হাত থেকে বেলচা ফেলে কোরালের দিকে দৌড় দিল লোকদুটো। দেখতে দেখতে জিন পরিয়ে চেপে বসল ঘোড়ায়। জুলিয়ানকে তাড়া করল।
ওরা গিরিপথে অদৃশ্য হতেই উঠে পড়ল মুসা। দ্রুত গাছের আড়ালে আড়ালে নেমে চলে এল গিরিখাদের পাড়ে।
খাদের দেয়ালে অসংখ্য গর্ত, বোঝা গেল, লোকগুলোই খুঁড়েছে। ভালমত দেখার সময় নেই, একবার নজর বুলিয়েই কেবিনের কাছে চলে এল সে। নি।
দরজার কব্জায় তেল পড়েনি বহুদিন, ধাক্কা দিতেই কিচকিচ করে উঠল। ঢুকে আবার দরজা বন্ধ করে দিল মুসা। আসবাবপত্র তেমন কিছু নেই। একমাত্র জানালাটার কাছে রয়েছে একটা টেবিল আর দুটো টুল। দুটো চারপায়া, খাড়া করে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে দেয়ালের সঙ্গে। আনাড়ি হাতে তৈরি একটা শেলফে রান্নার সরঞ্জাম আর খাবার। বেশির ভাগই টিনজাত খাদ্য।
দরজার পাশে পড়ে আছে একটা ট্রাংক। ওটার দিকেই এগোল মুসা। ডালা তুলেই স্থির হয়ে গেল।
এলোমেলোভাবে ফেলে রাখা, কাপড়ের ওপর পড়ে আছে। অনেকগুলো গহনা। > কোন সন্দেহ নেই, চোরাই মাল। এগুলোই চুরি করে আনা হয়েছে ক্যারাভান থেকে। দুটো একরকম হার দেখেই বোঝা গেল সেটা। ব্রেসলেট আছে তিনটে, দুটো আঙটি এবং আরও কিছু গহনা।
সাবধানে গহনাগুলো সরিয়ে রেখে কাপড়ের তলায় খুঁজতে শুরু করল মুসা। রঙচটা জিনসের একটা প্যান্ট টান দিতেই তলায় পাওয়া গেল লাল শার্ট, পিঠের কাছে খানিকটা জায়গা ছেঁড়া, কাপড়ই নেই। ওই শার্টের ভেতরেই পেঁচানো আরও দুটো জিনিস পাওয়া গেল, একটা চিনতে পারল, আরেকটা পারল না। তবে দুটোই যে রিমোট কমাণ্ডার, এটা বুঝতে অসুবিধে হলো না।
সরুটা বোমা ফাটানোর যন্ত্র; আর চ্যাপ্টা, অপেক্ষাকৃত বড়টা কোন যন্ত্রের কমাণ্ডার, চিনল না। তবে জটিল কোন ইলেকট্রনিক যন্ত্রের হবে, সন্দেহ নেই।
তাহলে এই ব্যাপার।
বসে পড়ে ভাবতে শুরু করল মুসা। কি করবে এখন? জিনিসগুলো নিয়ে যাবে পোঁটলা বেঁধে? নাকি শুধু শার্ট আর গহনাগুলো নেবে? সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন। ইস্, এখন কিশোর এখানে থাকলে ভাল হত। সঠিক কাজটা করতে পারত সে।
মুসার মনে হলো, জিনিসগুলো যেখানে রয়েছে সেখানে থাকলেই ভাল। নিজের চোখে এসে দেখে যাক শেরিফ। কিন্তু আরেকটা সমস্যা আছে। জুলিয়ানকে ধরতে না পারলে হুঁশিয়ার হয়ে যাবে দুই চোর। জিনিসগুলো এখান থেকে সরিয়ে ফেলতে পারে। লোকজন নিয়ে ফিরে এসে তখন হয়তো আর কিছুই দেখাতে পারবে না মুসা। লজ্জায় পড়বে।
হঠাৎ, বাইরে শব্দ শোনা গেল। ঘোড়ার নালের শব্দ। দ্রুত এগিয়ে আসছে।
সেরেছে! লাফিয়ে উঠে জানালার কাছে ছুটে গেল মুসা। ধূলিধূসরিত জানালার নোংরা কাঁচে নাক ঠেকিয়ে বাইরে তাকাল। সর্বনাশ! লোক দু-জন ফিরে আসছে। জুলিয়ান নেই সঙ্গে।
বিপদে পড়া গেল, রিকি, লম্বা লোকটা বলল। গেল কই বিছুটা?
আস্ত কয়েটির বাচ্চা, গাল দিল বেঁটে। কি করি এখন বল তো?
কোরালের দিকে চলেছে দু-জনে। ওর কথা কেউ বিশ্বাস করবে না, বলল বটে, কিন্তু জোর নেই গলায়। সকালে নাকি শেরিফ ওকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল, চুরির দায়ে। একেই বলে কপাল, চুরি করলাম আমরা, আর ফসল কিনা… হা হা করে হাসল লোকটা।
কুৎসিত হাসিতে যোগ দিল না রিকি। আরও গম্ভীর হয়ে বলল, অত হেসো না, পেক। ওই তিনটে বিচ্ছুর কথা ভুলে যেয়ো না, রকি বীচ থেকে যেগুলোকে দাওয়াত করে আনা হয়েছে। হেলাফেলা কোরো না ওদের। বসের কাছে শুনলাম, ওরা ডেঞ্জারাস। একবার যার পেছনে লেগেছে, তার সর্বনাশ করে ছেড়েছে।
কি করতে বলো তাহলে? প্রশ্ন করল পেক। বিচ্ছুটা যে আবার এসেছিল, এখানে আমাদের খুঁড়তে দেখেছে, বসকে বলব? যাব র্যাঞ্চে?
মাথা নাড়ল রিকি। না, আজ রাতে তো আসবেই বস এখানে, বলল না? খোঁড়া কদ্দূর হয়েছে দেখতে। সঠিক জায়গাটা খুঁজে পাইনি। আমরা এখনও।
তবে কাছাকাছি পৌঁছেছি। নুড়িদুটো পেলাম, সেটাই প্রমাণ।
সেটা আমারও মনে হচ্ছে। কবে থেকেই তো বলছি এই গর্তে এসে খুঁজতে, তুমি আর বসই তো রাজি হচ্ছিলে না। পানিতে ধুয়ে মাটি সরে গেলে শিরা থেকে গড়িয়ে পড়বে সোনার নুড়ি, এটা তো সহজ কথা। আর গড়িয়ে একটা দিকেই পড়ে জিনিস, নিচের দিকে।
সে তো আমিও জানি। আমার প্রশ্ন হলো, খনিটা আছে কোথায়? ওটা খুঁজে না পেলে এত কষ্ট সব..দাঁড়াও, আরও খুঁড়ব। আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত দেখি কি পাওয়া যায়।
খিদে পেয়েছে আমার, বলল রিকি। চলো, আগে খেয়ে নিই।
কোরালে ঘোড়া রেখে কেবিনের দিকে রওনা হলো দু-জনে। কথা বলছে এখনও। কিন্তু সে-সবে কান নেই আর মুসার। আটকা পড়েছে। বেরোতে গেলেই এখন ওদের চোখে পড়বে। দরজা ছাড়া বেরোনোরও আর কোন পথ নেই। আর খাবার বের করার জন্যে এখন ঘরে ঢুকলেই হবে সর্বনাশ।
কিছুটা এগিয়ে মোড় নিল রিকি আর পেক। খাদের দিকে চলল। ব্যাপার কি? নতুন কিছু চোখে পড়ল নাকি? ওদিকে যাচ্ছে কেন?
খানিক পরেই বোঝা গেল, কেন গেছে। ওখানেই খাবার রেখেছে, খাদের নিচে পাথরের ওপর। যাক, একটা ভয় আপাতত গেল। খাবারের জন্যে আর ঘরে ঢুকতে আসবে না ওরা।
তাড়াতাড়ি খাওয়া সেরে আবার বেলচা তুলে নিল দু-জনে। খুঁড়তে শুরু করল।
জানালার কাছে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগল সে। ঢোকার সময় তো ঢুকেছে, এখন বেরোয় কিভাবে? দরজা কিংবা জানালা যেদিক দিয়েই বেরোক, ওদের চোখ এড়াতে পারবে না। কিন্তু এখানে কতক্ষণ বসে থাকবে? আর থাকাটাও যে নিরাপদ, তা-ও নয়। একসময় না একসময় কেবিনে ঢুকবেই ওরা, দেখে ফেলবে ওকে।
পনেরো
সারা ঘরে আরেকবার চোখ বোলাল মুসা। ট্রাংকের কাপড় আবার আগের মত করে ভরে গহনাগুলো রেখে দিল তার ওপর। ডালা নামিয়ে রাখল।