝখানে। ঘুরে ঘুরে রূপ বদলাচ্ছে।
খানিকক্ষণ নাচ দেখিয়ে ধীরে ধীরে আবার দেয়ালের দিকে রওনা হলো ভূত, ছবিটার কাছে গিয়ে মিলিয়ে গেল।
হয়েছে। আলো জ্বেলে দাও এবার, অনুরোধ করল কিশোর।
জ্বলে উঠল আলো। সবাই একসঙ্গে কথা বলে উঠল। নানারকম প্রশ্ন। ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে। কালো ফোকরটা দেখা যাচ্ছে না আর, ছবিটা আগের জায়গায় সরে এসে ঢেকে দিয়েছে।
আস্তে, আস্তে, হাত তুলল কিশোর। মুচকি হাসল। এক এক করে জিজ্ঞেস করো, নইলে কারটার জবাব দেব? রবিন, মুসা, টনি, তোমরা এসো তো। সাহায্য করো আমাকে। সব প্রশ্নের জবাব পাবে এখনই।
স্ক্রু-ড্রাইভার, হাতুড়ি, ফাইল, প্লয়ার্স নিয়ে কাজে লাগল কিশোর। ছবিটাকে খুলে আনল দেয়াল থেকে। পেছনে দেয়ালে বেশ বড় একটা চৌকোনা খোপ। তাতে কয়েকটা যন্ত্র বসানো। একটা সকলেই চিনল। ছোট একটা টেপ রেকর্ডার, বিল্ট-ইন-মাইক্রোফোন। অন্যটা বেশ বড় আর ভারি।
জিংম্যানের দিকে ফিরল কিশোর, ডাক্তার সাহেব, এটা হলোগ্রাম। প্রোজেক্টর, তাই না?
আস্তে মাথা ঝাঁকাল ডাক্তার।
এগুলো এখানে বসিয়েছিলেন কেন? ভূতের গুজব ছড়িয়ে পড়লে টুরিস্ট আসবে না, রিসোর্ট বন্ধ হয়ে যাবে, মিস্টার উইলসন সব কিছু বেচে দিয়ে চলে যেতে বাধ্য হবেন। আর আপনি কিনে নেবেন সব, এই তো ইচ্ছেটা ছিল?
আবার মাথা ঝাঁকাল জিংম্যান।
আরে, এ তো দেখছি মহা-শয়তান লোক! চোখমুখ কালো করে ফেলেছে শেরিফ। কাকে ভক্তিশ্রদ্ধা করতাম এতদিন! যে হাসপাতালে ছিলে, সেখানেও শয়তানি করে এসেছ নাকি এরকম? এখন তো আমার মনে হচ্ছে, চাকরি তুমি ছেড়ে আসনি, তোমাকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ভেবো না, খোঁজ-খবর আমি ঠিকই নের। রাগে ফোঁস ফোঁস নিঃশ্বাস ছাড়ছে সে। তা, সাহেব, ওই হলোগ্রাম না কি গ্রাম, ওটাও কি হাসপাতাল থেকেই চুরি করেছ?
জবাব দিল না জিংম্যান। মুখ নিচু করে রইল।
আমার মনে হয় হাসপাতাল থেকেই এনেছে, আস্তে করে বলল কিশোর। ডাক্তার মানুষ তো। ডাক্তারদেরই জিনিস ওটা। খুব কাজে লাগে।
এবার উঠি, শেরিফ বলল!
মিস্টার ডিউক, টনি, তোমাদেরকেও একটু কষ্ট করে আমার সঙ্গে যেতে হবে, প্লীজ। তিনটে শয়তানকে একা আমি নিয়ে যেতে পারব না।
এক্ষুণি উঠি কি? লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল ভিকি। বসুন বসুন, খাবার তৈরিই রেখেছি। বেড়ে দিতে যতক্ষণ লাগে।
মুসাও উঠল। বাড়াবাড়ি সহ্য হবে না আমার, হাত নাড়ল সে, নিজেই নিতে পারব, সারাটা দিন উপোস। ওই দু-ব্যাটা যখন কাবাব বানাচ্ছিল না..আহ! সত্যি সত্যি তার জিভ থেকে গড়িয়ে পড়ল এক ফোঁটা পানি।